এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একা মায়ের সন্তান পালনের কিছু কথা

    Anwesa Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৪২৪ বার পঠিত
  • শহরের একটি মাঝারি স্তরের বেসরকারি স্কুলে কেজি ক্লাসে ভর্তির ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে সত্যিই মনে হল এক রঙ্গমঞ্চে পুতুল হয়েই দাঁড়িয়ে আছি। আমায় কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবেনা যে কলেজস্ট্রিটের তিনটে স্কুলের কোনও একটিতে আমার ছেলের নাম লটারিতে উঠবেই। অগত্যা কিছু বেসরকারি স্কুলেও ফর্ম তুলতে হচ্ছে, যেগুলিতে বাংলা প্রথম ভাষা হিসেবে পড়ান হয় । সেন্ট জেভিয়ার্সে ওয়েবসাইটেই বড় বড় করে লেখা আছে স্বামী-স্ত্রী একসাথে ইন্টারভিউতে আসতে হবে সব অরিজিনাল নিয়ে। তবু ৫০০ টাকা খরচ করে ফর্ম ভরলাম অনলাইনে। কিন্তু তারা সমস্ত কমুনিকেশন করে চলছে আমার বরের নামে। অগত্যা আমি নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিছুটা কমিয়ে নিয়ে গেলাম এই উক্ত মধ্যমানের স্কুলটিতে।
    ওমা ফর্ম হাতে পেয়ে দেখলাম এরাও চাইছে বাচ্চার বাবা-মা দুজনের সর্বোচ্চ ডিগ্রির নাম ও সার্টিফিকেট এবং বেতনের পরিমান ও তার নথি। এটা দেখতে পেয়ে আবার ছুটে গেলাম অফিস-রুমে। বললাম আমি আমার স্বামীর ডিগ্রি ও বেতন সম্পর্কিত কোনও নথি জমা করতে পারব না। আমার কাছে নেই। উনি এদেশে থাকেন না। ফলে আমি অরিজিনাল ও দেখাতে পারব না। কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনার পর ভদ্রলোক বললেন জমা দেওয়ার দিন একটা এপ্লিকেশন দিয়ে টিচারের সঙ্গে দেখা করতে। আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম।

    এখানে যে কথাগুলো বলার ছিল :

    ১. একটা বাচ্চার বাবা মার ডিগ্রি এতটা দরকারি কেন? ওরা কোনও স্ট্যাটিসটিকাল প্রজেক্ট করলে তাও মানা যেত। কিন্তু এইভাবে প্রতিটি স্কুল একাধারে এই সব চাইছে দেখে বেশ বিরক্তি আসছে। একটা লোকের ডিগ্রি দিয়ে কখনওই তার মেধাকে বিচার করা যায়না। এ কথা আমরা সবাই জানি। আমার বাবা শুধুমাত্র বি.এসসি পাশ হয়েও আমাকে ফিজিক্স অনার্স পড়ার সময় অনেক অঙ্ক করে দিতেন যেগুলি আমি ও আমার টিচার (যিনি তখন একটি ইনস্টিটিউট পিএইচডি করতেন) দুজনেই পেরে উঠতাম না।

    ২. আজকাল প্রচুর সিঙ্গেল মা চারিদিকে। সেক্ষেত্রে যেকোনো একজনের ডিগ্রির বা বেতনের নথিই যথেষ্ট নয় কেন, আদেও যদি লাগে ? আমার বর JNU থেকে ফিজিক্সে এমএসসি না করে মাধ্যমিক ফেল হলেও আমার ছেলের কাছে সেটার গুরুত্ব সমানই থাকত। কারণ তিনি ফেসবুকের পাতা জুড়ে জুড়ে যতই ভালো ভালো ইংরেজিতে মোদীর গুষ্টি উদ্ধার আর রাহুল গান্ধীর প্রশস্তি করুননা কেন, ছেলেকে তিনি একদিনও বসে ইংরেজি পড়াবেননা, ফিজিক্স শেখাবেন না। আর তার বেতন আমার পাঁচ গুন বা পাঁচ ভাগ যাই হোক না কেন, তার কানাকড়ি ভাগও আমার ছেলে পাবে না।

    ৩. স্কুলগুলি যখন এতো টাকাই নিচ্ছে তখন বাবা মার ডিগ্রির ঊর্ধ্বে উঠে একটা বাচ্চাকে তৈরি করতে পারবে না কেন ?

    এর মধ্যে বাচ্চার পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়েও মোটামুটি একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। পাসপোর্ট অফিসে আনেক্সচার D ফর্ম জমা দিলাম। এটি লাগে মাইনরের বাবার সই ফর্মে না দিতে পারলে। বাচ্চার পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না। কিন্তু বাবার সই নেই বলে আমার ছেলের সেটি হল। পুলিশও কিছু সেরম ঝামেলা করল না। ঝামেলা করল পোস্ট অফিস। কারণ পাসপোর্টের খামের ওপর স্পষ্ট করে লেখা "শিজো হার, শন্ অফ দেবাশিস কুমার হার।" পোস্ট অফিসের ক্লার্ক জানিয়ে দিলেন ছেলের বাবা এলে তবেই পাসপোর্ট দেব। শেষে আমার শতবর্ষ-ঊর্ধ্ব প্রয়াত ঠাকুরদার নাম ধরে ডাকাডাকি করে সেই পাসপোর্ট হাতে পেলাম। আমার ঠাকুরদা বাম আমলের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।

    আমার বাচ্চার আধার কার্ডেও তার বাবার নাম। আমি জানিনা এই লড়াইটা ঠিক কিভাবে করতে হয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2401:4900:1f2b:c7ce:addf:b81b:c0a3:9b4c | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২২523645
  • এই ব্যাপারগুলো সত্যিই অসহ্য। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য বাবা-মার ডিগ্রি, ইনকাম ইত্যাদি জানতে চাওয়ার কোন কারনই নেই। আর যে কোন একজন পেরেন্ট এর উপস্থিতিই যথেষ্ট হওয়া উচিত। আইন করে এগুলো বন্ধ করা উচিত। তবে আমাদের দেশে এডুকেশান সিস্টেম একেবারে ধ্বসে পড়েছে, কাজেই এই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে বলে তো মনে হয়না। 
  • | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩৭523646
  • সিঙ্গল পেরেন্ট এবং মা'ই যথেষ্ট এই মর্মে তো আইন আছে। সেই আইনের ধারা দেখিয়ে আর টি আই করতে পারেন কী? বা রেজিস্টার্ড পোস্টে চিঠি লিখে জবাব চাওয়া? 
    অদ্ভুত মধ্যযুগীয় সিস্টেম সব। সো কল্ড সনাতনী ধর্ম আর সংস্কারের নামে নিজেদের মগজের কাদা আর পাঁক ছিটিয়ে বেড়ায় এই লোকগুলো। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:c7ce:1514:264a:5d5e:1d94 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৩523647
  • ওহ, আইন আছে জানতাম না। তাহলে অবশ্যই অইনের ধারা দেখিয়ে স্কুলে কথা বলে দেখতে পারেন। 
  • যোষিতা | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৭523649
  • খুবই হতাশাজনক। তবে ঐ অ্যানেক্সার ডি আগে ছিল না মনে হয়। আমি নিজেই প্রথমবার উইদাউট ফাদার্স নেম পাসপোর্ট ইশু করিয়েছিলাম মেয়ের জন্য যেটা সমস্ত পাসপোর্ট ফ্যাক্স করে দিয়েছিল কোলকাতার আরপিও। ২০০০ সাল সম্ভবত। বা ১৯৯৯ হতে পারে।
    ইস্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রেও লজ্জাজনক। এমনকি বাচ্চাকে ভর্তির পরে ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবার ঘটনাও ঘটেছে দোলনা ইস্কুলে। সিঙ্গল পেরেন্ট হলে তাদের বাচ্চাদের জন্য খুব ঝামেলা। বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েও সমস্যা হয় দেদার। ভারত কবে সভ্য হবে?
  • যোষিতা | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৮523650
  • সমস্ত পাসপোর্ট অফিসে*
  • যোষিতা | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩২523662
  • সেন্ট জেভিয়ার্স তো ক্যাথলিক মিশন ইস্কুল। সেখানে এরকম করলে, প্রিন্সিপালের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কথা বলে নিন। 
    অন্বেষা আপনি এই জিনিসগুলোকে লড়াই মনে করলে টায়ার্ড হয়ে যাবেন। পার্ট অফ লাইফ হিসেবে মেনে নিন, পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
    আরেকটা জরুরি কথা। পুত্রকে নিয়ে ওয়ান ওয়ে টিকিটে বিদেশ যাবার সময়ে আপনার পুত্রকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন আটকে দিতে পারে। অযথা ভয় দেখাচ্ছি না, ঘটনা সত্য। আইনে কী আছে আমার জানা নেই, তবে আমার ক্ষেত্রে দিল্লিতে আটকে দিয়েছিল আমার বাচ্চাকে। হয়ত আইনে কিসুই নেই। কিন্তু ভারতীয়রা কী পরিমানে একজন সিঙ্গল মা কে উত্যক্ত করতে পছন্দ করে, তা পদে পদে ভোগ করেছি। 
    এমনিতে আপনার সামনে খুব ভদ্র, কিন্তু ক্ষতি করতে ওস্তাদ। আমার মেয়ের পাসপোর্টের সময় কোলকাতার সিটি সিভিল কোর্টে একটা এফিডেভিটের জন্য জজ যে ভাষা ব্যবহার করেছিল তা ঘৃণ্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন