এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ফকনারের কূটগদ্য

    সৈকত
    বইপত্তর | ২৬ নভেম্বর ২০১৮ | ৬২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 | ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৩১381360
  • যথারীতি অর্ধপক্ক কিছু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হবে।
  • | 340123.99.121223.133 | ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:১৬381361
  • কি হল রে বাবা
  • সৈকত | 238912.66.896712.55 | ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪০381362
  • প্রায় চারশো পাতার এই উপন্যাসটি, 'লাইট ইন আগস্ট', শেষ করেও এটা জানা জানা যায় না যে, জো ক্রীসমাসের শরীরে সত্যিই কালো মানুষের রক্ত ছিল কিনা ! অথচ শিশুকাল থেকেই সে সেটাই জেনে এসেছে, জন্মের পর থেকে তার যে এক অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া, সেই সময়ে মাঠে যখন সে খেলত অন্য বাচ্চাদের সাথে, তখন থেকেই সে নিগার সম্বোন্ধন শুনে এসেছে, যার ভিত্তি কিছুই হয়ত নেই, পুরোটাই অনুমান, তার দাদুর। কারণ তার মা, অবিবাহিত অবস্থাতেই সার্কাস কোম্পানীর একটি লোকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং জোয়ের জন্ম দেয়; সেই লোকটি হয়ত ছিল মেক্সিকান অথবা নিগার রক্ত তার শরীরেও আছে হয়ত, সার্কাস কোম্পানিটি ফিরে যাওয়ার সময়ে সার্কাস মালিকটি ঐ যুবতী মেয়েটির বাবাকে এরকমই অনুমানের কথা বলে গিয়েছিল মাত্র !! অথচ কি বা ভয়ঙ্কর ক্রোধ ইউফিয়াস হাইনসের, মেয়েটির বাবা, জোয়ের দাদু যে, সেই বলে যাওয়া কথাটি পুরোপুরি মেনে নিয়ে প্রবল ঘৃণা শিশুবেলা থেকে জোয়ের ওপর। পরিবার ত্থেকে আলাদা করে, বাড়ী থেকে নিয়ে গিয়ে অনাথ আশ্রমে শিশুটিকে ভর্তি করে জোয়ের দাদুই, উপরন্তু নজর রাখার জন্য সেখানেই সে দারোয়ানের চাকরী নেয়। হয়ত অন্য বাচ্চাদের সেই শিখিয়ে দিয়েছিল জোকে যাতে তারা ঐ সময় থেকেই নিগার বলে ডাকতে থাকে !

    আসলে ব্যাপারটা খুবই সহজ। ফকনারের উদ্দেশ্যই নয় এটা জানানোর যে ছেলেটি, লোকটি, জো ক্রীসমাস, নিগাররক্ত বহন করছিল কিনা। লিখছেন এটাই যে শুধু অনুমানের কারণেই একটা মানুষের জীবন কোথায় পৌছতে পারে, আর পৌছবে তো সে চরম ধ্বংসের দিকে, আমেরিকার দক্ষিণের অনেক শহর আর রাস্তা আর বিবিধ কাজকর্মর মধ্যে দিয়ে জীবনের জটিলতা পেরিয়ে জেফারসন শহরে পৌছে সে যখ্ন মিসেস বার্ডেন নাম্নী মহিলাটিকে খুনই করে ফেলবে, যার বাড়ীতে সে আশ্রয় নিয়েছিল আর একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু খুনটি সে করল কারণ ততদিনে জো ক্রীসমাস সম্পূর্ণ আউটসাইডারে পরিণত হয়েছে, নিজেও বিশ্বাস করে নিয়েছে যে সে কালো মানুষের রক্ত তার শরীরে বহন করছে। আর বিশ-তিরিশের দশকের আমেরিকার দক্ষিণের জায়গাগুলিতে, ফকনারের উপন্যাসে যা ডীপ সাউথ, মিসিসিপি বা আলাবামা প্রদেশগুলি, জেফারসন অথবা মেমফিসের মত শহরগুলিতে কালো মানুষের রক্ত, সাদা মানুষের মধ্যে সেই রক্তের মিশে যাওয়ার সম্ভাব্যতাই একটা ফাটল, ক্রাইসিস যেন বা, চরম রাগ ও ঘৃনা সেখানকার সাদা মানুষদের যৌথজীবনের। ভিত্তিহীন অনুমানই যথেষ্ট একটা মানুষকে সবকিছুর বাইরে ঠেলে দেওয়ার, অনুমানই যথেষ্ট পরিবার আর যৌথজীবন আর শেরিফ আর ডেপুটি, সব ক্ষেত্রেই সেই অনুমানকে সত্যি বলে মেনে নেওয়া আর শেষ পর্যন্ত জো ক্রীসমাসকে সেই জন্যই নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে মারা যায়; খুন করেছে বলে নয়, বরং নিগাররক্ত নিয়ে তার এতখানি সাহস হয় কি করে যে এক সাদা মানুষের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরী করে !! শাস্তি তো সে পাবেই, গুলি করার পরেও বেঁচে থাকা অবস্থাতেই তার যৌনাঙ্গটিকে কেটে নেওয়া হবে আর সেখান থেকে কালো রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকবে !

    ফকনারের লক্ষ্যই নয় সন্দেহের নিরসন করা, উপন্যাসটি সেটা উদ্দেশ্যই নয়, লক্ষ্য এটাই যে ঐসময়ের আমেরিকার ইতিহাসের , দক্ষিণের মনোজগত ঘিরে আছে যে রাত্রির পরিধি, সেই অন্ধকারের বিবরণ দেওয়া।
  • | 230123.142.5678.178 | ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৩381363
  • আরও চাই, এখন থামবা না।
  • dd | 90045.207.5656.103 | ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৯381364
  • না, না। মানে হ্যাঁ হ্যা`। এখন থামবা না।
  • সৈকত | 342323.176.1223.85 | ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ২১:৪৯381365
  • ইউফিয়াস হাইনসের নাম আর চরিত্রটি উপন্যাসে অনেক পরে, উপন্যাসের প্রায় শেষের দিকে; তার আগে জো ক্রীসমাস মিসেস বার্ডেনকে খুন ক'রে, যেন এক ঘোরের মধ্যে হাতে পিস্তল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যাবে, জানবেও না যেন তার হাতে অস্ত্রটি আছে। একটা গাড়ী থামিয়ে উঠে পড়বে, হেডলাইটের আলোয় তার হাতের পিস্তল দেখে গাড়ীর যুবক চালক আর তার সঙ্গিনী ভয় পাবে, জো মাঝপথে নেমে যাবে, তারপর থেকেবেশ কয়েকদিন পুলিশ আর পুলিশেকুকুরের তাড়া খেয়ে পালাতে থাকবে, এক নিগ্রোবাড়ী থেকে জুতো যোগাড় করবে যেরকমের জুতো তারাই শুধু পড়ত এবং অনেকদূর অবধি পুলিশকে এড়িয়ে থাকবে। কিন্তু একসময়ে যেন আর পারবে না, বড় রাস্তায় এসে একটা ঘোড়ার গাড়ীতে উঠে, যেটা যাচ্ছিল কাছের এক শহর মট্সটাউনে, সেখানে পৌছে যাবে। আর পৌছে গিয়ে, সর্বসমক্ষেই রাস্তার ধারেই বসে থাকবে, যতক্ষণ না শহরের লোকেরা বুঝতে পারে যে এই সেই খুনীটি, জেফারসন থেকে যে পালিয়ে এসেছে। যেন সে তার নিয়তি জেনে গিয়েছে, সারা জীবন তার অস্তিত্বের মানে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে কিন্তু ক্রমাগতই সামাজের থেকে বিযুক্ত হয়ে যেন ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বসে পড়ল, তার ভবিতব্য বুঝে ফেলে।

    সর্বমোট যা একুশ অধ্যায়ের উপন্যাস, তার পনেরো সংখ্যক অধ্যায়ে, হাইন্সকে সরাসরি হাজির করা হয়, তার নাম আর জীবনের বিবরণ সমেত। মটস্টাউনে লোকমুখে জোয়ের নামে শুনে নাম হাইন্সই সবচেয়ে বেশী ক্ষেপে উঠবে, রাস্তায় নেমে জোকে যেখানে ধরে রাখা হয়েছে সেখানে পৌছে মেরেই ফেলবে যেন তাকে, লোকজনকে উত্তেজিত করে তুলবে জোয়ের শাস্তির দাবীতে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হোক তাকে কারণ জোয়ের তো একটইই পরিচয় যে সে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গ নয় ! অথচ, আশ্চর্য যে হাইন্স তো তার মেয়ের সন্তানটিকে দেখবে প্রায় বছর কুড়ি কি তার বেশী সময়েরও পরে - জোয়ের আট বছর বয়স নাগাদ, অনাথ আশ্রমে বছর তিনেক রাখার পরে, হাইন্সই তো তাকে সরিয়ে দেবে একজনের বাড়ীতে দত্তক হিসেবে যেখানে কাজ করার পরিবর্তে জো আশ্রয় পাবে, সেসবই উপন্যাসটির আর একটা দিক, কঠিন প্রোটেস্টান্ট বিশ্বাস ও তার নির্দয় ব্যবহার, কিশোরটিকে যা সহ্য করতে হয়েছিল - কিন্তু হাইন্স ঐ বালকটিকে তর জীবন থেকে বিদায় দিয়েও ভুলে যায়নি, সেই বালকের প্রতি ঘৃণা এখনও রয়ে গেছে, জোয়ের মৃত্যু না ঘটলে যেন তার নিবৃত্তি ঘটবে না ! অতীত তো ফকনারের প্রায় সব উপন্যাসেই ছায়া ফেলে থাকে, এই উপন্যাসের এই পর্যায়ে এসে বোঝা যায়, জোয়ের জীবনের সবচেয়ে পুরোনো অতীত আবার ফিরে এসেছে, চারপাশের সমাজে যে হিংসা ছড়িয়ে আছে, তার সরাসরি প্রকাশ হাইন্সের কথার মাধ্যমেই, হননকার্যটির সমাধা হবে জেফার্সনে আবার বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার পরে।

    দুজনের মধ্যে কোন কথাই হবে না কখনও- সেই আট বছর বয়সের পরে আর হয়েওনি- হাইন্সের দিক থেকে অত্যন্ত স্বাভাবিক তার আচরণ, এই ক্রোধ, জেফার্সনেও যাবে সে, তার ঐ রাগের সমাপ্তি ঘটাবার জন্যই যেন, কালো দাগটিকে মুছে ফেলার জন্য, যেমন আর সবাই চাইবে, স্বাভাবিকতা ছড়িয়ে রেখে।
  • সৈকত | 342323.176.90034.151 | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৬381366
  • নামটির মধ্যেই অনুষঙ্গটি স্পষ্ট; ক্রীসমাসের কাছাকাছি অনাথ আশ্রমে ভর্তি করার সময়ে নামটি দেওয়ার জন্যই নয়, ঢের বেশী করে জো ক্রীসমাসের জীবনে জেফার্সন পর্বের জন্যই। এখানে সে যেন জেসাস অফ গেৎসীমানে, যখন কিনা যীশুও বুঝে গিয়েছিলেন গেৎসীমানের দিনগুলিতে তার অন্তিম ভবিতব্যের কথা। প্রায় ক্লান্ত সে, অনুগামীদের সাথে শেষ খাবার খাওয়ার দিনটা, গেৎসীমানের বাগানে প্রার্থনার সময়ে ঘামের সাথে রক্তক্ষরণের দিনটা, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে বিযুক্তি ও ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার দিনগুলিতে যীশু খ্রীশ্টও বুঝতে থাকেন তার নিয়তির কথা যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আর কোন শক্তিই তার নেই; শেষ হয় নিষ্ঠুরভাবে ক্রুশকাঠে বিদ্ধ হয়ে, সকলের পাপ নিজের মধ্যে ধারণ ক'রে। সেরকমই সাফারিংস জো'য়ের জীবনেও জেফার্সনে থাকাকালীন বা তার আগে থেকেই যা সে সহ্য করে এসেছে, সেসবই যেন আরোই বাড়তে থাকে, একদিকে বেআইনী মদের ব্যবসা, অন্যদিকে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার শেষ চেষ্টা করতে থাকে মিসেস বার্ডেনের সাথে সম্পর্কের মধ্যে, যে সম্পর্কও ঢুকতে থাকে কানাগলিতে, নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার জন্যই যেন সে খুনটি ক'রে ফেলে, জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন সেও, অন্তিমে আসে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মতই নিষ্ঠুর মৃত্যু, যৌনাঙ্গটি কর্তিত হয়ে যাওয়ার মধ্যে যা ঘটে।

    কেন খুন করেছিল সে মিসেস বার্ডেনকে যদিও আবার ক'রে একটি আশ্রয় সে খুঁজে পেয়েছিল ? এই জন্যই যে মিসেস বার্ডেন তাকে শেষ পর্যন্ত 'বাঁচাতে' চেয়েছিল মূলতঃ ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তোলার মধ্যে, যা সে মেনে নিতে চায়নি ?

    আসলে উইলিয়াম ফকনারের একটি জটিল কাজ এই উপন্যাসটি , ন্যারেটিভের যে জটিলতা আগের উপন্যাসগুলোতে, যেমন 'সাউণ্ড অ্যান্ড ফিউরি'-তে প্রবলভাবে আছে কিংবা 'অ্যাজ আই লে ডায়িং'-এ, অথবা পরের উপন্যাস 'আবসালোম! আবসালোম!'-এ আরৈ কূত যা, সেই জটিলতা অনেকাংশে কমই এই লেখায়; কিন্তু জটিলতা এই কারণেই যে ফকনার ডীপ সাউথের বাস্তবতার সাথে সাথে, সম্পুর্ণ আমেরিকা দেশটাকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে চাইছিলেন। এই ইচ্ছের খুব বেশী আকৃতি ধরা আছে 'আবসালোম!আবসালোম!'-এ, কিন্তু মিসেস বার্ডেনকে ঘিরে সেই চেষ্টার আভাস পাওয়া যায়। জো ক্রীসমাস যদি হয় আউটসাইডার, মিসেস বার্ডেনও একজন মিসফিট, শ্বেতাঙ্গ নারী হয়েও সে জেফার্সনের সাদা মানুষদের সমাজজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ তার বাড়ীটা নিগ্রোদের বাড়ীগুলোর কাছেই, তাদের সে বিভিন্নভাবে সাহায্যও করে, কাছাকাছির লোকেদের অথবা দূরের বিভিন্ন সংস্থা, স্কুল ইত্যাদিদের যারা কালো মানুষদের জন্য কাজ করে তাদেরও। এই মনোভাব তিনি পেয়েছিলেন তাঁর ঠাকুরদার কাছ থেকে, যার মধ্যে ছিল উত্তরের ক্যালভিনিস্ট ট্র্যাডিশান যা দক্ষিনের গোঁড়া প্রোটেস্টান্টপন্থার থেকে উদার, অতএব তিনি ছিলেন দাসপ্রথা অবলুপ্তির পক্ষে এবং সেই কারণেই কনফেডারেশানিস্টদের হাতে খুন হয়েছিলেন। মারা যাওয়ার আগে মিসেস বার্ডেনের বাবা তাকে বলে গিয়েছিলেন যে কালো মানুষদের ওপরে অত্যাচারের কারণেই সাদা মানুষদের জীবনও পাপগ্রস্ত, আর তার পর থেকেই মিসেস বার্ডেন যেন শ্বেতাঙ্গ শিশুদের ওপররেও কালো এক ছায়া দেখতে পেতেন। ফলতঃ কালো মানুষদের বাঁচানো, নিগ্রোদের ভালো করা, তাদের উত্তরণ ঘটানো যেন মিসেস বার্ডেন এক ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন, জো'র প্রতি ব্যবহারও এই ইচ্ছে দ্বারাই চালিত, যেন মনে করেছিলেন জো`'য়ের যে সংকট সেসবই ঈশ্বর আরাধনার দ্বারা সরিয়ে ফেলা যাবে। আসলে ঔপন্যাসিক হিসেবে ফকনার মিসেস বার্ডেনের মধ্যে দিয়ে যা করছিলেন সেটা হল, প্রোটেন্স্টানপন্থী আর ক্যালভিনিস্টদের মধ্যে যে দ্বন্দ, উত্তরের ইয়াংকি আর দক্ষিণের মানুষের মধ্যে যে দ্বন্দ, ঐতিহাসিক্ভাবে যা সত্য, সেই বাস্তবের নভেলাইজেশন ঘটানো। আর সেটা করতে গিয়ে কোনো পক্ষই নিচ্ছেন না, যেন বুঝতে পারছেন বা বলতে চাইছেন যে কোন পক্ষই সঠিক পথে নেই, কারণ দু'পক্ষই কালো মানুষদের স্বরাট, স্বাধীন মানুষ বলে মনে করছে না, একপক্ষের অস্ত্র যদি হয় উৎপীড়ন অন্যপক্ষের উপায় তাহলে উত্তরণের আকাঙ্খা, তাদের 'ভাল' করা।

    দুজনের সম্পর্কের মধ্যে তিনটি পর্ব ছিল, জো সেটা বুঝতে পারছিল। প্রথম পর্বে যদি মিসেস বার্ডেন প্রেমিকা হয়ে উঠতে চাইছিলেন, তার ভঙ্গীগুলো রপ্ত করে ফেলেছিলেন আর তৃতীয় পর্বে যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন বলে জো`'কে আঁটকে রাখার চেষ্টা করছিলেন এবং একই সাথে তাকে ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তোলার জন্য রাতে যখন জো তার ঘরে যেত তখন খাটের পাশে মাটিতে প্রার্থনার জন্য তাকে প্রায় আদেশই করা হত যা জো কোনদিনই করেনি, করতে চায়ওনি, তাহলে সম্পর্কের দ্বিতীয় পর্বে জো যেন হয়ে উঠছিল এক যৌন পুতুল ! রাতে সঙ্গমের সময়ে জো`'কে জড়িয়ে ধরে 'নিগ্রো, নিগ্রো' বলে মিসেস বার্ডেনের সেই শীৎকার - এক কালো মানুষের সাথে যৌনসঙ্গম যেন সম্পূর্ণ আলাদা কিছু - প্রায় পার্ভার্শনের মত কিছু একটা, সেই দিনগুলিতে জো'য়ের মনে হয়েছিল সে যেন এক নর্দমার মধ্যে পড়ে আছে ! এই এত সব জটিলতার মধ্যে পড়ে জো ক্রীসমাস আর যেন কি বা করতে পারে, নিজেকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া, এক ঘোরের মধ্যে ঢুকে যাওয়া ছাড়া অথবা এক আবিল বৃত্ত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ভেবে শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজের অস্তি্তকে কোন একটা মানে দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ উল্টোপথ বেছে নেওয়া ছাড়া; যে পথ একই সাথে নিশ্চুপ প্রতিবাদের অথবা মুক্তির বলে মনে করেছিল আর অন্যদিকে তাকে আরোই কঠিন নিগড়ের মধ্যে বন্দী করে ফেলল !

    আসলে ফকনার, বড় ঔপন্যাসিকরা যেমন করেন, ইতিহাসের অন্তহীন আগুনের মধ্যে মধ্যে দাঁড়িয়ে, সমাজ আর সময়ের জটিলতার মধ্যে থেকে কোনো একদিকে চলে যাচ্ছেন না, কোনো কিছুকেই স্থির সত্য বলে মেনে নিচ্ছেন না, সবকিছুই ভেঙে ভেঙে সরে যাচ্ছেন যেন। জো ক্রীসমাসকে যীশুপ্রতিম করে তোলার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সন্দেহ হয় তুলনাটা অত সরল কিনা। যীশুপ্রতিম না হয়ে যীশুর প্যারডিই যেন, কই তার তো কোন প্রার্থনা নেই, নিজের বা অন্যদের জন্য অথবা ঐ জনজীবন, তারও কোনো রূপান্তর তো ঘটল না যা লেখাটায় ধরা থাকল ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন