এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জনক রাজ্য। রামায়ণের সংকেত রহস্যঃ পর্ব ৪ 

    Nilanjan Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ নভেম্বর ২০২২ | ৫৭০ বার পঠিত
  • নিমি ছিলেন রাজা। একবার তিনি যজ্ঞ করবেন বলে মনস্থ করলেন। যজ্ঞ মানে আদান প্রদান। কেউ কিছু দেবে আর তার বদলে কিছু পাবে। সাধারণ অর্থে ব্যবসা। ব্যবসায় লাগে দালাল। দালাল দুই পক্ষকে মেলায়। পুরোহিত হলো সেই দালাল। পুরের হিত করে যে। পুর মানে নগর বা পুর বা উৎপাদিত দ্রব্য। খাবারে তৈরী করা পুর পোরা হয়। পুরুষ তার দেহের পুর (বীর্য) স্থাপন করে নারী দেহে। নিমি তার পুরোহিত ঠিক করেছিলো বশিষ্ঠমুনিকে। মুনি হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ন ( বঙ্গীয় শব্দকোষ মতে) হলো বিত্ত আর ম হলো মিত বা ক্ষুদ্র ভাব। ছোট পুঁজিপতি মুনি দুই পক্ষকে ( পুঁজিপতি আর উৎপাদককে) মিলিয়ে দিয়ে সফল ব্যবসা স্থাপন করবে। নিমি এদিকে দেখলো বশিষ্ঠ আসতে দেরী করছে। তখন নিমি অন্য পুরোহিত নিয়োগ করলো। তাইতে রেগে গেলো বশিষ্ঠ। বশিষ্ঠের অভিশাপে মারা পড়লো নিমি। এই নিমির দেহ থেকে মুনিরা জন্ম দিলেন মিথির। অর্থাৎ আগের রাজাকে সরিয়ে তারই মতো আর এক জনকে রাজা করা হলো। সে হলো সফল রাজা যে সমাজের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সন্তুষ্ট রাখলো। মিথির নামেই রাজ্যের নাম হলো মিথিলা। মিথির পুত্র হলো জনক অথবা মিথির আর এক নাম জনক। এর পর থেকে যারাই রাজা হলো তার নাম হলো জনক। 

    সীতার বাবা ছিলেন সীরধ্বজ জনক। তার ভাই কুশধ্বজ। সীর মানে সূর্য। সূর্য হলো যৌথ সমাজের প্রতীক। কুশ হলো তীক্ষাগ্র তৃণ বিশেষ। কু যেখানে শুয়ে থাকে তা হলো কুশ। এই কুশের অগ্রভাগ তীক্ষ হয় বলে পায়ে বেঁধে। চাণক্য এই কুশ পা থেকে বার করতে করতে শপথ নিয়েছিলেন নতুন রাজা স্থাপনের। এই জনক ছিলেন জ্ঞানী। তাঁর সভায় জ্ঞানীরা আলোচনা করতেন, তর্ক করতেন। দশরথ ছিলেন ধনবান আর জনক ছিলেন জ্ঞানবান। 

    মিথির সময় থেকে সীরধ্বজ জনকের মাঝে ৫৬ জন জনক ছিলেন। জনক মানে জন করে যে। জন করা মানে মজুরের কাজ। বলে জন খাটছে। মানে মজুরীর বিনিময়ে কাজ করছে। আগে যৌথ সমাজে সকলে কাজ করতো। পরে নিজে কাজ না করে অন্যকে মজুরী দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেওয়া শুরু হলো। এটা হলো ব্যক্তি মালিকানার প্রথমিক রূপ। মজদুর কাজ করবে কিন্তু উৎপাদিত পণ্যে তার অধিকার নেই। সে কেবল মজুরী পাবে। লাভ পাবে মালিক। এই মালিক হলো পুঁজিপতি। 

    জনক তাহলে প্রথম রাজা যে জন খাটা বা মজদুর প্রথা শুরু করলেন। শুরু হলো ধনতন্ত্রের প্রাথমিক পথচলা। জনকের কাছে ছিলো শ্রমিক আর দশরথের কাছে ধন বা পুঁজি। এই দুই রাজা মিলিত হলো রাম-সীতার বিয়ের মাধ্যমে। 

    সীতাকে পাওয়ার শর্ত ছিলো হরধনুতে গুণ পরাতে হবে। রাম হরধনু ভেঙে দিয়ে ঘোষনা করে দিলেন যৌথ সমাজের সমাপ্তি। কেন এমন বলছি? এই হর বা শিব কে? শ্রদ্ধেয় কলিম খানের মতে জ্ঞানের শিখা বহনকারী হলো শিব। শিব হলো বিজ্ঞানী যে আবিষ্কার করে। কিন্তু আবিষ্কার করলেই তা সমাজের কাজে লাগানো যায় না। কলিম খান বলেছেন দক্ষ হলো সেই সব ব্যক্তি যারা বার বার একই কাজ করে আবিষ্কারকে সমাজের কাজে লাগায়। শিব আবিষ্কার করবে দক্ষ তাকে কাজে লাগাবে। এই ভাবে সমাজ চলবে। যৌথ সমাজে শিবকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলো। বিজ্ঞানী অষুধ আবিষ্কার করলো আর ডাক্তার তাকে রোগ সারাতে রুগীদের দিতে শুরু করলো। শিব আর দক্ষ। জ্ঞানীর মর্যাদা সবার ওপরে। ভারত বরাবরই জ্ঞানীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। সমস্যা শুরু হলো যখন দক্ষ ভাবলো নতুন আবিষ্কারের আর প্রয়োজন কোথায়। যা জানি তা দিয়েই সমাজ বেশ চলছে। তাই দক্ষই পাক সর্বোচ্চ স্থান। শুরু হলো ব্রাহ্মণ আর বৈশ্যের মধ্যে সংঘাত। যৌথ সমাজ আর ব্যক্তিগত মুনাফার মাঝে সংঘাত। এই শিব হলো যৌথ সমাজের নেতা। ধনু হলো ভারসাম্যের প্রতীক। ঠিক মতো গুণ পরাতে না পারলে ধনুক কাজ করে না। ঢিলে হলে তীর চলবে না, শক্ত হলে ধনুক ভেঙে যেতে পারে। যৌথ সমাজের এই ভারসাম্য ভাঙলেন রাম। মিত্রতা তৈরী হলো মিথিলা আর অযোধ্যার। রাবনও চেষ্টা করেছিলেন হর ধনুতে গুণ পরাতে। কিন্তু পারেননি। অর্থাৎ লঙ্কার সাথে মিথিলার মিত্রতা করার চেষ্টা হয়েছিলো কিন্তু শেষ অবধি তা হয়নি। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৩:৫৩513874
  • হ্যাঁ, হ্যাঁ, তারপরেই তো সেই দক্ষেরা বিতাড়িত হয়ে মিশরে চলে গেল। পিরামিড টিরামিড সব বানাল। ইমহোটেপের আসল নাম তো ছিল অমরশতক। ঃ-)
  • / | 216.105.168.26 | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৪:১১513875
  • ব্যুৎপত্তি পুরাহিত শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, পুরা যার অর্থ "সামনে", এবং হিত, "স্থাপিত"। শব্দটি পণ্ডিত শব্দের সমার্থকভাবেও ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ "পুরোহিত"।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন