এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রসকষ

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ মার্চ ২০২৪ | ১৭৭ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • মানুষের রসবোধ ব্যাপারটা আমাকে বরাবরই খুব টানে। এখানে আজ এমন কতকগুলো কথার উল্লেখ করব যেগুলো দোকানবাজারে ও রাস্তায় শোনা। প্রাত্যহিক জীবন থেকে পাওয়া। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মজার কথা সেগুলো।

    বাজার মানেই টাকাপয়সার শুকনো লেনদেন আর রসকষহীন বিকিকিনি, এমন মোটেই নয়। বাজারে কান পাতলে নানা রকম কৌতুককর কথাবার্তা কানে আসে যা শুনতে বেশ ভালোই লাগে। প্রথমে বাজারি রসের কথাই বলি। এক দিন আমাদের চুনীবাবুর বাজারে এক ভদ্রমহিলা কাঁচা পাতিলেবু কিনছিলেন। ছোট্ট তাজা সবুজ লেবু পছন্দ করে বললেন - " রস হবে তো?" সব্জি বিক্রেতা বলল - "দিদি, রস চাইলে আপনাকে বয়স্ক, পাকা লেবু নিতে হবে।" সন্দেহ নেই, দীর্ঘ দিন বেচাকেনা করতে করতে লেবুর রস বিক্রেতার মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে গিয়েছে।

    একটি বাজারে আমি প্রায়ই যেতাম। সেখানে এক ভদ্রলোকের সামনাসামনি দুটি দোকান। মুখোমুখি দুটি দোকানের একটিতে সব সময় ভীড় লেগে থাকত। এ দিকে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মচারী না থাকার ফলে যুগপৎ দু'টি দোকান সামলাতে তাঁর একটু অসুবিধাই হ'ত। এক মালিকের দুই দোকানের একটির পাশে অন্য এক ভদ্রলোকের দোকান। মোটামুটি এক ধরণের পণ্য রাখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এঁদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল।
    কোনো এক দিন আমি ওই দুই দোকান-এক মালিকের একটি দোকানে জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছিলাম৷ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও দোকানদার বা তাঁর কর্মচারী আমার কথা শুনতে পাচ্ছিলেন না কারণ উল্টো দিকের দোকানটাকেও সামলাতে হচ্ছিল তাঁদের। অবশেষে ধৈর্য হারিয়ে আমি পাশের দোকানটায় গেলাম। বলাই বাহুল্য সেই দোকানদার খুশি হলেন। আমি বললাম - অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে এলাম। ওরা দুটো দোকান সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে৷ আর কত দাঁড়াব? তখন এই ভদ্রলোকের টিপ্পনি - "হ্যাঁ, নিজেই বাজারের একদম সামনে দুটো দোকান খুলে বসে রয়েছে। একাই বাজিমাত করতে চায়!" মনে মনে ভদ্রলোকের রসবোধের তারিফ না করে পারলাম না আমি। পুরো শিব্রামীয় রসবোধ!

    তখন বাম আমল। বেলার দিকে বাসে করে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা যাচ্ছি। সকালে কাগজে বামদের সবচেয়ে বড় শরিক দলের এক নেত্রীর মৃত্যুর খবর পড়েছি। হাজরার কাছে কানে এল ঘোষণা, বিকেলে পার্টির নেতাদের উপস্থিতিতে কেওড়াতলা শ্মশানে আমাদের প্রিয় নেত্রীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হ'বে। বাসের সুরসিক কন্ডাক্টরের মন্তব্য - পার্টি এখন কেওড়াতলা পৌঁছে গেছে! এটি নিছক মন্তব্য নাকি আরো কিছু, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।

    কিছু মজার কথার সঙ্গে আবার একটু কস লেগে থাকে। শ্লেষ জুড়ে থাকে। দুয়েকটা ঘটনা বলি। উনিশশো সাতাশি সাল, বীরভূম জেলার ঘটনা। ধরা যাক শহরটার নাম বামপুরহাট। সেখানকার এক ধনী ব্যবসাদার পরিবারের মেয়ের বিয়ে। মেয়েটি সে বছরই পদার্থবিদ্যায় অনার্স সহ স্নাতক হয়েছিল এবং রীতিমতো মেধাবী ছাত্রী। কলকাতার নামকরা কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেছিল। পরে আরো পড়বে। তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য দু' পক্ষের অভিভাবকেরা মিলে কলকাতায় একটি বাড়ি এবং ভাবী দম্পতির জন্য একটি পরিচারিকাও স্থির করে ফেলেছিলেন। যাই হোক, ছেলে পক্ষ প্রথা মতো মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে অনেক যৌতুক নিয়েছিল। ধনী মেয়ে পক্ষ সানন্দে দিয়েও ছিল।
    বিয়ের কিছু কথাবার্তা বলতে মেয়ের বাবা ভাবী জামাইয়ের বাড়িতে গেছেন। ছেলের বাবা বৈবাহিককে বললেন - "আসবাবপত্র তো কালপরশু পাঠাচ্ছেন, তা কুলীদের পারিশ্রমিকটাও আপনারা দিয়ে দেবেন কিন্তু।" শুনে মেয়ের বাবার উত্তর - "সে তো দেবই। শুনুন, এই যে আমি বেশ কয়েকবার আপনাদের বাড়ি এলাম, আপনারা আমাকে মিষ্টিটিষ্টি খাওয়ালেন, তাতেও তো আপনাদের বেশ কিছু খরচ হয়েছে। কত খরচ হয়েছে আমাকে বলুন, সেই টাকাটাও আমি দিয়ে দেব।" মিষ্টি খোঁচা!
       এখনকার অারেকটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি।কিছু দিন আগে পাড়ার এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ডিমগুলো টাটকা তো? উত্তরে সে বলল- আমার দোকানে কাল এসেছে। মুর্গি কখন পেড়েছিল, বলতে পারব না।
      এক ভদ্রমহিলা নিয়মিত নিজের বাড়িতে রান্নাবান্না করতেন কিন্তু খুব একটা ভালো রাঁধুনি ছিলেন না বলেই শোনা যায়। পাড়ার কুকুর জ্যাক মাঝেমাঝেই তাঁদের বাড়িতে দুপুরবেলায় ভাত-তরকারি খেতে আসত। এক দিন সকালে শোনা গেল জ্যাক মরে গেছে। স্বাভাবিক মৃত্যু তবে তেমন বুড়ো হয়নি বলে পাড়ার অনেকেই একটু হায়হায় করছিল। ভদ্রমহিলার সুরসিক দেওর বললেন - বৌদি, আপনার রান্না খেয়েই জ্যাক মরে গেল। ব্যাস! বেশ কয়েক দিন দেওর বৌদির মুখ দেখাদেখি বন্ধ!

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:f982:14a6:e0a8:2c0b | ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৯529326
  • লেবু বিক্রেতার রসবোধ সবচেয়ে ভালো লাগলো, হা হা হা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন