এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • খান জাহান লোদি - মুন্ডু কাটার অপূর্ব ছবি!

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুন ২০২৩ | ৪৭৯ বার পঠিত
  • ষোলোশো উনতিরিশেই সেপাইসালার খান জাহান লোদির সঙ্গে বাদশাহের সম্পর্কের অবনতি হয়। বাবরের হাতে ক্ষমতাচ্যুত লোদি বংশের উত্তরপুরুষ ছিলেন তিনি, জাহাঙ্গীর ওনাকে দত্তক নেন - বিয়ে দেন নিজের মেয়ের সঙ্গে। সালতানাতের গুরুত্বপূর্ণ সেপাইসালার হয়ে উঠলেন খান জাহান লোদি। শাজাহানের বিদ্রোহের সময় লোদি নিরপেক্ষ ছিলেন, খানিকটা ঢলে ছিলেন নূর জাহানের দিকে। সেটা বাদশাহ হবার পর শাজাহানের পক্ষে মেনে নেওয়ার কথা নয় তবুও কিছুদিন ঠান্ডা সম্পর্ক ছিল। প্রথম বুন্দেলা বিদ্রোহের পরপরই লোদি বিদ্রোহ করে আগ্রা থেকে খান্দেশ মালওয়ার আসিরগড় কেল্লায় চলে গেলেন। আফগানদের অনেক গোষ্ঠীই যোগ দেয় খান জাহান লোদির সঙ্গে, এক বৃহত্তর আফগান ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে বিশাল ফৌজের নেতৃত্ব দিতে শাজাহান নিজে রওনা হলেন দাক্ষিণাত্যে। পরে পাদশা নামায় লেখা হবে ‘শাহেনশাহ শাজাহানের তখতে বাসার পর তার (খান জাহান লোদি) বুদ্ধিহীন মাথা হয়ে পড়ল মিথ্যে আর শয়তানি প্রত্যাশা আর অলীক কল্পনার আড্ডা।’ সে মাথা তো ধড়ে থাকার কথা নয়! তারপর খান জাহানকে পালাতে হয় আহমদনগরে আর তারও পর পাঞ্জাবে। 

    পাদশানামার একটা ছবিতে সেপাইসালার মাধো সিংহ, বারহার সায়িদ মুজ্জাফর খান আর আব্দুল্লাহ খানের শাহী বাহিনীর হাতে বন্দী খান জাহান লোদির আর তাঁর দুই ছেলে আজিজ আর এমালের শর কালাম বা মাথা কাটার বিবরণ আছে। খুবই সুন্দর করে আঁকা, রংচঙে ছবিটা থেকে, এখনও জলজ্যান্ত কাটা মাথাগুলো থেকে. রক্ত বেরচ্ছে তো বেরচ্ছেই - মোট ছটা মাথা তার মধ্যে লোদির মাথা কাটা চলছে আর অন্যদেরগুলো সম্পন্ন। পাঁচটার একটা কাটা মাথা বর্শার আগায় গেঁথে ওপরে তুলে ধরা, অন্যগুলো, কোনটা গড়াগড়ি যায়, কোনোটা বা বীরত্বের হাতে ঝোলে। লোদির মাথা খানিকটা কাটা হয়ে ধড়ে লেগে হাঁসফাঁস করছে যে কোন সময় হাতে চলে আসবে আর তখনই কাটা মাথার ব্যাপারটা শেষ হয়ে অন্য কিছু আবার শুরু হবার প্রতীক্ষায়। ছবিটার বৈশিষ্ট্য হল এর নৃশংসতম বাস্তবতা। নিখুঁত সব ফিগার, একটু পেছন করে খান জাহান লোদির মাথাটা ছোট ধারালো ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে কাটছে ঝুঁকে পড়া দু জনে। মাথাটা একজন ধরে থাকে, অন্যজন ছুরিটা চালায়। আর রক্ত চুঁইয়ে ইতিমধ্যে কেটে ফেলা মাথাগুলোতে, ভনভন করে রক্তাক্ত মাছির দল। তাঁদের ঘিরে আছে সবাই, মাধো সিংহকে আলাদা করে চেনা যায় কমলা রঙের উজ্জ্বল পোশাকে। ঘিরে থাকা বেশির ভাগ যোদ্ধার মুখে নির্লিপ্তি কিন্তু কয়েকজন ভয়ার্ত। কেউ একজন বন্দী এখনো বাঁচার আশায় দু হাত ওপরে তুলে রয়েছে সুন্দর করে আঁকা চিনার গাছের তলায়, সে গাছ মোঘলদের প্রতীক, সালতানাতের প্রতীক। তার ছায়ায় আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধা। সে যোদ্ধার কী হবে কেউ জানে না ,সে সম্ভবত লোদির ছেলে ফরিদই হবে যে জীবিত ধরা পড়ে দেখানো হয়েছে। খান জাহান লোদির আধ কাটা মাথার পাশে স্বর্ণাক্ষরে লেখা, ''মাথা কাটা গেলে এরকম লাগে !'' যে সেপাই লোদির ওপর ঝুঁকে মাথা কাটছে তার পোশাকের ওপর লেখা ''শাজাহানী'' মানে শাজাহানের অভিজ্ঞ এক ডালকুত্তা আরকি যে যখন তখন এরকম মাথা ওড়াবে ! ছবি এঁকেছিলেন বিখ্যাত শিল্পী আবুল হাসানের ভাই আবিদ। ইরানীয় চিত্রকলার স্পেস ব্যবহারের সব নমুনা আছে এ ছবিতে - তিন স্তরে বিভক্ত প্রেক্ষাপট, উঁচু করে আঁকা দিগন্তের আভাস আর স্বর্ণাভ আকাশরেখা - সব। শিল্পী আবিদ লিখছেন - ''দরবারের দাস আবিদ আকবরাবাদে (আগ্রায়) ছবিটায় শেষ তুলির টান দিল"। ঘটনার তারিখও লেখা ষোলোশো একতিরিশের তেসরা ফেব্রুয়ারি। প্রেমের সমাধি তাজমহল বানানো আল - সুলতান আল আজম ওয়াল খান আল মুকাররম, আব্দুল-মুজাফ্ফর শাহাব উদ-দিন মুহাম্মদ, শাহিব-ই-সানি, শাহ জাহান ই পাদশাহ গাজি জিললুল্লাহ (ফিরদৌস-আশিয়ানি)র শাহী দাপটের আর এক কিত্তি এই ছবি। তবে এটা সম্পূর্ণ বিপরীত বীভৎস রসের যা মধ্যযুগে অত্যন্ত স্বাভাবিক। আবুল-ফাতেহ জালাল-উদ-দিন মুহম্মদ আকবরও বেয়াড়া সেপাইসালার আধম খানকে উঁচু থেকে ফেলে ঘাড় মটকে মারার একটা অপূর্ব ছবি আঁকিয়ে গেছেন। এজন্য কী আর করা ? নিজেদের জিভ দিয়ে লম্বা উপাধির খোলস ছাড়িয়ে আকবর, শাজাহান বলে ডাকাডাকি করা যেতে পারে - বাংলা জিভে যতটা আসে আরকি !
     
    উপল মুখোপাধ্যায়ের আলমগীর উপন্যাসের অংশ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জয় | ২৫ জুন ২০২৩ ১২:৪৭520706
  • রয়্যাল কালেক্সন ট্রাস্টের লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ উপল মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। ইস্টার্ন এনকাউন্টারস এর পুরো ক্যাটালগটিই অনলাইন। পুরো সোনার খনি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন