এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার সেই বাঙালি ভদ্রলোক, যাঁর কথা আমরা মনে রাখিনি! 

    Debasis Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ মে ২০২৪ | ১৯৫ বার পঠিত
  • নির্বাচন চলছে, ষষ্ঠ দফা সমাগত, এই সময় ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন তথা প্রথম নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে ভুলতে বসা দুই-চারটে তথ্য একটু স্মরণ করে নেওয়া যেতে পারে।

    ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০, দেশবাসীর হাতে সমস্ত রকমের ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করে ফিরে গেল ব্রিটিশ। ১৯৫১ সালে গঠিত হলো ভারতের নির্বাচন কমিশন। বিস্তর আলোচনার পর ঠিক হল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তখনকার চিফ সেক্রেটারিকে নিয়োগ করা হবে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে। আপাদমস্তক বঙ্গসন্তান এই মানুষটি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অংকে গোল্ড মেডেল পাওয়া স্নাতক এবং ১৯২১ ব্যাচের ICS।

    নিয়োগপত্র পাবার একমাস পরে নেহেরুজি একদিন ডেকে পাঠালেন তাঁকে, বললেন, সামনের বছর মার্চ মাসের মধ্যেই দেশে নির্বাচন করতে হবে তাঁকে, কোন অবস্থাতেই আর দেরি করা চলবে না। এত বড় একটা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষই তখন নিরক্ষর। কাজেই কাজটি কত দুরূহ ছিল তা বোঝাই যায়। ভোটার তালিকা বলে কিছু ছিল না, পরিকাঠামোও তৈরি হয়নি।

    তবে তুখোড় সিভিলিয়ান মানুষটি পিছিয়ে এলেন না। লোকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে প্রথম নির্বাচনে ৪৫০০ আসন ঠিক হয়েছিল, ব্যালট বক্স লেগেছিল কুড়ি লাখ আর ভোটকেন্দ্র হয়েছিল ২,২৪,০০০ টি। কিভাবে ভোট দিতে হয় /হবে সেসব মানুষকে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ভাষায় ৩০০টি সিনেমা বানানো ছাড়াও আকাশবাণী থেকে লাগাতার তিন মাস ধরে রেডিও বুলেটিন প্রচার করা হয়েছিল। সবচাইতে কঠিন কাজ ছিল ভোটার লিস্ট তৈরি করা। মূল সমস্যা এটাই যে সেই ১৯৫১ সালে মহিলারা পরপুরুষকে স্বামীর নাম তো দূরের কথা এমনকি নিজের নামটিও বলতে চাইতেন না। ফলে লিস্ট যখন ছাপা হয়ে এল তখন দেখা গেল সবাই 'রামের মা' নয়তো 'শ্যামের বউ'। রেগে গিয়ে নতুন ইলেকশন কমিশনার ২৮ লাখ মহিলার নাম বাদ দিলেন।

    সমাজতত্ত্ববিদদের মতে এতে তিনি সমাজের উপকারই করেছিলেন। কেন না পরে নির্বাচনে মহিলারা নিজের নাম দিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।

    প্রথম নির্বাচনে উনি প্রতিটি দলের জন্যই আলাদা ব্যালট বক্সের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাক্সের উপরে প্রার্থীর প্রতীক চিহ্ন সাঁটা থাকতো। বাক্সগুলো যত্ন করে রেখে দেওয়ার ফলে ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের খরচ বাঁচানো গেছিল। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনটিতেও তিনিই নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। এত বড় দেশে পরপর দুবার সাধারণ নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করার জন্যে রাষ্ট্রসংঘের তরফে তাঁকে সুদানের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়। দুঃখের কথা, এত বড় সাফল্যের পরেও ১৯২৮ সালে বর্ধমানে জন্ম নেওয়া এই বঙ্গসন্তানকে দেশ মনে রাখেনি! নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সময় থেকে বাঙালীদের উপেক্ষা করার যে রীতি অনুসৃত হয়ে আসছে তা এঁর বেলাতেও প্রযোজ্য হয়। স্বীকৃতি বলতে শুধু দেশের প্রথম পদ্মবিভূষণ দেওয়া হয়েছিল। ব্যস! এটুকুই!

    বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়ার পর ইনি সেখানকার প্রথম উপাচার্য পদে বসেন। ওঁর পরের দুই ভাইও ছিলেন খ্যাতনামা। মেজ ভাই ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী, অশোক সেন। ছোট ভাই ডাক্তার অমিয় সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর চিকিৎসক। শেষ সময়ে তিনিই কবিগুরুর পাশেই ছিলেন। এই স্মরণীয় মানুষটি হলেন সুকুমার সেন, ভারতের প্রথম চিফ ইলেকশন কমিশনার। গণতন্ত্রের ভিত্তিমুল তৈরি করার অন্যতম কারিগর। প্রণম্য আর একজন বঙ্গসন্তান !
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন