এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আকুতি

    Rashmita Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৮৮ বার পঠিত
  • পর্ব ১

    ঘোষপুকুর লেনের গা ঘেঁষে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে যে সুবিশাল তিনতলা বাড়িখানা, সেটি একটি যৌথ পরিবার। পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থাকে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা, আর বাড়ির গিন্নিরা প্রায় ভোর থেকেই কোমরে আঁচল কষে গুঁজে নিয়ে লেগে যায় গৃহকর্ম সম্পাদনার কাজে আর সন্ধ্যার পর নিজের নিজের স্বামীকে আরও বেশি টাকা ইনকাম করার জন্য তাগাদা দেওয়ার রোজনামচায় ব্যস্ত থাকে। পরিবারের একমাত্র কত্রী সুহাসিনী দেবীর কথাতেই এই সংসারটা ওঠে আর বসে। তাঁর দাপটে পরিবারের প্রতিটি সদস্য একেবারে তটস্হ থাকে। তিনি ঘোর হিসাবী এবং কঠোর অনুশাসনের জীবনে বিশ্বাসী। টাকা ইনকাম করার জন্য বইএর অক্ষর গিলে এবং উগরে নিজের অর্থসমাগমের নিরাপদ ব্যবস্হা করা এবং তারপর বিষয় আশয়ের হিসাবে মগ্ন থেকে জীবন অতিবাহিত করার আদর্শে তিনি দীক্ষিত এবং নিজের এই সুবিশাল যৌথ পরিবারটিকে তিনি এই একটিমাত্র মন্ত্রে নিজের মতো করে পরিচালনা করেন। এই বাড়িতে তাই বাড়তি কোনো কথা নেই। হাসি নেই। আবেগ নেই। সবাই যেন টাকার পিছনে ছুটতে থাকা দম দেওয়া পুতুল। সুবিশাল এই পরিবারটিতে এই চেনা ছকের বাইরের বাতাসের স্বাদ গন্ধ অনুভব করা মানুষ মাত্র দুটি। একজন এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য তাতান আর অপরজন হলেন সবথেকে প্রবীণ সদস্য অরূপবাবু। অরূপবাবুর সাথে তার ছোটনাতি তাতানের দারুণ বন্ধুত্ব। কারণ এই আস্ত পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র এদের দুজনের কাছেই জীবনের অর্থ শুধুমাত্র টাকার পিছনে ছোটা নয়। কিছু অনুভূতি, কিছু উপলব্ধি যা অন্তরের চোখ মেলে দেখতে হয়... অনুভব করতে হয়। তাতান লেখালেখি করতে ভালোবাসে খুব। এই নিয়ে বাড়িতে প্রতিমূহুর্তে তীব্র অশান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে সে বাড়ি ছেড়েছে কয়েকদিন হল। কাছাকাছি একটা মেসে থাকে আর দিনে স্কুল মাস্টারি আর রাতে লেখালেখি নিয়ে তার জীবন কাটে। সে বাড়ির পরিবেশ থেকে নিজের একটা শৌখিন দূরত্ব বজায় রেখে নিজের মতো করে বাঁচে। সপ্তাহখানেক হল সে অনির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য কিছু জামাকাপড় ও জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে। কারণ তার প্রাণাধিক প্রিয় দাদু এখন রোগশয্যা নিয়েছেন। খবরটা পাওয়া মাত্র তাতান তাড়াতাড়ি করে কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে। তাতান ছোট থেকেই দেখে এসেছে, দাদুর সাথে ঠাকুরমার একেবারেই কোনো বনিবনা নেই। ঠাকুরমা দাপুটে শাসনে যখন সারাবাড়ি তটস্হ, তখন দাদু ঘরের লাইব্রেরীর একটা কোণায় চেয়ার পেতে কোনো বইএর পাতার কোনো গহিন মণিমুক্তো আস্বাদনে বুঁদ হয়ে আছেন। তাতান ইতিমধ্যে লেখালেখি করে সাহিত্য জগতে বেশ নাম করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে দিনকয়েক আগে এক প্রকাশনী তাতানের লেখা দশটি উপন্যাস নিয়ে একটি বই প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নয়টি উপন্যাস লেখা শেষ হয়ে গিয়েছে। শেষ উপন্যাসটির জন্য বিষয়বস্তু ছেঁড়া ছেঁড়া মতন একটা কিছু ভেবেছে বটে, কিন্তু সেটা শেষপর্যন্ত্য তেমন মনঃপূত না হওয়ায় সে সেইসমস্ত ভাসা ভাসা চিন্তার সমস্ত বিষয়বস্তু একেবারে মন থেকে ঝেড়ে ফেলে একেবারে আনকোরা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে লিখবে বলে বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে নতুন করে একটা প্লট তৈরি করার কাজে সবেমাত্র মনোনিবেশ করেছিল ঠিক এমনই সময়ে দাদুর রোগশয্যা নেওয়ার খবরটা আসায় সমস্ত চিন্তাভাবনায় অস্হায়ী বিরতির যবনিকা টেনে দিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে তো এল। কিন্তু সে ফিরে এসে বাড়ির যে চিত্র দেখল, তাতে সে যাদপরনাই মর্মাহত হল। যদিও সে দাদু আর ঠাকুরমার মধ্যেকার এই বিঘতখানেকের দূরত্বটা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছে, কিন্তু আজ রোগশয্যায় শায়িত অবস্হাতেও যখন দাদু তার ঘরে, তার বিছানায় চিরকালের মতোই একা দিনযাপন করছেন, আর ঠাকুরমা বহিরাগত অতিথির মতো দিনে দুইবেলা কি তিনবেলা নিয়ম করে এসে খোঁজখবর করে নিয়ে প্রয়োজন মতো ওষুধ খাইয়ে দিয়ে নিজের ঘরে শুতে চলে যাচ্ছেন, তখন সেই দৃশ্য দেখে তাতানের মনটা ভীষণরকম খারাপ হয়ে গেল। সে বাড়িতে ফিরেই যখন দাদুর কাছে গিয়েছিল, তখন সেই সময়টা ছিল সূর্যাস্তের অন্তিম লগ্ন। জানলা দিয়ে দাদুর মুখের চতুর্দিকে যে চৌকোনা স্বর্ণালী ও রক্তিম আভা মিশ্রিত মায়াবী আলোর আভরণ এক অপূর্ব স্নিগ্ধতার পরশে ঘরখানিকে শোভিত করছিল, সেই আলোতে তাতান অসুস্হ দাদুর মুখখানি দেখল। বার্ধক্যের ভারে ক্লিষ্ট মুখখানিতে এক অদ্ভুত প্রশান্তির তৃপ্ততা পরতে পরতে মাখানো। যেন বন্দীদশা থেকে হঠাৎ মুক্তির কোনো গোপন চাবিকাঠি তিনি হঠাৎ আবিষ্কার করেছেন। তাঁর ক্লিষ্ট দুচোখে এক অনাবিল কৈশোরের চাহনি দেখে তাতানের মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা যেন তোলপাড় শুরু করে দিল।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন