এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জানা, না না

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ মার্চ ২০২৪ | ১৫২ বার পঠিত
  • কয়েকটা ঘটনা বলি। প্রথমটা মজার হলেও সচরাচর এমন হয় না বলে লিখেই ফেললাম। বাকিগুলো অজানা একটা জগতের আভাস দেয় তা ঠিক। ব্যাখ্যা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
    ব্যাপার হল, এক সন্ধ্যায় শ্যামবাজারের চশমা গলির একটি চশমার দোকান থেকে আমাদের বাড়িতে চশমা ডেলিভারি দিতে একটা লোক এসেছিল। তখন সবে মোবাইলের চল হয়েছে। আমাদের পরিবারে কারোরই তখন মোবাইল ছিল না তবে ল্যান্ডফোন ছিল।

    লোকটা চশমা দেওয়ার পর টাকা নিয়ে বাবাকে বলল, একটা ফোন করা যাবে? বাবা বলল, করুন। তখন লোকটা ফোন করল এবং সেটা হল ভুল নম্বর। এবার লোকটা বাবাকে বলল, আরেকটি করি? বাবার অনুমতি পেয়ে লোকটা একজনকে ফোন করে ঠিক নম্বরটা নিয়ে নিল। ঠিক নম্বরটা পেয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের গলায় বলল, ঠিক নম্বরটা যখন পেয়েই গেলাম, তখন ফোনটা করেই ফেলি, নাকি! আমরা অবাক হয়ে লোকটার কান্ড দেখছি। তৃতীয় দফাতেও বাবার অনুমতি পেয়ে লোকটা আবার ফোন করল। ততক্ষণে আমি একটু একটু হাসতে শুরু করেছি। বাবা, মা আর বোন হাসি চেপে আছে। লোকটা চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে খুব হেসেছিলাম, মনে আছে।

    এই ঘটনাটা আমার ছোট পিসির মুখে শোনা। পিসিরা বীরভূম জেলার একটি গ্রামের জমিদার ছিলেন তবে জমিদারি খুব পুরনো নয়, দু' পুরুষের। যে সময়ের কথা বলছি, তার বহু দিন আগে পিসেমশাই গত হয়েছেন। পিসির একটি মাত্র ছেলে তখন অনেক বড়, তার বিয়ের সম্বন্ধ হচ্ছে। পিসিদের বাড়িটা ছিল বিরাট, ছড়ানো ছিটনো এবং একটা অংশ কাঁচা আরেকটা অংশ পাকা। বোধহয় তিরাশি কী চুরাশি সাল পর্যন্ত বাড়িটায় বিদ্যুৎ আসেনি। পিসিরা দরাজ মনের মানুষ হওয়ায় মাঝেমাঝেই  অপরিচিত লোককে আশ্রয় দিতেন। এ ব্যাপারে তাঁদের ঔদার্য ছিল৷ এমন কী অজানা লোককে অনেক সময় রাতেও আশ্রয় দেওয়া হ'ত। বাড়িতে গ্রামীণ ধ্যানধারণা অনুযায়ী যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল তাও ঠিক। পশ্চিমবঙ্গে সত্তর একাত্তর সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তারপর ক্রমে ক্রমে থিতিয়ে যায়। তবু মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যায়নি। এই ঘটনা ছিয়াত্তর কী সাতাত্তর সালের এবং মারাত্মক রহস্যময় না হলেও একটু অদ্ভুত। এক রাতে পিসিদের বাড়িতে একটা লোক এসে আশ্রয় চাইল। বলল, আমি অনেক দূর যাব। রাত হয়ে গেছে, এখন বাস বন্ধ, আজকের রাতটা যদি আমাকে একটু আশ্রয় দেন! লোকটার সঙ্গে বিশেষ কিছু ছিল না, শুধু একটা বড় প্যাকেট। পিসি ও পিসতুতো দাদা স্বভাব অনুযায়ী লোকটাকে আশ্রয় দিলেন তবে লোকটার হাবভাব দেখে তাঁদের একটু খটকা লেগেছিল। রাতে লোকটা সেই প্যাকেটটা পাশে নিয়ে শুয়েছিল। পিসির জায়ের ছেলে রাতে এক সময় প্যাকেটটা টিপে টিপে দেখেছিল,  তার মধ্যে শক্ত কী একটা জিনিস রয়েছে। পরের দিন সকালে চা-টা খেতে খেতে লোকটা পিসিকে বলেছিল, শুনেছি আপনার ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। আমার একটি বিবাহযোগ্যা মেয়ে রয়েছে। আপনার ইচ্ছা থাকলে এগোতে পারি। পিসি অবশ্য কোনো আগ্রহ দেখাননি। কে জানে লোকটা কে ছিল? কোথাও চুরিডাকাতি করে পালিয়ে আসছিল, এমনো হতে পারে। কত যে রহস্যময় ব্যাপার ঘটে!

    আমার চেনা এক ভদ্রমহিলার মুখে একটা ঘটনা শুনেছিলাম৷ তাঁর এক তুতো দিদির এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ধরা যাক, সেই মহিলাটির নাম চিত্রা। স্বামীর চাকরির সূত্রে সে তখন রায়পুরে। চিত্রা এক দিন কী একটা কারণে দুপুরবেলায় রাস্তায় বেরিয়েছিল। কিছুটা হাঁটার পর একটা পাগল পাগল লোক তার সামনে এসে দাঁড়ায় আর বলে- তেরি ইতনি হিম্মত কে বাহার ঘুমনে আয়ি হ্যায়,  যা জলদি সে ঘর লওট্ যা। দেখ তেরে ঘর মে ক্যা হো রহা হ্যায়। চিত্রা প্রথমে মনে করেছিল পাগলটাগল। তারপর মনটা কুডাক ডাকায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখে, বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে। তবে বড় কথা হল, তাদের বাচ্চা দুটোর কিছু হয়নি। তার স্বামী ছিল অফিসে। কিন্তু ওই লোকটা কে ছিল যে চিত্রাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেছিল? এটা কী কোনো অলৌকিক সংযোগ? কোনো দিন জানা যাবে না।

    এবারের ঘটনাটা প্রতিবেশিনী এক মহিলার মুখে শোনা। বাড়ির কর্তার বায়ু সেনার চাকরির সূত্রে পরিবারটি তখন কানপুর বা আগ্রায়। এই ভদ্রমহিলার সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর হঠাৎ করে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। সন্ন্যাসী বাঙালি এবং সৌম্যদর্শন। মাত্র একবারই তিনি সন্ন্যাসীকে দেখেছিলেন। সন্ন্যাসী এই ভদ্রমহিলাকে বলেছিলেন, মা, অাপনার বাপের বাড়িতে ঘোর বিপদ আসছে।এই সাক্ষাতের কিছু দিন পর ভদ্রমহিলার ভাইয়ের বৌ আগুনে পুড়ে মারা যায়। 

    সোনা নামে একটি মেয়ের কথা বলি। আমার এক বন্ধু'র বাড়িতে সে মাঝেমাঝে আসত। এক দিন মেয়েটিকে বিষণ্ণ দেখলাম। জানলাম, তার মা মারা গেছে। মেয়েটি তখন সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, তখনো ফলাফল বেরোয়নি। আমার বন্ধুর মুখেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার শুনলাম। সোনার মা বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মাধ্যমিকের পিটি পরীক্ষা নিতে যে ভদ্রলোক ওদের স্কুলে এসেছিলেন, তিনি সোনার পরীক্ষা নেওয়ার পর ওদেরই স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বলেছিলেন, মেয়েটির মা বাঁচবে না। শিক্ষিকা তো ভীষণ অবাক- ওর মায়ের কথা আপনি কী করে জানলেন? উত্তরে সেই ভদ্রলোক বলেছিলেন, মানুষের জীবনে যা ঘটবে সেটা তার কপালে ফুটে ওঠে। কপালের লেখা আমি পড়তে পারি। মেয়েটির কপালে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, শিগগিরি ওর মা মারা যাবে।

    কতগুলো ঘটনা বললাম। প্রথম ঘটনাটি কৌতুকের হলেও বাকিগুলো কৌতুকের নয়। ভবিষ্যৎ দেখা যায় কিনা, বিতর্কিত ব্যাপার। তবে এই ঘটনাগুলো বাঁধা গতের নয় বলেই মনে হয়েছে আমার, তাই লিখলাম। প্রথম ঘটনাটা মজার হলেও  অদ্ভুত বলে লিখেই ফেললাম। রসের ঘটনা রোজ রোজ ঘটলে তো রসটস সব মরেই যেত!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন