এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সংকেত ধর | 57.15.120.127 | ১৪ মার্চ ২০১৮ ১৫:৩৬373081
  • ।।ছিঁচকাদুনি স্বভাব।।

    আমাদের দেশের লোকেরা ভগবানের নাম করে কারোর জন্য শুভকামনায় বা অভিশাপে অনেক বেশি বিশ্বাসী অর্থাৎ অদৃষ্টনির্ভর ও ধর্মপ্রাণ আর কি। আমাদের এই বিশ্বাস বহুকালের। ছোটবেলায় সারাবছর বইপত্র না ছুঁয়ে পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ভগবৎপ্রণাম থেকে শুরু করে hospitalised আত্মীয়স্বজনের critical conditionএর সময়ে ভগবানের পাথুরে পায়ে কপাল ঠুকে ঠুকে রক্ত বার করে ফেলা ( যতক্ষণ না আত্মীয় বেঁচে ওঠেন,বেঁচে যে উঠবেন তারও কোনো মানে নেই, না বাঁচলে সেই কষ্টকে তখন ভগবানের ইচ্ছা বলে গিলে নিতে হয়) আর নিজের মৃত্যুর আগে তো অন্তত একবার ভগবানের পায়ে মাথা ঠোকা আবশ‍্যকীয়, খড়্গধারিনী যাতে মর্গের পর নির্দিষ্ট ব‍্যক্তির স্বর্গে যাবার caseটা specially consider করেন, সেকারণেই।

    তা এভাবেই মাথা ঠুকে ঠুকে রক্ত বার করে প্রার্থনাপদ্ধতি বহুদিন ধরে চলে আসছে আমাদের দেশে। শুধু ভগবানের পায়ে নয় ,বনে বাদাড়ে গাছের গুঁড়িতে, phoneএর screenএ( দুঃসংবাদ যখন phone মারফত আসে) এমনকি বাড়ির দেওয়ালেও মাথা ঠোকার আধুনিক রীতি প্রচলিত আছে( কর্মব‍্যস্তজীবনে ভগবানের পা সবসময় মেলে না, তাই substitute হিসেবে এগুলোই সই।),এসব মাথা ঠুকে প্রার্থনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও বাংলা ধারাবাহিকে দেখে থাকবেন নিশ্চয়ই।
    কিন্তু শুধু শুধু তো আর কেউ মাথা ঠোকে না। মাথা ঠুকতে issue চাই। বর্তমানে দেশবাসীরা মাথা ঠোকার তেমনই একটি নতুন issue পেয়েছে। কি সেই issue? সেটা হল সিরিয়ায় রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে দেড়শোজন বাচ্চার মৃত্যু। আমরা যদিও জানি না ঠিক কেন সেখানে যুদ্ধ শুরু হলো, আমরা জানি না, কেনই বা বাইরের দেশের presidentরা সেখানে পেছনপাকার মত নাক গলাচ্ছে ,আমরা এও জানি না কত্তো বছর ধরে সেখানে যুদ্ধ হচ্ছে। আমাদের শুধু কানে ঢুকেছে সেখানে দেড়শোজন বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ‍্যাটাও আমরা দুমাস পরে ভুলে যাব ,বলব,‘একশোজনের বেশি মারা গেছিল।’,আর দু'বছর পর বলবো ,‘সংখ‍্যাটা exactly মনে করতে পারছি না,তবে অনেক শিশু মারা গেছিল।’। মানুষ কতজন মরেছে তা জেনে দরকার নেই, শিশুরা কেন মরছে? কেন তাদের ঢাল করে যুদ্ধ হচ্ছে আর সেকারণেই ৬০০০ কিলোমিটার দূরে বসে social mediaয় ভগবানের নাম করে আমাদের মাথা ঠোকন আর দুঃখ করন।

    কিন্তু এই হত‍্যাকারীদের শাস্তি দেবে কে? ভগবান? তাছাড়া আবার কে? সর্বশক্তিমান ভগবানের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত। তাহলে আমরা কি করছি? না দুঃখু করছি আর ব‍্যাথাভরা কাঁথাভেজানো কবিতা লিখছি। এখন তবে প্রশ্ন ওঠে এতদূর থেকে কিই বা করা যায় শুধু দুঃখ করে দুটো কবিতা লেখা ছাড়া? কিন্তু আদৌ কি আমাদের চোখের জলে সিরিয়ার কোনো বাচ্চা বাঁচছে? আমাদের post shareএ ক'টা বাচ্চার রক্ত ঝরা বন্ধ করা গেল?আমার প্রার্থনায় কটা বাচ্চার কান্না থামছে। Social mediaতে লেখা কবিতাগুলো সিরিয়ান আর্মির কানে ঢুকছে কি? আমরা দুঃখে দোল,হোলি বয়কট করতে চাইছি,‘কি হবে রঙ মেখে?’; ‘শিশুদের রক্তে বসন্ত আসছে’ ইত‍্যাদি যত ভারী ভারী কথা বলা যায় আর কি। ‘Happy holi তে বলছি,‘ না happy হলাম না।’ কিন্তু আমরা উৎসবপালন না করলে কি ওদের ক্ষতে মলমের প্রলেপ পড়বে? পড়বে না। তবে কি করলে বাচ্চাগুলোকে বাঁচানো যেত? ধরুন,আপনি ভোটে দাঁড়ালেন, প্রথমে Councilor, তারপর MLA, তারপর MP, তারপর প্রধানমন্ত্রী ও সবশেষে রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন আর দেশের সব শক্তি নিয়ে Russia, Americaএর মতো আপনিও পেছনপাকামোতে উৎসাহী হলেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নাক গলিয়ে বাচ্চাগুলোকে safe sideএ নিয়ে এলেন। হতে পারে এটা খুব সময়সাপেক্ষ, কিন্তু এ ছাড়া আমি কিন্তু আর কোনো উপায় দেখছি না।

    আপনাদের আরেকটা reportএর কথাও বলে ফেলি এই সুযোগে। United Nations এর MILLENIUM DEVELOPMENT GOALS 4( MDG)এর লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বে Under 5 mortality rate অর্থাৎ পাঁচবছরের কমবয়সী শিশুর মৃত্যুহার ১৯৯০-২০১৫ সালের মধ‍্যে দুই তৃতীয়াংশ কমানো। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তা কি হয়েছে? ভারতের ক্ষেত্রে target ছিল ৩৯/১০০০ live births, অর্থাৎ প্রতি হাজারটি শিশুর মধ্যে ৩৯টি শিশু প্রাণ হারাচ্ছে এমন এক পরিস্থিতিতে ভারতকে নিয়ে আসা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ছটি রাজ‍্য বাদে বাকি তেইশটি রাজ‍্য সেই goal achieve করতেই পারেনি গত পঁচিশ বছরে। UNICEF Reportএ বলা হচ্ছে, শিশুমৃত্যুর ৩৩% এর পিছনের আসল কারণ অপুষ্টি অর্থাৎ দারিদ্র। এবারে হিসেব করে নিন কমপক্ষে ৩৯টি শিশমৃত‍্যু ধরলে প্রতি হাজারজনে ক'জন শিশু মারা যাচ্ছে সারা দেশে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এইসংখ‍্যাটা আরো অনেক বেশি, কারণ অন্ধ্রপ্রদেশে, ওড়িষায় শিশুমৃত্যুর হার ৮০ এর কাছাকাছি ( প্রতি হাজারে)। এই বাচ্চাগুলোর জন্য আমরা ক'জন মাথা ঠুকি, pray করি? নাকি অপুষ্টিজনিত স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে আমাদের হাত থেকে কবিতা বেরোয় না নিজের timeline আর blogএ? মাঝে মাঝে শুধু google থেকে অপুষ্ট শরীরের photo জোগাড় করে post করে sympathy দেখানো ।
    রাস্তায় বেরিয়ে আশেপাশে চেয়ে দেখুন ,প্রচুর বাচ্চা আছে,যারা আজ আছে কাল নেই।যাদের রোজ দেখে দেখে চিনে ফেলেছি তাদের জন্য ভাবার সময় নেই আমাদের, কিন্তু সিরিয়ার বাচ্চাদের জন্য আমরা একসাথে দল বেঁধে দরদি হয়ে উঠেছি সবাই,কারণটা সবাই জানে,দরদ দেখাতে গাঁটের কড়ি লাগে না।

    অতঃপর আসল কথা হলো কাজের কাজটি না করে দরদ দেখাও শুধু , যেন কষ্টে তোমার বুকটাই ফেটে গেল। বরঞ্চ সেই কাজটাই করা ভালো নয় কি যাতে আশেপাশের বাচ্চাগুলোর ভালো হয়? আমার চোখের জলে ওদের পেট ভরে না,আমাদের কবিতা ওদের মাথার উপর দিয়ে যায়, ও দিয়ে ওদের কিসসু হয় না,বরং কবিতা লেখা কটা কাগজ আবর্জনা থেকে কুড়োতে পারলে ওদের দিন চলে। আমাদের individually গেরস্তবাড়ির প্রার্থনার প্রসাদ পিঁপড়ে খায়,ওরা খেলে তা অপাত্রে দান মনে হয়।তাই বলবো practicality ভাবুন, ভাবতে চেষ্টা করুন যদি ওই বাচ্চাদের জীবন সত‍্যি মূল‍্যবান‌ বলে মনে হয়। শুধু সরকারের tax গুঁজে দায়িত্ব শেষ মনে করলে কোনোদিনই অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। কারণ আমাদের মহান দেশনেতাদের তো চেনেন।
    আর নিতান্তই যদি অকাজের অকাজটা ( মানে কাজের কাজ বলতে চাইলাম আর কি, negative negative positive হয় জানেন না?) করতে চান , তবে মুম্বইয়ে শ্রীদেবীর শ্রাদ্ধকাজে যোগ দিতে পারেন। যাতায়াতভাড়া এমন কিছু পড়বে বলে মনে হয় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন