এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • লাহিড়ী বাড়ির বড় ছেলে

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • খড়দায় এলেই তমাল একবারের জন্য হলেও আমার সঙ্গে দেখা করে। যত যাই হোক স্কুলের বন্ধুকে ভোলা খুব কঠিন। তমাল বেহালায় শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে চলে গেছে। আমার অন্য অনেক বন্ধুই খড়দা ছেড়ে ভাগ্যের সন্ধানে বহুদিন হল বেরিয়ে গেছে। আমি কোথাও যাইনি। বলা ভাল, যাবার জায়গাও নেই। তমাল এলেই শ্যামের মন্দিরে ঢুঁ মারবেই। ওর জন্য আমারও এখানে আসা হয়ে যায়। নাহলে জীবিকার ব্যস্ততায়, আর কোথায়ই বা যাওয়া হয়ে ওঠে! ছেলেবেলার প্রচুর স্মৃতি এই মন্দিরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। আমরা স্কুলের বন্ধুরা মিলে এই মন্দির চত্বরেই আড্ডা দিতে আসতাম। কলেজে পড়বার সময়েও সেই ধারা বহমান ছিল। কলেজের পরে একে একে যখন কাজকর্মে ঢুকতে শুরু করল, তখন থেকেই ছেদ পড়তে শুরু করেছিল। এখন তো তমালের দৌলতে বছরে একবার কি দুবার আসি। আজ দুজনে শ্যামের বাড়িতে ভোগ খাব ঠিক করেছি। তমালই ফোন করে বলেছিল, "অনেকদিন ভোগ খাওয়া হয় নি। আজ দেখিস তো পাওয়া যায় কিনা!" আমি সকালবেলাতেই পাড়ার শ্যামল কাকাকে টাকা পয়সা দিয়ে দুটো ভোগের ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। শ্যামল কাকার মন্দিরের ধারেই চায়ের দোকান। বহুদিন পঙতি ভোজনের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ জোটেনি। নিরামিষ অন্ন ভোগেও যে কি তৃপ্তি, শ্যামের বাড়ির ভোগ না খেলে বোঝার উপায় নেই। এখানে প্রতিদিনই কেউ না কেউ শ্যামের ভোগের আয়োজন করে। নিয়ম অনুযায়ী মন্দিরে মূল্য দিলে ভোগ মেলে। যার যেরকম সাধ্য, সেইভাবেই ভোগের উপাচার সাজে। আজ অনেকরকম পদ দিয়ে ভোগ হয়েছিল। আমি আর তমাল পাশাপাশি মুখ নিচু করে খেতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে পড়ল আমাদের অপরদিকে বসা লোকটির দিকে। এক ঝোড়া কাঁচা পাকা দাড়ি গোঁফের আড়ালে মুখটি খুব চেনাই মনে হল। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেলেও লোকটিকে আমি বেশ চিনতে পারছি। অরুণ লাহিড়ি। লাহিড়ি বাড়ির বড় ছেলে। এ কি অবস্থা হয়েছে ওঁর! চোখদুটো কোটরাগত। পরনে ময়লা পায়জামা। তার সাথে ছেঁড়া রং চটে ধূসর হয়ে যাওয়া পাঞ্জাবি। চুলগুলোও বহুদিন কাটা হয়নি। চিরুনি পড়ে বলেও মনে হচ্ছে না। খাওয়ার সময়ে ওঁকে আর বিরক্ত করলাম না। 
     
    লাইন দিয়ে জলের কল লাগানো। তারই দুটোয় পাশাপাশি তমাল আর আমি। দুজনে হাত ধুচ্ছি। আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে অরুণ লাহিড়ি। হাত ধুতে ধুতেই বলে উঠলাম, "আরে অরুণদা যে! চিনতে পারছেন তো?" আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখার পর সেই অমলিন অকৃত্তিম হাসিতে মুখটা ভরে উঠল। "হ্যাঁ। তোমায় চিনতে পারব না। কি যে বলো? তারপর কি খবর বলো?" ভেবেছিলাম আমিই ওঁর খবর জিজ্ঞেস করব। তার আগে উনিই আমার খবর জিজ্ঞেস করে বসলেন। তমালও এতক্ষণে ওঁকে চিনতে পেরেছে। আর চিনবে না-ই বা কেন? তমাল তো ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে কত এসেছে। আমাদের বাড়ি মানেই লাহিড়ি বাড়ি। আমরা ওঁদের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতাম। আমার জন্ম ওই বাড়িতেই। দুজনেই আমরা কুশল বিনিময় করলাম। লাহিড়ি বাড়ি তো অনেকদিন আগেই ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। তাই অরুণদা কোথায় থাকে, তা জানবার ভীষণ কৌতুহল হল। 
    "এখন কোথায় থাকেন? ফ্ল্যাট পেয়েছেন নিশ্চয়ই।" 
    "আরে না না। ফ্ল্যাট নিয়ে আমার কি হবে? আমি এই মন্দিরের চাতালেই থাকি। চলো দেখবে চলো।" বলে আমার হাতটা ধরে প্রায় টেনে নিয়ে চললেন। তমালও পিছনে আসতে লাগল। মন্দিরের পিছন দিকের একটি নাট মঞ্চের চাতালের থামে জড়ো করা কিছু বিছানাপত্র। জলের বোতল। হাতপাখা। কয়েক দিস্তে আর্ট পেপারের টুকরোর সঙ্গে দু তিন বাক্স জল রংয়ের শিশি। আর কয়েকখানা বাঁধানো বই। সেই পুরানো অভ্যেসগুলো এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন বোধহয়। তখনও দেখেছিলাম উনি বইয়ের পোকা ছিলেন। সব খুইয়েও সেই বইই এখন ওঁর সাথী। বুঝলাম এইগুলোই অরুণদার সংসার। দেখে খুব মায়া লাগল। আজ কি অবস্থা লোকটার। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না! অত বড় লাহিড়ি বাড়ির বড় ছেলের... কিনা মন্দিরে ঠাঁই! আমরা বাড়ি করে চলে আসার আগেই অরুণদাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। তমালও যেহেতু অরুণদাকে চেনে, সেহেতু ওরও মনে একরাশ কৌতুহল জমা হচ্ছে টের পাচ্ছি। কথা বলতে বলতেই অরুণদা বলে উঠলেন, "এখনই তোমরা চলে যাচ্ছ নাকি?" 
    "না, গঙ্গার ধারে একটু বসব। বিকেলে রোদ পড়লে বের হব। কেন বলুন তো?"
    "এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। এতদিন পর দেখা। বিকেলটা হোক। শ্যামলের দোকানে এক ভাঁড় চা খেয়ে তবেই যাবে কিন্তু!" সহাস্য মুখে সেই পুরানো আপ্যায়ন। লোকটার আজ কিস্যু নেই। মন্দিরে এসে উঠেছে। তবুও পুরানো লোকজনকে আপ্যায়নের ত্রুটি রাখতে চান না। আমাদের মুখে কিন্তু কিন্তু ভাব দেখে আবার বলে উঠলেন, "আরে, চিন্তা নেই। আমি এখনও রোজগার করি। এই যে দেখছ, রং আর কাগজ... ছবি এঁকে দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করি। দু চার টাকা যা হয়, তাতে আমার চলে যায়। আর মন্দিরেই তো থাকি খাই..." আবার সেই অমলিন অকৃত্তিম হাসির ছটা।
     
    গঙ্গার পাড়ে এসে তমাল আর আমি মন্দিরের সিঁড়িতে বসলাম। তমালের মনে অরুণদাকে নিয়ে কৌতূহলের চারাগাছটা এখন মহীরুহ হয়ে উঠেছে বুঝতে পারছি। ও এখন পাড়ায় থাকে না। তাই এক আধ দিন এখানে এলে ওর কৌতুহল হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। অরুণদাকে ঘিরে ওর নানান প্রশ্ন। আমি ওকে বললাম, "ওঁর গল্প কিন্তু অনেক লম্বা... শোনার ধৈর্য থাকবে তো?" 
    ওর সম্মতিতেই আমি গোড়া থেকে শুরু করলাম।
     
    "ষাটের দশকের শেষের দিকে অরুণদার বাবা অর্থাৎ অতুল লাহিড়ি বাংলাদেশ ছেড়ে রাতারাতি সপরিবারে পালিয়ে এসেছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে অরুণদা সবার থেকে বয়েসে অনেকটাই বড়। বরুণদা ও তরুণদা ছিলেন অতুল লাহিড়ির বয়েসকালের সন্তান। কারণ নিঃসন্তান লাহিড়ি দম্পতি অনাথ অরুণদাকে দত্তক নিয়েছিলেন। অনেক বছর পরে ওনাদের দুটো পুত্র সন্তান জন্মায়, বরুণ ও তরুণ। শুনেছিলাম, অরুণদা ছোট দুই ভাইকে নিজের দুহাতে বুকে চেপে এপারে নিয়ে এসেছিলেন। এদেশে এসে প্রথমদিকে ওঁদের প্রচুর কষ্টে কাটে। তারপর ধীরে ধীরে ব্যবসাবাণিজ্য করে অতুল লাহিড়ি পায়ের তলায় জমি খুঁজে পেয়েছিলেন। ওই পেল্লায় বাড়িও তৈরি করেছিলেন। যতদিন উনি বেঁচে ছিলেন অরুণদার কোনো অমর্যাদা হয়নি। অতুলবাবু গত হবার পরেই দুই ভাইয়ের মনে বিষ ঢোকে। তখনও আমরা ওদের বাড়িতে ভাড়ায় থাকি। অরুণদা ছোটবেলাতেই বাবার ব্যবসায় ঢুকে গিয়েছিলেন। যাতে দুই ভাইয়ের পড়াশোনায় বিঘ্ন না ঘটে, সেই চেষ্টাই বরাবর করতেন। কারোর কাছে না শিখেই ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। ভাল অভিনয় করতে পারতেন। ভাই দুটিকে মানুষ করতে সে সবই ত্যাগ করেছিলেন। দুই ভাইয়েরই একে একে বিয়ে হয়ে গেল। একদিন রাতে তুমুল অশান্তি। দুই ভাই ততদিনে জেনে গেছে অরুণদা পালিত সন্তান। বাইরের লোক, ওদের কেউ নন। বাবার ব্যবসা, লাহিড়ি বাড়ি, এসব ভাগ হলে তো অরুণদাকেও দিতে হবে। সেই জন্যে দুই ভাই ও তাদের বৌয়েরা মিলে নিত্য অশান্তি করে অরুণদাকে বাড়ি আর ব্যবসা দুই থেকেই তাড়াল।"
    "সে কি? ওঁদের মা তো বেঁচে ছিলেন। উনি প্রতিবাদ করেন নি?" তমাল বলে উঠল।
    "মায়েরও তো বয়স হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর বিধবা মানুষ। ছেলেদের সংসারে আশ্রিতা হয়ে পেরে উঠতেন না। মুখ বুজে সহ্য করতেন। তবে অরুণদাকে জ্যাঠাইমাও ভীষণ ভালবাসতেন দেখেছি। অরুণদা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে কোথায় যেন ঘর ভাড়া করে থাকতেন। ছোটখাটো কোনো চাকরিও জুটিয়ে নিয়েছিলেন বলে শুনেছিলাম। কয়েক বছরের মধ্যে বাবার ব্যবসা দুই সুপুত্রের হাতে পড়ে ডকে উঠে গেল। আমাদের তখন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। লাহিড়িবাড়ির আর্থিক হাল খুব খারাপ। জ্যাঠাইমা শারীরিক নানান সমস্যায় শয্যাশায়ী। একদিন গরমকালে গভীর রাতে, ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। এমন সময়ে দোতলায় জ্যাঠাইমার ঘরে অরুণদার গলা শুনতে পেলাম। কথাবার্তা শুনে যা বুঝে ছিলাম, অরুণদা মাঝেমধ্যেই রাতের গভীরে মায়ের কাছে আসেন। মাকে তো টাকাপয়সা দেনই, অভাবী ভায়েদের সংসারেও সাধ্যমত সাহায্য করে যান। এরকমই ছিলেন অরুণদা। এরপর আমরা নিজেদের নতুন বাড়িতে চলে যাই। জ্যাঠাইমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে লাহিড়ি বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখনও বাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল। বেশ কিছুদিন পর খবর পেলাম বাড়িটা ফ্ল্যাট হচ্ছে। দুই ভাই বরুণ ও তরুণ, বেশ মোটা টাকার মালিক হয়ে গেছে। আর আজ তাদের বড় ভাইকে তো এই মন্দিরে দেখলাম।" বলে থামলাম। বুঝতে পারিনি কখন আমাদের পিছনে অরুণদা এসে দাঁড়িয়েছেন। 
    "কি হল? চলো, বেলা যে পড়ে এলো গো। শ্যামলের দোকান খুলে গেছে। চা খাবে না?" আমি আর তমাল গল্পে বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। সূর্যটা পশ্চিম প্রান্তে গঙ্গার ওপারে লাল হয়ে চোখ রাঙ্গাচ্ছে যেন। গঙ্গার পাড় থেকে উঠে তিনজনেই চায়ের দোকানের দিকে এগোলাম। তমাল এতক্ষণ চুপ করে ছিল। হঠাৎ সে বলে উঠল, "আমাদের এখানকার বাড়িটা তো খালি পড়ে রয়েছে। অরুণদা আপনাকে যদি থাকতে বলি...!"
    "ধুস! আমার জন্য এই শ্যামের মন্দিরই ভাল গো। দালানকোঠা আমার আর ধাতে সইবে না। এই বেশ ভাল আছি । ছবি আঁকি, বই পড়ি, লাইব্রেরি যাই, হরিনাম করি আর খাই দাই ঘুমাই, হা হা হা..।" সেদিন শ্যামল কাকার চায়ের দোকানে তিনজনে চা খেয়েছিলাম। কিছুতেই আমাদের দাম দিতে দেবেন না। তমাল একপ্রকার জোর করেই দাম মিটিয়ে ছিল। শ্যামল কাকা বলছিলেন, শ্যামের মন্দিরের দর্শনার্থীরা অরুণদার আঁকা ছবি দশ বিশ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। ওই কটা টাকাতেই অরুণদা আবার ভিখারীদের দেয়, কুকুরদের খাওয়ায়, লাইব্রেরিতে চাঁদা দেয়, চা বিস্কুট খায়। আমাদের মত কাউকে পেলে চা বিস্কুট খাওয়ায়ও। 
    তারপর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। লক ডাউনের জন্য বহুদিন হল তমাল খড়দায় আসেনি। তাই আমারও আর শ্যামের মন্দিরে যাওয়া হয়নি। আজ বিকেলে হঠাৎ মনে হল, যাই একবার একলাই মন্দিরে ঘুরে আসি। হেঁটে হেঁটেই পৌঁছে গেলাম। শ্যামল কাকা চায়ের দোকানটা সবে খুলছে দেখলাম। ঘুরে এসে যাওয়ার সময়ে চা খেয়ে যাব ভাবলাম। মন্দিরে প্রণাম সেরে পিছনদিকে চললাম। কেমন যেন এক অমোঘ টান আমায় টেনে নিয়ে চলল। সেই জায়গাটায় এসে দাঁড়ালাম। কই, সেই সব জিনিসপত্রগুলো কোথায় গেল? সেই ময়লা বিছানাপত্র, জলের বোতল, ছবি আঁকার সরঞ্জাম, বইপত্র...! মন্দিরের চারিদিক খুঁজে বেড়ালাম। যদি সেই জিনিসগুলোর কিংবা অরুণদার দেখা পাই...! পেলাম না। কোথাও তাঁর দেখা পেলাম না। ভাবলাম, খেয়ালী মানুষ তাই নিশ্চয়ই অন্য কোনোখানে ডেরা বেঁধেছেন হয়ত! ফিরে আসবার সময়ে শ্যামল কাকার দোকানে চা খাব বলে দাঁড়ালাম। লক ডাউনের জন্য দোকানে ভাঁড় বাড়ন্ত। কাগজের কাপে চা খেতে হবে। সামনের বেঞ্চে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শ্যামল কাকাকে জিজ্ঞেস করলাম অরুণদার কথা। 
    "সে কি? তুমি জানো না! এই তো দশ বারো দিন হল, অরুণ চলে গেছে।" শুনে আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আবার কোথায় চলে গেলেন?" শ্যামল কাকা এবার ওপর দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বললেন "ওপরে, যেখানে গেলে আর কেউ ফেরে না...।" কথাটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনের ভিতরটা উথালপাথাল হচ্ছে বুঝতে পারছি।
    "হঠাৎ! কি হয়েছিল? ঠিকই তো ছিলেন মনে হয়েছিল!"
    শ্যামল কাকা আমার কথা শুনে শ্লেষাত্মক একচিলতে হাসি ঠোঁটের কোণে এনে বললেন, "হ্যাঁ, খুব ভাল ছিল। সাত বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিল। আমরা চাঁদা তুলে নতুবা মন্দির কমিটি থেকে ওষুধপত্র কিনে দিলেও অর্ধেক দিন খেত না। শেষ কদিন ওখানে বসে বসে এক নাগাড়ে ছবি এঁকে চলেছিল। একদম উঠত না। ওপরের ডাক এসে গেছে। সেটা বোধহয় শুনতে পেয়েছিল। দাঁড়াও তোমায় কটা ছবি দিতে হবে।" 
    বলে, শ্যামলদা চা বানানো ছেড়ে দোকানের কোণায় ডাঁই করে রাখা অরুণদার জিনিসপত্র থেকে ছবির বান্ডিল বের করলেন। তার থেকে খুঁজে খুঁজে দুটি ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন, "শেষ দিনে যাওয়ার আগে বলে গেছে, যারা আমায় খুঁজবে তাদের প্রত্যেককে আমার আঁকা ছবি দেবে।" 
    বলতে বলতে শ্যামল কাকা মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন। বুঝতে অসুবিধা হল না ওনার চোখে জল এসে গেছে। চায়ের দামটা মিটিয়ে বাড়ির পথ ধরব বলে উঠে দাঁড়ালাম। গোল করে পাকানো ছবি দুটো মেলে ধরলাম। কিসের ছবি সেটা দেখব ভেবেই। এ কি! কি সুন্দর ছবি! অবিকল তমালের মত দেখতে... আর একটাও তো রয়েছে। সেটিও খুলে দেখি...। আবার অবাক হওয়ার পালা। সেটাতে হুবহু আমার ছবি আঁকা।
     
    _____________
    ©রজত দাস

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ritabrata gupta | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২২526965
  • চোখে জল এসে গেল ভাই  !  হৃদয়  ছুঁয়ে  গেল  আপনার  এই  লেখা  !
  • tutul shree | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:১৯527026
  • কি সুন্দর লেখা
  • দীপ | 42.110.147.103 | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৬527028
  • সশ্রদ্ধ নমস্কার!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন