এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একেন্দ্র সেন এবং টুংকুলুং

    Himadrisekhar Datta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৬৮ বার পঠিত
  • টুংকুলুং আর গোয়েন্দা একেন্দ্র সেন

    সুজন দাশগুপ্তের সৃষ্ট গোয়েন্দা, কলকাতার একেনের চরিত্র, আমেরিকাতে(?) বসে সৃষ্ট কি? সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই, যেহেতু উনি আমেরিকার বাসিন্দা, তাই মনে হল। আমেরিকায় বা ভারতে, যেখানে বসেই উনি গল্পগুলি লিখে থাকেন না কেন, তা অনবদ্য, বলতে দ্বিধা নেই। 

    নিয়তির ডাকে, তাকে নিজের শহরেই, এক সন্ধিগ্ধ কন্ডিশনে, একা, নিজের বাড়িতেই, মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়। তার মৃত্যুর পরে, জয়দীপ মুখার্জী বাংলা সিনেমার জন্য, একেন বাবুর গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে, একাধিক গল্প ফাঁদছেন। শান্তিনিকেতন, রাজস্থান, দার্জিলিং এবং সবার শেষে টুংকুলুং। 

    ফেলুদার পরে, বাঙালির ঘরে,বাঙালি গোয়েন্দা, একেন্দ্র সেনের প্রভাব প্রতিপত্তি ভাল করেই ছড়িয়েছে। বিশেষ করে, তার চরিত্রায়নে, অভিনেতা অণির্বান চক্রবর্তী মহাশয় একটা এমন মাত্রা জুড়েছেন, যা কখনও মজার, কখনও আবার ভীষণ সিরিয়াস। সেই সুবাদে জয়দীপ বাবুর সিনেমা ভালভাবেই বক্স অফিসের পরীক্ষা পার হয়ে যেতে পারবে আশা করি। হয়ত সিলভার জুবিলি হবে না, কিন্তু একটা ভদ্রস্থ বিক্রির তকমা নিশ্চয়ই গায়ে লাগবে। অনির্বান বাবুর তুলনায়, তার বন্ধু দুজন বেশ নিষ্প্রভ - অন্তত: টুংকুলুং -এ। যে ক'টা একেন্দ্র ওয়েব সিরিজ হয়েছিল, তাতে তুলনায়, ব্যাংগালরুতে থাকা বাপী বাবু স্যার আর প্রমথ বাবু স্যার বেশ উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত। অবশ্য শান্তিনিকেতনের বাপী বাবুকে বেশ ভাল লেগেছিল।

    দার্জিলিং আর টুংকুলুং (আমি এই জায়গাটি গুগল ম্যাপের থেকে বের করতে পারি নি,তাই ধরে নিয়েছি উত্তর বাংলায় পাহাড়ে কোথাও হবে),এই দুটি সিনেমাই পুণরাবৃত্তি দোষে দোষী বলেই আমার মনে হয়েছে। তবুও দার্জিলিং-এ বেশ অনেকটা পর্যন্ত, আসল খলনায়ককে ধরতে পারা যায় নি। কিন্তু টুংকুলুং-এ চরিত্রের সংখ্যা কম, ঘটনার ঘনঘটা কম, তাই সুমিতের ওপর প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ জাগছিল। বিনয় প্রধানের ওপরও সন্দেহ হচ্ছিল। ছবিতে, নেপালি ভাষা আকচার ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে কখনও মনে হয়েছে টুংকুলুং নেপালে। হতেও পারে - আমি নেপালের রেসপেক্টে গুগল ম্যাপ ট্রাই করি নি। একবার বসে এই ছবিটা দেখতে ভালই লাগবে। কিন্তু কতগুলি অবধারিত প্রশ্ন আমার মনে এল, সেগুলির উত্তর কেউ হয়ত দিতেও পারেন। 

    ১> প্রথম সিনে, বাপী আর প্রমথ তাদের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে, সকালে বেরিয়ে এসেছে, ঘুরতে যাবার জন্য ব্রেকফাস্টের পরে। একেন্দ্রর সামান্য দেরী হচ্ছে বেরোতে। তারপরে একেবারে ক্যামোফ্লাজিং পোষাকে তিনি গটমট করে হেঁটে এলেন এবং শাহরুখ খানের পোজে, দন্ডায়মান হলেন। তখন তিনজনের মধ্যে সামান্য বোকাবোকা কথাবার্তার মধ্যেই এস পি, যিনি আবার দার্জিলিং-এও ছিলেন, তিনি সশরীরে এসে উপস্থিত হলেন এবং রাণার বাড়িতে একেন্দ্র সেনকে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে তার খবর জানিয়ে গেলেন। এটা কি পুলিশের কাজ? একজন এস পি-র? এরপরে, গল্প একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত, তাকে আর পর্দায় দেখাই গেল না। মিস সমাদ্দার বলে একজন স-কারান্তা (সব কথায় স স করা), থানার আই ও-র হাত ধরেই গল্প এগোয়। তাকে একেন্দ্র বাবু যে কত নামে ডেকেছেন, সমাদ্দার নামটা ছাড়া, তার ইয়ত্তা নেই - আর সেটা খুবই শ্রুতিকটু এবং আনম্যানেজবল (অনির্বানের জন্যও) লেগেছে। এমন পানিং এ রুচিশীল ভদ্র দর্শকের হাসি আসবে না। বরঞ্চ এ কেসে আর কি আছে, তার উত্তরে ফুলুরি খেতে খেতে জোয়ান আছে - এই জায়গাটা অনেক বেশি ভাল লেগেছে। সুতরাং এস পি গুরুং, প্রথম সিনের পর হারিয়ে গেলেন কেন কেউ বলবেন? এমন কি খুনীর পশ্চাৎ ধাবনের সময়ও পুলিশ ছিল না। 

    ২> এত বড় অপরাধ করার প্ল্যান- কিন্তু সেদিন ট্রেন চলেনি, এটা পুলিশের লোকেরা জানতই না। আশ্চর্য! খুনীও জানত না।  প্রথমবার খুনের জায়গা খোঁজ করেও, পুলিশ মার্ডার ওয়েপন খুঁজে পায় না। চেক কম্বলও না। বড্ড বেশি অকর্মণ্য দেখানো হল না কি?  ছবির যে বর্ণনা আঁকা হয়েছিল, সেই তুলনায় দুর্গম স্থান বা জঙ্গল তেমন ভাবে দেখলাম না। রেল লাইনের ধারে, জঙ্গল কত গভীর আর হতে পারে? 

    ৩> মনাস্টারির লামাকে, রানার তুলনায় অনেকটা ইয়ং বলেই চোখে লাগলো। আর তার বাংলাটাও বেশ পরিষ্কার। সেটা একেবারেই মানানসই হয় নি। 

    ৪> ভানুমতি চরিত্রেরও একই দশা। একবার নব বিবাহিত দম্পতির ঘরে,সে সাপ ছাড়তে আসে,রাণার বিরাট প্রাসাদে, দোতলার এক ঘরে। সাপটা নিয়ে তার ঢোকা দেখানো হয় নি ছবিতে, কিন্তু ঘরে ঢোকার পরে, তার হাতে বিষধরের ঝুড়িটা ছিল। সাপখানাও তেমন,ছাড়া হল রাণার শরীরের ওপরে, কিন্তু বেচারা নির্দোষ বউটি মারা গেল। তারপরে, ভানুমতি সকল সশস্ত্র গার্ডকে ছাড়িয়ে দৌড়ে জঙ্গলে পালিয়েও গেল। গল্পের গরু, সে যেখানে খুশী যেতেই পারে। রাণার বাড়ির অতগুলো লোককে উসান বোল্টের গতিতে, দৌড়ে হারিয়ে দিলে ভানুমতি। তারপরে,রানার বাড়ি থেকে তার আর কোন খোঁজ বা পুলিশকে ডাকা কিছুই করা হলনা।  

    ৫> আবার বিনয় ছ-সাত বছর হবার পরে, রানার বন্ধু জগদীশের কাছে, জঙ্গলের ভেতরে ভানুমতি ছেলেকে নিয়ে ফেরত আসে। ইয়ে ক্যায়সা ইত্তেফাক হ্যায় মুঝে সমঝ হি নেহি আয়া। জগদীশ বাবুর যে বাড়িতে একেন্দ্ররা চা খেতে গেছিলেন, সেটা তো বড় রাস্তার ওপরে। তাহলে জগদীশ বাবু হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় সেদিন কি করতে গেছিলেন? না'কি ভানুমতি খবর পাঠিয়ে আনিয়েছিল? বালক বিনয়কে জগদীশের জিম্মায় দিয়েই, ভানুমতি আবার উসান বোল্ট হয়ে যায়। তারপরে আর ভানুমতির কোন উল্লেখ নেই। নিজের ভালবাসার লোক,রানা মারা গেল,নিজের পেটের ছেলে, রানার ছেলে অধিকার ফিরে পেলে - না, এইসব সময়ে ভানুমতি কোথাও নেই। এমন কি সিনেমার কায়দা অনুযায়ীও দূরে কোথাও - না তাকে তাও দেখা যায় নি।

    ৬> দার্জিলিং এ একেন সিনেমার শুরুতেও এই এস পি ফোন করেছিলেন, নায়িকা বিপাশা দেবীর কাছেও নিয়ে গেছিলেন। যার বাড়ি থেকে একখানা ছবি হারিয়ে গেছিল। এ গল্পেও তিনিই একেন্দ্রকে ঘটনার অকুস্থলে পৌঁছে দেবার ইনডাইরেক্ট লিঙ্ক ছিলেন। 

    জয়দীপ বাবু, আপনার ছবির গল্প যিনি লিখছেন, তাকে একটু ধীরে সুস্থে লিখতে বলুন। আপনিও পড়ার পরে ভাবুন। নিশ্চয়ই ভাবেন। তবুও। এগুলি আমার অনুরোধ। একেন্দ্র সেনকে আমরা জলভাতের মত করে ফেলতে চাই না। রবিবারের দুপুরে বা রাতে একেন্দ্র সেনের সিনেমা, আমাদের মত দু:খী কলকাতাবাসীদের জন্য মাংস ভাতের মত। অপেক্ষায় রাজী আছি, কিন্তু মাংসটা যেন উপাদেয় হয়। 

    বাংলা সিনেমার এই আশ্চর্য্য চরিত্রকে সহজে মিটিয়ে দেবেন না। নমস্কার।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন