এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মৃত্যু, হঠাৎ না পরিকল্পিত?

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কম মৃত্যু দেখলাম না জীবনে। বেশিরভাগই স্বাভাবিক মৃত্যু। তবে একটা মৃত্যুর কথা জীবনে ভুলব না। চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। সেটা দুর্ঘটনা তো বটেই, সেই সঙ্গে খুন বললেও ভুল বলা হবে না। তবে তার সঙ্গে মানুষের যে নিষ্ঠুরতা আর পলায়নী মনোবৃত্তি দেখেছি, তা আমাকে অনেকটা বিশ্বাসহীন, উদ্ভ্রান্ত আর অস্থির করে তুলেছিল। বুঝতে পেরেছিলাম, মানুষ আসলে সভ্য প্রাণী নয়। এখনকার মানুষ আসলে হৃদয় মরে যাওয়া একটি প্রাণী। যাদের হৃদয় মরে গেছে তাদের শিক্ষাদীক্ষা, সামাজিক পদমর্যাদা কোনো কাজে লাগে না।

    এবারে সেই দুর্ঘটনার কথা বলি যদিও সেটার বীভৎসতা পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা আমার পক্ষে সম্ভব হ'বে না।

    বছর দশেক আগেকার কথা। তখন খবরের কাগজে চাকরি করতাম।

    আমার অফিস চারটে নাগাৎ শুরু হত। আমাদের কাজ শেষ হ'ত পোনে নটা থেকে নটার মধ্যে। বাড়ি ফিরতে এক থেকে সোওয়া এক ঘন্টা লেগে যেত। সেই পার্কসার্কাস ছাড়িয়ে বেকবাগান থেকে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া কম দূরত্ব নয়।

    এক রাত বিপুলাকার ২৪০ নং বাসে বাড়ি ফিরছি। শেয়ালদা উড়ালপুলের ওপর বাসটা প্রচন্ড জোরে ব্রেক কষল। কিছু একটা হয়েছে। বাসের যাত্রীরা সবাই বুঝতে পারছি। উঠে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। যা আশঙ্কা করছিলাম তাই। বাসটা একটা মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়েছে। আরোহী সিট থেকে পড়ে না গেলেও মাথাটা নিচের দিকে নেমে এসেছে। আমার অসহ্য কষ্ট হল লোকটার জন্য। চিৎকার করে চালককে বললাম "বাস থামান।" কিন্তু বাসের অন্য যাত্রীরা তাকে বলল - "তুমি বেরিয়ে যাও।"

    তারপরে যাত্রীদের বেশিরভাগই নির্বিকার। তাদের নানারকম কথা কানে আসছিল - হাতে পলিথিনে তরিতরকারি ছিল, ছড়িয়েে ছিটিয়ে পড়ে আছে... লোকটা যেভাবে পড়েছে, ওর মাথার ওপর দিয়ে এবার একের পর এক গাড়ি যাবে। একজন বলল - এক্সপায়ার তো করে গেছে। বলে মজা পাওয়া মুখে কাকে ফোনে খবরটা দিতে লাগল।

    সে দিন মানুষের যে নিষ্ঠুরতা, যে স্বার্থপরতা দেখেছিলাম, সারা জীবন ভুলব না। হ্যাঁ, আমিও অপরাধী। কিছুই করতে পারিনি। আজ এখানে ওই দুর্ঘটনার কথা লিখে সেই পাপের খানিকটা
    স্খলন করলাম।

    আজও মাঝেমাঝে মনে হয়, লোকটার বৌ অপেক্ষা করছিল তো করছিলই, হয়তো দেহ হাতড়ে পরিচয় বার করে পুলিস সকালবেলায় খবর দিয়েছে, তার ছেলেমেয়ে কত দিন বাবার জন্য কেঁদেছে, বৌ কত দিনে নিজেকে আর সন্তানদের সামলাতে পেরেছে! যখন মনে হয়, বুুুকটা খালি হয়ে যায়। একটা পরিবারের সমস্ত অপেক্ষা শেষ করে দিল ২৪০ বাসের সেই বেপরোয়া চালক। সে একটা বাস চালাচ্ছিল। কিন্তু তার জীবনকে, আমাদের সবার জীবনকে কে চালাচ্ছে? কেন শহরের মানুষ এত স্বার্থপর, এত নির্বিকার শয়তান হয়ে গিয়েছে?

    মৃত্যু কি অতর্কিতে আসে না কারোর পরিকল্পনায়, জানি না। শুধু জানি, একজনের পাপে যখন আরেকজনের জীবন যায় তখন বিবেকবান মানুষের বড় কষ্ট। যাদের বিবেক নেই, তাদের কষ্ট হয় না। দেখে মজা লাগে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Subhas Ghosal | 2405:201:403a:4041:1c61:11a9:c048:3a7f | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২১531050
  • এরকম  ঘটনা আমিও kichu দেখেছি। মানুষ বড়ো স্বার্থপর জীব, শহুৰে মানুষ একদম  চরমে এর। ভাল  লিখেচো eta নিয়ে। 
  • kk | 172.58.190.241 | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫০531055
  • এই রকম ঘটনা সত্যি ঘটে। আরো শুনেছি। কিন্তু এই একই শহরে, আরো এক রকম ঘটনাও ঘটেছিলো। ২০০১ সালে আনোয়ার শাহ রোডে আমার খুব বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো। বাসের ধাক্কা, সিভিয়ার হেড ইনজুরি ও অন্যান্য আঘাত। আমার বাড়ি কলকাতায় নয়, আর ছিলামও একা। রাস্তায় জমা হওয়া লোকেরা আমাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছিলেন। নানা রকম ভাবে অনুসন্ধান করে যে ল্যাবে পিএইচডি করতাম সেখানে, যে বাড়িতে পিজি থাকতাম সেখানে খবর দিয়েছিলেন। সেইসব মানুষ না থাকলে আজ আমার এই এখানে বসে টাইপ করা সম্ভবই হতোনা। তাই একেক সময়ে অবাক লাগে, মানুষ কত রকমের হয়!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন