এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সমুদ্রের পোস্ট কার্ড

    debasis chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ মে ২০২৩ | ৩০২ বার পঠিত
  • মেঘ বলেছে যাব, যাব, রাত বলেছে যাই। সাগর বলে কূল মিলেছে, আমি তো আর নাই। মাথার মধ্যে হয়তো গানটা নরম, নরম ওয়াটার কালারের মতই গুলছিল, সেই ছোটবেলায় দেখা দীঘার সমুদ্রের পাড় জুড়ে এক নির্মেদ বৃষ্টি। সফেদ, সফেদ সাদা কুয়াশার মতন তখন হয়তো রং। সমুদ্রের ঘণ নীলের ডানা, হয়তো তখন সেই নীরব কিন্তু সুপার্ব এক সাদা রং। 
    আচ্ছা সমুদ্রের বুক জুড়ে যখন বৃষ্টি নামে তখনই কী আস্তে আস্তে ওরা মেলে? মানে কূল মেলে। সেই ছোটবেলায় সমুদ্রের ধারে বসে আমি আর মা- দুজনেই খুব ডাব খেয়েছিলাম। সব জল ডাব থেকে পাইপ দিয়ে টেনে গলায় পুড়ে ফেলার পর, আমি সেই সামুদ্রিক ডাবের গোল মত জায়গাটাকে, অর্থাৎ যেখান দিয়ে পাইপ পমপম করে প্রবেশ করে এক পিস ডাবের অন্দরে । সেই জায়গাটাকে কনকন করে নয় বেশ আলতো করেই ধরেছিলাম ডান কানের সামনে। 

    ভেবেছিলাম হয়তো প্রচুর সাউন্ড বা সমুদ্রের এক্কেবারে হাফ-চেনা, অচেনা সব গল্প এবার হৈ হৈ করে বার হবে রসহীন শুকনো ডাবের বুকের ভেতর থেকে। সে সময় মা একটা গান ধরেছিল। আলবাত ওটা ছিল রবীন্দ্র সংগীত। কিন্তু বিশ্বাস কর এখন একদমই আর মনে পড়ছে না। মা ঠিক কী গান ধরেছিল সমুদ্রের ওই খোলা হাওয়ারই সামনে!

    তবে এখন অন্য একটা কথা খুব মনে পড়ছে। ভেলোর থেকে স্টেট বাসটা তখন ছুটছে পন্ডিচেরি। ডেস্টিনেশান পন্ডিচেরির উদ্দেশ্যে। এই বছর চারেক আগের কথা আমার তখন লেট থার্টি। মায়ের হার্টের শিরায় তখন ছোট্ট একটা রক্তের টিলা হটানো হল । স্টেন্ট বসলো। ডাক্তার অভয় দিল। ফলে আমিও ছুটলাম। 

    পন্ডিচেরির সেই অটো চালকের কথাটা এখনও কানে বাজছে, সমুদ্রের কাছাকাছি অটোটাকে আনার পর ও বলল- এই জায়গাটা খুব অদ্ভুদ , একে জাপটে ধরলে অমৃত পাবে। লেকিন এ বাত ইয়াদ রাখনা দোস্ত, জিন্দেগিকি তলাসমে অকসর আদমি মওতকে আওর করিব আ যাতা হ্যায়। এরপর আবার সেই কালার্সের গল্প। 

    পন্ডিচেরির সমুদ্র জুড়ে অনন্ত নীল। দূরে মোবাইলের লংশটে নজুক বিকেলের নরম জলে একটা ডিঙ্গি নৌকো ভাসছে। কেউ কী পালাতে চাইছে ও নৌকো চড়ে। এদেশ থেকে অন্য কোনও এক রংএর পৃথিবীতে? আস্তে সামুদ্রিক বিকেল পুরনো হচ্ছে। সেই বৃদ্ধের হাত ধরে ঠিক চাঁদের বুড়ির মত দেখতে সেই বৃদ্ধা হয়তো হেঁটে যাচ্ছে, ভীষণ স্লো, হয়তো নিখাদ, নিখুঁত  স্লোমোশানেরই এক মায়া রাজ্যেরই দিকে। আর সমুদ্রের পাড়ের পাথরে জড়িয়ে যাচ্ছে নরম বিকেলের পন্ডিচেরির মন ভাল করা সব ছোট্ট, ছোট্ট ঢেউ। একটা পাখী সমুদ্রের মৃদু জল তরঙ্গের ওপর দিয়ে উড়ে গেল। হয়তো ওর ডানায় জড়িয়ে রইলো জল। সমুদ্রের জলের গন্ধ। 

    আসলে ভারতের এই এক টুকরো মৃদ ইউরোপ পন্ডেচেরির সমুদ্রে এবার সূর্য ডুববে। অনেক উদ্ধত চাবুক পিঠের ইশারাকে  পেরিয়ে, দেখলাম  ক্যামেরা হাতে দাঁড়ানো এক  নরম সুন্দরি। তার প্রেমিক ইটের মত বশে আছে একই জায়গায়। সূর্য এখন জ্যোৎস্নার মত তরল , আশ্চর্য্য দিলখুশ এক সোনালি রং। মেয়েটার ক্যামেরা এখন ফোকাস করছে না কোনও কিছুকেই। শুধু দৃশ্য। তোমায় দেখা, এখন এই মুহূর্তে জীবন। 

    মাঝে, মাঝে মনেহয় জীবনের এক্যুরিয়াম থেকে কয়েক মুহূর্ত অন্য কোনও জীবনে পালানোর সুরভিত এক সুরঙ্গেরই নাম হয়তো এই দৃশ্য যাপন। ফলে ক্যামেরাকে এখানে অলবিদা বলতে হয় আর শুধুই বিপন্ন বিস্ময়ে জড়িয়ে যেতে হয় আনকোরা সেই মাদক মুহূর্ত গুলোরই সঙ্গে। 
    এরপর চাঁদ নয়। সমুদ্র জুড়ে মরা আলো। রিচার্ড ইটনের বইএ দেখা প্রাচীন সেই দূর্গ গুলোর দেওয়ালের মতই মরা খশখশে এক আলো।  এ আলোতে বসেই হয়তো কোনও রাজার গলা কাটার ষড়যন্ত্র এঁকেছিল কোনও সেনাপতি। শাহি হারেমের কোনও বেগম বা রাণী দিয়েছিল স্পনশারসিপ সেনাপতিকে তার কাজকে অনজাম দেওয়ার। 

    তবে এই মরা আলোর সমুদ্রে আমি এখন পন্ডিচেরির জেলে বস্তির সমুদ্রকে দেখছি। বস্তির রাস্তার ধারে দেখছি পাথরের এক বৃদ্ধা দেবীর  মূর্তি। কালো আলোয় দেখছি ঘন কালো এক মূর্তি। লোকাল বিশ্বাস হল যে শিশুরা সমুদ্রে হারিয়ে যায়। এই মা তাদের আবার বাড়ি ফিরিয়ে আনে। সমুদ্রের রং এখন বিষণ্ণ। জেলে বস্তির সামনের জলে কারা যেন ডানা ঝাপটালো। তীব্র শোর তুলল। দেখলাম কতগুলো বাচ্ছা ছেলে বুকে টায়ার লাগিয়ে ওই নামকিন কালো পানিতে সাঁতার শিখছে। হাত পা ছুঁড়ছে। পরিস্কার মনে পড়লো ছোটবেলায় কান লাগানো ওই ডাবের ভেতর থেকেও এভাবেই হৈচৈ হৈহৈএর সুররা এসেছিল। সমুদ্রের শব্দ গুলো এবার ছবি হচ্ছে। আস্তে , আস্তে একটা পোস্টকার্ড হয়ে উঠছে গোটা সমুদ্র। পন্ডিচেরির আকাশে এবার বরফের মত ফ্যাকাশে এক টুকরো চাঁদ। একটা পাখী ক্রমশ অন্ধকারে হারিয়ে গেল , ও হয়তো পোস্টকার্ডময় সমুদ্রে মিশে গেল আরও গভীরে। সামুদ্রিক চাঁদের গভীরতর গভীরে। 
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন