এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এক সাম খিলজী কে নাম

    Dipak Pal লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ | ২৩১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dipak Pal | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:৪৫371768
  • সূর্য তখন অস্তাচলে। দূর দিগন্তে লেপে দেওয়া বিদায়ের সিন্দুরী লাল, সন্ধ্যার ধূসর মুছে দিতে উদ্যত। আমার বাড়ির সামনে যে জঙ্গলে ঘেরা পুকুরটা, চাপ চাপ অন্ধকার তাকে ঘিরে ধরেছে। যে বুড়ো হাঁসটা ভীষণ দম্ভে গম্ভীর হয়ে সারাদিন একাকী অক্লান্ত সাঁতার কেটে বেড়ায়, সেও বাসায় ফিরে গেছে। যে দু একটা পাখির তখনো বাসায় ফেরা হয় নি, হঠাৎ হুঁশ ফেরায় তারা সচিৎকারে ঊর্ধ্বগামী। শীত বিদায় নেব বলেও ছেলেবেলার বোষ্টমীর মতোই কথা রাখে নি। বাতাসে একটা শিরশিরানি ঠান্ডা শরীরকে কাকস্নান করিয়ে দিয়ে যায়। নিচের রাস্তা কেমন ফাঁকা ধোঁয়াটে। চারিদিকে একটা গা ছমছমে ভাব। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় একটা পরিবেশ আমার ব্যালকনি থেকে উপভোগ করছি। এরপর আর একটু অন্ধকার ঘনিয়ে এলে, ব্যালকনি ছেড়ে বিছানাঘর অতিক্রম করে বাইরে ড্রইং রুমে এসে বসলাম, এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের আশায়। আমার স্ত্রী তখন ঘরের ভিতর তার সান্ধ্য শৃঙ্গারে ব্যস্ত। সুবৃহৎ বারান্দাঘর বা ড্রইংরুমে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে আমি বসে ঝিমুচ্ছি। এমনিতে বসে বসে ঝিমানো আমার ফেভারিট টাইমপাস। হঠাৎ বাইরে কলিং বেলটা বেজে উঠল। টিং টং। এ সময় কে রে বাবা? যাক দেখি কে? বিদায় করে আবার এসে ঝিমুব। দরজা খুলতেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ইনি কে? সুউচ্চ বৃহৎ ও দীর্ঘকাই এক মানুষ, জড়ি পুথি মনি মুক্ত খচিত আলখাল্লা গোছের এক পোশাক পরে আমার সামনে হাজির। হাতের দশ আঙুলে দশটি হীরক
    খচিত আংটি। ইয়া বড় নাগড়াই জুতো। তাতেও সুদৃশ্য পাথর বসানো। বলা বাহুল্য এনার মাথায় বহুমূল্য মনি মুক্তা হীরক খচিত স্বর্ণ মুকুট আর কোমরে তরবারী। ঘন কালো অন্ধকারের মতো গাল জুড়ে চাপ চাপ দাঁড়ি। চোখ সবুজ। যেন আলোকিত দুই চক্ষু দিয়ে ইনি সারা পৃথিবী শাসন করতে পারেন। মুকুটের বাইরে যে চুল বেরিয়ে আছে তা যেন মধ্যযুগের গহীন অন্ধকার। সারা শরীরের ঔজ্জ্বল্যয় তাকে অপার্থিব কোনো এক মূর্তিমান বলে বোধ হয়। আর অদ্ভুত নেশাতুর এক সুগন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, জানি না এই কি তবে স্বর্গীয় পারিজাত ফুলের গন্ধ। বেশ খানিকক্ষণ বিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। সম্বিৎ ফিরলে হকচকিয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম
    - আপনি কে?কাকে চাইছেন এবং কি চাইছেন?
    -হাহাহাহাহাহাহাহাহা, সন্ধ্যার হিমেল বাতাস বিদীর্ণ করে এক অট্টহাসি দিলেন সেই রহস্যময় ব্যক্তি। ভয়ে আমার হৃৎকম্প শুরু হলো।এমনিতেই আমাকে তার কাছে সিংহের পাশে হুলোর মতো দেখাচ্ছে। জিরাফের মত গলা উচিয়ে তার মুখে তাকাতে হচ্ছে।
    - আমি আলাউদ্দীন ওয়াদ দীন মুহাম্মাদ শা উস সুলতান, সিকান্দর সানি।
    হাঁ করে তাঁর দিকে গলা উচিয়ে চেয়ে রইলে তিনি পরিষ্কার ভাবে বললেন
    - খিলজী, আলাউদ্দীন খিলজী।
    তাঁর উপস্থিতি তাঁর চেহারা তাঁর উদাত্ত কণ্ঠস্বর এ সব মিলিয়ে একটা ঘোরে চলে গেলাম। বিশ্বাস করতেই হলো ইনি আলাউদ্দীন খিলজী। ঢোঁক গিলে নিয়ে বললাম
    -জাহা পনা, তা এই গরিবের কুঠিতে কি মনে করে হুজুর? তবে আমি কি আপনার সমসাময়িক কোন কেউকেটা ছিলেম হুজুর?
    -থাম, আয়না দেখা হয় না বুঝি? আমার সমসাময়িক এক না খেতে পাওয়া চাষীরও চেহেরা তোর থেকে উৎকৃষ্ট ছিল।
    আবার ঢোঁক গিলে বললাম
    -মাফি জাহাঁ পনা, কিন্তু এখানে কি মনে করে?
    খিলজী সাহেব করুন ভাবে আমার দিকে চেয়ে বললেন
    -অন্দরে আসিতে বলবি না বুঝি? আজ আমি তোদের শুধুই ঘৃণার পাত্র? এত ক্রোধ আমার প্রতি তোদের?
    বিগলিত হয়ে দাঁত বের করার বললাম
    -কি যে বলেন হুজুর! আপনি কবেকার কোন ঐতিহাসিক চরিত্র। তাঁর ওপর আবার রাগ। রাগ ঐ ইতিহাস পড়ার সময় অল্প হয় বৈ কি! এতো অত্যাচার হত্যালীলা কি করে যে সম্পাদন করতেন! তাতে অল্প বিস্তর রাগ হয় বৈ কি! আরো রাগ হয় আপনাদের যত কীর্তি,ইতিহাসের বইতে পাতার সংখ্যায় তত বৃদ্ধি।কিন্তু তারপর আর না। তার ওপর আমি বাঙালী। আমাদের দেশদ্রোহী হিসেবে দেশজোড়া সুনাম আছে হুজুর। আসুন ভিতরে প্রবেশ করুন।
    গম্ভীর ভাবে হোয়াটস্যাপ মার্কা একটা হুমমমমম করে এই গরিবের কুটিরে পদধূলি দিলেন দ্বাদশ শতকের দিল্লীর দোর্দণ্ডপ্রতাপ সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী।

    উনি গৃহে প্রবেশ করলে আমার সবচেয়ে দামী ও সৌখিন সোফায় তাঁকে বসতে দিলাম। এমনিতে এ সোফা থ্রি সিটার। কিন্তু তাঁর পশ্চাৎদেশ তাতে আরামে কুলিয়ে গেল দেখে শান্তি পেলাম। রাজাসুলভ কায়দায় হাত পা ছড়িয়ে আরামে বসলেন সুলতান। আমার আর দুটি মাত্র ঘর। একটিতে স্ত্রী গোপাল অধিষ্ঠিত করেছেন, অন্যটায় আমরা অধিষ্ঠান করি। গোপালের ঘরে এনাকে ঢুকতে বা বসতে দেওয়া যায় না। তা ইনি যত বড়ই সম্রাট হোক না কেনো! সব কিছুরতো একটা নিয়ম আছে না কি? এমনিতে বন্ধু মহলে আমার লিবারাল আর হবু নাস্তিক হিসেবে একটা ইয়ে ব্যাপার ছড়িয়ে আছে। কিন্তু তা বলে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আর এক ঘরে আমার সুন্দরী স্ত্রী দেবী অধিষ্ঠান করছেন। তেনাকে বলে আসি বারান্দায় না আসতে। মানে পর্দানসিন হয়ে যেতে। উফফ !!পর্দা মনে বারান্দা আর ঘরের মাঝে যে শিফনের পর্দা আছে তা সর্বদা ঝুলিয়ে রাখতে। যতক্ষণ সুলতান বিদায় না হচ্ছেন। সুলতানকে বসিয়ে রেখে পশ্চাৎদেশ উত্থিত করে আর মাথা ঝুঁকিয়ে হেঁহেঁ করে বললাম
    -জাহাঁ পনা আপনি আরাম করুন। আমি অন্দর মহল থেকে ঘুরে আসি।
    -হা হা নিশ্চয়।
    সুরুৎ করে ঘরে ঢুকে বললাম
    -ঘরে কে এসেছে জানো?
    বৌ ভ্রু কুঁচকে বলল
    -এই কে গো? কার সাথে বকবক করছো?
    -শুনবে কে?হুম? মুখ চোখে রহস্য এনে শাহ রুক খানের মাথা দোলাতে লাগলাম।
    -এই নাটক না করে বলতো কে?
    -আলাউদ্দীন খিলজী, সত্যিকারের খিলজী। কোনো মস্করা নয়।
    -ও মা! রণবীর সিং বুঝি! কৈ কৈ?
    স্ত্রী বিগলিত হয়ে প্রায় পর্দা সরিয়ে বারান্দায় চলে যাচ্ছিল, হাত টেনে ধরে আটকালাম। তারপর পুরোটা খুলে বললে, স্ত্রী ভয় পেয়ে গেল। সাহস দিয়ে বললাম
    -আমি সব সামলে নেব। তুমি ঘরেই থাকবে। বেরিও না।আমি তোমাকে পদ্মিনী হতে দিতে চায় না। বা রানী কমলা দেবী।
    বেরিয়ে এসে দেখলাম, উনিও সোফায় হালকা করে তার ষাট মনের শরীর খানা এলিয়ে দিয়ে ঝিমোচ্ছেন। তার মানে ঝিমানো যে একটা রয়াল ব্যাপার, জেনে শান্তি পেলাম।
    -গুস্তাকী মাফ হো জাহাঁ পনা। কিঞ্চিৎ বিলম্ব হয়ে গেল।
    -না না তাহাতে কোনো সমস্যা দেখি না। কিন্তু তোমার বেগম সে আসিল না?
    -সেতো বাড়ি নাই জাহাঁ পনা। সেতো বাপের বাড়ি।
    -বান্দা, ঝুট বলিলে আমি আমার সময় কঠিন শাস্তি দিতাম, তাহা বুঝি ইতিহাসে পড়ো নাই? আমি দিব্যি তোমার বিবির খুশবু পাইতেছি, আর তুমি বলিতেছো তোমার বিবি বাপের বাড়ি গিয়াছে।
    -গুস্তাকী মাফ হো হুজুর।
    মনে মনে স্ত্রীকে বললাম ওরে তোর আজও এতো পারফিউম মাখার কি আছে! এ রণবীর সিং খিলজী নয় আমার মা। এ অরিজিনাল খিলজী। বলা বাহুল্য এই অরিজিনাল খিলজী রণবীর সিং খিলজীর থেকে অনেক বেশী আকর্ষণীয় ও প্রভাব বিস্তারকারী। দুজনে অনেকক্ষন নীরব বসে রইলাম। তারপর উনি নীরবতা ভাঙলেন
    -কি একখানা পদ্মাবতী লইয়া তোমাদের দেশে কিঞ্চিৎ গোলযোগ চলিতেছে দেখিতেছি। তাহা দেখিয়া আমি বিচলিত আছি। কারণ এই এত বৎসর পর নতুন স্ক্যান্ডাল আর ভালো লাগিতেছে না। ইহার সহিত আমার নাম জুড়িবার কারণ বুঝিতে পারিতেছি না।
    - সে কি হুজুর? আপনি যখন চিত্তোর আক্রমণ করেন, হেলেন ক্লিওপেট্রা সম সুন্দরী রানী পদ্মিনী কে পাওয়ার লোভ আপনি করেন নি?
    -এই পদ্মিনী নামের কোনো মহিলার নাম আমার মনে পড়িতেছে না। আমার বরং রানী কমলা দেবীর নাম মনে আছে। গুজরাটে বাঘেলাদের পরাজয় করে রানী কমলা দেবীকে আমি দিল্লী লইয়া আসি। সেও যথার্থ সুন্দরী ছিল।
    -কিন্তু সকলে যে বলছে? রানী পদ্মিনী আপনার লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে জোহরব্রত পালন করেছিলেন?
    - তাহা ঘটিয়াছিল কি না আমি বিস্মৃত হইয়াছি। এমনিতে আমার নাতিদীর্ঘ শাসনকালে অসংখ্য ঝঞ্ঝা পোহাইতে হইয়াছে। মোঙ্গলরা আমায় যথেষ্ট বেগ দিয়াছে। তাহাদের নাস্তানাবুদ করিতেই আমার শাসনকাল শেষ। তাহার ওপর আমি প্রশাসনিক ও কর সংক্রান্ত সংস্কার লইয়া প্রভূত ব্যস্ত হইয়া পড়ি। এ সব ছোট খাটো ঘটনা আমার মনে না থাকারই কথা। তদুপরি ইহা কাল্পনিক কাহিনীও হইতে পারে। ইহা লইয়া আজ সাতশত বৎসর পর এই গোলযোগের যৌক্তিকতা দেখি না।
    স্বভাবতই বিরক্ত শোনালো খিলজীর কন্ঠ।
    -কিন্তু হুজুর ছোট ঘটনা কি করে বলছেন? চিত্তোর জয় করতে আপনাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল বলে শুনেছি। দীর্ঘ আট মাসের লড়াইয়ের পর আপনি রত্না সিংকে পরাজিত করে চিত্তোর জয় করেছিলেন। আর তাঁর সুন্দরী স্ত্রীর কথা আপনি বেমালুম ভুলে গেলেন।
    -এ কথা সত্য। রত্না সিংয়ের সাথে লড়াইতে আমায় বেগ পাইতে হইয়াছিল। তবে তাহাদের তুলনায় আমায় অনেক বেশি লড়াই দিয়াছিল মোঙ্গলরা।
    -তার মানে আপনি পদ্মিনী বা পদ্মাবতী নামে কাউকে চেনেন না বলছেন?
    -না, পরিচিতি থাকিলেও আমি বিস্মৃত হইয়াছি। এই সাতশত বৎসরে ব্রহ্মাণ্ডে প্রভূত পরিবর্তন সংঘটিত হইয়াছে। সাতশত বৎসর কি যথেষ্ট নহে বিস্মৃত হইবার জন্য।
    -না জাহাঁ পনা। ওরা ভোলে নাই। ওরা এর প্রতিশোধ এখন তুলবে।
    -ওরা মানে কারা?
    -জাহাঁ পনা কর্ণি সেনা। চোখ বড় বড় করে ফিসফিস করে ওনাকে আগাম কৃপা করার দৃষ্টি নিয়ে বললাম।
    উনি হো হো করে হেসে উঠলেন।
    -ছো, এই এখনকার রাজপুত শক্তি বুঝি? হাহাঃহাঃ। না আমার সময়েও সেই রূপ কিছু তাহাদের শক্তি চাক্ষুষ করি নাই। তবে এই পুরো কর্ণি সেনার জন্য আমার মালিক কাফুর একাই যথেষ্ট। তাও বিনা তরবারী। তোমাদের এই কর্ণি সেনা বরং শিশুদের সহিত যুদ্ধ করুক।
    -তাই করে জাহাঁ পনা। তাই করে। আপনিওতো শুনেছি শিশুদের ছাড়েন নি জনাব। এ ব্যাপারে আপনাদের আর ওদের বিশেষ পার্থক্য নেই, কি বলেন?
    -দেখো বালক, যদি বল সুলতানদের সহিত সে সময় রাজপুতদের বিশেষ কিছুই পার্থক্য ছিল না, তবে তাহা মিথ্যা নহে। মননে, চিন্তায়, বাসনায়, লালসায় আমরা একীভূত ছিলাম। পার্থক্য ছিল যাহা,তাহা হইল শক্তিতে। উহারা বাহু বা সামরিক শক্তিতে আমাদিগ হইতে বহু যোজন পশ্চাতে ছিলেন।
    -জাহাঁ পনা যদি অভয় দেন তো এক খান কতা কই?
    -দিলাম। অভয় দিলাম।
    -হুজুর মালিক কাফুরের খবর কি? সে কি আপনার সঙ্গেই থাকে? ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে জিজ্ঞাসা করলাম।
    জোড়ে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন সুলতান।
    -ইহা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে আলোচনার কোন অবকাশ দেখি না। তদুপরি তোদের আইন এ ব্যাপারে যথেষ্ট পশ্চাৎগামী।
    -হুজুর ইসলামেও এ ব্যাপারে আদেশ নাই বলিয়া শুনিয়াছি।
    -ইসলামে তো সুরাপানেরও আদেশ নাই। তবুও আমি কেমন সূরা পান করিতাম জানা নাই বুঝি? শোন নির্বোধ ধর্ম কর্ম সবই রাজার ইচ্ছেয় আবর্ত হয় এই সার সত্য স্মরনে রাখিস। আমিতো নূতন এক ধর্ম উদ্ভাবনের কথাও চিন্তা করিয়াছিলাম।তা ছাড়া আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার লইয়া তোকে এত কিছু বলিব কেন রে ছোকরা? আমার সুলতানাতে কেউ এ রূপ গুস্তাকী করিলে তাহার মুন্ড ছেদন করিতাম।
    বলেই উনি তরবারীতে হাত রাখলেন। ভয়ে বুক ধড়ফড় করে উঠলো। আমতা আমতা করে বললাম
    -জাহাঁ পনা চা বলি? কালিকার চপ খাবেন? পুঁটিরামের মিষ্টি?
    -না না তোদের এ সকল খাবার আমার চলিবে না। এ খাদ্য সুলতানের নহে।
    -তা তো ঠিক হুজুর। আপনিতো ইয়াববড়ো ছাগল না গরুর ঠ্যাং এর রোস্ট খান।
    -এ তথ্য তুই কোথায় পাইলি?
    -হুজুর ওই যে রণবীর সিংকে দেখলুম যে, ইয়াববড়ো এক খানা লেগ পিস চিবুচ্ছে।
    -আচ্ছা এই রণবীর সিং কে বলতো? সিং শুনে বোধ হইতেছে এ রত্না সিংয়ের বংশধর।
    -না না হুজুর সে সব কথা থাক। আপনি অন্য কথা বলেন।
    -হুমম, আমার সময়কার প্রশাসনিক, অর্থ এবং কর সংক্রান্ত সংস্কার লইয়া দু চার কথা বলি।
    -না না হুজুর সে সব থাক। করের সংস্কার এই কিছুদিন আগেই হলো। এটাই এখনো হজম করে উঠতে পারে নি।যেখানে যা কিনি ওই GST র জুজু দিয়ে পকেট সাফ করে দেয় হুজুর। অর্থ সংস্কার সেও থাক। ওসব ডিমানেটাইজেশন আপনি বুঝবেন না। তুঘলক সাহেব যদি বা বোঝেন। আর প্রশাসনিক সংস্কার কি বলি হুজুর? আপিসে বায়োমেট্রিক এটেন্ডেন্স শুরু হয়েছে হুজুর। দুটি বেলা আপিসে টাইম মেন্টেন করতে হয়। মধ্যে যা করি তাতে যদিও খেতি নেই। বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেললাম। উনিও আবেগী হয়ে পড়লেন বাষ্পীভূত গলায় বললেন
    -তোরা আমার নৃশংসতা আর বীভৎসতাই দেখলি, যখন দিল্লীর আসন দখল করিতে দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করি, কত মণ মণ সোনা গরিব দুঃখীদের বিতরণ করিয়াছি জানিস?
    -জানি হুজুর আপনার বর্তমান উত্তরসূরিও তাই। দিল্লী অভিমুখে গমনের পূর্বে প্রত্যেকের একাউন্টে... ।(না ইনি তো আবার এসব বুঝবে না- মনে মনে বললাম।) আর তাঁরও নৃশংসতা আমরা বিস্মৃত হয়েছি। হেঁহেঁ।
    -বা তোদের বর্তমান সুলতান দেখিতেছি বেশ যোগ্য ব্যক্তি।
    -তা বটে। তবে সুলতান শব্দটা শুনলেই তার এলার্জি হতে পারে। বরং তাকে সেবক,দাস এসব বলা যেতে পারে।
    -বেশ। তবে আমায় এবার প্রস্থান করিতে হইবে। কাফুর আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।
    -বেশ হুজুর। বলিয়া আবার পশ্চাৎদেশ উত্থিত করতে গেলেই উনি এক ধমক দিয়ে উঠলেন।
    -এসব ছাড় এইবার। জি হুজুর যো হুজুর করে তোদের ...।
    -থাক থাক হুজুর। প্রস্থানকালে আবার মুখ খারাপ করবেন কেন? ও কলোনিয়াল হ্যাংওভার হুজুর। নেশা কাটলেই চলে যাবে।
    এরপর ওনাকে দরজা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এসে ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। মাথাটা ভীষণ ভারী লাগচ্ছে। ধরেছে বোধ হয়। এমন সময় বাইরে চিৎকার আর কলিং বেলের ঘনঘন আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। দরজা খুলে দেখি পদ্মাবতী, থুড়ি আমার স্ত্রী। দরজা খুলতেই তার তৎকালীন খিলজীর রূপ।
    - ঘুমাও না মরে যাও? কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি? পারে শুদ্ধ লোক জেনে গেল। এত সন্ধ্যে পর্যন্ত কিসের ঘুম? ব্লা ব্লা ব্লা....
    আমি তখনো ঘোরে।
  • শঙ্খ | 55.112.70.154 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ২৩:১১371775
  • :)
  • pi | 127.227.44.163 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:৩৯371776
  • ঃ))
  • | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:০১371777
  • 'দাঁড়ি' মানে ফুলস্টপ। ও কারো গলে গজায়্না। দাড়ি মানে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া বস্তুটা গালে চিবুকে গজায়।
    আর হবু নাস্তিক আবার কী? হয় নাস্তিক নয়ত না।
  • Bip | 81.244.150.90 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:৩২371778
  • আলাউদ্দিন খিলজি, নায়ক না ভিলেন?
    **********************
    ভারতের ধারাবাহিক ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারতে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা কম-ওটা আমেরিকা/জার্মানী এখন চীনে দের হাতে। অনর্থক মারামারি ইতিহাসের দখল নিয়ে। বিশেষত যদি তা ভারতের ইসলামিক ইতিহাস হয় তাহলে বহু তর্কে বিতর্কে তা ঘেঁটে ঘ।

    এই অধ্যায়ের নতুন সংযোজন আলাউদ্দিন খিলজী। পদ্মাবৎ সিনেমার ভিলেন চরিত্র। সারাদিন সর্বত্র তর্ক বিতর্ক-সুলতান খিলজী কি খল নায়ক? নাকি, মোঙ্গল আক্রমন সফল ভাবে প্রতিরোধ করে তিনি নায়ক? এই নিয়ে অনেক লেখাই দেখলাম। সবই সংক্ষিপ্ত নোট। তাই দিয়ে আলাউদ্দিন চরিত্রের নির্মোহ বিশ্লেষন সম্ভব না।

    ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে আলাউদ্দিন খিলজি নিঃসন্দেহে পিভটাল চরিত্র। কারন তিনিই প্রথম বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিনে ইসলামিক শাসনকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হোন। তার আগে দিল্লী সুলতানেদের দখলে ছিল ছোট একটা সাম্রাজ্য-যা বাংলার থেকেও ছোট।

    হিন্দু কৃষকদের ওপর তিনি ৫০% ট্যাক্স চাপান- সেটাই চলে এসেছে বহুদিন পর্যন্ত-বৃটিশ আমল অব্দি। ধর্মপাল, দেবপাল, হর্ষবর্ধনদের পরে ভারতে দীর্ঘ তিন শতাব্দি তেমন কোন শক্তিশালী সাম্রাজ্য আসে নি। অসংখ্য ছোট ছোট রাজ্যে ভাগ বিভক্ত তখন ভারত। কিন্ত বাণিজ্য কৃষিজ উৎপাদন কমে নি। তন্ত্র মন্ত্র ভ্রান্ত ধর্মের অনাচারে ক্ষত্রিয় শক্তি ক্ষীনমান। সেই পটভূমিতেই উদ্ভব আলাউদ্দিনের। যার মিলিটারী স্ট্রাটেজি এবং ট্যাক্সের স্টিম রোলারের সামনে অসংখ্য সমৃদ্ধ হিন্দু রাজ্য, দরিদ্র দুর্ভীক্ষ পীড়িত রাজ্যে পরিণত হয়।

    আলাউদ্দিনের কাকা এবং শশুর জালাউদ্দিন খিলজী নৃশংস ছিলেন না। নারী সুরাতেই কাটত তার দিন। কিন্ত তারা জামাতা আলাউদ্দিন খিলজীর মতন নৃশংস শাসক ভারত না কখনো দেখেছে এর আগে, না দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারত এমন নরাধাম শাসক সম্ভব। তবে তার নৃশংস নিষ্ঠুর চরিত্রের উৎস- তাদের উপজাতিক ঐতিহ্য, ইসলাম না। ইতিহাসের নানান দলিল ঘাঁটলে এটাই পরিস্কার আলাউদ্দিনের ছিলেন গর্বিত মামলুক উপজাতির লোক ( যদিও তার জন্ম বাংলার বীরভূমে) -বিশ্বাস করতেন সেই পাহাড়ি ঐতিহ্যে-যেখানে অন্য সর্দারকে যুদ্ধ হারিতে তাদের নারী সন্তান গাভীর দখল নেওয়াটাই গর্বিত ঐতিহ্য। মনে রাখতে হবে এই মধ্য এশিয়ার ট্রাইবগুলো মোটেও ওইসব সতী সাবিত্রী নারী, বিয়ের পবিত্র বন্ধনে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে ক্ষমতা যার নারী তার-নারী কোন পুরুষের না, শাসকের।

    আলাউদ্দিন-মিলিটারী জেনারেল ঃ

    আলাউদ্দিন চরিত্র বুঝতে হলে, বুঝতে হবে মিলিটারি জেনারেল হিসাবে তার উচ্চাশাকে। উনি আলেক্সান্ডারের ন্যায় বিজয়ী হতে চেয়েছিলেন-ফলে পদবী নেন সিকান্দার সানি, দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার। কল্পনা করতেন তার লেগাসি হবে আলেক্সান্ডার বা চেঙ্গিস খানের মতন। সেটা করতে গিয়ে তিনি মিলিটারির আমূল সংস্কার করেন। তার আগে ভারতে বা কোথাও স্থায়ী সেনা বাহিনী ছিল না। তিনিই প্রথম সম্পূর্ন বেতনভোগী সেনা বাহিনী তৈরী করেন ভারতে। আসলে সামন্তরাজা বা ভেসেল স্টেট গুলির উপর তার বিশ্বাস ছিল না। কারন তার শশুর এবং কাকা জালাউদ্দিন খিলজিকে সরাতে, এই সব সামন্ত শক্তিকে ঘুঁশ দিয়েই কাজ হাঁসিল করেন আলাউদ্দিন। ফলে একবার যখন ক্ষমতা সম্পূর্ন হাতে পেলেন, রাজদরবারের সমস্ত মালিকদের ডানা ছাঁটাই করেন। যারা জালালুদ্দিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার দিকে যোগ দিয়েছিল গোপনে, তাদের খুন করেন। তার উদ্দেশই ছিল ক্ষমতার দ্বিতীয় কেন্দ্র যেন তৈরী না হয়! মুশকিল হল, তার স্থায়ী মিলিটারির খরচ চালাতে গিয়ে ৫০% ট্যাক্স ধার্য্য করেছিলেন আলাউদ্দিন। যার ফলে কৃষিকাজই উঠে যাবার উপক্রম হয়। তার আমলে ভারতে অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। কৃষি, বাণিজ্য ধ্বংস হয়। সুতরাং তিনি মোঙ্গল আক্রমণ আটকেছেন-এটা কোন গৌরবের কথা না। কারন মোঙ্গলরা ভারতে যা ধ্বংসলীলা চালাত, তার থেকেও বেশী ধ্বংসলীলা তিনি নিজে চালিয়েছেন ভুল অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে।

    সাম্প্রদায়িক আলাউদ্দিন?

    এবার আসা যাক সব থেকে বিতর্কিত প্রশ্নে। আলাউদ্দিন কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন? হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমুলক আচারন করেছেন?

    এটা অস্বীকার করার যায়গা নেই, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের অধিকাংশ হিন্দু কৃষক আলাউদ্দিনের আমলে চূড়ান্ত দারিদ্রের সম্মুখীন হয়। উত্তরের মোঙ্গল আক্রমন ঠেকানোর জন্য, জমির ওপরে ৫০% কর ধার্য্য হল। এর সাথে জিজিয়া সহ অন্যান্য বিধর্মী কর ত ছিলই। অনাদায়ের শাস্তি ছিল রাষ্ট্র কৃষক এবং তার সমস্ত পরিবারকে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেবে। ফলে আলাউদ্দিনের শাসনের মাত্র দশ বছরের মধ্যেই তার রাজ্যে অর্ধেকের বেশী দাসে পরিনত হয়। এদের সবাই ছিল হিন্দু কৃষক। এদের গৃহিনীরা মুসলমান মালিক ( রাজকর্মচারী) দের যৌনদাসীতে পরিণত হয় কর দিতে না পারায়। এই সব যৌনদাসীদেরই বলা হত লন্ডি-যা হিন্দিতে গালি হিসাবে এখনো চালু।

    মনে রাখতে হবে আলাউদ্দিনের নির্দেশ ছিল পরিস্কার। হিন্দুদের এমন দারিদ্রের মধ্যে ফেল যেন তাদের ঘোড়া কেনার পয়সাও না থাকে-যাতে কোন ভাবেই সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার দুঃসাহস না দেখায় কেউ।

    কিন্ত এটা কি সাম্প্রদায়িক না স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্ত? আলাউদ্দিন ধর্মপ্রান মুসলমান ছিলেন না। মামলুকরা কেইই ধর্মপ্রান মুসলমান না। প্রচন্ড মদ্যপায়ী ছিল । তারা ইসলামের চেয়ে তাদের পাহাড়ি সংস্কৃতিতেই বিশ্বাস করতেন বেশী। আলাউদ্দিন জীবনে দুবার নিজের ধর্ম প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এই ব্যপারে তার অনুপ্রেরণা ছিল চেঙ্গিস খান।

    এটা আরো পরিস্কার হবে উত্তর বনাম দক্ষিনের হিন্দু রাজাদের জন্য তার স্ট্রাটেজি ছিল আলাদা। গুজরাটের ভাগেলা, রাজস্থানের রনথন্মর চিতোর ইত্যাদি রাজ্য নিজে জিতে তছনচ করেছেন, ওই সব রাজ্যের রানী সহ সব মহিলাদের হারেমে ঢুকিয়েছেন। শুধু চিতোর অভিযানেই ৩০ হাজার হিন্দু হত্যা করেন। কিন্ত দক্ষিন ভারতে দেবগিরি ওরাঙ্গাল কাকাটিয়া হোসালা -ইত্যাদি রাজাদের পরাজিত করে তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করেছেন। তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। তাদের ধ্বংশ করেন নি কেন?

    এখানেই আমরা বিচক্ষণ আলাউদ্দিনকে দেখতে পাব। ১৩০৩ সালের আগস্ট মাসে মোঙ্গলরা তার আমলে চতুর্থবারের মতন দিল্লী আক্রমণ করে। এর আগে তিনবার তিনি মোঙ্গলদের মেরে ভাগিয়েছেন। ১৩০৩ সালের আগস্ট মাসে মোঙ্গলরা দিল্লী ধ্বংশ করে। ৫০,০০০ নিরীহ স্ত্রী পুরুষ খুন করে মোঙ্গলরা। যদিও এবারো মোঙ্গলদের মেরে তাড়িয়েছিলেন আলাউদ্দিন-তদ্দিনে দিল্লীর যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গেছে।

    আসলে সেবার ওরাঙ্গাল অভিযানে ছিলেন আলাউদ্দিন। যখন তার কাছে খবর এল মোঙ্গলরা আসছে-উনি সেনা নিয়ে দিল্লীর দিকে আবার এগোলেন। কিন্ত তখন দক্ষিন থেকে দিল্লী আসতে দু-সপ্তাহ সময় লাগত। দিল্লীতে সেনা নিয়ে পৌঁছানোর আগেই দিল্লী ধ্বংশ করে মোঙ্গলরা। এর থেকেই আলাউদ্দিন বোঝেন দক্ষিনে লুঠ করা যায়, কিন্ত সেখানে সেনা রেখে শাসন করতে গেলে মোঙ্গল আক্রমন ঠেকানো যাবে না। ফলে দক্ষিনের হিন্দু শাসকদের প্রতি বন্ধুত্বের নীতি নেন আলাউদ্দিন, যেখানে উত্তরের হিন্দু শাসকদের মেরে ধরে তাড়িয়েছেন। পুরো রাজবংশকে ধরে ধরে হারেমে ঢুকিয়েছেন।

    এবার আসা যাক হিন্দু রানীদের হারেমে ঢোকানো নিয়ে তার লেজেন্ডারী কেচ্ছা। প্রথমেই আসবে কমলা দেবীর কথা। কমলা দেবী ছিলেন ভাগেলা রাজা কর্নের সুন্দরী স্ত্রী। কমলা দেবী আসলে ছিলেন কর্নের মন্ত্রী মাধবের স্ত্রী। তবে হ্যা, রাজা কর্নও কমলা দেবীকে ছিনিয়ে নেন তার মন্ত্রী মাধবের কাছ থেকে। মাধব পালিয়ে যান আলাউদ্দিনের কাছে এবং তাকে রাজা কর্নকে আক্রমণ করার জন্য উস্কাতে থাকেন। ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিনের সেনাপতি উগা খান কর্নকে পরাস্ত করে কমলা দেবীকে বন্দী করে আলাউদ্দিনের হাতে তুলে দেন। দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র অবশ্য তার কন্যা জাত্যপালিকে আলাউদ্দিনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হোন সন্ধির শর্ত হিসাবে। মধ্যযুগে এসব চলত- এর মধ্যে হিন্দু মুসলমান খোঁজা হাস্যকর। উদাহরন চান? আমির খশরু, আলাউদ্দিনের জীবনীকার লিখছেন কমলাদেবী আসলেই রাজা কর্নকে ঘৃনা করতেন কারন, রাজা কর্ন তার স্বামীর কাছ থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। ফলে কমলাদেবী আলাউদ্দিনের হারেমে থেকে কর্নের ছিন্ন মস্তক দাবী করেছিলেন। কিন্ত কর্ন গোটা ভারতে পালিয়ে বেঁচেছিলেন।

    আলাউদ্দিন অতীব নিষ্ঠুর ছিলেন-কিন্ত সেই যুগে যেখানে সুলতানের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অজস্র ষঢ়যন্ত্র বিদ্রোহ হত, নিষ্ঠুরতা ছাড়া কোন শাসকে টেকার কোন চান্স ছিল না। উনি একদিনে ৩০,০০০ মোঙ্গল মেরেছেন, যারা দিল্লীতে নতুন বাসা বেঁধেছিল থাকার জন্য। এরা সবাই ছিল মুসলমান। শুধু মাত্র সন্দেহের বশে এতজনকে খুন করেছিলেন আলাউদ্দিন। নিজেরা কাকা এবং শশুর জালাউদ্দিনকে মুন্ডু কেটে নিজের শালার কাছে পাঠিয়েছিলেন ভয় দেখাতে। আরেক শালা ছিল মুলতানের শাসক- জালাউদ্দিনকে হত্যার পরে, তার চোখ উপড়ে, নিজের শাশুড়িকাছে তার কাটা মাথা পাঠান। কারন তার এই শাশুড়ি এবং জালাউদ্দিনের বিধবা স্ত্রী খুব জ্বালিয়েছিলেন আলাউদ্দিনকে। যেখানে নিজের শশুর, শালা, শাশুড়িদেরই নৃশংস ভাবে খুন করেছেন আলাউদ্দিন -সেখানে হিন্দু প্রজাদের প্রতি প্রেম দেখাবেন, এতটা ভাবাই পাগলামো।

    আলাউদ্দিন যা কিছু করেছেন, তা ভারতীয় সভ্যতার দৃষ্টিতে নৃশংস, বর্বরতা। কিন্ত আলাউদ্দিনের উৎস, মধ্য এশিয়ার আদিবাসীদের কাছে আলাউদ্দিনের নৃশংসতাটাই স্বাভাবিক আচরন। মধ্য এশিয়ার এই সব আদিবাসিদের মধ্যে জোর যার মুলুক তার, নারীও তার। আলাউদ্দিনকে খুঁজতে গেলে সেই মামলুকদের সংস্কৃতিতেই তাকে খুঁজতে হবে। এর মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আসা আহাম্মকি।

    আজকে ভারতের ইতিহাস নিয়ে হিন্দুত্ববাদি বনাম সেকুলারবাদিদের লড়াই কেন? কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, মুসলমান শাসকদের নৃশংসতার ইতিহাস চেপে দেওয়া হয়েছে। সেটার দরকার ছিল না। কারন সেই নৃশংসতার পেছনে ছিল তাদের মধ্য এশিয়ার সংস্কৃতি, রাজনীতি। ইসলামের ভূমিকা সেখানে নগন্য । ফলে আজকে সেই ভ্যাকুয়ামের দখল নিচ্ছে হিন্দুত্ববাদি রাজনীতিবিদরা। এই জন্যে ইতিহাসে স্পেডকে স্পেড বলাই ভাল।
  • S | 194.167.2.96 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:৪৯371779
  • এটার ভালো নাটক হয়। কিন্তু হিন্দিতে করতে হবে।
  • Dipak Pal | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:৩০371780
  • সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে কিছু বানান ভুল আছে আমিও জানি কিন্তু এর এডিট করার অপশন পেলাম না। মোবাইলে টাইপ করায় কিছু অটো কারেক্টেড ভুলও হয়ে গেছে।
    বিপ দাকেও ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম।
  • aranya | 83.197.98.233 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৩371781
  • হবু নাস্তিক-টা মজা করে লেখা।

    দীপক, দিব্য লিখেছেন, আরও লিখুন। বানান ভুল না হলে ভাল হয়, তবে অত কিছু বড় ব্যাপার না, লেখার মান উত্তম হওয়াটাই সবচেয়ে আগে দরকার।
  • aranya | 83.197.98.233 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৬371782
  • বিপ্লবের পোস্টে অনেক তথ্য পেলাম, কিছু অজানা, কিছু আগে পড়েছি, ভুলে মেরেছিলাম। সিনেমাটা সদ্য দেখেছি বলে আরও ভাল লাগল পড়তে।
    ধন্যবাদ।
  • Dipak Pal | ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:২৮371769
  • অসংখ্য ধন্যবাদ Aranya
  • de | 24.139.119.171 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:২৩371770
  • দীপকবাবুর গপ্পো আর বিপের ইতিহাস দুইই দিব্ব লাগলো -
  • S | 194.167.2.96 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৫২371771
  • খলজি।
  • dd | 59.205.217.155 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:২৫371772
  • আর উদিকে মালয়েশিয়া (মাইন্ড ইট সৌদি এরাব নয়) পদ্মাবতকে ব্যান করেছে। বলছে নাকি ইসলামি সেন্টিমেন্টে ঠাঁই করে লেগেছে - সেজন্য।

    এটা পড়ে কুলকুলিয়ে হাসি পাচ্ছে। করণী সেনার তো নাক কাটা গ্যালো। হা হা হা। খ্যাক খ্যাক খ্যাক।
  • কল্লোল | 233.191.51.86 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:১৫371773
  • শুনোছি সতীদাহে উৎসাহ দেবার অপরাধে মামলা হবে ?
  • de | 69.185.236.56 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৪৭371774
  • দিনে দিনে লোকেদের সেন্টিমেন্টের মেমব্রেনটা বড্ডো পাতলা হয়ে আসছে, এজিং এফেক্ট বোধহয়! নতুন সেন্টিমেন্ট তৈরী হবার সময় হোলো সব ফাটিয়ে ফুটিয়ে -
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন