এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মাতৃঋণ

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ নভেম্বর ২০২২ | ৪১২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • মাতৃঋণ
    ­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­_________________

    বাড়ির কাছে এসেই ছাতিম ফুলের গন্ধ পেল অর্ক। কেন পেল কে জানে। কারণ এখানে তো কোনো ছাতিম গাছ নেই। যেটা ছিলো সেটা গঙ্গার ধারে, সেখানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম সিগারেট খেত অর্ক। বাড়িতে অবশ্য অর্ক  ঢুকবে না। বাড়িতে থাকার জন্য সে আসে নি। কেন এসেছে কে জানে। মা মারা গেছে তার, এটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু তার জন্য হায়দ্রাবাদ থেকে না এলেও চলত। ইন ফ্যাকট, অর্কর কেরালিয়ান বান্ধবী লতা তো আসতে বারণই করেছিল। না এলে অন্তত এখন যে একটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছে অর্কর, বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।তবে কাজ কিছু আটকে থাকত না। মায়ের পোস্ট মর্টেম, সৎকার এসব সরকার থেকেই করেছে। মোটা একটা খরচ এজন্য দিতে হয়েছে অবশ্য অর্ককে। তবু এসেছে অর্ক। সরকারী পোর্টাল থেকে মেসেজ আর ই মেল দুভাবেই জেনেছিল অর্ক তার মায়ের মৃত্যুর কথা। অস্বাভাবিক মৃত্যু, মানে খুন আর কী। জানার পর সে কিছুটা যন্ত্রচালিতর মতই উড়ানের টিকিট কেটে ফেলেছিল। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে ইন্টারসিটি  ট্যাকসি ধরে তার জন্মভূমি এই মফস্বল শহরে।

    শহরটাকে অবশ্য এখন আর সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। গোটা শহর জুড়ে এখন অজস্র নার্সিং হোম আর ডায়গোনিস্টিক সেন্টার। সেখানে অপেক্ষারত অসুস্থ মানুষরা শহরের বাইরে থেকে আসে বলে শুনেছে অর্ক। এই বাইরে বলতে কী বোঝায় সেটা অর্ক জানে না। ও বহু বছর হায়দ্রাবাদ আর দেশ বিদেশের মেট্রোপলিটান শহরের বাইরে কোথাও যায় নি। তবে এটুকু বুঝেছে অর্ক যে মানুষের অসুখ বেড়েছে।

    নিয়মমাফিক একবার পুলিস স্টেশনে গিয়েছিল অর্ক। ওসির বয়স বেশি নয়। একটা ছোটো কিন্তু ছিমছাম চেম্বারে বসে ল্যাপটপে ভিডিও গেম খেলছিল হালকা দাড়িওলা তরুণটি। একবার অর্ককে দেখে নিয়েই আবার খেলায় মন দিল। খেলতে খেলতেই সে জানাল যে পুলিস এখন কোনো ব্যক্তিগত অপরাধের ব্যাপারে কিছু তদন্ত করতে পারবে না। কারণ রাজনৈতিক অপরাধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতে জেলগুলো ভরে গেছে। তবে অর্কর যদি কারো ওপর সন্দেহ হয় তবে পুলিসকে কন্ট্র্যাক্ট দিতে পারে। পুলিস ‘এনকাউন্টার’ করে দেবে। এরজন্য অর্কর একটা মোটা পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে। অর্ক অবশ্য প্রাইভেট কোনো এজেন্সি দিয়েও কাজটা করাতে পারে। কিন্তু তাঁদের রেট আরো বেশি।

    সন্দেহ টন্দেহর কিছু নেই। খুন যে রাকেশ করেছে এটা দিনের আলোর মত সত্য অর্কর কাছে। রাকেশ মায়ের গাড়ি চালাত দীর্ঘদিন। মা ছিল রিটায়ার্ড হেডমিস্ট্রেস। টাকা পয়সা ভালোই ছিল। রাকেশ মাঝে মাঝেই টাকা ধার করত মায়ের কাছে।শোধ না দিয়েই আবার ধার করত। এসব নিয়ে মা মাঝে মাঝে ফোনে ইনিয়ে বিনিয়ে বলত অর্ককে। অর্ক বলত যে গরু দুধ দেয় দেয় তার লাথি তো খেতেই হবে। রাকেশ তো শুধু ড্রাইভার নয়, মায়ের সহায়ক, একমাত্র অবলম্বনও বলা যেতে পারে। মানে, মা যে বেঁচে আছে, মানে বেঁচে ছিল সেটা রাকেশের সাহায্যেই। অর্ক ঠিক করল একবার রাকেশের সঙ্গে দেখা করবে।

    রাকেশের কাছ থেকে ফোন নং নিয়ে অর্ক ওর বাড়িতে পৌঁছে গেল। বাড়ি মানে বস্তি। মা যতই ভাল মাইনে দিক না কেন ওই মাইনেতে এখন এই শহরে এর থেকে ভাল জায়গায় থাকা সম্ভব নয়। অনেক দিন বাদে রাকেশকে দেখল অর্ক। চুলে হালকা পাক ধরেছে ওর। বাড়িতে জায়গা নেই বলে কিছু দূর হেঁটে একটা বাচ্চাদের পার্কের বেঞ্চে বসল দুজনে। এখন সন্ধে হয়ে এসেছে। পার্কে ভিড় তেমন নেই। অর্ক রাকেশকে একটা সিগারেট দিয়ে নিজেও একটা ধরাল।তারপর কাশির দমকটা আটকে বলল, মাকে খুন করে দিলে?
    রাকেশ মিটি মিটি হাসছিল। বলল, দিলাম।
    কোনো প্রয়োজন ছিল কী?
    ছিল। আমার ভীষণ টাকার দরকার ছিল। ওনার তো অনেক টাকা। তাছাড়া ওঁর বেঁচে থাকার আর কোনো মানে ছিল না। একথা উনি নিজেই অনেকবার আমায় বলেছেন।
    তুমি জানো আমি তোমাকে এনকাউন্টার করিয়ে দিতে পারি।
    কেন করাবেন? আমি কী অন্যায় করেছি? উনি তো বেঁচে থাকতেই মরে ছিলেন। মাঝখান থেকে আমার পরিবারের চারজন বেঁচে থাকব ওনার টাকায়। এটা কি বেশি ভাল না?
    কেন তোমাদের বেঁচে থাকার অন্য কোনো পথ নেই?
    না। আপনার মা যে মাইনে দিতেন তা অন্যদের চেয়ে বেশি। কিন্তু তা দিয়েও মাসে দু সপ্তাহের বেশি চালাতে পারতাম না। আমার বড় মেয়ে একটা বারে গান গাইত। কিন্তু ভোকাল কর্ডে একটা প্রোবলেম হওয়ায় ওর কাজটাও চলে গেছে। বলছিলাম না আমার ভীষণ টাকার দরকার।
    তাই যে তোমার উপকার করেছে তাকেই খুন করে দিলে?
    দিলাম। এখনও বলছি ভুল করি নি। আমাদের বয়স কম। আমাদের চারজনকে বাঁচতে হবে। আমাদের টাকার দরকার। ওনার টাকা আছে। কিন্তু বাঁচার ইচ্ছা বা দরকার, কোনোটাই তেমন বেশি নেই। এখন আমি বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। আপনার মায়ের বাড়িটা দখল হয়ে যাবে।বাড়িটা যে সিণ্ডিকেট নেবে তাদের কাছেও বেশ কিছু টাকা পাবো।

    অর্ক উঠে পড়ল। ডেটিং অ্যাপটা খুলে দেখল। না  লোকেশন চেঞ্জ করেও ম্যাচিং কাউকে পায় নি। এইজন্যই এই শহরগুলোকে মফস্বল বলা হয় কিনা কে জানে। পার্কের গেটের কাছে যখন সে পৌঁছে গেছে তখন শুনতে পেল রাকেশ চেঁচিয়ে বলছে, ওনাকে বাঁচিয়েও রেখেছিলাম কিন্তু আমি।

    পার্ক থেকে বেরিয়ে এসে অর্ক হায়দ্রাবাদে ফোন করল লতাকে। এনকাউন্টারের বরাতটা পুলিসকে দেবে কিনা জানতে। টাকার অংকটা শুনে লতা আঁতকে উঠল। বারবার করে বারণ করে দিল অর্ককে। যাক, অর্ক এতক্ষণে অস্বস্তিটা কাটিয়ে উঠতে পারল। এবার সে নিশ্চিন্তে ফিরে যেতে পারবে হায়দ্রাবাদ। আর এই শহরে আসবে না সে।
    ছাতিম গাছের গন্ধটা কেমন ঝিম ধরা নেশা ছড়ানো। ফেরার সময় বাড়িটার পাশ দিয়ে যাবার সময় খেয়াল করল অর্ক। কিন্তু এবার গন্ধটা পেল না সে। তখন ঘনায়মান মেঘের পাহাড়ে চাঁদ অস্ত যাচ্ছে। অর্কর শরীর জুড়ে হিমেল পরশ। 
    অবশেষে শীত পড়ল।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ব্যাসদেব | 2405:8100:8000:5ca1::3d:2397 | ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৩513847
  • এইসব খুন রেপ জাস্টিফাই করা  সায়িত্য মায়িত্যগুলো  আরো বেশী লোককে খুন রেপ করতে উতসাহ দেয়।
  • Prabal Mukherjee | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩৮513887
  • কিস্যু বুঝতি পারলাম না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন