এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kumu | 232312.161.341212.39 | ০৭ মে ২০১৯ ১৮:০৯381967
  • সুকি,আপনার প্রতিটি লেখা পড়ি,ভীষণ অগ্রহে।

    "আমার প্রচুর অধঃপতন হয়েছে আজকাল – আমি এখন বিগবাসকেট থেকে অনলাইন ওর্ডার করে ৪০ টাকা দিয়ে ডাব কিনি" – এটি বড় চমৎকার লাগল।

    ডাবের কথায় মনে পড়ল,আমাদের কোন্নগরের বাড়িতে ডাব,তাল ইত্যাদি গাছ ছিল।ঝঢ়বৃষ্টির রাতে দাদু শুয়ে শুয়ে ডাব/নারকেল/তাল পড়ার ধুপ আওয়াজ গুণে বালিশের নিচে রাখা প্যাডে লিখে রাখতেন । সকালে প্রাপ্ত ফলের সংখ্যা ঐ লেখার সঙ্গে না মিললে প্রলয়্কান্ড ঘটত।কয়েকবারই এমন হওয়াতে দাদু রাতে জিমি (কুকুর)কে ছেড়ে রাখার প্রস্তাব দেন ।কিন্তু ।জিমিকে বিপদের মুখে ছেড়ে দেওয়ার এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে কাকারা সকালে অমলেট গ্রহণ বন্ধ করেন।

    দাদু ছাড়বার পাত্র ছিলেন না,রাতে ভুটকি(ছাগল)কে ছেড়ে দিতেন।আশ্চর্য রকম সফল হয়েছিলেন।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ০৭ মে ২০১৯ ১৮:২৩381968
  • একক, দু, অমিতাভদা, অরণ্য, এলা, কুমি-দি - সবাইকে অন্য ধন্যবাদ। নিমোর গল্প ভালো লাগছে জেনে আমারও ভালো লাগল। নিমো-কে গ্লোবাল ম্যাপে তুলে ধরাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ০৭ মে ২০১৯ ১৮:২৭381969
  • পাল্লারোডে পিকনিক
    -------------------------------------

    গুগুল ম্যাপ অনুসারে নিমো গ্রাম থেকে পাল্লা রোডের দামোদরের ধার ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটারের মত দূরত্ব। তবে ছোট বেলায় এই দশ কিলোমিটার কেন জানি না দশ বলে মনে হত না – পাল্লা রোড একদম আমাদের আত্মিক ছিল বলা যেতেই পারে। নিয়ম ভেঙে বালি তোলার মাফিয়ারা পাল্লা রোডকে খারাপ ভাবে বিখ্যাত করে তোলার অনেক আগে ভালো ভাবে পাল্লা রোডকে বিখ্যাত করে দিয়েছিল বাঙলা সিনেমার তাপস-শতাব্দী জুটি। মনে রাখতে হবে যে বিদেশ গিয়ে অর্থহীন পোঁদ নাড়িয়ে “পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে” গাইবার অনেক আগের কথা বলছি যখন তাপস-শতাব্দী অর্থবহ হাত ধরা ধরি করে পাল্লা রোডের ডাকবাংলোর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গান গাইত। আম পাবলিক মাঝে মাঝেই সিনেমার শুটিং দেখতে যেত – কেবল টিভি তখনো আসে নি, ফলতঃ ঘরে ঘরে অনেক অফরুন্ত সময়।

    শুটিং ছাড়া আমরা পাল্লা রোডের দামোদারের ধারে যেতাম মূলত শীতকালে, ওই সবাই যেমন যায়, তেমন ফিষ্টি করতে – আঁতেল সমাজ যাকে ‘পিকনিক’ বলে জানে। তবে সত্যি কথা বলতে কি, জায়গাটা শীতকালে প্রকৃতই মনোরম হত। দামোদরের জল প্রায় শুকিয়ে আসা – ফুরফুরে বাতাস, মিঠে রোদ, আর নদীর চড়াতে ফিষ্টি। আমি রাজনৈতিক দিক থেকে প্রবল সি পি এম আমলের কথা বলছি – নিমো গ্রামে যখন নিদারুণ শান্তি বজায় ছিল। একটাই পার্টি থাকার জন্য ফালতু অপজিশনের হৈ চৈ নেই – তার থেকেও বড় কথা একই পার্টির ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ টিমের মধ্যে খেয়োখেয়ির কনসেপ্ট থেকে আমরা তখনো বেশ কিছু বছর দূরে। এই সবের ফলে তখন আমরা সবাই এক জোট – এক টিম – নিমো ভারত সেবক সমাজের আমাদের বয়সী, একটু জুনিয়ার, কিছু সিনিয়ার সব মিলিয়ে প্রায় জনা ৫০ হয়ে যেত সদস্য। আমরা গ্রাম থেকে যেতাম ট্রাক্টরে করে – রশিদ চাচার ট্রাকটার পেলে ভালো, না হলে অন্য কারো ট্রাকটর নিয়ে যাওয়া। ছিনুই বা বিষ্ণপুরে থেকে মাল পত্র তুলে নিয়ে সকাল সকাল রওনা – মাঝে মাংস এবং মদ কেনার জন্য স্টপ রসুলপুরে। গ্রামের ভিতরে পিকনিকে রান্না করলেও বাইরে ফিষ্টি করতে গিয়ে রান্নার সাহস হয় নি - তাই গ্রামের গোপাল ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হত।

    গোপাল ঠাকুর বা তার সহকারী বুধো কলুর সাথে আমাদের একটা দুষ্ট মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে এরা আমাদের ফিষ্টিতে রান্না করতে আসত কোন রকম ফিনান্সিয়াল লাভের আশা ছাড়াই। শীতকাল হলেই ওরা জিজ্ঞাসা করতে শুরু করত, “কি রে তোদের ফিষ্টি কবে? সেই বুঝে অন্যদের ডেট দেব”। পাবার মধ্যে ভাগ্য ভালো হলে গোপাল ঠাকুর বেঁচে থাকা তেল, গরম মশলা, বা জিরে-ধনে গুঁড়ো একটু বাড়ি আনতে পারত। বুধো কলু কেবল একটু মাংসের ঝোল ছেলের জন্য নিয়ে যেত – মাতালরা বিশ্বভাতৃত্ববোধের ইউনেস্কো দূত হতে পারে সেটা আমাদের পিকনিক থেকে ভালো বোঝা যেত – পাবলিক যতই মাতাল হোক, বুধো তার ছেলের জন্য মাংস নিয়ে যেতে পারে নি কোনবার সেটা হয় নি।

    তবে একবার ফেরার পথে ওদের রান্নার হাতা-খুন্তি নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল – সবাই এটা জানে যে হালুইকরেরা নিজেদের বড় বড় হাতা ও খুন্তি নিয়ে রান্না করতে আসে। আর আমাদের পিকনিকের থেকে ফেরার সময় একটা রুটিন ছিলে যে বাকি রান্নার জিনিসপত্র একেবারে ডেকরেটারের ঘরে নামিয়ে বিল মিটিয়ে ঘরে ফেরা। তা সেইবার ফেরার সময় কারো কাছে আর বিল মেটাবার টাকা ছিল না। আর থাকলেই বা মেটাচ্ছে কে! ড্রাইভার ছাড়া কেউ কথা বলার মত অবস্থায় থাকত না – ট্রাকটরে আলুর বস্তা লোড করার মত, ছেলেপুলেকে দামোদরের ধার থেকে তুলে লোড করা হত। সেবার পয়সা না জোগাতে পেরে ফেরার পথে ডেকরেটার্সের কাছে গোপাল ঠাকুরের রান্নার ফেমাস খুন্তি-হাতা গুলি বন্ধক রাখার তোড়জোর করা হয় – এর ফলে গোপাল ঠাকুর খুবই রেগে গিয়েছিল – কিন্তু তা সত্ত্বেও পরের বছর পিকনিকে যথারীতি হাজির হয়।

    সারাদিন পিকনিকে গেলে একটা জলখাবারের ব্যবস্থাও করতে হয় সকালের দিকে – আমাদের সময় সেটার প্রায় ফিক্সড মেনু ছিল মুড়ি, ছোলা ছাঁকা, বেগুনী, ঘুঘনী। কেউ একবার লুচি চালু করতে চায়, তাকে যথারীতি আতেঁল বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে রুটি-ঘুঘনী হয়েছিল কোন কোন বার জলখাবার হিসাবে – কিন্তু শীতকালে ক্রীকেট টুর্ণামেণ্টগুলিতে ওটা পেটেণ্টেড মেনু থাকার জন্য আর কেউ রিপিট করতে চাইত না সেই একই খাবার। সেই ফিষ্টির মেনুও কিন্তু একই ছিল প্রায় – মাঝে মাঝে ফ্রায়েড রাইক মাংস মেনুতে উচ্ছাস বয়ে আনত। রান্না ছাড়াও আরো একটা বড় কাজ ছিল ওই ফিষ্টির সময় মাতাল সামলানো – জলে ডু্বে মারা যাবার ঘটনাও আছে – তাই সর্তক থাকতে হত যে পাবলিক যাতে কন্ট্রোলে থাকে। যারা মাল না খেয়ে ফিষ্টিতে স্যাক্রিফাইস দিত, তারাই মাতাল সামলাবার দায়িত্বটাও নিত। গোপাল ঠাকুর কিন্তু খুব কম সময়ে রান্না করতে পারত – সেই রান্না দেখার পর আজকাল টিভিতে একটা ডিস তৈরী করতে ৩ ঘন্টা সময় নেওয়া হয় দেখে রিলেটিভিটি জিনিসটা আরও হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে পারি।

    সেবার এক ফিষ্টিতে আমি সদ্য বিদেশ থেকে শেখা ‘সাংগ্রিয়া’ পানীয় প্রস্তুত করে সবাইকে খাওয়াই। শীতকালে বাজারে কমলালেবুর ছড়াছড়ি – আমি এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী থেকে রেড ওয়াইন এবং ভদকা এনেছিলাম। অরিজিন্যাল সাংগ্রিয়া-তে মনে হয় ব্র্যান্ডি থাকে – কিন্তু আমাদের নিমোর পাবলিকের কাছে সব সমান। একবার ইংল্যান্ড থেকে ফেরার সময় কি মনে করে সিঙ্গেল-মল্ট গ্ল্যামারেঞ্জি এনেছিলাম পাবলিকের জন্য। তারা খেয়ে আমাকে পরের দিক ভারডিক্ট দিল, “ফালতু মাল এনেছিস বাঁড়া বিদেশ থেকে। কাল অত খেলাম কিন্তু মাথা ধরল না!” আমি তার পরে ওল্ড গুজে ফিরে যাই! সেই খেয়ে কি আনন্দ – মাথা নাকি পুরো থম মেরে ছিল!

    নিমোর ছেলেরা এমনিতে করিত কর্মা – নিজেরাই কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিত বিশেষ বিশেষ ভাবে। হাজরাদের ভুলু স্পেশালাইজেশন করেছিল সাউন্ড সিষ্টেমে। তাপস-বাবু মাংস কেনায়, তপন নানাবিধ বাজার করায় – কাঠমিস্ত্রী রবি ট্রেন্সপোর্ট সিষ্টেমে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভুলু প্রেম করে বিয়ে করে ফেলল আমাদের পাশের গ্রাম কোলেপাড়ায় একটা মেয়ে যে সবে ১৮ পেরিয়েছে কে জানে! বলাই বাহুল্য বিয়ে হল বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে। ভুলুর বাপ নন্তু যখন খবর পেল ছেলে শিমলাগড় কালিবাড়িতে গিয়ে সিঁদুর-দান সেরে ফেলেছে, তখন ঠিক করল বাজনা বাজিয়েই ছেলের বউকে বরণ করানো হবে। আমি তখন নিমোতে ছিলাম না – মা ফোনে বলল, “বুঝলি ভুলু তো বিয়ে করে নিয়ে চলে এল। আমরা দুপুর বেলায় খবর পেলাম বউ আসছে পাড়ায়। ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে ভুলু গাড়িতে করে ফিরছে। আমি আর তোর কাকিমা বাইরে বেরিয়ে বউ দেখতে গেলাম। আমাদের দেখতে পেয়ে ভুলু ড্রাইভারকে বলল, এই দাঁড়াও দাঁড়াও। বউকে বলল গাড়ি থেকে নামো। দিয়ে নেমে আমাদের সামনে এসে বলল, দিদিমা, বিয়ে করে নিয়ে এলাম। বয়স হচ্ছে তো। দেখো বউ কেমন হয়েছে। এই তুমি দিদিমাদের প্রণাম কর। দিদিমা, আশীর্বাদ কর যেন ভালো করে সংসার করতে পারি”!

    ছয়-নয় বক্স লাগিয়ে পাল্লারোডে বিশাল ড্যান্স চালু হয়ে গেল – কোণের দিকে আলুজমিতে বা পাশের বাঁশবনের দিকে গিয়ে নিজের বয়সের ব্যাচের সাথে পাবলিক মাল খেতে শুরু করে দিল। এমনিতে নিমোতে সিনিয়ারদের রেসপেক্টের ব্যাপারটা আজো বজায় আছে – মাল খেয়ে বড়-দের সামনে মাতলামো অ্যালাও হলে, মাল খাওয়া অ্যালাও ছিল না। কেউ কেউ গোপাল ঠাকুরের পাশে বসে রান্নার চিন্তাতেই ব্যস্ত – কি করে অত রান্না কে খাবে – নিজের মনেই বকবক, “বোকাচোদাগুলো মাল খেয়ে খানিক পরেই আউট হয়ে যাবে – আর সেই প্রতি বারের মতই খাবার বিলিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে”। আমাদের মধ্যে ভালো নাচ করত দিবাকর – তার নাচ দেখতে আশে পাশের পিকনিক পার্টির লোক জড় হয়ে গেল। অন্য পার্টির দিবাকরের সাথে আমাদের দিবাকরের নাচের কম্পিটিশন হয়ে গেল।

    দামোদের পাড়ে এত লোক যে আমি পেচ্ছাপ করতে দামোদরের মাঝের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম দিবাকরের ভাগনা সাউ (দিবাকরের দিদি এক বিহারীকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল) বালির উপর বসে আকাশের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি ডাকলাম সাউ, সাউ বলে কোন রেসপন্স নেই। আমি মাতলামোর কুইক আইডেন্টিফিকেশনের টেষ্টগুলো রান করে বুঝলাম যে, সাউ পুরো আউট। কিন্তু আমার ডায়াগনেসিস এ বেরুল যে সাউ মাল খেয়ে আউট হয় নি, হয়েছে অত্যধিক গাঁজা খেয়ে! ওই টুকু ছেলেকে কে যে গাঁজা খাইয়েছিল কে জানে।

    আমি আর পিন্টু বসে বসে পিঠে রোদ লাগিয়ে চানাচুর, মুড়ি, বেগুনী খাচ্ছিলাম আর নজর রাখছিলাম যে কেউ যে জলে ডুবে না যায়! নিমো ফিরে বাড়ি বাড়ি ছেলে জমা দিয়ে আসতে হবে যে!

    সঙ্গের কিছু ছবি এমনই এক পিকনিকের –

    প্রথম ছবিঃ নিমো ভারত সেবক সমাজের সেই দিনের পিকনিক টিম



    দ্বিতীয় ছবিঃ গোপাল ঠাকুর রান্না করছে। আর আমার প্রস্তুত করা সাংগ্রিয়া খাচ্ছে আলম আর জেলেদের ষষ্টে। বাই দি ওয়ে, যে বদনাটায় আমি সাংগ্রিয়া বানালাম সেটা নিয়ে খানিক আগে দামোদরের চরা থেকে ফিরল। বদনা নিয়ে কি করছিলি জানতে চাইলে কিছু বলল না।



    তৃতীয় ছবিঃ গাঁজা খেয়ে আউট সাউ।



    চতুর্থ ছবিঃ ছেলেপুলে একটু জলকেলি করছে দামোদরে।



    পঞ্চম ছবিঃ আমি দিবাকরকে বারবার বলছি পাশ থেকে যে এই ড্যান্স আর চলে না বাজারে!



    ষষ্ট ছবিঃ সূর্য ডুবে আসছে দামোদরের চরে – এবার ফেরার পালা।

  • kumu | 232312.161.341212.39 | ০৭ মে ২০১৯ ১৯:৩৩381970
  • সুকি,কুমুদি।কুমি বল্লে কেমন কুমীর মনে হয়।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ০৭ মে ২০১৯ ১৯:৪৬381971
  • দুঃখিত খুবই কুমুদি - টাইপো :(
  • Ela | 230123.142.6789.62 | ০৭ মে ২০১৯ ২০:০২381972
  • কুমুদির কোন্নগরের লেখাটা কিন্তু ডিউ আছে, ওটার জন্যও বসে আছি পথ চেয়ে…
  • Amit | 340123.0.34.2 | ০৮ মে ২০১৯ ০৬:২৮381973
  • হায়, পিকনিকে মাতাল দের ছবি দেখে একটা বেড়াল তাড়ানো দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লাম। সেই দিন গুলো যে কোথায় হারিয়ে গেলো। বিদেশে বসে ওই লেভেল এ মাতাল হওয়া যায়না পুলিশের ভয়ে, আর দেশে গেলেও বন্ধু বান্ধবের দল সব বেশি রকমের ভদ্রলোক হয়ে গেছে আজকাল, বলে ছেলে মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে, এখন আর ওরকম মাতলামি করা উচিত না।

    জীবনটা বেসামাল মালের অভাবে শুকিয়ে গেলো একেবারে। :( :(
  • Ekak | 340112.124.566712.163 | ০৮ মে ২০১৯ ০৬:৫২381974
  • হ্যাঁ , লোকজন কী বেয়ারারকমের ভদ্র হয়ে গ্যাছে আজকাল :(( বিশেষকরে ছেলে বন্ধুগুলো ! সব যেন একেকটি চলমান পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ......হুঁহ :|
  • ন্যাড়া | ০৮ মে ২০১৯ ০৯:৪৫381975
  • পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে
    এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
    আমরা বলি ক্যাওড়ামি
    প্রৌঢ়ত্বেই ভালো চলে।

    ভাল বয়সোচিত ক্যাওড়ামোও আর দেখিনা। এই গুরুই, ফুলটাইম অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে যাবার আগে, কিছু বয়সোচিত ক্যাওড়ামো দেখিয়েছে। কিন্তু, হায়, কতদিন যে কেটে গেছে ক্যাওড়ামির কাল!!

    সুকিই এখন যা ভরসা।
  • গবু | 2345.110.015612.22 | ০৯ মে ২০১৯ ০৮:১০381977
  • সুকির লেখা তো পড়ছি, বেরোলেই!

    ন্যাড়া বাবুর চতুষ্পদী মেরে দিলাম, আমাদের বন্ধুদের হোয়া গ্রূপে, দাড়িদাদুর জন্মদিন উপলক্ষে।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১০ মে ২০১৯ ২১:৪৩381978
  • এলা, একক, ন্যাড়াদা, একক, গবু - সক্কলে ধন্যবাদ আবার।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১০ মে ২০১৯ ২১:৪৫381979
  • যাত্রা
    ----------------

    সেবারে আমরা সব নিমো ভারত সমাজ ক্লাবে বসে গুলতানি মারছি এমন সময় রেজাক-কাকা হন্তদন্ত হয়ে ক্লাবে ঢুকে খুব টেনশন মাখা মুখে প্রায় কাঁদোকাঁদো মুখে বলল,

    “তোদের কাছে হাত জোড় করছি, তোরা সেলিম-কে যাত্রা থেকে বাদ দে। আমি তোদের এবার ডবল চাঁদা দেব আর সাথে দু-টিন ধান বাড়তি। সেলিমের কাছ থেকে তোরা রোল কেড়ে নে”।

    আমরা অবাক হয়ে থতমত খেয়ে গেলাম একটু – রেজাক কাকা নিতান্তই ভালোমানুষ এবং কারো সাথে পাচে থাকে না। রেজাক কাকা আমার বাবার খুব কাছের বন্ধু – কাকার তিন ছেলে, বড় ছেলে সেলিমদা, মেজো রফিক এবং ছোট ছেলে সফিক ওরফে চাঁদু। চাঁদু আমার বয়সী এবং বাল্য বন্ধু। আমরা সবাই বাড়ির বাইরে মোটামুটি গালাগাল দিলেও, চাঁদুই একমাত্র ছেলে ছিল যে বাড়িতেও সেটা কন্টিনিউ করত। খেলতে আসার জন্য ডাকতে গেছি চাঁদুকে, কাকিমা বলছে, “খেয়ে যা রে চাঁদু”, চাঁদু উত্তর দিল, “কতবার বাঁড়া বলব যে খাব না! সেই বালের এক কথা”। সেলিমদা ছিল বেশ ভালো তোতলা, সেই জন্য সেলিমদার অনেক দিনের যাত্রা করার ইচ্ছে থাকলেও নিমো ভারত সেবক সমাজ থেকে কেউ রিক্স নিয়ে ওকে কোন রোল অফার করা হয় নি আগের বছর পর্যন্ত। সেই বছর অনেক কাকুতি মিনতির পর সেলিমদা একটা ছোট্ট রোল পেয়েছিল। রেজাক-কার কথা শুনে আমরা ঘাবড়ালাম যে সেলিম-দা ওতো ছোট রোল নিয়ে আবার কি ছড়ালো!

    রেজাক-কার কথা শুনে যা বোঝা গেল যে আগের দিন অনের রাতের বেলায়, প্রায় দু-টো নাগাদ পেচ্ছাপ বসতে যেতে বাইরে ওঠে কাকা। উঠে বাথরুমের দিকে এগুতে গিয়ে দেখে যে সেলিমদার ঘরে অত রাতেও আলো জ্বলছে এবং ঘরের ভিতর থেকে গুনগুন করে আওয়াজ আসছে। এতো রাতেই সেলিম কি করছে ভেবে ঘরের আলো কাছে কি দ্যাখে পুরো ঘর ধোঁয়ায় ভরে গ্যাছে। রেজাক-কা ভয় খেয়ে যায় আগুন –টাগুন লেগে গেল নাকি ভেবে। ঘরের কাছা কাছি গিয়ে ডাকা ডাকি করলে সেলিম-দা বিরক্ত হয়ে দরজা খোলে, কাকা দ্যাখে যে সারা ঘরে বিড়ির টুকরো ছড়ানো – ওই ধোঁয়া সব বিড়ি থেকে এসেছে। সেলিম-দার ডায়লগ বলতে ছিল, “বাবু আপনার টেলিগ্রাম”। সেলিমদার যে বাড়িতে চাকরের কাজ করে সেই কর্তাকে পুলিশ ধরতে আসবে, সেই সময় সেলিম-দাকে গিয়ে টেলিগ্রাম-টা দিয়ে আসতে হবে। ব্যাস, ডায়লগ বলতে এই – এটাই নাকি বার বার বলে বলে “বাবু আপনা টেলিগ্রাম”, “বাবু আপনার টেলিগ্রাম” ঘরেতে সারারাত বিড়ি খেতে খেতে মুখস্ত করছিল। আর ফলত গুণগুণ আওয়াজ।

    আমরা যত বড় হতে লাগলাম, নিমোতে ঐতিহাসিক যাত্রা পালা তত কমে আস্তে লাগল – তার জায়গা নিতে থাকল সামাজিক পালা বা অনেক সময় যাত্রার বদলে নাটক হতে থাকল। আসলে ঐতিহাসিক যাত্রা করতে গেলে এলেম চাই, ভারিক্কি চেহারা চাই, সঙ্গে একটু ভুঁড়ি থাকলে ভালো হয় এবং একটু বয়স্ক না হলে অনেক রোল ঠিক মানায় না। আর কি সব ডায়লগ ছিল তখন! নীচে কিছুটা উদ্ধৃত করা যাকঃ

    সম্রাটঃ খোদা বান্দার মনের কথা ঠিকই জানেন। আমি তোমাকেই ভাবছিলাম সখিনা। তোমাকেই! আমার খোয়াবের গুলিস্তানে তুমি তো রোজ আস তোফা-ই-উলফত হাতে নিয়ে, গুলশানের গোলাপ নিয়ে। আমি তোমাকে দেখি। তুমি লহর লহর হেসে যাও। বিজুরি চমকে তোমার নজরে। যখনই হাত বাড়াই খোয়াব ঠুটে যায়। ছটফট করি। পেয়ালার পর পেয়ালা শরাবে বুঁদ হয়ে থাকি। আর ভাবি, যদি রসম-ই-উলফত পালন করতে এসে তোমার গোলাবী অধরের স্বাদ পেত আমার পিয়াসী অধরের জমিন। তুমিই তো দিল-ই-বাহার, তুমিই তো খোশনসিবি। তুমি বললে এই সুলতানাত তোমার নামে করে দেব!

    সখিনাঃ না! না জাঁহাপনা। ঐ কথা বলে আমার মোহাব্বতের গায়ে ইলজাম লাগাবেন না। মাসুম এই মোহাব্বতের শুরু আপনার থেকে, আপনার মাঝেই এর শেষ। এই কানিজ কানিজই থাকবে, এই বান্দী আপনার সেবা করে যাবে। নইলে জমানা ইলজাম লাগাবে, মালকিন-ই-সুলতানাত হতে আপনাকে ভুলিয়েছি। আপনার পদতলে থাকব, তবু ইলজামের গরল-আনজাম মোহাব্বতের গায়ে লাগতে দেব না। রুসবা হতে দেব না। কথা দিন আলমপানা!

    আহা কি ছন্দ, কি ভাষা, কি আবেগ – মনে হয় প্রেম নিবেদন করতে হলে এমন জবানে করাই ভালো, একটা ইম্প্যাক্ট টাইপের আছে। জানি না জাঁহাপনা কথা রেখেছিলেন কিনা! আজকাল চারিদিকে “কেউ কথা রাখে নি” – এর ঢেউ উঠে পড়ে লেগেছে। এর আগে সবাই কথা রাখত, সেই রামায়ণের যুগ থেকে আমরা কথা রাখতে ভালোবাসি। বিশেষ করে যদি সেটা বাবার কথা হয়।

    তবে কথা হল আমাদের গ্রামে এই ‘সম্রাট’ রোল করার লোক জন কমে আসছিল। যা বুঝেছিলাম মেজো জ্যেঠুর সাথে কথা বলে তা হল, সম্রাটের কাজ ঐ ডায়লগ দেওয়া ছাড়া আর ছিল একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। মেজো জ্যেঠুর কথা অনুযায়ী সমাটের রোলে একছত্র অধিপতি ছিল জেলেদের অজিত জ্যেঠু। আমাকে মেজো জ্যেঠু বলত, “বুঝলি সুকান, অজিতদা রিটায়ার হয়ে যাবার পর আমিও তো ওই গোলাপ ফুলের ভারটা নিয়েছিলাম”। অজিত জ্যেঠু বা আমার নিজের মেজো জ্যেঠুর সম্রাট রোলের প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল – কারণ সম্রাট পাওয়া গেলেও সেকালে ‘সখিনা’ পাওয়া সোজা ব্যাপার ছিল না। মেয়েরা যাত্রা করছে – সে নিজের গ্রামের মেয়ে বা ফিমেল ভাড়া করা – এর কোনটাই তেমন সেই যুগে তেমন নরম্যাল ছিল না গ্রামে গঞ্জে। ফলে সেই মেয়ের রোল মানে ‘সখিনা’ ইত্যাদি সাজতে হত আমার সেজো জ্যেঠু, গুরুপদ মাষ্টার এবং আরো দু-এক জনকে। এবং সেই মেয়ে রুপী ছেলে দেখে সম্রাট-রা যে ফিলিংস আনতে পারত, সেটাই এক বিশাল ব্যাপার – প্রফোশন্যালিজমের চূড়ান্ত যাকে বলে।

    আমাদের ঘোষ পরিবার এত বড় ছিল যে আমাদের বাড়ি থেকেই পুরো একটা যাত্রাদল নেমে যেত – ইনফ্যাক্ট আমাদের বাড়ির প্রায় সবাই সে কালে যাত্রা করত, ইনক্লুডিং বড় জ্যাঠা। বেশ কতকগুলো যাত্রা পোষাক বা জিনিসপত্রের বাক্স ছিল আমাদের বাড়িতে – সেগুলো কালে কালে আমার খেলার সামগ্রী হয়ে উঠেছিল। একদিন ছোটকাকা আমার কাছে গল্প করছে, “বুঝলি, সেবার তো আমি ছোট ছেলের রোল করছি – আর দাদা করছে বাপের রোল। তা একটা সীনে আমাকে চাবুক দিয়ে মারবে – আর আমি হাউ হাউ করে কাঁদব এমন ব্যাপার আছে। আমি রিহার্সালের সময় প্রতি দিনই দাদাকে বলছি যে সেই চাবুক মারার সীনটা একটু প্র্যাকটিস করে নিতে। কিন্তু দাদা খালি বলছে – ও হয়ে যাবে চিন্তা করিস না। তুই বললে বিশ্বাস করবি না সুকান, যাত্রার দিন আমাকে সত্যি সত্যি দাদা শঙ্কর মাছের চাবুক দিয়ে কে মার টাই না মারল। আমার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, বিশাল হাউ মাউ করছি আমি – আর কি হাততালি! সীনের শেষে গ্রীনরুমে আমাকে অনেকে বলতে এল কি অভিনয়ই না করলি তুই ও মার খাবার সীনটায় – একদম জীবন্ত। আমি আর কি বলে, জামাটা খুলে সোঁটা সোঁটা দাগ গুলো আর দেখালাম না”!

    যাত্রার গল্প অনেক আছে – আমরা ক্লাস সেভেন-এইটে উঠলে মনে পড়ে গেল যাত্রা ছেড়ে নাটকের হুজুগ বেড়ে যাবার কথা নিমোতে। সে কি যুগ ছিল – নিমোর কাছের শহর মেমারী পুরো কাঁপছে কালচারে কালচারে। তখন প্রবল সিপিএম এর জামানা। ললিত স্যার গ্যাট চুক্তি নিয়ে একক অভিনয় করে ফেলল মেমারী বাসস্ট্যান্ডে – প্রবল গরমের মধ্যে ইস্কুল থেকে পদযাত্রা করে আমাদের গোটা মেমারী ঘোরানো হল সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে। রাতের বেলায় আবার নানা একাঙ্ক নাটক বা পূর্ণ নাটকের প্রতিযোগীতা – রেল গেটের এপারে অভিযান সংঘ তো ওপারে ফারবিড ক্লাব। এদিকের রামপুরহাট-বোলপুর থেকে শুরু করে ওদিকে বাঁশদ্রোণী-হুগলীর ভালো ভালো নাটকের দল আসত। সি পি এম আমলে আর যাই হোক কোনদিন দর্শকের অভাব হয় নি নাটকের, স্পেশালি তা যদি কালীতলা পাড়ার পার্টি অফিসের আশীর্বাদধন্য হত।

    মেমারী থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আমাদের নিমোতে একাঙ্ক নাটক হত না – যা হত তাকে বলা হত থিয়েটার, যাত্রা এবং ফাংশান। সারাদিন মাঠের কাজ করে এসে সন্ধ্যেবেলা আঁতলামো মারানোতে কারো ইচ্ছা বা সায় কিছুই ছিল না। যাত্রা পুরানো দিন হতে আমাদের রক্ত মিশে গেলেও, থিয়েটারের জোয়ার আমাদের গ্রামে আনল ঘোষ পাড়ার মেজোদের অরুণদা। বার্ণপুর থেকে অরুণ বরুণ দুইভাই গ্রামে ফিরে আসার মত ইমপ্যাক্টফুল রিটার্ণ আমরা তখনও ইতিহাস বইতে পড়ি নি। নিমো ভারত সেবক সমাজে সেই প্রথম গাঁজা ঢুকল। মদের প্রচলন কমে গিয়ে গ্রামের যৌবন বরণ করে নিল গাঁজা। মদের খালি বোতলে ভরা ক্লাব ঘরে আমাদের ছোটদের প্রবেশ মোটামুটি প্রচলিত থাকলেও, গাঁজার গন্ধ আর ধোঁয়ায় ভরা ঘরে প্রবেশ ক্রমশঃ ট্যাবু-র মত হয়ে উঠল।
    অরুণদার নাটকে বরুণদা জাদু বিস্তার করতে লাগল তার অভিনয়ে। ভাইয়ের জন্য চমকপ্রদ সব ডায়লগ লিখতে তোলপাড় ফেলে দিল অরুনদা। একদিন পরে স্বীকার করতে বাধা নেই যে বরুনদা অভিনয় ভালোই করত – কিন্তু তার চেহারা তাকে সহযোগিতা দেয় নি। একে তো রোগা, তার পরে গাঁজা খেয়ে খেয়ে শরীরে আর কিছু নেই। কথায় বলে গাঁজাখোর – কিন্তু আপনাদের যাদের গাঁজা নিয়ে ডিল করার অভিজ্ঞতা আছে তারা নিশ্চয়ই জানেন যে যদি সে অ্যাডিক্ট না হয়ে যায়, তা হলে গাঁজা খায় বলে গায়ে আলাদা করে কোন ছাপ থাকে না – যেমন থাকে না টেররিষ্ট বলে আলাদা কোন অ্যাপিয়ারেন্স। সেই সময়ে নিমো ভারতে সেবক সমাজের অন্তর্ভূক্ত সব নওজোয়ানই গাঁজার কম বেশী সরগর থাকলেও যে দুজন ‘গাঁজাখোর’ তকমা বহন করতে অ্যাপিয়ারেন্সে তারা হল – বরুণ এবং সুবান। ওই যে বরুণ নিজের বাড়ি থেকে মাথা নীচু করে বাড়ি থেকে বেরুল, ছিলিমে দম দেবার আগে তাকে কেউ মুখ তুলে তাকাতেই দেখে নি প্রায়। থিয়েটারের প্রত্যেক দৃশ্যের শেষ হত বরুণের এক চমকপ্রদ ডায়লগে – সে ডায়াসে উঠে আঙ-বাঙ ডায়লগ গলা কাঁপিয়ে বলবে, সেই উত্তেজনায় গ্রাম কাঁপত এমনকি গ্রামের বউদিরাও। সেবার লাইটম্যান উদয় ক্যালানি খেয়ে গেল – লাইট কণ্ট্রোলে নতুন লোক রেখে – দৃশ্য শেষ হয়ে আছে, বরুণ আস্তে আস্তে ডায়াসের দিকে এগুচ্ছে – গ্রাম বাসী বৃন্দ উত্তেজনায় উঠে বসেছে প্রায়, এমন সময়ে উদয়ের লাইটম্যান দিয়েছে স্টেজের লাইট অফ করে! সে এক মার মার কাট কাট সিচ্যুয়েশন। পাবলিক ডিম্যান্ডে বরুণকে পরের দৃশ্যে গলা কাঁপিয়ে এমন ডায়লগ দুবার দিতে হল পর পর।

    অরুণদা নাটক লিখলেও, নাটক পরিচলনার জন্য তখনো বাইরের মাষ্টার ভাড়া করে আনাটাই দস্তুর ছিল। কখনও তপন মাষ্টার, নদ-মাষ্টার, মধু-মাষ্টার ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সেই থিয়েটারে ফিমেল ভাড়াদের আর আলাদা করে কি বলব। ফিমেল আসত বাইরে থেকে – ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের পাশেই নিমো ভারত সেবক সমাজের ঘরে রিহার্সেল দিয়ে আবার তারা ফিরত। মেয়েগুলোর নামও মনে নেই আর – তাদের অভিনীত চরিত্র দিয়েই তাদের নামকরণ হত গ্রামে। এইভাবেই শেফালী ফেমাস হয়ে গেল আমাদের মনে “ভোরের শিউলি” নাটকে অভিনয় করে।

    ক্লাবে নাটকের রিহার্সেল চলছে – মধু মাষ্টার টর্চ জ্বেলে নাটকের ডায়লয় পড়ে নিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। ঘরের সিলিং থেকে ঝুলছে খালি কোলগেট বা পেপ্সোডেন্টের কাগজের প্যাকেট গুলো – ওগুলো নাকি সিম্বলিক স্পীকার। স্টেজে কে কিভাবে পজিশনিং করে মাইক নেবে সেই প্র্যাক্টিস হচ্ছে। সমস্যা হত যখন নাটকের থেকে ক্যারাম বেশী ভালোবাসে এমন পাবলিক দলভারী করে ক্লাবে আসত রিহার্সেলের সময়। ক্লাবের এক কোনে থাকত ক্যারাম – ক্যারাম খেলা আর রিহার্সাল এই দুয়ের মধ্যে স্পেসের দখল ছাড়া আর যা নিয়ে কনফ্লিক্ট ছিল তা হল স্ট্রাইকারের আওয়াজ। মাষ্টার যেত রেগে – এই ভাবে রিসার্সেল হয়!

    একদিন ডায়লগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অরুণদার লেখা ঠিক জামছে না থ্রো করতে গিয়ে। বিড়ি মুখ থেকে নামিয়ে কে একজন ক্যারাম খেলেতে খেলতে প্রস্তাব দিল, মাষ্টার, লিখে দাও “কুহু কেকা ডাকে”! বরুণ তখন সবে সোনাগাছি থেকে শিউলিকে উদ্ধার করে নিয়ে ফিরে আসবে বলছে, সেই শিউলিকে যে নাকি তার বাবার অসুখের টাকা জোগাড় করার জন্য সোনাগাছিতে ঢুকতে বাধ্য হয়েছে। বরুণ সেই দৃশ্যের শেষে ডায়াসে উঠে কি ডায়লগ দেবে সেই নিয়ে মাষ্টার ভাবছে, ঠিক তখনই “কুহু কেকা ডাকে” ব্যবহারের প্রস্তাব। মাষ্টার গেল বিশাল রেগে – উঠে লাইটটা নিয়ে ক্লাব থেকে বেরিয়ে ট্রেন ধরার জন্য পা বাড়ালো “এটা ফাজলামো হচ্ছে”। বেগতিক দেখে পাবলিক বলল, ও মাষ্টার রাগছ কেন, আচ্ছা ব্যাথার কথা লিখে দাও – “হু হু করে উঠছে”। সাধাসাধির পর মাষ্টার ফিরে এল – রিহার্সাল শুরু হতে যাচ্ছে, কেউ জিজ্ঞেস করল, “মাষ্টার, শিউলির ব্যাথা কোথায় হচ্ছে লিখলে”? আবহাওয়া আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল – আমরা ছোটরা ঘাবড়ে গেলাম – এত সহজ প্রশ্নে মাষ্টারের রেগে যাওয়া উচিত হয় নি বলে আমরা রায় দিলাম জানালার এপাশ থেকে।

    মোবাইল জামানা চলে আসার পর পাবলিক এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল যে অ্যামেচার যাত্রা/থিয়েটার উঠে গেল আমাদের গ্রাম থেকে। এখন শুধু ফাংশন এবং বুগি বুগি ড্যান্স। পরের বার এই বুগি বুগি ড্যান্স নিয়ে আলোচনা।

    সাথের ছবি নিমো ভারত সমাজের।





  • রঞ্জন | 232312.180.6790012.243 | ১০ মে ২০১৯ ২৩:৪১381980
  • কী লেখা! আহা,
    কাছের মেমারিতে আমার বন্ধু সুব্রত সাঁইয়ের বাড়ী। ওদের বিশাল একান্নবর্তী পরিবারেও অনেকেই যাত্রা করত সেকালে। বিয়ের সময় (হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে) অনেকেই বিবাহবাজার পত্রিকা ছাপিয়ে তাতে পদ্য লিখত।
    সুকির লেখায় সময় বদলে যাওয়ার ছবি দারুণ ফুটেছে।
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ১১ মে ২০১৯ ০৮:৩৮381981
  • ন্যাড়া যে কি কয়, অ্যাক্টিভিজম-এর সাথে ক্যাওড়ামির কোন বিরোধ নাই
  • শিবাংশু | ১১ মে ২০১৯ ২৩:১৭381982
  • এই সিরিজটাতে সুকি একেবারে সের্গেই বুবকা। নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক.....
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১২ মে ২০১৯ ১১:৩৪381983
  • রঞ্জনদা,
    তাই নাকি? মেমারীর কোথায়? প্রপার মেমারী হলে আমি চিনব হয়ত - আর আশে পাশের হলে আমার কাকা-জ্যাঠারা চিনবে অবশ্যই। আর হ্যাঁ, পদ্য লেখা ব্যাপারটা এখনো কিছু কিছু জায়গায় আছে, তবে খুব কম।

    অরণ্যদা, শিবাংশুদাকেও ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য। শিবাংশু-দার স্নেহ বরাবরই একটু বেশী অনুজদের জন্য :)
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১২ মে ২০১৯ ১১:৩৫381984
  • বিষ্ণুপুর ঘরানা
    --------------------

    গতকাল সন্ধ্যেবেলা ইদানিং কালের বাংলা চলচিত্র, টিভি, নাটক এবং সংগীত জগতের আভ্যন্তরীন খবরাখবরে আমি যেভাবে আলোকপ্রাপ্ত হলাম, তাতে করে আগামী বছর খানেক আর আনন্দলোক না পড়লেও চলবে।

    এমনিতে আজকাল বাড়িতে বেশী থাকাও হয় না, আর থাকলেও কোথাও বিশেষ যাওয়া হয় না আড্ডা মারতে। কিন্তু তাবলে তো আর তারকদার আহ্বান উপেক্ষা করা যায় না! একে তো তারকদা আমার অনেক দিনের চেনাশুনা মাইডিয়ার টাইপের প্রিয় দাদা – তার উপরে আমাদের বর্ধমানে শ্বশুর বাড়ি করেছে পৌষালি বৌদিকে বিয়ে করে। তাই কাল গিয়েছিলাম তারকদার বাড়ি – শ্বাশুড়ি এসেছেন বর্ধমান থেকে, আমাকে পোস্ত খাবার লোভ দেখালো। এই সব ডেডলি লোভনীয় কম্বিনেশনের জন্য আমি গিয়ে হাজির হলাম সন্ধ্যেবেলা।

    গিয়ে দেখলাম তারকদার থেকেও তারকদার শ্বাশুড়ি-মা আরো বেশী মাইডিয়ার। ঘরে ঢুকতেই প্রশ্ন চলে এল, “কি পোস্ত খাবে সুকান্ত? আলু-পোস্ত, ঝিঙে-পোস্ত, পোস্ত ভাজা, পেঁয়াজ পোস্ত, ট্যমেটো পোস্ত?” – আমি ঘাবড়ে গেলাম, চাপাচাপির ফলে জানালাম যে, যেহেতু চয়েস দেওয়া হচ্ছে, তাহলে পেঁয়াজ পোস্ত-ই হোক। এবার বর্ধমানের পাবলিক বলে, মুড়ি খাওয়ার প্রস্তাব উঠবে না এটা তো আর হতে পারে না! তারক-দা কলকাতার কাছে বালি-বেলুড়ে বড় হয়েছে, তাই মুড়ির মর্যাদা নিয়ে দোটানায় থাকে বরাবর। খালি বারবার বলছে, “মুড়ি তো ইউরিয়া দেওয়া!” শ্বাশুড়ি-মা প্রতিবাদ করলেন, “আরে বাবা ইউরিয়া দেওয়া নয়, আমি বাড়ি থেকে ভাজিয়ে এনেছি। বৌদি বলল, “সুকান্ত তুমি একে একটু বুঝিয়ে বল তো যে তরকারী দিয়ে মুড়ি খাওয়া কেমন লোভনীয় জিনিস”। আমি তারকদার মুড়ি বিষয়ক ট্যাবু ভাঙাতে উদাহরণ দিলাম আমাদের বর্ধমানে জলখাবার বেলা মুড়ি কেমন আলুর দম, বা কুমড়োর তরকারী দিয়ে খাওয়া হয়।

    তো এই বিষয়ে, আর এক অন্য তারকের গল্প উঠে এল – এই তারক হল গিয়ে আমার অনেক দিনের চেনাশুনা যে নিমো গ্রামে গ্রীষ্মকালে আইসক্রীম এবং শীতকালে ঘুগনী বিক্রী করে সাইকেলে করে। তারক আগে ঘুগনীর সাথে রুটি বিক্রী করত – রুটি মানে পাউরুটি, যেগুলো পা দিয়ে ময়দা চটকে বানাতো সেলিমদা পান্ডুয়াতে। কিন্তু বাঙালী রুটি খেয়ে আর কতদিন কাটাবে! ফলে কিছুদিন পরে দেখা গেল তারক স্টীলের থালা এবং মুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘুগনী-মুড়ি খাও তারকের কাছ থেকেই থালা নিয়ে এবং তারপর সেই থালা ধুয়ে আবার তারকের কাছে জমা। তো যাই হোক এই সব উদাহরণ শুনে দেখলাম আর তারক-দা মুড়ির উপকারীতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে আর সন্দেহ প্রকাশ করল না।

    মুড়ির মিমাংসা হলে – চায়ের গল্প এল। দুধচা এল সঙ্গে আবার বর্ধমানের চানাচুর - শ্বাশুড়ি-মা আবার মনে করিয়ে দিলেন, “সব প্লেনে করে নিয়ে এনেছি সুকান্ত – মুড়ি, পটল, ডাঁটা- দেশের জিনিসের স্বাদই আলাদা”। কেবল টাটকা মাছটা আনতে পারেন-নি। চা খেতে খেতে ভূতের গল্প হল – তারকদারা সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিল বম্বের কাছে ‘মাথেরণ’ বলে একটা জায়গায়। সেখানে একটা রিসর্টে ছিল ওরা – ২০৩ এবং ২০৫ নম্বরে ঘরে। আমাকে বললেন, “ভুত তো আমার চিনতে আসুবিধা হয় না। সেই কবে থেকে ওদের নিয়ে কারবার করছি। কোল ইন্ডিয়াতে কাজ করত – বাংলো বাড়ি বা কোয়ার্টারে যখন থাকতাম সেগুলো তো ব্রিটিশ পিরিওডের সিলিং উঁচু ঘর। এই হোটেলটা তেও তাই। রাতের বেলা ভুতো-কে (নাতি, তারকদার ছেলে) পাশে নিয়ে ঘুমাচ্ছি, ও তো ঘুমিয়ে কাদা – আমি শুনি ছমছম নূপুরের শব্দ ঘরের মধ্যে এবং বাইরের বারান্দায়। একটু ভয়ও যে হচ্ছে না তা নয় – আমি তো এতদিন বাঙালী ভূত নিয়ে কাটিয়েছি। এই বিদেশে হিন্দুস্তানী ভূত কেমন হবে কে জানে! আমি তো ভূতোর আঙুলটা পাকড়ে শুয়ে রইলাম। খানিক পর নুপুরের সাথে যোগ হল একটা পাতলা শীষ দেবার মত শব্দ। কেমন যেন মিলিয়ে যাচ্ছে – আবার বারান্দায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেই শব্দ”। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মনে হচ্ছে অপঘাতে মরা ভূত”। শ্বাশুড়ি-মা বললেন, “তুমি কি করে জানলে? তারক তো পরের দিন খোঁজ নিল – সেই বাড়িতে নাকি কোন নাচলেওয়ালীকে মেরে দেওয়া হয়েছিল। তারই আত্মা এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়ায়”। আবার যোগ করলেন, “পাহাড়ি হোটেল তো – মাঝে মাঝে কারেন্ট অফ হয়ে যায়, জেনারেটর চালায়। কিন্তু ঘরের এ্যাতো বড় টিভিটা জেনারেটরে চলে না। আমার মেয়ে আর জামাই তো মুখচোরা – যাবে না, আমি নিজেই গিয়ে বলে এলাম ওদের, টিভি নেহী চলেগা তো পয়সা কাটকে দেগা”।

    অন্য একটা গেষ্ট ছিল তখন ঘরে, তিনি আবার চা খেতে খেতে বললেন, “আমার সাথে ঘরে একটা ভূত প্রায় ১৫ বছর ছিল বিয়ের আগে পর্যন্ত। এই ধর প্রচুর গরম করছে, কিন্তু ফ্যানের সুইচটা দূরে – আমি মনে মনে ভাবলাম ফ্যান চালাবার কথা, দেখলাম ভুতটা সেই ফ্যানটা অন করে দিল। ভালো ভুত”। আমি ভাবলাম জিজ্ঞেস করি যে ভাত খাবার পর একটা মিষ্টি পান খেতে ইচ্ছে হলে ভুতটা নীচে থেকে পান এনে দিত কিনা। কিন্তু ভদ্রলোকের সাথে আগে আলাপ নেই – কি ভাববেন সেই জন্য আর জিজ্ঞেস করলাম না। এবার তারকদার পালা এলে তারকদা একশো পঞ্চান্ন বারের মত তার সেই ইংল্যান্ডের চেষ্টার শহরের হোটেলের ঘরে ভুতের গল্পটা করল। তারকদা সেবারে কোম্পানীর কাজে চেষ্টার গ্যাছে। হোটেলের ২২ নম্বর ঘরটা দেওয়া হয়েছে – রাতের বেলা তারকদা শুনছে টয়লেটে ছড়ছড় জল পরার শব্দ। উঠে গিয়ে ট্যাপটা বন্ধ করে দিল রাত সাড়ে বারোটায় – ভোর তিনটেয় আবার জল পরা শুরু, আবার ট্যাপ বন্ধ করা – সকাল চারটেয় আবার এক কেস। পরের দিন রিশেপস্যানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে তারা ঘর বদলে দেয় কোন প্রশ্ন ছাড়াই – এর পরে নাকি আর এক কলিগেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই ঘরে থেকে। সেই গল্প শুনে শ্বাশুড়ি-মা পেঁয়াজপোস্ত রাঁধতে রাঁধতে বললেন, “তুমি তারক ভীতু মানুষ – ওটা কিছুই নয়, পুরানো হোটেল তাই ট্যাপটা লুজ ছিল”।

    আমার পালা এলে বললাম নিমোতে তেমন ভূতের কেস নেই। ঘটনা কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয় – সব গ্রামের মত নিমোতেও ভালোই ভূত আছে। সময় বেশী ছিল না বলে আমি আর ঘাঁটলাম না, নাহলে রায়েদের বাড়ির জামগাছের ব্রহ্মদত্যিটা যে পরে ওদের বাড়িরই বড় ছেলে বাচ্চুর উপর ভর করে তাকে গণৎকার এবং বাবাজী টাইপের বানিয়ে দেয়; তার পর নিমো গ্রামের পাশে সেই পঞ্চমুন্ডি আসনটা যেখানে আমাকে ছোটবেলায় যেতে হত যজ্ঞডুমুর গাছের ডাল পারতে (দুর্গা পুজোতে নবমীর হোমে যে পাঁচটা গাছের ডাল লাগত তার মধ্যে যজ্ঞডুমুর একটি), সেখানে গিয়ে কি দেখেছিলাম; বা নিমোর একমাত্র শ্মশান গরাঙ্গের পারে সেই বটগাছটা যার তলায় ছড়িয়ে আছে কালো কাঠকয়লা, ভাঙা ঘট, কিছু টুকরো কাঠ – ভর দুপুরেও সেই বটগাছের তলায় বসলে কি ফিসফাস ভেসে আসত; বা বাঁকুর বউ চাঁপি গলায় দড়ি দিয়ে মরার পর একদিন আমাদের পড়ার তপুদাকে কেমন করে সাইকেল থেকে ঠ্যেলে ফেলে দিয়েছিল – সেই সব গল্প না হয় পরে একদিন লিখব।

    গল্প করতে করতে খাবার সময় হয়ে গেল – বলতে নেই দারুণ খেলাম, এবং যা খাই তার থেকে অনেক বেশী খেয়ে ফেললাম – বাঁশকাঠি চালের ভাত, ডাল, পালংশাকের ঘন্ট, পেঁয়াজপোস্ত, ঝিঙে-চিঙড়ি, দই-মাছ। জম্পেস হল – তারদার শ্বাশুড়ি ভাগ্য ভালো, কিন্তু তারকদাকে খাইয়ে কি আর শ্বাশুড়ি-মা সুখ পান? কে জানে! তারকদা খায় তো এই টুকু। খেতে খেতে চাল নিয়ে একটু আলোচনা – বাই দি ওয়ে শ্বাশুড়ি-মা এখন বর্ধমানে সেটেল করলেও আদপে বাঁকুড়ার মেয়ে, সেখানেই বড় হয়ে ওঠা। আমি বললাম এই চাল ঠিক বাঁশকাঠি নয়, ব্যাঙ্গালোরের দোকান ঠকাচ্ছে – আলোচনার পর স্থির হল যে এ চাল প্রপার বাঁশকাঠি না হলেও, খেতে বেশ মিষ্টি। বাঁশকাঠি চাল দেশের দিকে কত করে কিলো সে নিয়ে খানিকক্ষন টানাপোড়েন – আমি বললাম ৪২ টাকা কিলো, উনি বললেন ৫০ টাকা।

    খাওয়া যাওয়ার পর আসল জিনিস শুরু – সাড়ে নটায় জি টিভির ‘সা রে গা মা পা’। পৌষালি তো খুবই ভালো গান গায় – ট্রেনড ক্লাসিক্যাল গায়িকা, এখন ব্যাঙ্গালোরে গান শেখায়। শ্বাশুড়ি-মার সাথে কথা বলে যা বুঝলাম তা হল, উনাদের পরিবারে গানের চল আছে, এবং তা বিষ্ণুপুর ঘরানা। পৌষালি গান ছাড়াও আবার ফেঞ্চ শেখায় – আর তারকদা তো ফ্রান্সে পোষ্ট ডক করেছে। তাই বাড়িতে মাঝে মাঝেই ফেঞ্চে কি সব কথা বার্তা চলে – গেষ্ট যদি ফ্যামিলিয়ার না হয়, তাহলে হয়ত ভাববে তাকে না জানানোর জন্য তাকে সামনা সামনি ফরাসী ভাষায় গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। কাল যেমন শুনলাম তারকদা মাঝখানে বলল, “ক্যুই আ ওভ্র্যাত লা ফেনত্রে ...” বা এই ধরণের কিছু, যার মোদ্দা কথা জানালাটা কে খুলে রেখেছে, মশা আসছে।

    প্রোগ্রাম শুরু হল – আমি অবাক হয়ে দেখলাম শ্বাশুড়ি-মার জ্ঞানের বহর। প্রথমে গৌরব গাইতে এল – ভারডিক্ট হল, এর বয়সের গাছপাথার নেই, সেই কবে থেকে গেয়ে যাচ্ছে – তবে ভালো গায় – এর ঠাকুরদা না কে যেন কবে বাংলা সিনেমায় গান গেয়েছিল। আর যা জানতে পারলাম তার সামারি করে দিচ্ছি নীচেঃ

    ১। মোনালীর নাকি পরচুল পরে থাকে। এমনিতে ওর চুলে কোয়ালিটি ভালো নয় খুব একটা – প্রায় ঝাঁটার কাঠির মতই বলা যায়। শ্রীকান্ত আচার্যর থেকে আর একটু বড় চুল মোনালীর। তবে গায় ভালো – বাপ শক্তি ঠাকুরের থেকে সুরটা পেয়েছে। রবীন্দ্র সংগীতটা ভালোই গায় – ছাড়া “সওয়ার লু …” এবং “মোহ মোহ কি ধাগে…” গান দুটিও চমৎকার গেয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম মোনালীর বিয়ে হয়ে গ্যাছে কিনা ----- শ্বাশুড়ি-মা বললেন, “ওই তো চ্যাং-চুংয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল – মাঝে মনে হয় ডিভোর্সও হয়ে গিয়েছিল, এখন তো আবার একসাথে থাকছে”। তবে একটু বেশী পাকামী করে মেয়েটা সা রে গা মা পা-তে, ওকে পাকামীর জন্যই রেখেছে।

    ২। অঙ্কিতা মেয়েটা কি ভালো গায় – সেই চ্যাম্পিয়ান হবে। তবে ফাইন্যালের দিন কি হবে কিছুই বলা যায় না – সুর একটু ওদিক এদিক হয়ে গেলেই গেল! অঙ্কিতার মা-ও এতো ভালো গায় – আর বাপটাও খুব সাপোর্ট দেয়। ছেলেদের মধ্যে প্রীতম – ওই তো রাঘবের কাছে গান শেখে সেই ছোটবেলা থেকে, তৈরী গলা। জানালেন, এই স্নিগ্ধজিতের গান একদম ভালো লাগে না তাঁর, বিদেয় হলে বাঁচি। আমি জানতে চাইলাম, আর নোবেল-কে কেমন লাগে? উত্তর এল, “দাঁড়াও না, এরও সময় হয়ে এসেছে – এদের পলিটিক্স নিয়ে সেদিন ফেসবুকে লিখেছিল তো কে। তুমি চিন্তা কোরো না, খুব শিগগিরি এর টাইম খতম হয়ে যাবে”।

    ৩। আমি বললাম শান্তনু মৈত্র মনে হয় একটু বেশী বাজে বকে। শ্বাশুড়ি-মা বললেন, “ওর স্বভাব চরিত্রও খুব একটা সুবিধার নয়”। আমি বললাম, ও তো বিবাহিত। উত্তর এল, “তাতে কি হয়েছে – অজয়ের মেয়েটার সাথে কি একটা ছিল। মেয়েটা ভালো গায়, বাপের কাছ থেকে পেয়েছে। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল তো – এখন বেলুড়ের দিকে কোথায় থাকে”। আমার অবিশ্বাস হল, ধুর তেমন কিছু হয় নাকি? আমাকে বলা হল, “সুকান্ত তুমি অনেক পিছিয়ে আছ দেখছি – এতো দিন বিদেশে থেকে দেশের খবর তো দেখছি কিছুই রাখো নি!”

    ৪। শ্রীকান্ত আচার্যের ব্যাপার আলাদা। নিজের মা-কে খুব ভালোবাসে জান? আচ্ছা, ওর বউয়ের নাম কি বলত? অর্ণা শীল – ভালো মেয়ে।

    ৫। এবার এল স্নিগ্ধজিত গান গাইতে – সঙ্গে গৌতম হালদার। সত্যি বলতে কি যেভাবে কাল কবিতা আবৃত্তি করছিল গৌতম হালদার তা আমার কাছে অত্যন্ত অতিনাটকীয় মনে হচ্ছিল। শ্বাশুড়ি-মা বলে দিলেন, “ন্যাকা!” কবিতা আবৃত্তি করতে করতে গৌতম হালদারের চোখে জল দেখা গেল – তারকদা কালকেই চোখের ডাক্তার দেখিয়ে ঠিক দূর থেকে ঠাওর করতে পারছিল না সেটা আদপেই চোখের জল কিনা। উনি জানালেন, “ওটা চোখের জলই তারক, এই করে খাচ্ছে – চোখে জল আনা কি এমন ব্যাপার”। আবার নিজের মনেই যোগ করলেন, “সোহিনীকে ছাড়ার সময় কান্না আসে নি?”। আমি কমেন্টটা বুঝতে না পারলে, আমাকে জানানো হল সব ব্যাকগ্রাউন্ডের খবর – ‘তুমি যে আমার’ বা এই ধরণের কি একটা প্রোগ্রাম আছে টিভিতে সেখান থেকে তিনি আপডেটিত হয়েছেন। গানের শেষে একটা সোলো আবৃত্তি করতে এগুলো গৌতম হালদার, আমাকে উনি বললেন, “দ্যাখো সুকান্ত এবার পা তুলে তুলে কেমন নেচে নেচে আবৃত্তি করবে। আমি গৌতমের দু-তিনটি নাটক দেখেছি, সেই নেচে বেড়ায়। তবে একটু চুপ কর এবার, ভালোই লাগে কিন্তু শুনতে”। সত্যি দেখলাম গৌতম বাবু পা তুলে তুলেই নেচে নেচে রবি ঠাকুর আওড়ালেন।

    সা রে গা মা পা শেষ হয়ে গেল। রাত হয়ে যাচ্ছিল – আমি উঠলাম ইনফরমেশন ওভারলোডেড হয়ে। একে তো প্রচুর খেয়েছি, তার উপর এই তথ্যভার। ভাবছিলাম কেউ যদি হুইলচেয়ারে করে উবেরে উঠিয়ে দেয় তো খুব ভালো হয়।

    আমাকে বললেন তুমি কিন্তু বর্ধমান এলে আমাদের বাড়ি আসবে। ভালো মিষ্টির দোকান হয়েছে আজকাল ওদিকে। মিষ্টির আহবান কি আর না করা যায়! পরের বার গেলে দ্যাখা হবে আর ইন্ডাষ্ট্রির আপডেট-টাও একটু নিয়ে আসব, ফালতু আনন্দলোক কিনতে হবে না!

    একটাই আফসোস রয়ে গেল কালকে, শ্রাবন্তীর বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভিতরের খবরটা জানা হল না!
  • Amit | 9003412.218.7812.41 | ১২ মে ২০১৯ ১১:৫১381985
  • ইয়ে মানে ভূত টুত নিয়ে মায়া পাতায় কুসংস্কার বলে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দি বটে, কিন্তু একা থাকলে এখনো মাইরি আমি টিভি ছেড়ে ঘুমোই, ওটা চললে মনে হয় সঙ্গে এক দুজন আছে । নাহলে আমার সাহস একদম ফুড়ুৎ।
  • রঞ্জন | 232312.162.127812.195 | ১২ মে ২০১৯ ২২:১৮381986
  • সুকি,
    আমার বন্ধুর নাম সুব্রত সাঁই। ওরা বেশ বড় সাঁই পরিবার।
  • dd | 670112.51.6712.239 | ১৩ মে ২০১৯ ০৭:১০381988
  • এই যে সুকি লেখে, সব তো রোজকার মানুষ জন। কিন্তু কেমন ভাবে কতো গল্প খুঁজে পায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে। এটা একটা ট্যালেন্ট। আরেকজন লিখতেন - tkn নামে, সেও দেখতাম প্রতিদিনের মানুষজন, নিত্তি দ্যাখা হয়, সবার মধ্যেই কতো গল্পো খুঁজে পান।

    আমি অনেক ভেবেও এই দীর্ঘ জীবনে সেরকম কোনো স্টোরি পাই না। তা হলে আর আত্মজীবনী লিখিবো কী করিয়া?

    খ বাবুকেও দেখলাম, (অন্য এক টইতে) নিজের আত্মজীবনী দেড় প্যারায় শেষ করলেন। অনুপ্ররিত হয়ে আমিও আমার অটোবায়োগ্রাপি প্রায় দুই প্যারা লিখেই হাঁপিয়ে গ্যালাম।
  • রঞ্জন | 232312.176.78.233 | ১৩ মে ২০১৯ ১১:৪০381989
  • ্ডিডি,
    নো ইয়ার্কি! 'আমার সত্তর' কেমন নামিয়েছিলেন!
    আসলে আপনি মহা আলসে, খালি ল্যাদখেয়ে গড়িয়ে প্রচুর বই পড়েন, রাম খান আর ছবি আঁকেন। শুক্কুরবারের পদ্য লেখাও বন্ধ হওয়ায় বাংলা কবিতা শক্তি চাটুজ্জের পরবর্তী অবতারকে হারালো।
    কখনও সখনও গা ঝাড়া দিয়ে উঠে কলম হাতে নিলেই ----!
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১৩ মে ২০১৯ ২০:৫৩381990
  • অমিতাভদা, ডিডিদা এবং রঞ্জনদা ধন্যবাদ।

    ডিডি-দা পদ্য আমি পড়ি নি - কোথায় পাওয়া যাবে?
  • dd | 670112.51.1223.171 | ১৩ মে ২০১৯ ২২:০৮381992
  • নাঃ, অন্য কোনো পার্ট নেই। ঐ দুটোই।

    সত্তরের দশকও তো শেষ হয়ে গেলো।
  • রঞ্জন | 238912.69.5678.131 | ১৩ মে ২০১৯ ২২:৩৩381993
  • গবু,
    অনেক ধন্যবাদ। আমি দুবারে আট কপি কিনেছিলাম, বিলিয়েছিলাম অনেক বন্ধুকে। সেও সাত-আট বছর হয়ে গেল। আজ আপনার সৌজন্যে আবার একটানা পড়লাম।

    দীপ্তেন,
    দম আটকানো ভাব। অমোঘ শেষ লাইনটা --রক্তের গন্ধ।
    তবু বেঁচে আছি, এই অনেক মনে হয়।
  • ন্যাড়া | ১৪ মে ২০১৯ ১০:৫৪381994
  • এই মাসিমাদের আমি চিনি। আমার কচি বয়েসে একবার আমি এরকম এক মাসিমার সঙ্গী হয়ে দেশে ফিরছিলাম। আলাপ হবার পরে চতুর্থ বাক্যে জিগেস করেছিলেন, "ব্যাতন কত?"
  • রঞ্জন | 238912.69.5678.131 | ১৪ মে ২০১৯ ১১:০৪381995
  • @ন্যাড়া,
    ঃ)))।

    সুকি,
    বেশ কয়েকবছর আগের কবিতার টইয়ে (১) ডিডির নিয়মিত শুক্রবারের কবিতা/ছড়া পাওয়া যাবে।
  • Titir | 892312.210.780112.27 | ১৫ মে ২০১৯ ০০:২৩381996
  • সেদিন এই নিমো নামটা কিছুতেই মনে পড়ছিল না। তারপরে মনে করার চেষ্টা করলাম ডিজনির মুভি দিয়ে। পেয়ে গেলাম ফাইন্ডিং নিমো। বেঁচে থাক নিমো গ্রাম তার সব কিছু নিয়ে।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ১৯ মে ২০১৯ ০৮:২০381997
  • ইউ টেল মি
    --------------------

    কিছুদিন আগে লিখেছিলাম যে আমাদের নিমো গ্রামের ঘোষ পাড়ার শিবে জ্যাঠা আমার মেমারী ইস্কুলে ফার্ষ্ট হবার কথা শুনে কি কষ্ট পেয়েছিল। মানে কষ্ট ঠিক আমার ফার্ষ্ট হবার জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নীচে নামতে নামতে কোথায় গ্যাছে যে আমি পর্যন্ত ফার্ষ্ট হচ্ছি – এই ভাবনাতেই যা কষ্ট আর কি। আমি এও বলেছিলাম যে আমার ইংল্যান্ডে পড়তে যাওয়া দেখে সাহেবদের দেশেও শিক্ষা ব্যবস্থার কি হাল হয়েছে তা অনুভবের আগেই জ্যাঠা পরলোক গমন করে। তাই ভাবলাম যে জ্যাঠা বেঁচে থাকলে কি কি কারণে আরো বেশী কষ্ট পেত আমার পি এইচ ডি করা দেখে সেটাও লিখে রাখি। অনেকে ভাবতে পারেন যে আমি নিজেই নিজেকে গ্যাস দেবার জন্য এবং বার খাওয়াবার জন্য এই সব লিখছি। তবে এতদিনে নিশ্চয়ই আমার অ্যাকাডেমিক এলেম নিয়ে আপনাদের একটা হালকা ধরণা হয়ে গ্যাছে – সেই অনুযায়ী আপনারা এক চিমটি গন্ধক লবণ সহকারে আমার বিলেতের বাতেলায় ডুবে যান।

    প্রচুর পাবলিক যেমন দাবি করে রবি ঠাকুর নাকি বাঙালীর জন্য সবকিছুই লিখে রেখে গ্যাছে – তেমনি আমি ভেবে দেখলাম, আমার নিজের কথা আমি নিজেই অনেক আগে ভাগে এদিক ওদিক বলে ফেলেছি। যেমন বলেছি যে সাবজেক্ট হিসাবে মেটালার্জি জিনিসটা অনেকটা হোমিওপ্যাথির মত – ওই বিশ্বাস, ঘোড়ার ল্যাজের চুল, তিনবার ঝাঁকানো, শনিবারে টক না খাওয়া, এই সব মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরী। এই ব্যাপারটা ধরতে আমার ফার্ষ্ট এবং সেকেন্ড ইয়ার লেগেছিল – এবং ধরতে পাবার পর বললে বিশ্বাস করবেন না থার্ড-ফোর্থ ইয়ার, মাষ্টার্স এবং পি এইচ ডি করাকালীন আমার থেকে বেশী নাম্বার পেয়েছে কোন সাবজেক্টে আমার ক্লাসের অন্য কেউ, সেটা প্রায় হয় নি বললেই চলে। ইংল্যান্ডে গিয়ে বুঝতে পারলুম ইঞ্জিনিয়ারিং পি এইচ ডি জিনিসটা অনেকটা মেটালার্জীর মত। মানে একটা ডিপারমেন্ট থাকবে, প্রোফেসর থাকবে, একটা ল্যাব, কিছু মেশিনপত্র – মাঝে মাঝে কনফারেন্স ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে। কিন্তু সবার উপরে থাকতে হবে বিশ্বাস!

    শুরু করার দুই-তিন মাসের মধ্যে একটা রিসার্চ পরিকল্পনা খাড়া করে সুপারভাইজারের কাছে গেলাম – সব শুনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি বলেন”? তিনি মুচকি হেসে বললেন, “ইউ টেল মি”! আমি যা বলার বললাম – তিনি বললেন আরো একটু ভাবো। আমি রসিকতা করলাম, “ভাবা প্র্যাক্টিস শুরু করব কি”? তিনি বললেন, “হোয়াট”? আমি বললাম, “কিছু না – দেশীয় প্রবাদ বাক্য”। কিছু দিন পরে আবার দুই একটা এক্সট্রা জিনিস যোগ করে নিয়ে গিয়ে বললাম, “এবার কেমন লাগছে?” তিনি আবার চেয়ারের পিছনের দিকে হেলে গিয়ে বললেন, “ইউ টেল মি”! আমার তো এবার নিমোর বাড়িতে বাঁকুর বউয়ের কুমড়ো কিনতে আসার কথা মনে পড়ে গেল। বাবা দাম কত দেবে জিজ্ঞেস করলেই যে বলত, “দাদা, আপনি বলেন”। আমার সুপারভাইজার আবার কেমব্রীজে আগাগোড়া পড়াশুনা করা – সাবজেক্ট জগতে নাম আছে, ফান্ডাও আছে বেসিক জিনিসপত্রে – তবে কিনা সেই কবে ঘি খেয়েছে,আর এখনো আঙুল শুঁকছে এমন টাইপের। যা বোঝার বুঝে গেলাম – নিমো বটতলায় হোমিওপ্যাথির বিখ্যাত নারাণ ডাক্তার কি করত এমন অবস্থায় আমি ভেবে নিলাম। সুপারভাইজারকে বললাম, “নো ওরি, আই উইল টেল ইউ লেটার”। সেই ‘লেটার’ জিনিসটা আমি খুব কম এনেছিলাম পি এইচ ডি-র বাকি সময়টায়। নিজের মনেই এটা সেটা করতে লাগলাম। আমাদের পাড়ার হাজরাদের বদে-কাকা যেমন তার ভাইপো বাণীব্রত সমন্ধে বলেছিল, “এ ছেলে কিছু একটা হবে বুঝলি – এই সাপ কাটছে, এই ব্যাঙ কাটছে ঘরে”। আমার অবস্থা তখন সেই বাণীব্রত-র মত – এটা মেশাচ্ছি, সেটা মেশাচ্ছি। বাণীব্রত যেমন পরে কিছু একটা হয়েছিল, মানে মেমারী-তে ‘আবাকাস’ ইস্কুলের ফ্র্যাঞ্চাইজ নিয়ে ছিল – তেমনি আমি বছর খানেক পরে একটা রিসার্চ রিপোর্ট জমা দিলাম স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ।

    রিসার্চ রিপোর্ট জমা দিয়ে আবার এটা সেটা মিশিয়ে, এর সাথে সেটা জুড়ে এক্সপেরিমেন্ট করে, বাচ্ছা গুলোর মাঝে মাঝে ল্যাব ক্লাস নিয়ে বেশ কাটাচ্ছিলাম। একদিন দেখলাম মেল এসেছে একটা ডিপারমেন্ট সেক্রেটারী অ্যান-এর কাছ থেকে যে অমুক দিনে সন্ধ্যাবেলা পুরষ্কার প্রদান, চলে এসো। আমি উত্তর দিলাম যে, মনে হচ্ছে অ্যান তুমি ভুল করে আমাকে মেল পাঠিয়েছো, এটা অন্য কেউ হবে। অ্যান বলল, না ওটা তোমারই পুরষ্কার! অবাক হয়ে এবার অ্যান-কে ফোন – যা বুঝতে পারলাম যে সেই বছরে গোটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে আমার রিসার্চ রিপোর্ট নাকি আউটস্ট্যান্ডিং হয়েছে এবং তাই আমি একটা পুরষ্কার পাব কোন এক প্রাক্তনীর স্মরণে! খবরটা বুঝতে পারার পরেই আমার চোখের সামনে শিবে জ্যাঠার মুখটা ভেসে উঠল। টয়লেটে গিয়ে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে নিজের মনেই বললাম, “বিশ্বাস কর জ্যাঠা, এতটা কষ্ট তোমায় আমি দিতে চাই নি!”

    ফার্ষ্ট ফরোয়ার্ড প্রাইজ নেবার দিন – কলেজের অডিটোরিয়ামে পুরষ্কার দেওয়া হবে, সঙ্গে দুজন গেষ্ট নিয়ে যাওয়া যাবে, ডিনার আছে। আমার সাথে আর কে যাবে! যাকেই জিজ্ঞেস করি, সেই বিজি – আর কেই বা বন্ধুর পুরষ্কার নেওয়া দেখতে যেতে চায়! সে যতই ডিনারের লোভ দেখানো যায়। শেষ পর্যন্ত মনে হয় যোসেফ আমার সাথে যেতে রাজী হল। আমরা ল্যাব শেষে ময়লা জিন্স, জামায় স্যাম্পেল পলিশের দাগ, হাতের নখের ফাঁকে ল্যাব জাত ময়লা নিয়ে গিয়ে হাজির হলাম পুরষ্কার প্রদানে। গিয়ে তো আমাদের ইয়ে ট্যাঁকে উঠে গেল। ইংরেজ জাত – সব টাই-ফাই পরে চলে এসেছে। যারা পুরষ্কার পাবে তাদের বাপ মা-ও জম্পেস ড্রেস লাগিয়ে এসেছে। আমাদের দেখে সবাই কেমন আড়চোখে তাকাচ্ছে – ভাবছে সিওর এরা ফ্রী ডিনারের লোভে এসেছে। আমি আর কি করি, চুপিচুপি গিয়ে পিছনের বেঞ্চে বসলাম। এক সময় ডাক এল স্টেজে, পারলে প্রায় বুকে হেঁটে গিয়ে নিই এমন ভাবে নিশ্চুপে গেলাম। সার্টিফিকেট নিয়ে চলে আসছি, বলল, “আরে দাঁড়াও চেকটা নিয়ে যাও!” আমি তো ফ্রী খাবার আর সার্টিফিকেট পেয়েই খুশী – তার উপর আবার চেক দিচ্ছে! বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি এবং আরো একবার মেটালার্জী-কে ভালোবেসে ফেললাম। সীটে ফিরে টুক করে চেক-এর অঙ্কটা দেখে মন আরো খুশ! আমার মাসিক স্কলারশিপের প্রায় চারগুণ! বেশ কিছুদিন ধরে ল্যাপটপ কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছিলুম – দুঃখ ছিল যে পি এইচ ডি শেষ হবার আগে সেই ল্যাপটপের টাকা জমবে না বলে। এবার সব সুরাহা হয়ে গেল – এতো আনন্দ পেলাম যে ওই পোষাক পরেই সাহেবদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে প্রচুর ডিনারে খাওয়া হয়ে গেল। দু একবার তো একটা সাহেবকে হালকা পুস-ও করে দিলাম ডেজার্টের জায়গা থেকে। তার পরের দিনই আহসান-কে সঙ্গে নিয়ে ‘জন লুইস’ ডিপারমেন্ট স্টোরে গিয়ে সোনি ল্যাপটপ কেনা – সেই সোনি আমাকে অনেক দিন বিশ্বস্ত ভাবে সঙ্গ দিয়ে গ্যাছে।

    এই ভাবেই চলছিল – আমার সুপারভাইজার দুই জন প্রায় সব ব্যাপারেই মাইডিয়ার টাইপের লোক। আমিও আজ আমেরিকা, কাল সুইজারল্যান্ড, পরশু ফ্রান্স – নানা ল্যাব ঘুরে এক্সপেরিমেন্ট এবং কনফারেন্স করে সময় কাটাচ্ছিলুম। খুব রেয়ার সুপারভাইজারের ঘরে গিয়ে আলোচনা এবং “ইউ টেল মি” শোনা। সে এক বিশাল মস্তির টাইম। দেখতে দেখতে বছর দুই হয়ে গেল – এবার একটা রিসার্চ রিপোর্ট জমা দিলাম “ইউ কে ইন্সটিটিউট অব করোশন” অথোরিটি কে। আবার একবার শিবেজ্যাঠাকে দুঃখ দিলাম – সেবার পুরষ্কার নিতে ডাকল ম্যানচেষ্টারে। হোটেল, ভালো খাওয়া দাওয়া সবই দিল। পুরষ্কার নিতে উঠে শুধু একটা সার্টিফিকেট পেলাম। ততদিনে আমার লোভ বেড়ে গ্যাছে – শালা চেক নেই কেন? আমি গিয়ে ধরলাম চেয়ারম্যান প্রোফেসর স্টুয়ার্ট-কে – বললাম, “পয়সা দেবেন না”? বলল, “আরে আমাদের ফাইন্যান্সে কি একটা হালকা ইস্যু হয়েছে, তুমি চিন্তা করো না, আমি পাঠিয়ে দেব চেক তোমার ইউনিভার্সিটি ঠিকানায়”। আমি সাহেবের কথায় বিশ্বাস করে চলে এলাম – বেশ কিছু সপ্তাহ হয়ে গেল চেক আর আসে না। আমি তখন মাঝে মাঝেই স্টুয়ার্ট-কে মেল করা শুরু করলাম, চেক কোথায় বলে। শুক্রবার বিকেল – বুধবার সকাল – কোন টাইমের ঠিক নেই। হাতে বেশী কাজ না থাকলেই আমি মেল করতাম। এক সময় বিরক্ত হয়েই মনে হয় প্রোফেসর স্টুয়ার্ট বলল, “আমি তোমাকে আমার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক দিচ্ছি, পরে ইনস্টিটিউটের সিষ্টেম ঠিক হলে আমি অ্যাডজাষ্ট করে নেব”। এই ভাবে সেই বছরের দূর্গাপুজায় বাড়ি ফেরার প্লেন ভাড়াটা ম্যানেজ হয়ে গেল!

    পি এইচ ডি শেষের দিকে এগুলে চাকুরী খুঁজতে শুরু করা। আমার কাজ তো করোশন নিয়ে, আমাদের রোল সেই ডাক্তারদের মত। রোগ বাড়লে চাহিদা বেশী। সেই বছরে বলতে নেই এদিক ওদিক পাইপ লাইন, ভেসেল ফাটল নানা কোম্পানীর – আমাদের চাহিদা হয়ে গেল বেশ ভালো। খুব কম সময়ের মধ্যে গোটা পাঁচেক চাকুরীর অফার পাওয়া গেল – আমষ্টারডামে আমার এখনকার কোম্পানীতে জয়েন করব ঠিক করলাম। পি এইচ ডি মোটামুটি আমাদের গ্রুপ থেকে রেকর্ড সময়ে জমা দিয়ে নিমো ফিরে মাস খানেক সময় কাটিয়ে চাকুরী জয়েন করলাম।

    চাকুরী করার কিছুদিন পর ভাইভার ডেট পেলাম – আমষ্টারডাম থেকে বন্ধুদের জন্য একগুচ্ছ স্ত্রুপওয়াফেল এবং ডাচ বিস্কুট নিয়ে বার্মিংহাম এয়ারপোর্টে নামলাম। এমন নয় যে বার্মিংহাম এয়ার পোর্ট থেকে এই প্রথম – কিন্তু এই বার আমার হাতে একগাদা স্ত্রুপওয়াফেল, কেক, পেষ্ট্রি দেখে এবং তদোপরি আমষ্টারডাম থেকে এসেছি বলে ইমিগ্রেশন এবং কাষ্টমস বাবুদের চোখ টেরিয়ে গেল। একটা কুত্তা লেলিয়ে দিল – সেই কুত্তা এসে আমার ব্যাগ, গা, পোঁদের ফাঁক সব শুঁকলো মন দিয়ে – তারপর আমি কুত্তার ক্লিয়ারেন্স পেলাম। কিন্তু মানুষ কাষ্টমস তখনো বাকি, তেনার বদ্ধ ধারণা হয়েছে যে আমার কেস পেষ্ট্রিতে গাঁজা ভরা আছে। আমি বলছি, দেখুন এগুলো আমার বন্ধুদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কে শোনে! দেখলাম, ব্যাটা অফিসারটা হাতে গ্লাভস পড়ছে। আমার দেখে হয়ে গেল – একটা টিভি সিরিজ দেখতাম যেখানে কাষ্টমস অফিসাররা হাতে গ্লাভস পরে পোঁদের ভিতর চেক করত। ওখানে ড্রাগস নাকি অনেক পাবলিক লুকিয়ে চালান করত! আমার তো হয়ে গেল দেখে – কাল বাদে পরশু ভাইভা, অন্তত সোজা হয়ে হেঁটে ঘরে ঢুকতে হবে তো! তারপর আমাকে মানসিক শান্তি দিয়ে দেখলাম সেই অফিসার হাতে গ্লাভস দিয়ে কেক-পেষ্ট্রি থেকে কি যেন স্যাম্পেল করে একটা মেশিনে ঢোকালো। আমার তখন পেছন মারা যাবার ভয় থেকে মুক্তি পেয়ে প্রবল উচ্ছলতা হয়েছে – আমি কায়দা করে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, এটা কি আপনি রামন স্পেক্টোস্ক্রোস্পি করছেন”? অফিসার বলল, “তুমি চুপচাপ বস, তা না হলে পিছনে ওই রামন না কি বলছ, সেটা ঢুকবে”।

    তো যাই হোক কেক-পেষ্ট্রি নিয়ে বন্ধুদের কাছে পোঁছলাম। যা হয় আর কি, কয়েক মাস পর দেখা হলে রাত ভর পার্টির আয়োজন। ভোর চারটের সময় ওলা বলল, “সুকি, তুই শুতে যা এবার – আমাদেরই টেনশন হচ্ছে তোর জন্য, কাল সকাল আটটায় তোর ভাইভা”। আমি আর মাতাল ওলাকে মেটালার্জী এবং হোমিওপ্যাথির ব্যাখা দিলুম না – কেবল কেত নিয়ে বললাম, “ও আমি ম্যানেজ করে নেব – এত বছর জিনিসটা রগরেছি, কিছু তো ডিফিউশন হয়েছে”।

    পরের দিন ভাইভা দিতে গেলাম – এক্সটারনাল এক্সজামিনার দেখলাম স্যুট পড়ে এসেছেন আর আমার টাই পর্যন্ত নেই! মুখ দেখে মনে হল এমন চীজ তিনি এক্সপেক্ট করেন নি। আমি দেখলাম তাঁর হাতে আমার থিসিস এর জমা দেওয়া এক কপি – প্রচুর পাতায় স্টিকি দিয়ে মার্ক করা রয়েছে। তবে মেটালার্জী নিয়ে ঘাবড়াবার ছেলে আমি নই – তিনি প্রশ্ন শুরু করলেন, আমি জবাব দিচ্ছি। খানিক পরে তিনি প্রায় কনফিউজড চোখে আমার সুপারভাইজারকে বললেন, “যাই জিজ্ঞেস করছি তাই তো দেখছি এ জবাব দিচ্ছে! এতো ‘জন লুইসের’ সেলসম্যান-গুলোর উপর দিয়ে যায়! কি বলছে আমি অবশ্য সব ঠিক বুঝতে পারছি না – যেভাবে বলছে তাতে করে মনে হচ্ছে পুরোপুরি ভুল নয়। কিন্তু ঠিক কিনা সেটাই এক্ষুণি যাচাই করা শক্ত”। এবার আমার দিকে তাকালেন, “চাকরি পেয়েছ”? আমি হ্যাঁ বললাম। তিনি আমার সুপারভাইজারকে বললেন, “বেচারী অনেক দূর দেশ থেকে পড়তে এসেছে, তার উপর কষ্ট করে একটা চাকুরীও জোগাড় করেছে। একে ফেল করিয়ে আর কি হবে। আর তা ছাড়া এ তোমার গ্রুপে বেশী দিন থাকলে করোশন কতটা শিখবে তোমার স্কলাররা সেটা বলতে পারব না, কিন্তু সুপার মার্কেটের সেলসম্যান হবার ট্রেনিং পেতে থাকবে এর কাছ থেকে”। আমার সুপারভাইজার দেখলাম স্পষ্ট ভয় খেয়ে গেল – ফট করে অ্যাসেসমেন্ট শীট-টা কাছে টেনে নিয়ে চট করে সাইন করে দিয়ে বলল, “কনগ্রাটস ডঃ”।

    তো এই হল গিয়ে পি এইচ ডি লাভের গল্প। শিবে জ্যাঠা বেঁচে থাকলে সেলসম্যানের উপমা শুনে খুশী হত – কারণ জ্যাঠা আমাকে সেই কবেই ফ্যামিলি ব্যবসায় নেমে যেতে বলেছিল পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে! জ্যাঠার অ্যাসেসমেন্ট আফটার অল খুব একটা খারাপ ছিল না আমার স্ট্রেন্থ নিয়ে!

    মেমারী ইস্কুলের বাঙলার স্যার দূর্গা কুন্ডু বলেছিল আমায়, “যা লেখার লিখবি, কিন্তু শেষে একটা সামারি দিবি”। তা এই লেখার সামারি হলঃ

    ১। ইঞ্জিনিয়ারিং পি এইচ ডি বিষয়টা অনেকটা মেটালার্জীর মত – আর মেটালার্জী বিষয়টা প্রায় হোমিওপ্যাথির মত।

    ২। মেটালার্জী পড়ার জন্য কোন পূর্ব বিদ্যা আবশ্যক নয়। যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড (হয়ত কেবল মাত্র সংস্কৃত বা পালি ছাড়া) থেকে গিয়ে মেটালার্জী পড়া যায়।

    ৩। হাত পা ছড়িয়ে এবং নরম ভাবে টেনশন না নিয়ে পি এইচ ডি করতে চাইলে আপনার একমাত্র গন্তব্য স্থান হল ইংল্যান্ড।

    ৪। অ্যাকাডেমিক্যালি পুরো অকুতভয় থাকুন। আজকের যুগে যেটাকে ম্যানেজমেন্টিয় ভাষায় ‘সেলফ কনফিডেন্স’ বলা হয়, সেটা আমাদের বিহার, ইউ পি তে বহুযুগ থেকে চলে আসছে “তো কেয়া হুয়া” স্বরূপ। [এটা আমাকে সেদিন আমার শ্রদ্ধেয় ভারত বিষয়ক পণ্ডিত শিবাংশু-দা প্রাঞ্জল করে বুঝিয়ে দিলেন]। পি এইচ ডি ভাইভায় যদি আপনার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলে এক্সজামিনার, তাহলে ‘তো কেয়া হুয়া’ ব্যবহার করুন। দেখবেন আর কোনো প্রবলেমই হবে না ভাইভায় উতরোতে।
  • ন্যাড়া | ১৯ মে ২০১৯ ০৮:৫৪381999
  • মেটালার্জির কথায় মনে পড়ল, আমাদের মেটিরিয়াল সায়েন্স পড়তে হত দু সেমেস্টার, থার্ড ইয়ারে বোধহয়। ফার্স্ট সেমেস্টারে ডঃ বোস পড়িয়েছিলেন। অসাধারণ। মানে আমিও বুঝতে পেরেছিলাম। পরের সেমেস্টারে বিই কলেজের ডাকসাইটে প্রফেসর ডঃ শীল পড়িয়েছিলেন ভিজিটিং হিসেবে। সেরকম জমেনি।

    যাকগে যে কারণে মেটেরিয়াল সায়েন্সের কথা মনে পড়ল - মেটেরিয়াল সায়েন্স বললেই টেন্সাইল স্ট্রেংথ-ফেংথের কথা মনে পড়ে। সেই থেকে মনে আসে হুকস ল'র কথাঃ স্ট্রেন ইজ ডাইরেক্টলি প্রোপোরশনাল টু দা স্ট্রেস অ্যাপ্লায়েড। ফার্স্ট ইয়ার ফিজিক্স পড়াতে এসেছিলেন সদ্য এমএ পাশ সুন্দরী অমুকদি। প্রথম দিনই, নার্ভাসনেসে কাঁপতে কাঁপতে, সবে হুকস ল'টি বোর্ডে লিখেছেন কি লেখেন নি, পেছনের বেঞ্চি থেকে আওয়াজ এল, "ম্যাডাম, একটু স্ট্রেস দিয়ে লিখুন, চোখে খুব স্ট্রেন পড়ছে।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন