এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • আসছে, এসেছে একদল নতুন মুখ - কতটা তাড়নায়, কতটা হ্যালোজেনে?

    Somnath
    নাটক | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৫ | ১৩৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somnath | 59.93.192.253 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৭ ০২:২৩401570
  • দুবছর আগের সুতো হলেই বা! আছেই যখন একটা খামোকা বাড়তি তুলো নষ্ট করার কোনো মানেই নাই। এখানেই হোক।

    তো, নান্দীকারের ২৪ তম জাতীয় নাট্যমেলা, লীলা মজুমদারকে উৎসর্গীকৃত ও বুদ্ধদেব বসু স্মরণে, শুরু হল। ১৬ থেকে ২৫শে ডিসেম্বর, ২০০৭। শুরুতেই রুদ্রপ্রসাদ বলে নিলেন, একদা শম্ভু মিত্র বলেছিলেন, এই নাট্যমেলা নান্দীকারের নয়, আপনাদের। নাট্যপ্রেমী মানুষদের। নান্দীকার শুধু আপনাদের হয়ে ব্যবস্থাপনা, গোছগাছ খোঁজাখুঁজি করে দেয়। এইটুকুই। জাতীয় নাট্যমেলা তাই নান্দীকাকের নয় কখনই।

    এইভাবে, এইখানে সরোজিনী শুয়ে থাকার ফ্যালাসি উপমায় প্রায়, নান্দীকাকের-কিংবা-নান্দীকারের-নয় জাতীয় নাট্যমেলা শুরু হয়েই গেল ১৬ তারিখ রোববার, দুপুর আড়াইটের ঘোষিত সময়ের মিনিট কুড়ি পরেই। 'মামালু" - সুইজারল্যাণ্ডের ভিশ্যুয়াল থিয়েটারের প্রোডাকশন। নৃত্যনাট্যই তো বললেন রুদ্রপ্রসাদ। ক্রিশ্চিয়ান হালের লেখা, ক্রিশ্চিয়ান মাতিস-এর ডাইরেকশন। মঞ্চে বিরতিহীন দেড় ঘন্টা একটি মেয়ে, সংলাপবিহীন, ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিকের সঙ্গে নেচে গেলেন। যদি সেটাকে শুধু নাচ বললে কিছুমাত্র বোঝানো যায়!

    না: এভাবে দুম করে শুরু হলে ঠিক বোঝা যাবে না, যেটা দরকার, আমার অবস্থান - মানসিকভাবে, কারণ পরবর্তী সব নাটকগুলোর বর্ণনা কিনা আসবে আমার ই হাত থেকে। তাই, বলে রাখা দরকার বৃহস্পতিবার, ১৩ তারিখ, মিতাদি ফোন করে না জানালে, আর নাট্যসূচীর মেলটা ফরোয়ার্ড না করলে, আমি জানতামই না এহেন কোনো নাট্যমেলা হতে চলেছে, আর হয়ত ঘুরতে বেড়িয়ে যেতাম কারণ আপিস থেকে ছুটি নিয়েছি দুই সপ্তাহ, ২০০৮ এ ফের জয়েন করব এই মর্মে। শনিবার রাতে আবার মিতাদি, আর জানা গেল রবিবার রুদ্র-দার সাথে ফোনে কথা বলে নিলে আমার জন্যে টিকিট থাকবে সংরক্ষিত।

    প্রথম দিন তবু দেরি হয়ে গেল। ভিতরে ঢুকলে কি ব্যবস্থা হবে, কি হবে না, এসব সাত পাঁচ ভাবনার গোড়াতেই পেরেক ঠুকে গেট থেকে টিকিট কেটেই ঢুকলাম কারন তখন ঘড়ি বলছে আড়াইটে পাঁচ মিনিট আগে বেজে গেছে। ভিতরে ঢুকে জানা গেল কোনো সীজন টিকিটের ব্যবস্থা নেই। রোজকার দিনে এসে দিনের টিকিট সংগ্রহ করে ঢুকতে হবে। যদিও অ্যাডভান্স টিকিট দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু সবগুলো শো এর একটা করে টিকিট বগলদাবা করে আমি বাড়ি চলে যাব এইটে ভদ্রলোক, যিনি গেস্ট টিকিট দিচ্ছিলেন, ঠিক হজম করলেন না। অবিশ্যি এই বাদানুবাদ তো শো এর পরের,

    অ্যাকাডেমী তে পৌঁছে আমি তখন A সারিতে বসে, আর স্টেজে - '''মামালু""।

    যেটা বলার কথা, ফাইন প্রিন্টে না রেখে ঝেড়ে কাশা যাক .....
    ১। জাতীয় নাট্যোৎসব, থার্ড বেল পড়ার দু মিনিট আগে কাউন্টার থেকে A row এর টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
    ২। শনিবারের আগে কাগজে কোনো বিজ্ঞাপণই ছিল না অনুষ্ঠানটির।
    ৩। ২০-৩০ এর টিকিট তবু যা বিক্রি, ৫০-৬০এ বেশি কেউই এসে বসেননি।

    ইত্যাদি, আরো যখন যা মনে পড়বে।
  • Somnath | 59.93.244.158 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭ ০৩:০১401572
  • গতকাল, মানে আসলে পরশু, ২৫ তারিখ এই নাট্যোৎসব শেষ হয়ে গেল। টেলিগ্রাফ এর t2 সেকশন এ, অনলাইন এডিশনের আর্কাইভ থেকে পাওয়াও যাবে হয়ত। ১৮, ২০,

    ২২, ২৫ তারিখে কিছু নটকের গল্প বলা আছে। বাংলালাইভের সাতসতেরো সেকশনেও সম্পূর্ণ নাটকের সারণী পাওয়া যাবে।

    তথাপি এই অ্যামেচার রিপোর্তাজের খাতিরেও একটা লিস্টি বানিয়ে রাখি। প্রত্যেকবার লিখতে হবে না তাইলে। শি:- মানে চিলড্রেন ফ্রেণ্ডলি। ;-)

    তারিখ --- সময় ----- নাটক ----- লেখক/নাট্যকার --- পরিচালক ----------------------- ট্রুপ -----------//--আমি
    ১৬-রবি - ২: ৩০ - মামালু (শি) - ক্রিস্টিয়ান হালের - ক্রিস্টিয়ান মাতিস - ভিশ্যুয়াল থিয়েটার, সুইজারল্যাণ্ড // দেখেছি
    ----------৬:০০--- নিমজ্জন------সেলিম-আল-দিন --নাসিরুদ্দিন ইউসুফ--ঢাকা থিয়েটার , বাংলাদেশ------// দেখিনি

    ১৭-সোম--৬:০০ তু দোস্ত মাহিয়া(শি)--------বিভাবরী দেশপাণ্ডে ---------ললিত কলা কেন্দ্র ---------------//-দেখেছি
    -------------ডেথ অফ এ সেলসম্যান--আর্থার মিলার---পদ্মনাভ বিন্দ-----পুনে ইউনিভার্সিটি ---------------//আদ্ধেক দেখেছি

    ১৮ মঙ্গল-৬:০০- কিতাবো মে হালচাল-অ্যালিস ওয়াস্টার/আব্দুল লতিফ খতানা - আ: ল: খ:-NSD TIE Co., দিল্লী-//দেখেছি

    ১৯-বুধ--৬:০০-হাথ-ই-হিন্দোল--দারিও ফো/মনজুর আহমে মীর-রশি রশিদ-- আজাদ ড্রামাটিক কালচারাল ক্লাব, কাশ্মির -// দেখিনি
    ---------------অয়কসিডেন্টাল দেথ অফ অ্যান অ্যানার্কিস্ট -------------------------------------------------// দেখিনি

    ২০-বৃহ: -৬:০০-আরক্ত ক্ষণ-- Mahesh Elkunchwar/বসন্ত দেব - অনুপ জোশী --থার্ড বেল, ভোপাল ------// দেখেছি
    -------------------কোশ্চেন মার্ক --ইসমাইল চুনারা ----এস এম আজহার আলম --লিটল থেস্পিয়ান, কলকাতা--// দেখেছি

    ২১-শুক্র--২:৩০ -- অবনীরা কেমন থাকে(শি) - চার্লস ডিকেন্স --সুশান্ত মণ্ডল --বধির বিদ্যা ভবন,উত্তরপাড়া ---// দেখিনি
    -------------তোতাকাহিনী(শি)---রবি ঠাকুর/কৌশিক রায়ে্‌চ±ধুরি--পার্থপ্রতিম দেব-----সমতট, উত্তরপাড়া-----//দেখিনি
    -----------৬:০০ - রাম নাম সত্য হ্যায়---চন্দ্রা এস ফনসলকর - চেতন দাতার - NSD Rep. Co., দিল্লী ---//দেখেছি

    ২২-শনি-২:৩০----আচার্য তার্তুফ----মলিয়ের/প্রসন্ন------প্রসন্ন----NSD Rep. Co., দিল্লী -------------------//দেখেছি
    ------৬:০০---পাখি(শি)-------লীলা মজুমদার---স্বতীলেখা সেনগুপ্ত----------------নান্দীকার ---------//দেখিনি
    --------------দুলিয়া(শি)--------লীলা মজুমদার---স্বতীলেখা সেনগুপ্ত------------নান্দীকার -----------//দেখিনি

    ২৩ রবি -৩:০০/৬:০০ -ফ্লাওয়ারস---গিরিশ কার্ণাড--রয়স্টেন আবেল-------------RAGE Prod. মুম্বাই---// দেখেছি

    ২৪ সোম ৫:০০ ----গোরাবাবুর স্বপ্ন(শি)---দেবশংকর হালদার---দে:হা:/পার্থপ্রতিম দেব----লবণহ্রদ বিদ্যাপিঠ---//দেখিনি
    -------------------পিল-পিল-পিল(শি)--সত্যজিৎ রায়---- সুশান্ত মণ্ডল-------------শিশুবিভাগ, নান্দীকার------// দেখিনি
    ------------------সত্যি রাজপুত্র(শি)---সুনীল গাঙ্গুলী/স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-সোহিনি সেনগুপ্ত--শিশুবিভাগ, নান্দীকার--// দেখিনি

    ২৫-মঙ্গল-১০:০০ --- ডাকঘর(শি)-----রবিঠাকুর---------কৌশিক সেন---------স্বপ্নসন্ধানী, কলকাতা ---------//দেখেছি
    ----------২:৩০---৮ ঘন্টে---------সুজিত সরফ -------সুরেশ ভরদ্বাজ---------আকর কলা সঙ্গম, দিল্লী------// দেখেছি
    ----------৬:৩০--পাতা ঝরে যায় --বুদ্ধদেব বসু---------রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত-----নান্দীকার, কলকাতা----//দেখেছি
    -----------------অ্যান্তিগোনে----সফোক্লিস/Anouilh----রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত-----নান্দীকার, কলকাতা----//দেখেছি
  • Somnath | 59.93.244.158 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭ ০৩:০১401571
  • মামালু সম্পর্কে ই®¾ট্রাতে রুদ্রবাবু বললেন, এটি একটি মেয়ের গল্প, পুরোনো আমলের কনজারভেটিভ-লংস্কার্ট পরা মেয়ে,যাকে দেখে সবাই হেসে থাকে (বেসিক খোরাক আর কি!)। কিন্তু কিভাবে সেই মেয়েটি জীবনের প্রতি আনন্দের হাসি ফিরিয়ে দেয় শেষ পর্যন্ত, এটি তারই কাহিনী।

    শুরু হল সেভাবেই। প্রচুর সরঞ্জাম, ঝুলঝাড়ু, বুরুশ, ডাস্টার সহ মেয়েটি স্টেজ শুরু করে অদ্ভুত চশমা ও প্রাচীন ইওরোপীয় পোষাক সহ। সমস্ত সরঞ্জাম নিজের সারা দেহে আঁটানো (হাতে, পায়ে, কনুইয়ে, হাঁটুতে, বেল্টে, নাকে, গলায়, পিঠে ইত্যাদি ও তারপর সেগুলো খুলে খুলে একটা বালতিতে অবশেষে রাখা - এইই প্রথম অঙ্ক। গুটি গুটি পায়ে মিউজিকের সাথে নড়তে নড়তে দিদিমাদের মত মাথা নেড়ে ও অভুত ভাবে তাকিয়ে এই যে কাজটা সে করে, তাতে হাসির খোরাকের চেয়ে ব্যালেন্সের খেলা বেশি। খানিক সার্কাস সার্কাস ভাব মনে জাগছিল, যেটুকু বাকি ছিল সেটুকু বাকি অঙ্কগুলোয় পুষিয়ে যায়।

    সেকেণ্ড ঘটনা একটা ড্রেস পরা। প্রায় জোব্বার মত দেখতে বাইরের দিকে খুবই ম্যাড়ম্যাড়ে রং এর ড্রেস, কিন্তু বিভিন্ন ভাজে ভাজে, এক একটা পরতে পরতে ভিতরের খুবই ঝকমকে কালো রং টা বের হয়ে আসতে থাকে নাচের সাথে সাথে। স্টেপের সাথে সাথে প্রথমে পরে থাকা পোষাকটা মেয়েটি উল্টো করতে থাকে আর এপিসোডটা শেষ হয় যখন তার গায়ে সম্পুর্ণ কালো ঝলমলে একটি পোষাক আর শুরুর ম্যাড়ম্যড়ে মেয়েটিকে তখন প্রচণ্ড সুন্দর লাগছে। কোনো অন্তর্বাসের আভাস না দেখতে পাওয়া (স্কিন কালারের একটা লেয়ার আছে বলে মনে হচ্ছিল নিচের অংশে শুধু) আর স্টেজের ওপর নাচের সঙ্গে সঙ্গে একটা পরে থাকা পোশাক উল্টে পরা - এইটুকুই নতুন, এইটুকুই বিষয়, অ্যালিগোরি, যদি থাকে, বাদ দিলে।

    তারপরের সীনে আবার সেই লংস্কার্ট, সেই পগড়ির মত মাথার টুপি। কিন্তু কি খেলাই না সে দেখাল এবার। একটা টেবিল ছিল, বুঝলেন। সেটাকে উল্টে মেঝেয় ফেলা হল। এবার তার পায়ার উপরে শুরু হল উঠে বসা, দঁড়ানো, শোয়া, বাঁকানো ভল্ট এই সব। সে এক সাংঘাতিক টেবিল। তার পায়াগুনো রাবারের। মেয়েটার সমস্ত ওজন নিয়েও ভেঙে যায় না, মেঝের সাথে ১০ ডিগ্রির থেকে শুরু করে ১৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত নড়াচড়া করল, পায়াগুলো। উপরে মেয়েটি জিমনাস্টিক দেখাচ্ছে। কালো রঙের ঝালর ঝালর একটা প্যান্টি পরা ছিল (কি জানি তারও যদি কিছু ইনারমিনিং থাকে)।

    পরের অংশে আবার একটা খুব সুন্দর প্রায় ডানার মত ইয়া উঁচু ডাণ্ডার সাথে লাগানো সিলভার কালারের সিল্কের মত জিনিস দিয়ে নিজেকে ঢেকে নাচ চলতে থাকে। ডাণ্ডাটা হাতে ধরা। সেটা নাড়ালে পুরো ডানাটা নড়তে থাকে। শেষ হয় যখন , ডানাটি পুরোপুরি মেলে ধরে (বিশাল একটা প্রজাপতির মত) তার নিচে দিয়ে মেয়েটি চলে যায় স্টেজের পিছনে। খুব সুন্দর দেখতে লাগে ব্যপারটা।

    প্রতিটি এপিসোডের পরেই প্রচুর হাততালি পড়ে, কারণ যাই হোক দেখতে খুবই ভালো লাগছিল, আর মেয়েটি জিমন্যাস্টিক বা নাচ দুটোই খুব ভালো করে।
    কেউ হয়ত এসবের মধ্যে বাইরে থেকে সাদামাটা, ম্যাড়ম্যাড়ে পুরাতনপন্থী মেয়েটির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা, আসতে চাওয়া ইটারনাল ও আকর্ষণীয় সৌন্দর্যপ্রিয় নারীসত্তাটির বহি:প্রকাশ ও বুঝে থাকবেন। সেজন্যেও হাততালি পড়ে থাকতে পারে। কিংবা নাট্যউৎসবের প্রথম পারফরম্যান্স, বাইরের দেশের সুন্দর বাচ্চা মেয়েটির জন্যে ও হতে পারে। আমিও তো প্রভূত তালি দিলুম, যখন শুনলাম, রুদ্রবাবু বললেন - এই শো শুরু হওয়ার আগেও শুয়ে ছিল মেয়েটি, লম্বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে হয়ত নিজের ইন্টারনাল এনার্জি রিগেইন করছিল দুদিন প্রচুর অসুস্থ থাকার, বমি-টমি করা র্পর -- যখন এদিকে ঘোষণা হচ্ছে শো শুরু করতে দেরি হচ্ছে কারণ অনেক দর্শক এখনো এসে পৌঁছন নি।

    এইই মমালু। এদিন আর এরপরের সবগুলো নাটক শেষ হওয়ার পরেই নানীকারের তরফ থেকে দুটো ব্যোকে আর বহুরূপীর তরফ থেকে একটা বড় ব্যোকে দেওয়া হয় গ্রুপগুলিকে। তবে এদের, মেয়েটিকে ও তার ডাইরেক্টরকে, দুটো শাল দেওয়া হয়, তাতে ডাইরেক্টর বেশ অভিভূত হয়ে পড়েন - এসব ও লিখে রাখলম।

    প্রথমদিন আরো ছিল, সধ্যেবেলায়, ইনঅগুরাল সেরিমনি, তারপর বাংলাদেশের ঢাকা থিয়েটার এর "নিমজ্জন"। লেখা সেলিম আল দিন। পরিচালনা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ। আমি থাকতে পারিনি, পাড়ায় এক বন্ধুর বিয়ের রিসেপশনের নেমন্ত ছিল।
  • Somnath | 59.93.213.171 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ ১৬:৩২401573
  • দেখাই যাচ্ছে মামালু দেখতে গিয়ে বেজায় হতাশই হয়েছি আসলে। পরদিন তু দোস্ত মাহিয়া দেখতে যাওয়ার আগেই একটা ভয় ছিল, গিয়ে দেখলাম, সত্যিই তাই, নাটকটি অভিনীত হবে মারাঠী ভাষায়। সাহস করে তবু দেখলাম, এবং কথাবার্তা প্রায় কিছুই বুঝলাম না। তথাপি গল্প কিছুমিছু বোঝা গেল, আর তা এইরকম --

    বাচ্চা মেয়েটার বাবা মা দুজনেই কাজে বেরোয় এবং তারপরে সারাদিন একা থাকার কথা ছিল বলে মেয়েটি একটা আজব জিনিস অবিষ্কার কারেছে। বাবা মা বেরিয়ে গেলেই পড়ার চেয়ারে বসে বন বন করে সে ঘুরতে থাকে আর কোথাও কোনো অদৃশ্যলোক থেকে ঘরে ল্যণ্ড করে তার তিন জন বিষমবয়সী বন্ধু। একজন কোটাল, একজন এয়ার হোস্টেস এই রকম সব। সারাদিন তাদের সাথে গল্প করে, খেলে, বিকেলে বাবা মা ফেরার আগেই তাদের বিদায় করে দেয় মেয়েটি। এইভাবেই বেশ কাটছিল, কিন্তু বাবা তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে, আশ্রয়হীন প্রায় সমবয়সী একটা ছেলেকে। সে এখন মেয়েটির একলা দুপুরগুলোর সাথী হবে এবং আমরা দর্শকরা জানতে পারব সেই তিন বন্ধুকে মেয়েটি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না, কারণ ছেলেটি না তাদের দেখাতে পায়, না তাদের কথা শুনতে পায়। মেয়েটি ও তার বন্ধুদের দলে ঢুকতে না পেয়ে ছেলেটিও যথারীতি বোর হতে থাকে এবং একদিন চেয়ারে বসে ঘুরতে ঘুরতে সে ও অজ্ঞাতেই ঘরে ল্যাণ্ড করায় সেই কোটাল আর দুজন নতুন নন্ধুকে। অত:পর বাচ্চাদুটির বন্ধুত্ব স্থাপন ও পরে বাবা মায়ের কাছে এইসব দুপুরের গল্প প্রকাশ ও মা কতৃক চেয়ারে ঘুরে এই পাঁচজনকেই মঞ্চে হাজির করা ও সক্কলে মিলে হেসে গেয়ে সুখ সমাপ্তি।

    বাচ্চা মেয়েটি খুব ভালো করেছিল, বিশেষত: বাবা মার সাথে ঝগড়ার সময় ডায়লগ থ্রো,এবং গোটা নাটকটা জুড়ে তার সাবলীল স্টেজ মুভমেন্ট। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের ফুলপত্র স্বাভাবিইকভাবেই ও ই পেয়েছে।

    তার পরের নাটকটাতে ও খানিক বসেছিলুম। কিন্তু আবার মারাঠী আর আবার কিচ্ছু বুঝছি না, অথচ এবার বেশ সিরিয়াস হচ্ছে দেখে এবার উঠেই পড়লাম। তাছড়া দুটো নাটকের মাঝে পুরো স্টেজ নতুন করে তৈরি করতে বেশ ৪০-৪৫ মিনিট সময় লেগেছিল বলে বেশ রাত ও হয়ে যাচ্ছিল।

  • Somnath | 59.93.211.70 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ ১৭:৩৬401574
  • কিতাবো মে হলচল দেখতে গেছিলাম মাকে নিয়ে। এটা হিন্দিতে হল। তু দোস্ত মাহিয়া র মত ঝরঝরে ও স্বাভাবিক নয়, স্মার্ট নয়, ক্যাসুয়াল জামাকাপড় নয়, বেশ কঠিন কস্ট্যুম ও মেকাপময় এই বিশাল নাটকটায় প্লটটা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই পাওয়ার ছিল না। ছ্যাবলামি জর্জরিত ওভার-অ্যাকটিং সমৃদ্ধ পুরো ব্যপারটাই কাটিয়ে দেওয়া যেত, গেল না একটাই কারণে - প্লট। বক্তব্যটা বেশ ইন্টারেস্টিং।

    একলা বুড়ো বইপোকার বাস একটা বইয়ের র‌্যাকে। তার বন্ধুনি মাকড়সা তাকে আশ্বাস দেয় অচিরেই নিজের কম্যুনিটির লোকেদের খুঁজে পাবে সে। পায় ও, কারণ কোনো সাদা কাগজের বাণ্ডিল থেকে উৎখাত হয়ে আসা ৮ জন বইপোকাকে মাকড়সা এই বই আলমারির খবর দিলে তারা এসে বুড়োর মুখোমুখি হয় এবং বারণ সত্বেও তুরন্ত সাতটা ক্ষুধার্ত পোকা সাতটা বইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। বইপোকা-কস্ট্যুম পাল্টে সাতটা নতুন রূপে তারা একে একে বেরিয়ে আসে। এই নতুন সাতজনের পোশাক দারুণ বৈচিত্রময়। একজন মহিলা শুদ্ধ আচার ব্যবহারের প্রয়োজণীয়তা ও উৎকৃষ্টতা নিয়ে লেকচার দিতে থাকে,কারণ আমরা দেখতে পাই সে আচারবিধির বইয়ের ভিতর ঢুকেছিল। আরেকজন, যে ইতিহাস বইয়ের পাতা খেয়েছে সে ইতিহাসের, কারেকজন অর্থনীতির ....... এইভাবে সবাই যে যে বইয়ের পাতা খেয়েছে সে সেই বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের, সেইসঙ্গে নিজের নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে তৎপর দেখা যায়। বুড়ো একজন মাত্র ছোটো বইপোকাকে ইচ্ছেখুশির বইয়ের পাতা খাওয়া থেকে আটকাতে পেরেছিল। তাকে বুড়ো পাঠায় একটা অঙ্ক বইয়ের পাতা খেতে।
    এদিকে যখন মতানৈক্য চূড়ান্ত, সক্কলেই নিজেদের কথাকে শেষ কথা প্রমাণ করতে এক্কেবারে প্রাণপণ লেগেছে, আর বুড়ো চাপে পড়ে তাদের সামলাতে পুরো হাক্লান্ত হতাশ ও ব্যর্থ, ছোটো বইপোকা মাঠে ফিরে আসে হাতে পিস্তল, টপোরি বেশভূষা আর মুখে ফিল্মি ক্যাচি ডায়ালোগসম্ভার নিয়ে। অচিরেই সে গ্রুপলীড হয়ে ওঠে কারণ ততক্ষণে কেউ বুঝতেই পারে নি এ-ই আসলে সেই ছোটো বইপোকা। অবশেষে বোঝা যায় অঙ্কের বইয়ের মধ্যে লুকোনো একখানা ফিল্ম ম্যাগাজিন খেয়ে শেষ করেই তার এই দশা। সবশেষে সারমণবাণী প্রদাণ ও বুড়ো বইপোকার কনক্লুশন - কেন সে সবাই কে একটা একটা বই খেতে বারণ করেছিল। কেন উচিত সব বই একটু একটু করে খেয়ে দেখা, যাতে কোনো একটি মতবাদ বা বিষয় - সেই সঙ্গে সে বিষয়ে স্পেশালাইজড নিজেকে আল্টিমেট বলে মনে না হয়।

    আর ভাট বকে কোনো কাজ আছে কি? স্টেজটার কথা একটু বলে রাখি। ওটা আসলে বইয়ের র‌্যাকটা। কারণ সেটার ব্যাকগ্রাউণ্ডে রয়েছে সেই আটখানা বইয়ের কভার, যাতে নামগুলো গোদা গোদা করে লেখা, দর্শকদের পড়ার সুবিধে মতন। বইপোকাগুলো এক একটা বইয়ের ভিতরে ঢুকে যেতে থাকে আর পোকার কস্ট্যুম চেঞ্জ করে ঐতিহাসিক, ভূপর্যটক, ধর্মগুরু, রাজনীতিকের পোশাকে বেরিয়ে আসে। বইয়ের র‌্যাকের দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকা , অঙ্কবইয়ের মধ্যে সিনেম্যাগাজিন ইত্যাকার মানবিক মস্তির অনুপান বেশ মজার। এইসব আর কি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন