এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অর্জুন অভিষেক রায় | 149.5.228.168 | ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৩৭375090
  • ‘টেল ইওর ডটার টু মেক অ্যান অ্যাপয়েন্টপমেন্ট বিফর কামিং টু মাই অফিস।‘ দিল্লী জিমখানা ক্লাবে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে সবার সামনে স্পষ্টভাবে একথা বলেছিলেন কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায়। ৩০ মার্চ ও ৩ এপ্রিল দুজনের জন্মদিন কিছুটা নীরবেই পেরিয়ে গেল।

    সমসাময়িক এই দুই মহিলা এক সময়ে ভারতের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জগতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের নিজেদের ক্ষেত্রে তাঁরা দুজনেই হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তী।

    এখন দুজনেই ইতিহাসচর্চায় প্রাসঙ্গিক হলেও লোকস্মৃতিতে বিলুপ্ত।

    ৩০ মার্চ ছিল দেবিকারানীর জন্মদিন। ৩রা এপ্রিল কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায়ের।

    প্রথমজন জন্মসূত্রে বাঙালি। দ্বিতীয়জন বিবাহ সূত্রে। এবং দুজনের জন্ম ও বড় হওয়া দক্ষিণ ভারতে। আবার দুজনেই শেষ জীবন কাটালেন ব্যাঙ্গালুড়ু শহরে।

    তবে সেটা এখানে প্রসঙ্গ নয়।

    পরাধীন দেশ যখন জাতীয়তাবাদের জোয়ার এবং যখন দেশের জাতীয় আইডেনটিটি গড়ার সূচনায় দুজনেরই ছিল অগ্রণী ভূমিকা। এখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা নেন, আরেকজন নন।

    দুজনের জীবনই বর্ণাঢ্য। প্রথমে দেবিকারানীকে দিয়েই শুরু করি।
    ১৯৩৩ সালে ইউরোপে লন্ডন ও বার্লিনে মুক্তি পেল Karma। ব্রিটিশ পরিচালক J. L. Freer Hunt এর এই ছবিতে দুজন ভারতীয় অভিনয় করলেন হিমাংশু রাই (রায়) ও দেবিকারানী। এক রাজকুমারীর প্রতিবেশী রাজ্যের এক রাজকুমারের পিতার অমতে প্রেমে পড়া নিয়ে অতি পরিচিত গল্প। কিন্তু যা খুবই অপরিচিত তা হল এই এক ঘণ্টা দশ মিনিটের ছবিতে চার মিনিট চুম্বন দৃশ্য। এই চুমু বেশ আলোড়ন ফেলেছিল ভারতে, বিদেশেও। ছবিটা দেখলে অবশ্য বোঝা যাবে চুম্বন দৃশ্যে দেবিকারানী যতটা স্বচ্ছন্দ, হিমাংশু ততটা নন। ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে তখন নানা এক্সপেরিমেন্ট শুরু হয়ে গেছে। দাদাসাহেব ফালকের ছবি মুক্তি পেয়েছে ‘হরিশ্চন্দ্র’ । দেশের লোকেরা দেখেছেন পর্দার ভিতরে মানুষ দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। তবে গল্প পুরাণের।

    Kঅর্ম ছিল আন্তর্জাতিক ভাবে মুক্তি পাওয়া প্রথম ভারতীয় ছবি এবং এই চুমু দৃশ্য এই ছবিটাকে অমর করে গেছে।
    কিন্তু কে এই দেবিকারাণী? কি ভাবে নামলেন তিনি সিনেমায়? দেবিকারানীর শুরুটা কিন্তু ঠিক নটী বিনোদিনী বা গহরজানের মত নয়।

    দেবিকারানী জন্মেছিলেন এক অভিজাত বাঙালি ব্রাহ্ম পরিবারে। বাবা ডাঃ কর্নেল মন্মথনাথ চৌধুরী ছিলেন পাবনার বিখ্যাত চৌধুরী বংশীয়, জাস্টিস আশুতোষ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর সহদর। মন্মথনাথ ছিলেন দক্ষিণ ভারতের প্রথম সার্জেন জেনারেল। মা লীলা দেবীর ঠাকুরবাড়ির আত্মীয়া, রবীন্দ্রনাথের দিদি সৌদামিনী দেবীর দৌহিত্রী। এই সৌদামিনীই রবীন্দ্রনাথকে বড় করেছিলেন। পিতার কর্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহরে আর্মি ক্যান্টনমেন্টে কস্মমোপলিটন পরিবেশে কেটেছিল দেবিকারাণীর ছোটবেলা, বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে অনেকটাই দূরে। বাড়িতে মেম গভর্নেসদের তত্ত্বাবধানে শৈশব কাটতেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল বিলেতে।

    বিলেতে কনভেন্ট স্কুল থেকে পাশ করে দেবিকারাণী ভর্তি হলেন ‘রয়্যাল একাডেমী অব ড্রামাটিক আর্টস’ এ (RADA) , সম্ভবত এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় ছাত্রী। তখনকার নিয়মে সেই বিশের দশকে একজন ইঙ্গ বঙ্গ সমাজের অনেক মেয়েরাই বিলেতে স্কুলে যেতেন কিন্তু পাশ করেই তাদের বিয়ে হয়ে যেত কোনো আই সি এস অফিসর। সার্জেন বা রাজপরিবারে। কেউ কেউ হয়ত বেছে নিতেন একাডেমীক জীবন বা রাজনীতি। দেবিকারানী কোনো চেনা পরিচিত পথেই হাঁটলেননা। ছোটবেলা থেকে অভিনয় ছিল প্যাশন, অভিনেত্রী হওয়া বাসনা। এর পরে ভর্তি হলেন ‘রয়্যাল কলেজ অব মিউজিক’ এ, অভিনয়ে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে শিখলেন মিউজিক, আর্কিটেকচার ও ফ্যাশন ডিজাইনিং। খুবই অভিনব ছিল কোর্স স্ত্রাকচার। ভিভিয়ান লে’ও ছিলেন RADA র ছাত্রী। ওরা কি একই সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন? জানিনা। কেমন ছাত্রী ছিলেন দেবিকারানী? পঙ্কজ সাহার মতে ‘খুবই ইন্টারেস্টিং স্টুডেন্ট ছিলেন উনি।‘ ‘টেক্সটাইল ডিজাইনিং তখন একদমই নূতন একটা বিষয় তখন।

    পাশ করেই চাকরি পেলেন লন্ডনের এক স্টুডিওতে। লীলা ও মন্মথনাথের কতটা সমর্থন ছিল মেয়ের এই কেরিয়ারে। নিশ্চয় নয়। উন্নাসিক ব্রাহ্ম পরিবার, মেয়ে লেখাপড়া শিখবে, ক্লাব পার্টীতে পিয়ানো বাজাবে, নাচবে, বড়জোর ঘরে সাহিত্য, শিল্পচর্চা করবে বা চারটে রাজনৈতিক মিটিঙে যাবে, সেইখানে একদম নুতন একটা বিষয় নিয়ে পড়ে, এক অজানা কেরিয়ারের পথে যাওয়া! বাঁধা বিশেষ পেয়েছেন বলে মনে হয়না দেবিকারানী। পেলেও আজন্ম অসম্ভব স্বাধীনচেতা তাঁকে আটকানো যায়নি। জীবনে যা করতে চেয়েছেন তাই করেছেন। এই স্টুডিওতেই একদিন হিমাংশু রাই (রায়’কে সর্বভারতীয় করতে এই উদ্যোগ) এসে হাজির।

    A Throw of Dice চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে হিমাংশু রাই তখন লন্ডনে। ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের তখন আদি লগ্ন, সেই সময়ে হাতে গোনা যে কজন এই বিষয়টা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন, হিমাংশু তাদের মধ্যে একজন, পথিকৃৎ বললেও ভুল হবেনা। দেবিকারানীর সৌন্দর্যে, উপস্থিতিতে একটা মাদকতা ছিল। কথা বলে যারপরনাই ইম্প্রেসড হয়ে তাকে তার ইউনিটে আহ্বান করলেন হিমাংশু। ওদের দুজনের এই সাক্ষাৎ একটা ইতিহাস সৃষ্টি করল। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সি সূচনা পর্বে তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিত দেবার জন্যে এই রকম এক জুটির প্রয়োজন ছিল। পুরুষদের সংখ্যা থাকলেও, দেবিকারানীর মত একজন প্রথাগত শিক্ষিত, অভিজাত প্রমিনেন্ট মুখ তখন আর ছিলনা। এবং এই জুটির হাতেই জন্ম হয়েছিল ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক যাত্রা। হিমাংশু রাইয়ের যেমন পেলেন দেবিকারানীকে, তেমনি দেবিকারানীরও দরকার ছিল হিমাংশু রাইয়ের মত একটি প্ল্যাটফর্ম।

    দেবিকারানীর জীবনটাই বদলে গিয়েছিলে এর পরে।

    (ক্রমশঃ)
  • PM | 52.110.153.80 | ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:০৫375093
  • খুব ভালো হচ্ছে।।চলুক
  • এলেবেলে | 212.142.119.23 | ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:২৯375094
  • দেবিকা রানি বললেই আমার বারবার নাগ্গারের কথা মনে পড়ে। নিশ্চয়ই সে পর্ব আসবে এখানে। তার আগে নাগ্গারের রোয়েরিখ আর্ট গ্যালারির কয়েকটা ছবি -
    https://postimg.org/image/v2c8d36fv/

    https://postimg.org/image/winqvb1nv/

    https://postimg.org/image/45s94x0iz/
  • dd | 59.205.216.182 | ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ২২:০৭375095
  • ইন্টেরেস্টিং লাগছে।
  • অর্জুন অভিষেক রায় | 113.52.254.139 | ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ২২:২২375096
  • থ্যাঙ্ক ইউ PM, এলেবেল্‌ dd

    নাগ্গারে রোয়েরিখ সাহেবের বাংলো, বাগান ও স্টুডিও ছিল। রাশিয়ান রেভলিউশনের পরে দেশছাড়া হয়ে ওখানেই বাসা বেঁধেছিলেন। কিন্তু দেবিকারানীকে বিবাহ করার পরে স্লেভেৎস্লাভ রোয়েরিখ কি সেখানে ছিলেন? ওরা দুজনে কিন্তু ব্যাঙ্গালুড়ুতে সেটল করেন। ওখানেই প্রচুর একর নিয়ে ওদের জমি ছিল। টাটাগনি এস্টেট। সেটা সম্ভবত এখন কর্ণাটক সরকারের। রোয়েরিখদের উত্তরাধিকার নেই তাই উইল নিয়েও আইনী সমস্যা ছিল অনেককাল। @এলেবেলে
  • এলেবেলে | 212.142.96.142 | ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:০১375097
  • @অর্জুন অভিষেক উইকিতে উঁকি মেরে দেখলাম After staying in Manali for some years, they moved to Bangalore, Karnataka, and settled there managing an export company. তার মানে উনি নাগ্গারে ছিলেন বেশ কিছুদিন, নিকোলাস রোয়েরিখের সমাধিও রয়েছে সেখানে।
  • এলেবেলে | 212.142.96.142 | ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:১০375098
  • @অর্জুন অভিষেক উইকিতে উঁকি মেরে দেখলাম After staying in Manali for some years, they moved to Bangalore, Karnataka, and settled there managing an export company. তার মানে তিনি নাগ্গারে বেশ কয়েকদিন ছিলেন, নিকোলাস রোয়েরিখের সমাধিও আছে সেখানে।
  • অর্জুন অভিষেক | 37.131.212.95 | ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১০375099
  • আচ্ছা। তা হবে। তবে ব্যাঙ্গালুড়ুতে ওরা তিন দশকের বেশী সময় কাটিয়েছেন। টাটাগনী এস্টেটে আর্ট গ্যালারী ছিল, রেশমের চাষও হত।

    সেভেৎস্লাভ প্রয়াত হন '৯৩ সালে আর তার এক বছরের মধ্যেই দেবিকারানী '৯৪ এ।

    ২য় পর্ব দিলাম @এলেবেলে
  • | 144.159.168.72 | ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:৪৪375100
  • দ্বিতীয় পর্বটা এখানেই দিলে পড়তে সুবিধে হত।
  • অর্জুন অভিষেক রায় | 113.52.254.71 | ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ১১:০০375091
  • পর্ব- ২

    ' দ্য ফার্স্ট লেডি অব ইন্ডিয়ান সিনেমা'

    পূর্ববঙ্গের এক বর্ধিষ্ণু জমিদারের একমাত্র পুত্র হিমাংশু। শোনা যায় বোলপুর শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ এর প্রথম দিককার ছাত্র ছিলেন তিনি (সঠিক তথ্য অজানা)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তখনকার নিয়ম অনুসারে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিলেন তিনি। হতে চান ‘বার-অ্যাট- ল’। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী লন্ডন তখন সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। নাটকে মজে গেলেন হিমাংশু। বন্ধুত্ব হল আরেক বাঙালি তরুণের সঙ্গে, তার নাম নিরঞ্জন পাল, স্বাধীনতা সংগ্রামে এক নামে উচ্চারিত ‘লাল-বাল-পাল’ এর সেই বিপিন চন্দ্র পালের পুত্র। সেও লন্ডনে ছাত্র তখন। দেশে থাকতে স্বাভাবিক নিয়মেই স্বাধীনতা আন্দোলনে গা ভাসিয়েছিলেন এই যুবা কিন্তু ব্রিটিশের নেক নজরে পরবার আগেই তাকে রাতারাতি বিলেতে প্রেরণ। সাভারকার ও মদনলাল ধিংড়ার সঙ্গে কিছুদিন ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল কিন্তু স্টেজের মায়ায় আচ্ছন্ন হলেন শিগগিরি। নাটক দেখছেন দুই বন্ধু। নিরঞ্জন নাটক লেখায় উদ্বুদ্ধ হলেন। লিখে ফেললেন ‘দ্য লাইট অব এশিয়া’, ‘সিরাজ’, ‘গডেস’। দুই বন্ধু মিলে মঞ্চস্থ করলেন ‘লাইট অব এশিয়া’। তা দেখতে এলেন জার্মান ফিল্মমেকার ফ্রাঞ্জ অস্টেন। মুগ্ধ অস্টেন এই প্রোডাকশন দেখে। তিনজনে প্ল্যান করলেন মহাভারতের ওপর গল্প ‘থ্রো অব ডাইস’ নিয়ে একটি ফিল্ম পরিচালনা। এই সময়েই দেবিকারানীর এই টিমে প্রবেশ। তিনি একা হাতে সামলালেন কস্টিউম, সেট ডিজাইন এবং আর্ট ডিরেকশন।

    ‘লাইট অব এশিয়া’ র গোটা ইউনিটে শুধু দুজন মহিলা। অভিনেত্রী সীতা দেবী (তাকে নিয়েও আমি বিশেষ কৌতূহলী) এবং দেবিকারানী। সীতা দেবী অবশ্য কো-অ্যাক্টর আর দেবিকারানীর হাতে ছিল বেশ অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট। কাজটা এযুগেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। মনে রাখতে হবে, ছবিটার প্রযোজক ও পরিচালক বিদেশী। এবং চ্যালেঞ্জিং এই কারণেই যে ঐ বিশের দশকে তাদের আরেকটা কাজ অনুসরণ করার মত কোনো উদাহরণ ছিল না। প্রথাগত বৃত্তির বাইরেও সম্পূর্ণ এক নতুন বৃত্তির জগতে মেয়েদের যাত্রা শুরু করেছিলেন। অভিনয় জগতে নাট্য বা ফিল্মে সেই সময়ে যেসব অভিনেত্রীরা আসতেন, সকলেই আসতেন একটি বিশেষ সামাজিক স্তর থেকে। যে সমাজটাকে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজ ‘নিষিদ্ধ’ আখ্যা দিত। ’৩০ এর গোঁড়ায় লেখিকা লীলা মজুমদারের বাড়িতে দিলীপ কুমার রায় গানের আসর বসাতেন এবং বিভিন্ন সংগীত রথী মহারথীদের সঙ্গে নৃত্যশিল্পীরাও আসতেন। দেবিকারানীর সমবয়সী উচ্চশিক্ষিতা, কস্মোপলিটন, ইন্টেলেকচ্যুয়াল লীলা মজুমদারের চোখেও তাদেরকে ‘অসামাজিক’ মনে হয়েছে। দাদাসাহেব ফালকে এর দু দশক আগে যখন প্রথম ভারতীয় ফিল্ম ‘হরিশচন্দ্র’ তৈরি করলেন তখন তার অভিনেত্রীরাও এসেছিলেন আঞ্চলিক নাট্যদলের। তাই তথাকথিত মধ্যবিত্ত সমাজে মেয়েদের এই প্রফেশনে অনেকটা দরজা খুলেছিলেন দেবিকারাণী। শ্রীরামকৃষ্ণ কথিত ‘লোকশিক্ষার আঙিনা’ য় সমগ্র সমাজের মেয়েদের অংশগ্রহণ নিষেধ ছিল। বাংলায় কানন দেবীর ভূমিকা যেমন এক ঐতিহাসিক ঘটনা, তেমনি দেবিকারানীর জাতীয় চলচ্চিত্রে। তাই হয়ত The first lady of Indian cinema আখ্যাটি যথার্থই।

    ‘থ্রো অব ডাইস’ এর শুটিং হল রাজস্থানে উদয়পুর, জয়পুর শহরে, মহীশূরেও। ওই ইউনিটে ছিলেন বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মধু বসু। তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ এ একটা সুন্দর স্মৃতিচারণ আছে। দিল্লীতে তখন শুটিং চলছে, দেবিকারানী আসবেন, হিমাংশু রাই, জুনিয়র সহকারী মধু বসুকে স্টেশনে পাঠিয়েছেন তাকে আনার জন্যে। মধু বসু দেবিকারানীর অনেক গল্প শুনেছেন কিন্তু তখনও তাকে চোখে দেখেননি। তাহলে ষ্টেশনে তাকে চিনবেন কি ভাবে! হিমাংশু রাইয়ের উত্তর ‘It is impossible to miss her.’ দিল্লী ষ্টেশনে দেবিকারানীকে দেখে মধু বসুর মনে হল ‘এরকম একজন অসাধারণ মহিলাকে দেখেই চিনে নিলাম।‘
    ‘থ্রো অব ডাইস’ প্রভূত সাড়া পেল। এবং এই ফিল্মের পোস্ট প্রডাকশনের জন্যেই দুজনে গেলেন বার্লিন। জার্মানিতে তখন ফিল্ম তৈরিতে নূতন সব গবেষণা মূলক অসাধারণ সব কাজ চলছে। G W Pabst এবং Fritz Lang র UFA studio তখন জগত বিখ্যাত। দেবিকারানী হাতে কলমে সেই স্টুডিওতে শিক্ষানবিশ করলেন এবং কোর্স শেষে UFA তে একটা চাকরীও পেয়ে গেলেন, যে স্টুডিওতে কাজ করা যে কোনো ফিল্মমেকারের তখন একটি স্বপ্ন। অস্ট্রিয়ান নাট্যকার Max Reindhart এর কাছেও অভিনয়ের তালিম নেন। শুধু ফিল্মকে কেরিয়ার হিসেবেই নয়, অভিনয় ও ফিল্মের নানা কারিগরি প্রশিক্ষণও তার বেশ অভিনব। কেরিয়ার গড়ার আগে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করে নিয়েছিলেন।

    নাহ! UFA য় কাজ করা হয়নি দেবিকারানীর । এই আকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাব তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হয়। ‘থ্রো অব ডাইস’ এর সাফল্যের পরেই হিমাংশু- দেবিকারানী সিধান্ত নেন তাদের দেশে ফিরতে হবে, বানাতে হবে ভারতীয় চলচ্চিত্র, গড়তে হবে নিজেদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং এর সঙ্গে দুজনেই বিবাহের সিধান্তও নিয়ে ফেললেন।
  • | 52.107.86.4 | ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ১২:১০375092
  • পড়ছি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন