এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দূর শহরেরে কাছ থেকে

    Parvej Khan লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২০ অক্টোবর ২০১৭ | ২২৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Parvej Khan | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:১৮370960
  • বিলাসপুরি মানসিকতা থেকে বেরোতে পারলাম না(বিলাসপুরের মানুষ বা যাদের নাম বিলাস কাউকেই উদ্দেশ্য করে বলছি না একদমই) তাই ৯ ডায়াল করেই 'আন্না চায়ে কে লিয়ে কিসিকো ভেজ দো না'.. আন্না আসে ২০ টাকা হাতে দিয়ে চা আনতে পাঠিয়ে দেওয়াটাই রোজকার অভ্যাস, রোজ মানে এই এইপ্রদেশে যদ্দিন আছি।সুস্থ সবল দেহ,ইচ্ছে করলেই একটা গোল গলা গেঞ্জি গলিয়ে পাঁচ তলা নেমে মোড় টা থেকে চা খেয়ে আসা যায়,কিন্তু সেই ইচ্ছেটাই বড্ড কম হয়।
    আগের দুবার ও এবার নিয়ে এই তিনবার গত তেরো মাসে এলাম এবং প্রত্যেকবার সেই একই রুট, চেনাই ভাল- নেল্লোর নেমে সোজা বাস স্ট্যান্ড, সেখান থেকে ঘন্টা পাঁচের বাস জার্নি করে কাডাপা (এখন নাম বদলে কুডাপা হয়েছে) নিউ বাস স্ট্যান্ড, আর সেখান থেকে অটো করে সোজা বিষ্ণুপ্রিয়া লজ,সেভেন সার্কেল।অটো নামিয়ে দেয় তারপর সবাই টেনে হিঁচড়ে সেই লাগেজ গুলো প্রথমে একতলা,অফিস, ঘরের বন্দোবস্ত করে চাবি আর রিমোট নিয়ে সোজা পাঁচতলা,ঘরে যখন ঢোকা হয় এক এক করে বিভিন্ন সেনসারি অর্গানগুলো খবর পাঠাতে থাকে- 'অনেক বয়েছ বাবা, হাতের মাসলগুলো ব্যথা হয়ে আছে' 'আগের দিন কিন্তু স্নান হয়নি শিগগির স্নানে যাও' পরনে গেঞ্জি টা ততক্ষণে ঘাম আর বডি স্প্রে মেশানো অন্য গন্ধ ছাড়ছে - মানে সেটাও ধুয়ে মেলে ফেলো এই রাত্রির বেলা, তারপর প্রথম রাতের খাবার খেতে বেরুতে হবে আবার।নেমে সামনেই একটু খানি, রাত সাড়ে নটা অবধি খোলা থাকে দোকানটা, প্রত্যেকবার এসে প্রথম রাতের খাবার টা ওখানেই খেতে যেতে হয়,অন্য কোনো উপায় থাকেনা,তারপর মাঝে সাজে এক আধ বার।দেখলেই চিনতে পারে সে দোকানের মালিক, হিন্দিতে জিজ্ঞেস করে 'কবে এলাম' 'কদ্দিন আছি' এসব।চাপাটি ডিমভাজা বা ভাত পাপ্পু(ডাল) দিয়ে খিদে নিবারণ করতে হয়, ভালো না লাগলেও।
    যতবার এসেছি প্রতিবার দেখেছি লজের মালিক একই থাকে শুধু কর্মচারীরা পালটে পালটে যায় প্রত্যেকবার।কাডাপা ডিসট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার, নেল্লোর থেকে আসার পথে বাসে বসে,কানে হেডফোন গুজে অঞ্জন বা কবীর সুমনের গান শুনতে শুনতে দেখেছি শুধু পথ চলে যায় তো চলেই যায়, রাস্তার দুদিক ঘেরা শুধু ছোটোখাটো পাহাড়, তাকে ঘিরে অল্প বিস্তর জঙ্গল, অথবা ফাঁকা মাঠ আর মাঠ। ঘরবাড়ি,বাজার ঘাট প্রায় নেই। ঘন্টা দেড় পরে পরে একটা ছোটোখাটো বাজার আসত, সেখানে একটু দাঁড়াত বাসটা তারপর আবার একই।লোকজন যা উঠতে দেখতাম বেশিরভাগ ই মহিলা,এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী,আমাদের এখানকার মতো এত ভীড় না যে ঠেলে ঠেলে শুধুই বাসের পিছনে পাঠাবে। তবে ফাঁকা মাঠ আর ছোটোখাটো পাহাড় গুলো, জানলা দিয়ে আসা হাওয়া আর কানে গান কিন্তু জার্নিটাকে মাত করেই রাখে।
    এবারও ব্যতিক্রম নয়, আগেরবার যাদের দেখেছিলাম মালিক বাদ দিয়ে লজে তাদের কেবল একজন, লোকটি কথা বলতে পারেনা।তাই হয়ত একাই টিকে গেছে।প্রথমত আমরা কেউ ই তেলেগু জানিনা, তাই একমাত্র মাধ্যম কাটা,কাটা হিন্দি, ইংরাজি খুব কম জায়গায়।কথা না বলতে বা বুঝতে পারলেও সম্পর্ক হয়ে যায় তার উদাহরণ ওই খাবারের দোকানের সুব্বু।ওখানে কাজ করত।সে আমাদের কিছুই বুঝত না,আমরাও তার কোনো কথা বুঝতাম না তবু তার সাথে অনেক কথা হয়েছিল শেষবার যখন আসি,একদিন অন্য হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাইয়েছিলও,বলেছিল রেস্টুরেন্ট নিয়ে যাবে,আমরা কেউ রাজি হইনি,কিন্তু শেষ অবধি সে ছাড়েনি।এবার ও এসেছিল লজে গল্প করতে।কিন্তু লজের এই কথা না বলতে পারা কর্মী টার নাম জানিনা।আমার ঘরের টিভিটা কাজ করছেনা বলে ডাকলাম একদিন, আকার ইঙ্গিতে বলল 'ও ঠিক হবেনা,মালিককে বললেও করবে না' আগেও আমদের দেখেছে,হয়ত চেনার খাতিরেই বলল 'সব ছেড়ে দিয়েছে,যারা ছিল, আমি একা রয়ে গেছি''মালিক মারে,ভাল করে খেতে দেয়না'..
    সকালে ওখানে শিঙাড়া চপ এসব বিক্রি হয় নয়ত ইডলি ধোসা, কিন্তু মুখে রুচত না, আমাদের তো ওসব আর সকালে খাওয়ার অভ্যাস নেই।তাই সকালে কি খাওয়া যায়, বিশেষ করে পরীক্ষার দিনগুলো! কি খাওয়া যায়, কি খাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে বার হল রুটি আর মাখন। রুটি সহজলভ্য। মাখন কোথায় পাই, দুজন মিলে বেরিয়ে সবদিক খুঁজলাম, এ বলে এখানে যাও,ও বলে আমূলের কাছে, সে বলে স্টেট ব্যাংকের কাছে, কোথাও না পেয়ে ঘুরতে ঘুরতে একজন একটা ঠিকানা দিল এবং সেটা লজের ঠিক সামনে।'আন্না বাটার হ্যায় ক্যায়া?' উত্তর এল 'ক্যায়সে হো' 'সব আচ্ছা?' পিঠে হাত রাখল, প্রথমে মুখের দিকটায় তাকাইনি, পরে দেখলাম আরে আন্না কে তো আগের দুবার লজে দেখতাম,আমরা চা আনতে বললে ভাল চা এনে দিত।দেখে ভাললাগল। বললাম আন্না আপ ক্যায়সে হো... হিন্দিতেই বলল,তার বাংলা তর্জমা - লজ ছেড়ে দিয়েছি,এটা নিজের দোকান, ওখানে ঠিকমত টাকা দিতনা,বাজে ব্যাবহার করত, ছেড়ে দিয়েছি,এটা এখন নিজের।কাঁহাতক সহ্য করা যায়,নিজের মত স্বাধীন, কারো ভরসায় না,মালিকের শোষণ থেকে মুক্ত, নিজেই নিজের মালিক।পেটে খেলে তবে না পিঠে সয়। ধাক্কা আর সঠিক স্বপ্ন অনেক কিছু এনে দিতে পারে। দেখে খুব খুব ভাল লাগল,অন্যরকম একটা অনুভূতি হল।বাটার পাওয়া গেল না।সেখান থেকে একটা কোল্ডড্রিংকস নিয়েই চলে এলাম।
  • aranya | 83.197.98.233 | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ১২:২৮370961
  • ভাল লাগল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন