এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পিরিতি 

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ৪৭১ বার পঠিত
  • প্রথম দেখায় প্রেম হয় কিনা জানি না। আমার জানার কথাও না। কারণ সেভাবে কখনও হয়তো কাউকে দেখি নি। সিনিয়র, জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধবরা যে কাউকে প্রথম দেখেই প্রেম করেছে বা করে এমন কেউ বলে না। তাদের কথা হল, প্রেম নয়, তবে ভালো লাগা তৈরি হয়। আর এই ভালো লাগা থেকেই ধীরে ধীরে ভালাবাসা, প্রেম সব হয়। সব কথা শুনে বা দেখে আমার মনে হয়, প্রথম দেখাটা একটা অনুভূতি। আর এই অনুভূতিটা অবর্ণনীয়, অলিখনীয়, অকথনীয়। শুধু মাত্র অনুভব। এটা অনুভবেই সম্ভব। আর এই অনুভবটা প্রধানত একজনের কাছে হয়, দুজনের কাছে হ‌ওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে একজনের ক্ষেত্রেই বেশি হয় অর্থাৎ একতরফা। 

    আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম ঠিক এইরকম‌ই একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনে। তোমার সাথে কথা হয়নি ঠিক‌ই, কিন্তু তোমার কথা বলার যে ধরণ ছিল সেদিন, তা আমার কাছে একটা আলাদা রকম হয়েছিল। আর এই স্বতন্ততাই আমাকে তোমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছিল। আমার দুটি চোখ শুধু তোমাকে‌ই খুঁজছিল। কিন্তু তুমি মুহূর্তেই চোখের আড়াল হয়ে যাও। তোমার ওই কথা বলার ধরন আমাকে বেশ অবাক করেছিল। তারপর আমি তোমার সম্বন্ধে জানার জন্য বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যতটুকু জানতে পারি, ততটুকুই আমার জানা - মেয়েটা দেখতে শুনতে বেশ ভালো, একটু মুখে মুখে কথা বলে, ফাঁকি দেওয়া একটু অভ্যাস আছে এইসব জানতে পারি।

    একদিন প্রতিদিনের মতো আমি ঘরে বসে আছি। তারপর আমি লক্ষ্য করলাম তুমি বার বার যাতায়াত করছো, হয়তো কিছু বলবে! কিন্তু কথা বলার সাহস পাচ্ছো না। আর আমি এইসব দেখে ভাবলাম তোমার হয়তো কিছু অসুবিধা হয়েছে নাকি, তাই তোমাকে ডাক দিলাম। সেদিন‌ই তোমার সাথে আমার প্রথম কথা বলা। তোমার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছিল সেদিন। এক দুটি কথার মধ্যেই তুমি অনেক কিছুই বলেছিলে। সাধারণত মেয়েরা মেয়েদের সম্বন্ধেই একটু বেশি কথা বলে আমি তা বুঝতে পারলাম।

    তারপর একদিন ফেসবুকে তোমার নাম ধরে সার্চ করে তোমাকে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট সেণ্ড করলাম। তুমি কিছুক্ষণ পরেই একসেপ্ট করে নিলে। তারপর শুরু হলো মেসেঞ্জারে আমাদের নিয়মিত বার্তালাপ। ক্রমে মেসেঞ্জার ফোন, তারপর ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া এবং কথপোকথন। 

    তোমার সাথে যখন আমার ফোনে কথা হয়, তখন আমি বুঝতে পারি আমার শরীরে একটা শিহরন বয়ে যায়। সেই যে অনুভূতি, এটা শুধু তোমার সাথে কথা বললেই হয়। অন্যদের ক্ষেত্রে কিন্তু হয় না, কেন হয় না, তা আমি নিজেও জানি না। তোমাকে আমি এটা যখন বলতে যাই, তুমি হয়তো ঠিক বুঝতে পারো নাই, বা আমিও হয়তো ঠিক করে বোঝাতে পারি নাই। তারপর তোমার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে তোমার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি বুঝতে পারিনি। তোমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করা, মাঝে মাঝেই তোমার ছবি দেখে তোমাকে অনুভব করা এই সব কিছুই আমার ভালো লাগতে শুরু করে। 

    আমি তোমাকে একান্ত আপন করে কাছে পেতে চাই। তোমার সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চাই, তোমার হাতে হাত রেখে হাঁটতে চাই। সেইজন্য একদিন তোমাকে দেখা করার জন্য বলি এবং তুমি দেখা করার জন্য হ্যাঁ বলাতে আমি খুব খুশি হ‌ই। তারপর আমি তোমাকে নিয়ে সেই জায়গায় যাই, যেখানে তোমার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারবো, তোমার সাথে একটু হাঁটতে পারবো, তোমাকে কাছে থেকে দেখতে পাবো। কিন্তু যখন তুমি পাশে এসে দাঁড়ালে তখন‌ই আমি সবকিছু ভুলে যাই। না তোমার হাত ধরতে পারি, না তোমার চোখে চোখ রেখে ঠিক করে কথা বলতে পারি। কেমন যেন সব অগোছালো হয়ে যায়। এক দুই বার তোমার চোখের দিকে তাকালে তোমার চোখ দুটি আমার খুব ভালো লাগে, ভালো লাগে তোমার মিষ্টি মধুর হাসি। তোমার মুখের সৌন্দর্য আমায় ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে। মনে এক শান্তি অনুভব হয়। কিন্তু খুব একটা বেশি সময় তোমার পাশে বসে থাকতে পারিনি, তোমার অসুবিধা থাকাতে। তুমি যত‌ই আসার জন্য বলো, আমি তত‌ই বলি আর একটু থাকি। তারপর একরকম বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হয়। আমি জানি না এই দেখাই আমাদের শেষ দেখা হবে, এই কথা বলাই আমাদের শেষ কথা বলা হবে!

    তারপর তোমাকে ফোন করলে তুমি ফোন রিসিভ করতে না, মেসেজ করলে রিপ্লাই দিতে না। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি হলো। আমি কি ভুল করলাম। তারপর আসলো সেই রাত, যে রাত আমার সব স্বপ্ন গুলো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল, যে রাত আমার দুচোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, যে রাত আমার ভালো থাকাকে নষ্ট করেছিল আর সারাজীবনের জন্য আমাকে একা করে দিয়েছিল, আমার হাসিখুশি আলোকময় জীবন অন্ধকারে ভরে দিয়েছিল। তারপর তুমি শেষ বারের মতো যখন ফোন করে বললে- 'আমি তোমাকে পছন্দ করি না। তোমাকে আমি চিনি না জানি যে তোমার সাথে আমি কথা বলবো। আর তোমার সাথে প্রেম করা তো দূরে থাক। আমি তোমার থেকে অনেক সুন্দর একটা ছেলের সাথে প্রেম করি এবং আমি তাকেই বিয়ে করবো।' আমি নিঃশব্দে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম এবং বললাম - 'তুমি যেমনটা বলবে তেমনই হবে। তুমি যেখানে ভালো থাকবে, যার কাছে সুখে থাকবে সেখানেই থাকো। ভালো থেকো। আমার কোন আপত্তি নেই।' তারপর সে বললো- 'দেখো কাউকে ভালো বাসলে তাকে মুক্ত করতে হয়, জোর করে কোন কিছু পাওয়া যায় না। আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে পাবে।' আমি বললাম- 'তোমার মুখে এসব মানায় না, আমি তো অনেক ভালো চাইনি, শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম। আর যেখানে তোমাকে পেলাম না, সেখানে অনেক ভালো কোন মানে হয় না।'... এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম। তারপর আর তার সাথে কথা হয়নি। 
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | 194.223.28.116 | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১৫515017
  • আদি রন্জন্দার চিন্তার কারণ নেই। এই খাজা লেখাকে কেউ আপনার বলে গুলিয়ে ফেললে সত্যি কিছু বলার নেই। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন