এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • #হনুমানচালিশা_এবং_সীতাউদ্ধার

    Tanima Hazra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ৩১১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • পরি'র ছবি দেখলে যেটা সবচে আগে চোখে পড়বে সেটা হলো ওর কপালের ডগডগে সিঁথিভরা সিন্দুর। Facebook,WhatsApp এর প্রোফাইল পিকচারে অমন লাল চওড়াপাড় টাঙ্গাইল আর সিন্দুরচর্চিত চেহারা দেখে ওর আভ্যন্তরীণ আহ্লাদ আর সুখ এক্কেবারে প্রকট। দুজায়গাতেই ওর মাঙ্কিক্যাপ পরা বর ওর পাশে। 

    ফেসবুক photos ভর্তি হাজারো কিসিমের ঠাকুর কেউ জিভ বার করে, কেউ না বার করে বরপ্রদা ভঙ্গিতে অথবা ওর নাতনীর ছবি বা ভিডিও,  সে হামা দিচ্ছে, সে হাসছে, সে নাচছে অপটু পায়ে, সে আবৃত্তি করছে আধো আধো গলায়, সে পাকা পাকা কথা বলছে কোনো অদৃশ্য প্রশ্নকর্ত্রীর উত্তরে। 
    ফেসবুকে আমাকে খুঁজে পেয়ে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। গ্রহণ করেছি। তখন মেসেঞ্জারে ফোন নম্বর দেয়। বলে সেভ করে রাখো। আমি ফ্রি হলে একদিন তোমার সাথে কথা বলব। 

    একদিন দুপুরে আচানকই ফোন এলো পরির। বল্ল, কেমন আছো মুন্নাদি, সেই একইরকম দেখতে আছো তুমি, আমিই খুব মোটা হয়ে গেছি গো। এখনো মিষ্টি পেলে ছাড়তে পারি না। 
    বল্লাম, কেমন আছিস বল, 
    উচ্ছ্বসিত গলায় বল্ল, খুব ভালো আছি এখন মুন্নাদি, ঠাকুরের কৃপায় শাশুড়িও মারা গেছে চার বছর হলো, বেঁচে থাকতে বহুত জ্বালিয়েছে, ছেলের কানে চুকলি করে করে বিষ ভরে রাখত সারাদিন আর আমাকে বকুনি খাওয়াতো। মা মরে যাবার পরে ছেলে মুঠোয় এসেছে মা বটুকেশ্বরীর কৃপায়। 

    মেয়ে বুল্টির  খুব ভালো বিয়ে দিয়েছি। শশুর শাসুড়ি কিচ্ছুটি নেই। এক্কেবারে একার সোংসার। মেয়েও আমার মন্টেসোরি করে ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলে দিদিমুণি। 
    ষোলো সোমবার করেছিলাম নাতি হবার জন্যে, কিন্তু যাহোক কি কপাল ছেলে বিয়োনো আমাদের মা মেয়ে কারুর ভাগ্যে নেই। 
    অবশ্য খুব  ফুটফুটে নাতনী হয়েছে গো, এক্কেবারে প্রাণজুড়ানো। আর কি পটকন পটকন কতা সারাট্টাদিন। আমার তো নাতনী সামলেই দিন কেটে যায়। সকালে ইস্কুলে যাবার আগে দিয়ে যায় আমার কাছে আর বিকেলে ফেরার সময় নিয়ে যায়। 

    বুল্টির বাবাও তো রিটেয়ার করলো গেলো বছরে।  আমি ওমনি বুদ্দি করে পকিয়ে পাকিয়ে এক জোড়া মানতাসা গড়িয়ে নিয়েছি। এমনিতে খুব নরম মন, শুদু মায়ের পাল্লায় পড়েই এককালে বকাঝকা, চড়চাপড় দিতো। এখন তো বয়েস হচ্ছে আস্তে আস্তে, বুঝছো না, আমার উপরেই নির্ভর এখন। 

    সারাজীবন টক ছাড়া শুক্কুরবার করেছি হুঁ হুঁ বাবা, মা সন্তোষী মুখ তুলে তাকাবে না তাই কি হয়? 
    এতো ঝঞ্জাট পেরিয়ে কী ভীষণ তৃপ্তি এখন ওর গলায়। কিন্তু এই জয়কে ও ভাগ্যের আর তপস্যার জয় ভাবছে। আর আমাকে ভাবছে ওর অনুকম্পার পাত্রী। 

    তাই সেই ছোটবেলার মতোই সরল গলায় বল্ল, তোমার জন্যে ভারি খারাপ লাগে জানোতো, জামাইবাবু সেই কত্তদিন আগে চলে গেছেন, তখন তোমার কিই বা বয়েস, মেয়েটারও ডিভোর্স হয়ে গেল, ছেলের বৌটারও একটা বাচ্চা কাচ্চা হলোনা এখনো অব্দি, ছোটবেলায় আমি যখন শিবরাত্তির, ইতু, সন্তোষী মা করতাম তখন কত্ত করে তোমাকে বলেছি বলো, একটি বারও তুমি আমার কথা কানে নাওনি।  তা ছেলেমেয়ে তো খুব ভালো চাগরিবাগরি করে শুনেছি কিছু গয়নাগাটি গড়ালে? 

    এই শোন মুন্নাদি, এইবার মঙ্গলবার মঙ্গলবার হনুমান চল্লিশা ধরো তো, হাতে নাতে ফল পাবে, বচ্ছর ঘুরতে না ঘুরতে নাতির মুখ দেখবে। 

    আমি পরিকে ছোটবেলা থেকে চিনি বলে আমি জানি ও এসব কথা আমাকে কষ্ট দেবার জন্য মোটেই বলছে না, আমার নিতান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই বলছে।

    কিন্তু ও যে পথটা হাঁটার জন্য বেছেছিল আমি তো তা বাছিনি বলে ওর আপশোসের সীমা ছিল না। 

     আমার দুর্গম পথে আমার পাশে ওর মতো  কোনোদিন কোনো শিব, বটুকেশ্বরী বা সন্তোষী ছিল না। আমার মেয়ে আত্মমর্যাদাকে বড় করে দেখেছিল বলে বেরিয়ে এসেছিল সব বিলাস-ব্যসন গহনাগাটি সরিয়ে রেখে, তারপর অনেক লড়াই করে নিজের পায়ের তলার শক্ত মাটি খুঁজে পেয়েছে নিজের যোগ্যতায়। 
     আমিও তার জন্য কোনো পিতৃমাতৃহীন অনাথ পাত্র খুঁজে পেয়ে তার শর্টকাট সুখের সন্ধান করতে যাই নি কোনোদিন। 
    নাতির মুখের চেয়েও আমার বৌমার প্রতিষ্ঠিত তৃপ্ত মুখখানি দেখে আমার অধিক সুখ হয়। 
    ছেলে বৌমা দুজনেই স্বাভাবিক প্রজননক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কিছুদিন বাদে  ওরা যে কোনো হোম থেকে একটি অনাথ শিশুকে দত্তক নেওয়ার কথা ভাবছে এবং আমারও তাতে বিরোধিতা নেই, বরং উৎসাহ ও সায় আছে এসব কথা পরিকে আমি বলিনি। জানি পরি আরও উৎকন্ঠিত হবে আমার ঘনায়মান ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এসব উৎপটাং কথা শুনে। 

    শুধু বল্লাম- ধুর!  আমার মতো হনুমানের হাতে আবার মানতাসা মানায় নাকি?  

    ও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জিভ কেটে চুকচুক করে বল্ল, ছিঃ ছিঃ, ওসব অলুক্ষুণে কথাবাত্তা বোলো না মুন্নাদি। হনুমান কি মেয়েছেলে যে মানতাসা পরবে?  হনুমান তো ব্রহ্মচারী। 

    একজন ব্রহ্মচারীকে জপ করে বাচ্চার জন্মগ্রহণ বিষয়টা নিয়ে আমি গুরুতর দুশ্চিন্তায় পড়লাম, তাই আবার নিজস্ব চিরাচরিত  অকালকুষ্মাণ্ডতায় ডুবে গিয়ে ভাবতে বসলাম, হনুমান যদি ব্রহ্মচারী তবে হনুমানদের যুগে যুগে এতো বংশবৃদ্ধি হয় কী করে।
     ওহ! বুঝেছি। যে হনুমান পূজ্য তিনি পুরুষ হনু, স্ত্রী হনু নন এবং তিনি কদাচ এসব নারীঘটিত লটঘটে নেই। 
    আচ্ছা স্ত্রী হনুমানদের পুজো কবে থেকে চালু হবে?  

    আমার কল্পনাপ্রবণ মন মানসচক্ষে দেখতে পেলো একটি মহিলা হনুমান নিজের ল্যাজে আগুন লাগিয়ে স্বর্ণলঙ্কায় দাউদাউ আগুন লাগিয়ে দিলো আরেক মেয়ে সীতাকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার জন্য। 

    বল্লাম, চল পরি, যাত্রাপালা শুরু করি,তুই সীতা আর আমি মেয়ে হনুমান। দাঁড়া আজ দুপুরে জমিয়ে বসে একটা নতুন হনুমান চালিশা লিখি দাউদাউ আগুনমাখা। 

    সব্বাই সুর করে পড়বো সেটা। প্রমিস। সত্যযুগ থেকে যে কাজটা pending পড়ে আছে এযুগে সেটা মিটিয়ে সত্যিকারের সীতাউদ্ধার করেই ছাড়বো এবার।

    ।। ত নি মা।।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন