এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শাশুড়ি বৌমার অস্তিত্বের লড়াই। গল্প নাম্বার ১০৩।

    লেখক শংকর হালদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৩০ বার পঠিত
  • গল্প নাম্বার ১০৩ 
     
              শাশুড়ি বৌমার অস্তিত্বের লড়াই।
             লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
    ◆ বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান সাধন মজুমদার। দারিদ্রতা এমন ভাবে গ্রাস করেছে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য আর অপেক্ষা করার সময় নেই। মায়ের অনুমতি গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে এক সময় দুর্গাপুর শিল্প এলাকায় চৌধুরী কোম্পানিতে অফিসিয়াল কাজের জন্য সাধারণ কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পায়। পরবর্তী সময়ে সততার সাথে কাজ করার জন্য মালিকের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। মালিক উচ্চশিক্ষিত জেনে তার পদোন্নতি হয়ে চৌধুরী কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা করে দেয়। বিভিন্ন সময়ে কাজের সূত্রে মাঝে মাঝে মালিকের বাড়িতে যাতায়াত চলতে থাকে। 
     
    ◆ কয়েক বছর অফিসিয়াল কাজ করার পর মালিক রঞ্জিত চৌধুরী একদিন রাতে তার বাড়িতে নেমন্তন্ন করেন আর সাধন নেমন্তন্ন রক্ষা করার জন্য উপস্থিত হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে।
     
    ◆ তারপর রঞ্জিত চৌধুরী তার রুমে ডেকে সাধন কে বলেন :- আমার মেয়ে নির্মলা তোমাকে পছন্দ করেছে আর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। তোমার মা ছিল তিনি গত হয়ে গিয়েছেন আর তো তোমার দ্বিতীয় কেউ নেই।
     
    ◆ সাধন বলে :- এটা অসম্ভব ব্যাপার, ধনী গরিবের কখনো মিলন হতে পারে না। আপনার মেয়ের হাত খরচের টাকা আমি সারা মাসে আয় করতে পারি না।
    গরিব মানুষকে এমন স্বপ্ন না দেখানো ভালো। প্রথম দিন আপনি যদি দয়া না করতেন, তাহলে হয়তো মা ছেলে না খেতে পেয়ে মরে যেতাম। আপনার দয়ায় দুটো ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।
     
    ◆ এরপর আরো কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন সোজা অফিসে ঢুকে নির্মলা বলে :- আমি তোমার রূপ যৌবন দর্শন করে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। আমি তোমাকে ভালবাসি আর বিয়ে করে সংসার করতে চাই।
    আমাকে বিয়ে করলে কিন্তু চৌধুরী কোম্পানি এই অংশের মালিক হবে সাথে রাজকন্যা সহ বসবাসের বাড়ি পাবে। আর যদি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করো তাহলে তোমার চাকরিটা তো অবশ্যই যাবে তারপর আরো কত কিছু হতে পারে।
     
    ◆ সাধন মজুমদার বলে :- আপনি বিয়ে করার জন্য আমাকে প্রতারণা ও লোভ লালসা দেখাবেন না। 
     
    ◆ নির্মলা বলে :- আমি এই কোম্পানির মালিকের মেয়ে কিন্তু তোমার সৌভাগ্য আমি তোমাকে পছন্দ করেছি।
    আমার যখন তোমাকে পছন্দ হয়েছে তখন যেকোনো ভাবে আমি তোমাকে আমার করে নেবেই। আমাকে আমার পরিবারের সবাই ভয় পায় কিন্তু তুমি সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমার সাথে মুখোমুখি তর্ক করে চলেছে। এই অফিসের মধ্যে যদি আমি চিৎকার চেঁচামেচি করি তাহলে তোমার দশা কি হবে?
     
    ◆ সাধন মজুমদার বলে :- কি আর হবে? সবাই তখন বলবে, মালিকের মেয়ের শ্রীলতাহানি করেছে। আমাকে মারধর করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেবে , আর না হয় জেলে পাঠিয়ে দেবো কিন্তু তাতে তোমার কোন লাভ তো হবে না। 
     
    ◆ নির্মলা বলে :- তুমি আমার মাথা গরম করোনা। 
     
    ◆ সাধন মজুমদার বলে :- আপনি এখন আসতে পারেন, আমার অনেক কাজ করে রয়েছে। এই কথাগুলো আপনার বাড়িতে ডেকে কিন্তু আমাকে এই কথাগুলো বলতে পারতেন কিন্তু আপনি যেভাবে লাফালাফি করছেন তাতে মালিকের মেয়ে হিসাবে সম্মান টা মাটির সাথে মিশাতে চাইছেন। আমাকে কমপক্ষে দশ দিন সময় দিন তারপর আপনাকে জানাবো। 
     
    ◆ নির্মলা বলে :- আমি চলে গেলাম কিন্তু আমার কথাগুলো যেন তোমার মনে থাকে। 
     
    ◆ সাধন মজুমদার বিছানায় শুয়ে ভাবে আমার তো আর আগে পিছে কেউ নেই। দেশের জমি জমা যা আছে তা কাকা দেখাশোনা করছেন। আমার একটা থাকার জায়গা দরকার আর ভালো একটা আয় করার রাস্তা দরকার। কপালে যা আছে রাজি হয়ে যায়। আমি জানি এই বিপদজনক মহিলা কে বিয়ে না করলেও কিন্তু আমাকে পস্তাতে হবে আবার বিয়ে করলে আবার বেশি করে পস্তাতে হবে।
     
    ◆ সাধন মজুমদার বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে নির্মলা চৌধুরী প্রাইভেট লিমিটেড রাজ্যের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রূপে পরিচিতি লাভ করে কিন্তু কোম্পানির আসল মালিক হচ্ছে নির্মলা চৌধুরী। সাধন মজুমদার আগের মতই বেতনভুক্ত একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী হয়ে আছে। বেতনের টাকা অবশ্যই সংসারে দিতে হয় না।
     
    ◆ নির্মলা ও সাধনের দাম্পত্য জীবন মালিক ও কর্মচারী সম্পর্ক, মালিক নির্মলা তার ইচ্ছা অনুসারে দৈহিক চাহিদা মেটানোর জন্য সাধনকে ব্যবহার করে। তবে দুই ছেলে আর এক মেয়ে কে গর্ভধারণ করে মালিকের মত রাজার হালে সংসার করতে থাকে।
     
    ◆ সুখ চিরদিন সবার কপালে সহে না, সাধন বাবু তার ব্যবসা কেন্দ্র যাওয়ার সময় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার চোখ দুটি হারিয়ে ফেলেন আর তার বৌয়ের বোঝা হয়ে বাড়িতে অবস্থান করে।
     
    ◆ সাধন বাবুর সড়ক দুর্ঘটনা পর নির্মলা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করার জন্য কিছু অসৎ কর্মচারী বহু টাকার ক্ষতি করে ফেলে। নির্মলা উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেই তার কোম্পানির ব্যবসার হাল ধরে আর চিকিৎসার অবহেলার কারণে সাধন বাবু ধীরে ধীরে চিরতরে অন্ধ হয়ে যায়। আর নির্মলা তার এক বিধবা মাসি কে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে, তিন ছেলে মেয়ে সহ সংসারের দায়িত্ব দেয়। সাধন বাবু অন্ধ হওয়ার তার বউকে নিদয়া নির্মলা বলে ডাকতে থাকে।
     
    ◆ সুখ দুঃখের মধ্যে দিয়ে বহুদিন কেটে যায়। উপযুক্ত মেয়ের বিয়ের এক বছর পর তার বাড়ির কাজের মাসির মৃত্যু ঘটে আর নির্মলা সমস্যায় পড়ে যায়। একজন কাজের মেয়ে রেখেছিল কিন্তু সে চুরি করে পালিয়ে যায়।
     
    ◆ সাধন বাবু একদিন তার বউকে বলে :- আমি অন্ধ আবার কর্মহীন বলে কিন্তু আমার কোন কথা তো শুনতে চাওনা।
     
    ◆ নির্মলা জোরে বলে :- কি বলতে চাও! নাটক না করে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো তো।
     
    ◆ সাধন বাবু বলে :- তোমার বড় ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে, তাকে বিয়ে দিয়ে ঘরে বৌমা নিয়ে এসো- তাহলে বাড়ির রান্না বান্না করার সমস্যার সমাধান হবে। তুমি একা আর কত করবে? একদিকে ব্যবসা সামলাতে হচ্ছে আবার বাড়ি এসে রান্নাবান্না করার ঝামেলা। আমার চোখ ভালো থাকলে নাই তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারতাম।
     
    ◆ নির্মলা বলে :- কিন্তু বেকার ছেলে বিয়ে করবে, আর বেকার ছেলেকে কোন মেয়ের বাবা তার মেয়ে কে দেবে।
     
    ◆ সাধন বাবু বলে :- এমএ পাস করে তো বাড়িতে বসে আছে কিন্তু তোমার ব্যবসায় লাগিয়ে দাও, তাহলে তো আর বেকার থাকবে না। আর নির্মলা চৌধুরী কোম্পানির ছেলে বিয়ের কথা শুনলে মেয়ের বাবারা লাইন দেবে।
     
    ◆ নির্মলা বলে :- কথাটা একদম মন্দ বলনি।
     
    ◆ সাধন বাবু বলে :- আমি ছেলেকে বুঝিয়ে বলবো।
     
    ◆ নির্মলা বলে :- ঠিক আছে, এখন ঘুমিয়ে পড়।
     
    ◆ সাধন বাবু তার বড় ছেলে কে তার রুমে ডেকে বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতে তার ছেলে পছন্দের মেয়ের কথা বলে। তারপর উভয় পক্ষের অভিভাবক মিলিত হয়ে বিয়ের আয়োজন হয়।
     
    ◆ বৌমা বাড়িতে আসে তার শাশুড়ি কড়া মেজাজ নিয়ে সব কিছু নিজের দায়িত্বের মধ্যে রাখে। আর বড় ছেলের উপর ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে দিয়ে বাড়িতে থাকা শুরু করে। নির্মলা বিভিন্ন পার্টি ও ঘোরাঘুরি করা তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে উঠেছে।
     
    ◆ ছোট ছেলে অনির্বাণ পড়াশোনা শেষ করার পর কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি পায়। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটা করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে বৌদি বৌদি বলে ডাকতে ডাকতে থাকে। হল ঘরের টেবিলের উপর জিনিসপত্র গুলো রেখে মায়ের ঘরে গিয়ে মাকে দেখতে না পেয়ে বাবার কাছে জিজ্ঞাসা করে কিন্তু বৌদির ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
     
    ◆ অনির্বাণ ঘরে ঢুকে বৌদি কে চোখের জল মুছতে দেখে বলে :- নিশ্চয়ই মা তোমাকে বকাবকি করেছে কিন্তু এমন মেয়েকে বিয়ে করবো যে তার শাশুড়িকে শাসন করতে পারে।
     
    ◆ বৌদি বলে :- তোমার দাদাকে অনেকবার বলেছি কিন্তু তিনি আমার কথার কোন কর্ণপাত করেন না। 
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- আমাদের সোনা বাবা কোথায়?
     
    ◆ বৌদি বলে :- হয়তো মায়ের সাথে আছে। আমি ফোন করছি।
     
    ◆ কিছু সময় পর তার মা উপস্থিত হয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে :- বাবা; তোর শরীর ভালো আছে তো।
     
    ◆ অনির্বাণ তার মায়ের হাতে কিছু কাপড় সহ টাকার বান্ডিল দিয়ে বলে :- আমার প্রথম মাসের বেতনের টাকা।
     
    ◆ তারপর বাবার কাছে গিয়ে তাকে নতুন কাপড় ও শাল দিয়ে বলে :- তোমার শরীর ঠিক আছে তো।
     
    ◆ এরপর বৌদির ঘরের গিয়ে তার জন্য নিয়ে আসা কাপড়ের প্যাকেট গুলো দিয়ে বলে :- তোমার, দাদার আর আমাদের ছোট বাবার জন্য । বলে ভাইপো করে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বাইরে চলে আসে।
     
    ◆ অনির্বাণ চাকরি পাওয়ার দুই বছর পর তার বউকে নিয়ে সকাল বেলা বাড়ির হল ঘরে উপস্থিত হয়ে পাশাপাশি দুজনে হাত ধরে দাঁড়ায়। পরিবারের সবাই জলখাবার ও চা পানের জন্য হল ঘরে উপস্থিত হয়ে খাওয়া দাওয়ার ব্যস্ত।
     
    ◆ মা নির্মলা চিৎকার করে বলে :- এই মেয়ে, অনির্বাণের হাত ধরে আছিস তুই কে? 
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- মা; তোমাকে জানানো হয়নি কিন্তু এই মহিলা হলো তোমার ছোট বৌমা অনিন্দিতা সাহা কিন্তু বর্তমানে অনিন্দিতা মজুমদার। আমরা দুজনে ভালোবাসা করে বিয়ে করেছি।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার শাশুড়ি কে প্রণাম করতে গেলে তিনি পা সরিয়ে নিয়ে বলে :- আমি এই সব ভালবাসার বিয়ে মানি না।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার শ্বশুরের কাছে গিয়ে বলে :- বাবা ; আপনি তো; আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে আশীর্বাদ করুন।
     
    ◆ শাশুড়ি নির্মলা উত্তেজিত ভাবে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচু করে বলে :- এই মেয়ে; এই সব ভালবাসার নেকামি এখনো চলবে না। আমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা না করে, নিজেদের মতো বিয়ে করে অন্যায় করেছো কিন্তু এই বাড়িতে তোমার কোন জায়গায় নেই। এই মুহূর্তে বাড়িতে বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও।
     
    ◆ অনির্বাণ তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে :- মা; আমাদের মাফ করে দিয়ে কিন্তু তোমার ছোট বৌমা কে বরণ করে ঘরে তোলো।
     
    ◆ মা নির্মলা উত্তেজিত ভাবে বলে :- এই বাড়িতে আমার আর কোন মূল্য নেই, যে যার মত বিয়ে করে বাড়িতে চলে আসছে-আমি কি এখানে দানছত্র খুলে রেখেছি? তোর বউকে নিয়ে এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। 
     
    ◆ সাধন বাবু চেয়ার থেকে উঠে হাতড়াতে হাতড়াতে তার বউয়ের কাছে গিয়ে বলে :- তুমি বেশি উত্তেজিত হয়ো না, তোমার আবার হার্টের সমস্যা আছে।
     
    ◆ নির্মলা তার ঘাড়ের থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে :- তোমাকে এখানে মাতবরি করতে ডাকা হয়নি, চুপচাপ বসে থাকো কিন্তু কোন কথা বলবে না। সংসার তো আমাকে চালাতে হয়, তুমি অকর্মার ঢেঁকি তা বুঝবো কি করে?
     
    ◆ বাড়ির বড় বউ তিনি ছোট বউয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় আর শাশুড়ি নির্মলা দ্রুত বেগে ছুটে গিয়ে অনিন্দিতার দেহে ধরে ধাক্কা দিতে দিতে দরজার কাছে নিয়ে আসে।
     
    ◆ অনিন্দিতা উত্তেজিত ভাবে তার শাশুড়ি কে ধরে টানতে টানতে ঘরের মধ্যে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে বলে :- শাশুড়ি মা; এটা কি আপনার বাপের বাড়ি! যা ইচ্ছা তাই করবেন। আপনি বহু বছর ধরে অনেক খেলা দেখিয়েছেন কিন্তু এবার আমার খেলা আপনি দেখবেন। এটা আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বাড়ি আর পুত্রবধূর অধিকার নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করবো। আপনার কোন বাপ-মা আছে, আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াবো। আমার বাবা কে ফোন করলে কিন্তু এই বাড়িতে এক ঘন্টা থাকতে পারবেন না।
     
    ◆ নির্মলা উত্তেজিত বলে :- তোর বাবা কি পুলিশ না দারোগা?
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- মা; তুমি চুপ করে। অনিন্দিতার বাবা পুলিশ প্রশাসনের একজন উচ্চ পর্যায়ের অফিসার কিন্তু তার কাছে আমরা চুনোপুটি মাত্র।
     
    ◆ অনিন্দিতা শান্ত গলায় বলে :- আপনার নাম নির্মলা রেখে আপনার মা-বাবা খুবই ভুল করেছে। যার হৃদয়ের মাঝে ছেলে মেয়ের জন্য কোন দয়া মায়া কিছু নেই। আমি এই বাড়িতে থাকবো কিন্তু আমার সাথে কোন প্রকার অশান্তি করলে বিয়ের রেজি সার্টিফিকেট নিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে আমার মামা কে বলে বৌমা নির্যাতন মামলা আপনার নামে দায়ের করে দেবে। 
     
    ◆ শ্বশুর মশাই তার বউ নির্মলা কে বলে :- ছোট বৌমা কে মেনে নাও আর বাড়িতে থাকতে দাও। তোমার সাথে লড়াই টা ভালোই চলবে।
     
     ◆ হঠাৎ অনির্বাণের ফোন বেজে ওঠে ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। 
     
    ◆ অপর প্রান্ত থেকে অনির্বাণের শ্বশুর বলেন :- অনির্বাণ; তোমার মা আমার মেয়েকে মেনে নিয়েছে তো, না আমার পুলিশ প্রশাসন নিয়ে তোমার মায়ের কাছে যেতে হবে।
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- আপনার প্রতিবাদী উকিল মেয়ে থাকতে আর আপনাকে আমাদের বাড়ি আসতে হবে না কিন্তু সময় করে এক সময় এসে আমার মায়ের সাথে আলাপ করে যাবেন। আপনার উপর আমার মা ভীষণভাবে রেগে আছে কারণ তার ছেলেকে তার অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন। মায়ের কত আশা ছিল ছোট ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে আত্মীয় স্বজনের নিয়ে করার।
     
    ◆ অনির্বাণের শ্বশুরমশাই হাসতে হাসতে বলে :- ঠিক আছে, তোমার মায়ের মান ভাঙাতে শীঘ্রই দেখা করছি। 
     
    ◆ শ্বাশুড়ি নির্মলা বলে :- ঠিক আছে, থাকতে দিলাম কিন্তু আমার উপর কথা বলা যাবে না। 
     
    ◆ অনিন্দিতা কিছু বলতে যাবে আর বড় বউ তাড়াহুড়ো করে অনিন্দিতার মুখ চেপে ধরে বলে :- মা; যা বলে শুনে যা কিন্তু বোন তোর মুখ বন্ধ রাখ।
     
    ◆ অনিন্দিতা দাঁড়িয়ে তার স্বামীর হাত ধরে বলে :- তোমার থাকার ঘর তো দোতলায় চলে চলে। বলে চলতে চলতে বলে বড়দি জল খাবার টা উপরে দিয়ে যাবে কিন্তু।
     
    ◆ দয়াময়ী মাথায় হাত দিয়ে ভাবে :- এরকম নির্লজ্জ মেয়ে কোন দিন দেখিনি , বিয়ে হতে না হতেই ঘরে যাওয়ার চিন্তা আর প্রথম দিনেই শাশুড়ির সাথে ঝগড়া।
     
    ◆ অনিন্দিতা পরের দিন সকাল বেলা বাড়ির কাজের ছেলেকে তার শাশুড়ির সামনে জিনিসপত্র আনার তালিকার কাগজ ও টাকা হাতে দিয়ে বলে :- আজ বড় দেখে ইলিশ মাছ নিয়ে আসবে আর তাড়াতাড়ি মাছ দিয়ে যাবে কারণ বড়দা (ভাসুর) খাওয়া দাওয়া করে অফিসে যাবে।
     
    ◆ শ্বাশুড়ি নির্মলা বলে :- বড় ইলিশ মাছ কেন! তার দাম কত জানো, ডাল তরকারি যথেষ্ট।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- আপনাকে ভালো মন্দ রান্না করে দিতে হবে আর অন্য কেউ সেই খাবার পাবে না, একই পরিবারের বাস করে কিন্তু তা তো কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আজ থেকে সবাই যদি ডাল ভাত খায় আপনাকেও ডাল ভাত খেতে হবে।
     
    ◆ শ্বাশুড়ি নির্মলা বলে :- হায় হায় আমার টাকা পয়সা শেষ করার জন্য এই মেয়ে বাড়িতে এসেছে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- আপনার টাকা খরচ করছি না। আমার টাকা খরচ করে মাছ আনতে দিয়েছি।
     
    ◆ শ্বাশুড়ি নির্মলা বলে :- তুমি চাকরি করে না ব্যবসা, টাকার গরম দেখাচ্ছে। বাচ্চা মেয়ে বাচ্চাদের মতো থাকবে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- আমার বাবা আমার নামে ব্যাংকের মাসিক প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ২০ বছরের জন্য জমা করে রেখেছে কিন্তু সেই টাকায় প্রতি মাসে ২৫ হাজার ৭৮৯ টাকা করে লাভ অংশ আমার ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে যায়। আপনার ছেলের মতো আমিও কিন্তু মাসে মাসে বেতন পায়। আমার বাবা তার জামাইকে যৌতুক না দিয়ে তার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা গচ্ছিত রেখেছেন। আর সোনা দানা যা দিয়েছে তা হয়তো আপনার মেয়েকে আপনি দেননি। 
     
    ◆ শ্বশুর সাধন হাসতে হাসতে বলে :- একদম কাল নাগিনীর বাচ্চা কিন্তু কোন কারনে ছোবল মারলে দেওয়ালে ছবি হয়ে যাবে। নির্মলা; ছোট বৌমার থেকে সাবধানে থেকো আর ছোট মা আরেক কাপ চা হবে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- নিয়ে আসছি আর শ্বাশুড়ী মা চা পান করবেন।
     
    নির্মলা তার স্বামীর দিকে বড় বড় চোখ করে বলে :- 
    থাক তোমার ছোট বৌমা নিয়ে কিন্তু আনন্দে আত্মহারা হয়ে না, পরে বিপদে পড়বে। বলে দ্রুত বেগে তার ঘরের দিকে চলতে শুরু করে।
     
    ◆ দুপুরের খাবারের জন্য লম্বা খাবার টেবিলের দুই পাশে পরিবারের সদস্যরা বসেছে আর বাড়ির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নির্মলা দেবী লম্বা টেবিলের সামনে একা বসেছে। বাড়ির দুই বউ মিলে সবার পরিবেশন করছে।
     
    ◆ বাড়ির বড় ছেলে রমাকান্ত খেতে খেতে বলে :- অনিন্দিতার দৌলতে অনেকদিন পর ভালো কিছু খাবার খেতে পারলাম। বড় বউ রান্না করে পেটের দায়ে খেতে হয়।
     
    ◆ শশুর সাধন বলে :- মা; কচুর ঘন্ট আর মাছ দাও। আচ্ছা; তোমার মা কি রান্নার স্পেশালিস্ট? 
     
    ◆ অনিন্দিতা এক করে সবার চাহিদা মতো মাছ তরকারি দিতে দিতে শশুর মশাইয়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলে :- আমার থেকে আমার মা আরো ভালো রান্না করতে পারে।
     
    ◆ শাশুড়ির কাছে গিয়ে অনিন্দিতা মাছ তুলে দিতে যায়, আর শ্বাশুড়ি বলে, না লাগবে না। এত পরিমাণ তেল মসলা দিলে তো তরকারি এমনি ভাল হবে। এই ছোট বউ আমার সংসার শেষ করে ছাড়বে। 
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- মা ; পেটের জন্য আয় করা। এই দেহ কে কষ্ট দিলাম তাহলে আয় রোজগার করে লাভ কি! সবকিছু তো আর শ্মশানে নিয়ে কেউ যাবে না কিন্তু রোগ শোকের জন্য ডাক্তার বাবু অবশ্যই দেবেন।
    এই যে বাবা বেঁচে থেকেও কিন্তু মৃত সমান বেঁচে আছে।
    তার শখ আহ্লাদ ইচ্ছা আমাদের কে পূরণ করতে হবে।
    আপনার ইচ্ছাটাকে আপনি বাইরের জগতে চলাফেরা করে পূরণ করেন কিন্তু বাড়ির লোকজনের ইচ্ছে গুলো কোনদিন জানতে চেয়েছেন।
     
    ◆ শাশুড়ি হাত ঝারা দিয়ে উঠে বলে :- আমি আর খাবে না, তোমার শ্বশুর আর ভাসুর কে বেশি করে খাও। এতদিন তাহলে সবাইকে ছাই খেয়ে মানুষ করেছি। আমি এত বছর ধরে লালন পালন করে বড় করলাম আর কালকের আসা মেয়ে তোদের কাছে বড় আপন হয়ে গেল।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- আপনি; ভাত না খেয়ে কোথায় যাচ্ছেন।
     
    ◆ শাশুড়ি বলে :- তোমার রান্না করা ভাত আর খাবে না।
     
    ◆ অনিন্দিতা চোখ বড় বড় করে শাশুড়িকে চেয়ারে জোর করে বসিয়ে বলে :- মা ; তুমি বয়স্ক ব্যক্তি হয়ে রাগ করো তাহলে আমরা তো রাগ করতেই পারি। এই বাড়িতে একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে আর পরিবারের সদস্যরা সেই পরিবর্তনের হাওয়ার কথাই বলেছে। তুমি যদি ভাত না খাও তাহলে আমি এখানে বসে অন্বেষণ শুরু করব। আমিও দেখতে চাই কে যেতে আর কে হারে। তোমার শরীরের রাগ আছে আর আমার শরীরে রাগ নেই। আমার শরীরে পুলিশ বাবার রক্ত বয়ে চলেছে । বড়দি; মা কে মাছ তরকারি দাও।
     
    ◆ পাঁচ মাস পর একদিন অনিন্দিতা কোন কাজের জন্য বড় বউয়ের ঘরের কাছে আসতে কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকে বলে :- বড়দি; কান্না করছো কেন? 
     
    ◆ বড় বউ বলে :- আমার বাবা অসুস্থ কিন্তু শ্বাশুড়ি টাকা খরচের ভয়ে যেতে দিচ্ছে না। তোমার ভাসুরের তো মাতৃভক্তিতে অন্ধ হয়ে আছে। একমাত্র তুমি পারবে মায়ের সাথে লড়াই করতে।
     
    ◆ বড় বউ কে সাথে করে অনিন্দিতা সোজা তার শাশুড়ির ঘরে ঢুকে বলে :- বড়দি কে কেন তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে যেতে দিচ্ছে না।
     
    ◆ শাশুড়ি উচ্চস্বরে বলে :- কাকে কোথায় যেতে দেবে আর না দেবে, সে কৈফত তোমাকে দিতে পারবো না। 
     
    ◆ অনিন্দিতা তার শাশুড়ির বিছানায় বসে আঙুল তুলে বলে :- আপনি তো খুব বুদ্ধিমান আপনার জ্ঞান দেওয়া আমার সাধ্য নেই কিন্তু আপনি একবার কল্পনার জগতে গিয়ে চিন্তা করুন, আপনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন আর আপনার মেয়েকে তার শশুর বাড়ি থেকে আসতে দিচ্ছে না। তাহলে আপনার মন মানসিকতা কেমন হবে। আর বড়দির বাবা যদি অসুস্থ হয়ে মারা যায়, তাহলে সারা জীবন তো আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। সংসারে তখন আর কি সুখ শান্তি থাকবে? বড়দির বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য আপনার কোন টাকা খরচ করতে হবে না, আমার কাছে থেকে টাকা দিয়ে দেবো।
     
    ◆ শাশুড়ি উচ্চস্বরে বলে :- ঠিক আছে ঠিক আছে আর দাতা কর্ণ করতে হবে না। সংসারের সব কাজগুলো তাহলে কিন্তু তোমাকেই করতে হবে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- তাহলে কাল সকালে ভাসুরের সাথে বড়দি তার বাবার বাড়ি যাচ্ছে। আমার মাতৃভক্ত ভাসুর কে আপনি একটু বলে দেবেন। 
     
    ◆ পরের দিন সকালবেলা বাড়ির বড় ছেলে তার বউ সহ তাদের সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায় আর বিকাল বেলা এই বাড়ির মেয়ে ও জামাই বেড়াতে আসে। 
     
    ◆ শাশুড়ি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে থাকে কি করে ছোট বউকে শায়েস্তা করা যায়। বড় বউ আমার উপর কোনদিন কথা বলার সাহস পায় না। সকালে উঠেই তো ছোট বউ চা বানাতে যাবে, এইতো বুদ্ধির পেয়ে গেছি। 
     
    ◆ সকাল হতে না হতেই শাশুড়ি নির্মলা চিৎকার চেঁচামেচি করে বলে :- আজ বাড়িতে বড় বউ নেই কিন্তু আমাকে কেউ সকালের চা পর্যন্ত দিচ্ছে না। ছোট বউ ছোট বউ বলে চিল্লাতে থাকে।
     
    ◆ কিছু সময় পর বাঁচাও বাঁচাও আত্ম চিৎকার শুনে সাধন বাবু বলে :- দেখে আসো তো কার কি হলো?
     
    ◆ শাশুড়ি নির্মলা গড়িমসি করতে করতে ছোট বৌমা তার ননদকে নিয়ে শাশুরের রুমে ঢুকে বলে :- দেখুন মা; আপনার মেয়ের কি অবস্থা হয়েছে ? 
     
    ◆ বাবা সাধন হাত নেড়ে নেড়ে চিৎকার করে বলে :- অঞ্জলি তোর কি হয়েছে?
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- গ্যাসের চা বানাতে গিয়ে ননদের মুখ পুড়ে গিয়েছে।
     
    ◆ মা নির্মলা দুঃখিত হয়ে তার মেয়েকে বলে :- সকাল বেলা তোকে চা বানাতে কে বলেছে? দুদিন বেড়াতে এসেছিস, তা নবাবের বেটি ছোট বউ কি করছিল?
     
    ◆ অনির্বাণ উপস্থিত হয়ে বলে :- মা; নিজের মেয়ের মুখ পুড়েছে তার জন্য মনে হচ্ছে তোমার মুখটা পুড়ে গেছে কিন্তু পরের মেয়ে অনিন্দিতার মুখ পুড়লে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতে, আর তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারতে।
     
    ◆ মা নির্মলা হালকা গরম স্বরে বলে :- তুই কি বলতে চাচ্ছি?
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- তুমি ছোট বউকে মেরে ফেলার জন্য গ্যাসের পাইপ এর লাইন ফুটো করে দিয়েছিল কিন্তু বিধাতার কি খেলা তোমার পেটের মেয়ে সকালে চা বানাতে গিয়ে তোমার ফাঁদে পড়ে মুখ পোড়ালো কিন্তু মরে যাইনি এটাই রক্ষে।
     
    ◆ বাবা সাধন বলে :-নির্মলা ; তুমি এত স্বার্থপর মহিলা ছোট বৌমা কে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। হে ঈশ্বর এই ঘটনা শোনার আগে আমাকে কেন মৃত্যু দিলে না।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার শ্বশুরের কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকে।
     
    ◆ নির্মলা উচ্চস্বরে তার ছেলেকে বলে :- মায়ের নামে কলঙ্ক দিতে তোর বিবেকে বাঁধলো না, হয়তো তোর বউ ষড়যন্ত্র করে আমার মেয়েকে মারতে চেয়েছে।
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- মা; তোমার ষড়যন্ত্র আমার কাছে সব ভিডিও রেকর্ড আছে। বলে মোবাইল খুলে মায়ের সামনে ধরে বলে, গ্যাসের পাইপ অনিন্দিতা ফুটে করছে। কাল রাতে আমি যদি বাড়ি না আসতাম আর রাতে বাইরে না বেরোতাম, তাহলে হয়তো চরম সর্বনাশ হয়ে অনিন্দিতা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যেত। 
     
    ◆ সেই মুহূর্তে অনির্বাণের শশুর ও শাশুড়ি ঝড়ের গতিতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আর কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী তার সাথে ঘরে ঢুকে অফিসার কে ঘুরে ধরে। 
     
    ◆ অনিন্দিতার বাবা-মা তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা তুই ঠিক আছিস তো।
     
    ◆ অনিন্দিতা বাবা অশোক সাহা তার বিয়ান নির্মলার সামনে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে :- আপনাকে কিন্তু জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়বো, কার মেয়ের মরার ষড়যন্ত্র করছেন তা আপনি নিজে জানেন না। বেশি উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছেন, আপনার মত মহিলার ডানা ছাটতে আমার এক মিনিট সময় লাগে না। আত্মীয় বলে চুপচাপ থাকি বলে দুর্বল মনে করবেন না।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার বাবা কে বলে :- আমি শাশুড়ি কে মাফ করে দিয়েছি, বাবা মাথা ঠাণ্ডা করে আর উত্তেজনা সবার জন্য খারাপ-আমি তো ঠিক আছি।
     
    ◆ অনিন্দিতার মা তার মেয়েকে বুকে আগলে বলে :- আমার মেয়ে কে আর এই বাড়িতে রেখে যাওয়া যাবে না, চল আমাদের সাথে ।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার বাবা মায়ের হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, এই বাড়িতে আমি আর থাকবো না। 
     
    ◆ অশোক সাহা মেয়ের কথা মত হল ঘরে এসে জামাইয়ের মাকে বিভিন্ন ভাবে শাসিয়ে ভয় দেখিয়ে দ্রুত বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার ননদ অঞ্জলির মুখের থেকে ধীরে ধীরে ঔষধ লাগানো ব্যান্ডেজ গুলো খুলতে খুলতে বলে :- শাশুড়ি মা; আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ননদ কে পুড়ে যাওয়ার নাটক করা। রাতে আপনার ছেলে সব কিছু ঘটনা আমাকে বলেছে, তখন ননদকে সাথে করে আমরা নাটকটি তৈরি করি।
     
    ◆ মা নির্মলা হালকা মুখে হাসি নিয়ে এসে বলেন :- তাহলে, আমার মেয়ের কিছু হয়নি। বলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।
     
    ◆ অঞ্জলি তার মাকে সরিয়ে দিয়ে স্বামীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে :- চলো আর এই বাড়িতে থাকা যাবে না, ভাগ্য ভালো ছোট দা রাতে বাড়িতে এসেছিল- না হলে আমার যে আজ কি বিপদ হতো তা একমাত্র ভগবানই জানে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- আমাকে যখন শাশুড়ি মা পছন্দ করেনা আর পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেছে, সেখানে আমি আর থাকতে চাই না। আপনার ছেলে অনেক আগেই আমাকে বলেছিল কিন্তু আমি যাইনি। এবার আমি সত্যি সত্যি এই বাড়ি ত্যাগ করে চলে যাব।
     
    ◆ শাশুড়ি নির্মলা তার ছোট বৌমার সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলে :- মা; আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কোনদিন এরকম হবে না। 
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- শাশুড়ি কখনো মায়ের আসন নিতে পারে না। একজন নারী আদর্শ বউ হতে পারে কিন্তু একজন শাশুড়ি মা কিন্তু ভালো মা হতে পারে না। আমাকে আটকিয়ে কোন লাভ হবে না কারণ আপনার ছেলে বদলি চাকরি। 
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- আমার বউয়ের নিরাপত্তার জন্য আর এই বাড়িতে আমরা থাকবো না। মা যখন তার মাতৃত্ব হারিয়ে শত্রু হয়ে ওঠে, তখন আর তার সংস্পর্শে থাকা ঠিক নয় । মায়ের কথা না শুনলে, মা হয়তো তার ছেলেকেই মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করবে। 
    তারপর অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও আমাদের কে কলকাতায় যেতে হবে। রাতেই অফিসের বড় বাবুকে ফোন করেছিলাম, তিনি আমাদের জন্য একটি রুমের ব্যবস্থা করেছেন।
     
    ◆ অনিন্দিতা ঝটপট ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে হল ঘরে আসে আর তার শাশুড়িকে প্রণাম করে শ্বশুরের কাছে প্রণাম করতে আসে।
     
    ◆ শশুর মশাই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলে :- ছোট মা; এই অন্ধ শশুরকে তোমার সাথে নিয়ে চলো । তোমার শাশুড়ি হয়তো আমাকেও কবে মেরে দিতে পারে। তার সন্তানদের প্রতি মায়া দয়া নেই, সেই মহিলা অকর্মা স্বামীর দায়িত্ব কত দিন নেবে।
     
    ◆ অনিন্দিতা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলে,কি করবো?
     
    ◆ অনির্বাণ তার বাবার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে :- চলে বাবা, সুখে দুঃখে একসাথে থাকবে।
     
    ◆ শাশুড়ি কান্না করতে করতে বলে :- বৌমা তুমি চলে যেওনা, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও।
     
    ◆ অনির্বাণ দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে আর তার বাবার জন্য কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে পর মরনত্বর চক্ষু দান কর্মসূচির মাধ্যমে একটি চোখ লাভ করে। 
     
    ◆ সাধন বাবু চোখ লাভ করে তার বউ নির্মলার সাথে দেখা করে আর লড়াই ঝগড়া করে তাদের সম্পূর্ণ ধন সম্পত্তি ও ব্যবসার টাকা চার ভাগে ভাগ করে। তার ও ছোট ছেলের দুই অংশের সম্পত্তি বিক্রি করে কল্যাণী এলাকায় ছোট ছেলের নামে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে। আর তার ছোট নাতি শ্যাম চরণের নামে কয়েক লাখ টাকা জমা করে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- বাবা; এই বয়সে ব্যবসা চালু করার জন্য আপনার ছেলে আমাকে বকাবকি করছো।
     
    ◆ অনির্বাণ তার বাবার ঘরে ঢুকে বলে :- কেন; বকাবকি করবে না, বাবা কি জীবনে কোনদিন শান্তি পেয়েছে।
     
    ◆ বাবা সাধন বাবু বলেন :- দেখ বাবা; অতীতকে স্বপ্নে টেনে নিয়ে এসে কোন লাভ হবে না। বর্তমান আমার কাজ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য তারপর লোকজনের সাথে ওঠা বসা কথা বলা মনের দিক থেকে অনেক শান্তি পায়। নিজের আয় করা টাকা পয়সা খরচ করতে মনের দিক থেকে আত্মতৃবৃত্তি লাভ হয়। আমি তো কিছুই করি না, করে তো সব লোকজন। আমার ব্যবসার দ্বারা কমপক্ষে দশটি পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত আয় রোজগার করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। অন্ধ থাকার কি জ্বালা তারপর তোর মায়ের অশান্তি আর অত্যাচারের কারণে আমি হাপিয়ে উঠেছিলাম। 
     
    ◆ অনির্বাণ বলে :- তোমার জন্য যে নতুন গাড়িটি কিনে নিয়ে আসা হয়েছে, ড্রাইভার প্রতিদিন তোমাকে অফিসে দিয়ে আসবে আবার সময় মতো নিয়ে আসবে।
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- যদি সময় মত খেতে না আসো তাহলে কিন্তু সোজা তোমার অফিসে গিয়ে শাসন করবে। এখন আমরা তোমার অভিভাবক ভালো মন্দ সবকিছু আমরা দেখাশোনা করব। 
     
    ◆ বাবা সাধন বাবু বলে :- তুই যে আমার মায়ের মত কথা বলছিস। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি তারপর মা বহু কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছিল, কিন্তু সুখের মুখ যখন দেখলাম তখন মা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। মা চলে গিয়ে ভালোই হয়েছে কারণ তোমার দজ্জাল শাশুড়ি তাকে শান্তিতে থাকতে কখনো দিতো না। মা তোমার ছেলে মেয়ে কে নিয়ে আমার বেঁচে থাকা। 
     
    ◆ অনিন্দিতা বলে :- বাবা; মাঝে মাঝে মায়ের সাথে দেখা করে আসবেন তাহলে মন মানসিকতা ভালো থাকবে। বড় বৌমা ছেলে নাতিপুতি সবার সাথে দেখা হয়ে যাবে।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ◆ রচনাকাল :- ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
    ◆ উমরালা মণিকুন্ড আশ্রমে থাকাকালীন সময়ে। উমরালা, কোর্ট বন, কোশি কলা, বৃন্দাবন, মথুরা, উত্তর প্রদেশ , ভারত।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন