এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বো ব্যারাক

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৮০ বার পঠিত
  • হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড়, চীন--
    শক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন।
    পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার,
    দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে,
    এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।

    গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ভারততীর্থ কবিতার কয়েকটি লাইন, কবির নাম নিশ্চয়ই বলার প্রয়োজন নেই। মনে শুধু প্রশ্ন জাগে কবিগুরু কি পাশের পাড়ার ছবি দেখে কবিতার কথাগুলি লিখেছিলেন নাকি কবিগুরু লিখেছিলেন বলেই তাঁর বাড়ীর পাশেই পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিল প্রকৃত ভারতবর্ষের ছোট্ট একটি রূপ।

    তথ্য অনুযায়ী ১৯১০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল এই কোলকাতা থেকেই। আবার ১৯১৪ সালের ২৮শে জুলাই অস্ট্রিয়া আর হাঙ্গেরির সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কবিগুরুর জোড়াসাঁকোর পাশের এলাকার সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সম্পর্ক আছে। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেনাবাহিনীর জন্য গড়ে উঠেছিল মেস। নাম ছিল গ্যারিসনের মেস। জায়গাটা বর্তমানের বৌবাজার থানার পেছনদিকে একটি সরু গলির মধ্যে। এখানেই তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যরা থাকতেন। অবশ্যই ভারতীয় সৈন্যরা নয়। এরা সবাই পশ্চিমা সৈন্য অর্থাৎ আমেরিকান, ব্রিটিশ ইত্যাদি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে সেইসব সৈন্যরা ফিরে যায় তাদের দেশে আর তাদের ফেলে যাওয়া গ্যারিসনের মেসের দখল নিয়ে নেয় সেইসময়ে কলকাতায় বসবাসকারী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। মনে করা হয়, সেই পশ্চিমা সৈন্যরাই তাদের অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে কলকাতায় বসবাসকারী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের হস্তান্তর করে গিয়েছিল। ফলে কলকাতার মধ্যে তার আগে অব্দি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা বিক্ষিপ্তভাবে থাকলেও সেই প্রথম একটা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কলোনী তৈরী হয়েছিল। ব্রিটিশ, আমেরিকান দিয়ে শুরু হলেও এই কলোনীতে পর্তুগীজ, রাশিয়ানসহ অনেক ধরনের বিদেশিরাই বাস করেছে। বৈবাহিকসূত্রে এসেছে দেশীয় হিন্দু, মুসলিম, পার্সি প্রভৃতিরা। রাশিয়ান যুবক দিমিত্রি কোভাল্ট এখানে এসে বিয়ে করেছেন পর্তুগীজ রমণী গার্টহুড সালভাডোরকে। আবার তাদের মেয়ে নাতালিয়া কোভাল্ট বিয়ে করেন কাশ্মীরি মুসলমানকে। এই নাতালিয়া কোভাল্ট এখনও এখানে বাস করেন। তার মেয়ে আবার বিয়ে করেছে এক চাইনিজকে।

    শেষ হিসেব মত এখনও ১৩২ টি পরিবার বাস করেন এই কলোনীতে। সরকারিভাবে এই কলোনীর মালিকানা এখন কোলকাতা কর্পোরেশনের হাতে। প্রত্যেক পরিবারকেই মাসিক ভাড়া দিতে হয় এখানে থাকার জন্য। প্রত্যেকেরই বাঙালি বন্ধুবান্ধব আছে। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেতা-গায়ক-পরিচালক অঞ্জন দত্তের এই কলোনীতে যাওয়া তো আমরা সকলেই জানি। অঞ্জন দত্তের সিনেমার কারণে এই কলোনীর অনেককিছুই আমরা জানতে পেরেছি। তবু এরা নিজেদের সম্পর্কে কিছু বলতে ভয় পান। চতুর্দিকের সামাজিক অবস্থা দেখে। ফলে এই কলোনীর অন্দরের কথা খুব একটা বাইরে আসে না। অনেকেই বাংলা জানেন ও বলতে পারেন আবার অনেকেই পারেননা। কোলকাতার মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যেও এরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছেন এখনও। ডিসেম্বর আর জানুয়ারী মাসে এই কলোনীতে ভীড় উপচে পড়ে রেড ওয়াইন আর কেক কেনার জন্য। এরা বাড়ীতে বানান রেড ওয়াইন এবং কেক আর বিক্রি করেন সাধারণ মানুষদের। খুব ধুমধাম করে এখনকার মানুষেরা বড়দিন আর ইংরেজি নববর্ষ পালন করে। লোকের ভীড় উপচে পড়ে সেইসময়ে। প্রকৃতই এখানে আর্য, অনার্য, দ্রাবিড়, চীন, শক, হুন, পাঠান, মোগল এক দেহে লীন হয়েছে আর জায়গাটাও কবিগুরুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির একেবারে পাশেই (খুব বেশী হলে দুই কিলোমিটার দূরত্ব হবে), নাম তার বো ব্যারাক। এই কলোনীর সব বাড়িগুলোর রং একইরকম। ওপর থেকে দেখলে এলাকার নিজস্বতা বুঝতে পারা যায় স্পষ্ট। কোলকাতার বুকেই ছোট্ট একটি ভারতবর্ষ। কবিগুরুর কবিতার পাতা থেকেই উঠে এসেছিল গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কিছু সময় পরেই।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন