এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঘুম-দেশে গুম

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মার্চ ২০২৪ | ১১৭ বার পঠিত
  • সারা দিন পরিশ্রমের শেষে সবারই রাত ভর্তি ঘুম দরকার হয়। তাছাড়া ক্লান্ত হলে মানুষ সকাল, বিকেল, দুপুর যে কোনো সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ক্লান্তি হরণ করে, শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়।

    আবার অসময়ে গভীর ঘুম অনেক সময় সমস্যাও ডেকে আনে। ধরুন বাড়িতে আপনি একা এবং ঘুমিয়ে পড়েছেন, গভীর নিদ্রায় ডুবে গেছেন, সেই সময় বাইরে থেকে কেউ এসে কলিং বেল টিপল। বেল টিপে সাড়া না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিল। তারপরেও আপনি দরজা না খুললে সে ভয় পেয়ে যেতে পারে। লোকজন জড়ো করে ফের ধাক্কাধাক্কি এবং আপনার নাম ধরে ডাকার পর আপনার ঘুম ভাঙল। শান্তি!

    এই অবধি চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু ভীষণ গভীর ঘুম না ভাঙলে অনেক সময় সমস্যা হয়। এরকম একটা অভিজ্ঞতা আমার আছে যা আমাদের সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তখন আমরা এ কে মুখার্জি রোডের সরকারি আবাসনে থাকতাম। প্রত্যেক তলায় দুটো করে ফ্ল্যাট। চারতলার ওপরে ছাদ। আমরা চারতলায় থাকতাম, তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে নবনীতা বা কুতুনরা থাকত।

    বিয়াল্লিশ বছর আগেকার সেই ঘটনায় ঢুকি এবার। এক সন্ধ্যাবেলায় তিনতলার সিঁড়ি থেকে কেমন একটা চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম আমরা। ব্যাপার কী দেখার জন্য আমি, মামন, বাবা, মা সবাই নিচে নেমে গেলাম। গিয়ে দেখি, নবনীতার বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন, বেল বাজাচ্ছেন কিন্তু কাকিমা দরজা খুলছেন না। ভেতরে এই সময় কাকিমা আর নবনীতারই থাকার কথা। কিন্তু এতবার বেল বাজানোর পরেও দরজা খোলা হচ্ছে না কেন? ততক্ষণে প্রতিবেশীরা ওদের ফ্ল্যাটের সামনে জড়ো হয়ে গেছে। কেউ পরামর্শ দিল, দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিন। কড়া নাড়া আর জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়া শুরু হ'ল।

    আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। সবার মনেই নানা রকম আশঙ্কা, কেউ অবশ্য কাকুর সামনে কোনো আশঙ্কা প্রকাশ করছে না। অনেকক্ষণ ধাক্কা দেওয়া চলেছিল এটা মনে আছে। কাকু মানে নবনীতার বাবা কুতুন কুতুন বলে অনেকবার ডাকলেন। এ দিকে প্রতিবেশীদের মধ্যে গুঞ্জন বাড়ছে। আশপাশের ফ্ল্যাট থেকেও অনেকে চলে এসেছে। কাকু ঠান্ডা মাথার মানুষ, মুখে উদ্বেগ প্রকাশ না করলেও ঘামতে শুরু করেছেন।

    ধাক্কাধাক্কি থামিয়ে দরজা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। অবশ্য ভাঙা হয়নি, ছুতোর ডেকে এনে দরজা কেটে ফেলা হ'ল। কাকু উদভ্রান্তের মতো ভেতরে ঢুকলেন। আমার মা ঢুকতে যাচ্ছিল। বাবা স্পষ্ট বারণ করল, ঢুকো না। সবারই ভয়, ভেতরে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গেছে।

    না, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেনি। নবনীতা ও কাকিমা সেই সময়টায় বাড়িতেই ছিলেন না। দাদার বাড়ি এসেছিলেন নবনীতার এক কাকু যিনি গভীর ঘুমের জন্য পরিবারে মার্কামারা। ভেতর ঘরে ঢুকে কাকু তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুললেন। তাঁর সেই ঘুম ঘুম চোখের অবাক দৃষ্টি আমার এখনো মনে পড়ে।

    এত ধাক্কাতেও যে ঘুম ভাঙে না সেই ঘুমকে গভীর না বলে আশঙ্কার কারণও বলা যেতে পারে। তাই না?

    এটা ১৯৮২ সালের ঘুম-ঘটনা। তখন আমাদের ব্লকে কারোর ফোন ছিল না। থাকলে হয়তো কাকিমা অফিসে কাকুকে ফোন করে বলে দিতে পারতেন, "আমি আর কুতুন বেরোচ্ছি। তোমার ঘুমকাতুরে ভাই এসেছে।" মিটে যেত সমস্যা!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Basu | ২২ মার্চ ২০২৪ ১০:২২529667
  • "এটা ১৯৮২ সালের ঘুম-ঘটনা। তখন আমাদের ব্লকে কারোর এমন কী ল্যান্ড ফোনও ছিল না৷ থাকলে হয়তো কাকিমা অফিসে কাকুকে ফোন করে বলে দিতে পারতেন, "আমি আর কুতুন বেরোচ্ছি। তোমার ভাই এসেছে।" মিটে যেত সমস্যা!"
     
    মনে হয় না। কারণ কুম্ভকর্ণের সাক্ষাৎ অবতারটির সম্বন্ধে যা লিখেছেন,
     
    "দাদার বাড়ি এসেছিলেন নবনীতার এক কাকু যিনি গভীর ঘুমের জন্য পরিবারে মার্কামারা। ভেতর ঘরে ঢুকে (ঢুকতে গিয়ে কাকুর ফ্ল্যাটের দরজা কাটতে হয়েছে) কাকু তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুললেন। ... এত ধাক্কাতেও যে ঘুম ভাঙে না সেই ঘুমকে গভীর না বলে আশঙ্কার কারণও বলা যেতে পারে। তাই না?"
     
    দরজা সেই কাটতেই হত। 
    দরজা বাঁচাতে গেলে সিঁধকাঠি প্রয়োগের ব্যবহার শিখে রাখলে কাজে দিতে পারে, মানে দরজা কাটতে হয় না । নীচের ভিডিওটাও কাজে লাগতে পারে, 
     

     
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন