এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সাবু ও শনিপোকা ২ - চক্ষুদান 

    swagatam sen লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৫৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | |
    এদিকে বারুদ-বারুদ গন্ধ নিয়ে শরত আসে। চুপিচুপি মা-কাকিমারা আলোচনা করে। কারা যেন দেশের শত্রু। সাবু ভাবে মহিষাসুরের কথা, মা-দুর্গার কথা। পাশের পাড়ার সরোজদা মহালয়ার আগের দিন বিকেলে যুগবাণী ক্লাবের দিক থেকে ফিরছিল পড়া সেরে। পরেরদিন সবার ঘুম ভাঙল ওর মায়ের কান্নাকাটিতে। তারপর থেকে সন্ধে নামলে কেউ আর সচরাচর বাড়ি থেকে বেরোয়না। নিঝুম সন্ধ্যার আবহে দূরে কাদের বাড়ি থেকে মহিষাসুর-মর্দিনী ভেসে আসে।

    এর মধ্যেই একদিন হীরু এসে বলল, ‘জানিস আমি আর দাদাভাই এবার একটা পত্রিকা বার করব পুজোর আগে। তুই লিখবি?’

    হীরুর সাথে সাবুর আলাপ হয়েছিল গলফক্লাবে। দুজনেই গিয়েছিল সাহেবদের ফেলে দেওয়া গলফবলের সন্ধানে। মনে আছে সেদিন হীরু একটা পেয়েছিল, কিন্তু সাবু পায়নি। হীরু বলেছিল এটা একসপ্তাহ তোর কাছে, একসপ্তাহ আমার, ঠিক আছে?

    হীরুর দাদা অভিরূপ কলেজে পড়ে। ভারি মজার লোক। ভাল ম্যাজিক জানে - তাসের। কিন্তু আজকাল বেশি দেখাসাক্ষাৎ হয়না। হীরু বলে বাড়িতেও বিশেষ আসে না। কলেজে কীসব গণ্ডগোল পুজোর মুখে।

    ত পত্রিকা একটা বের করেছিল ওরা তিনজন। তাতে জ্যামিতি নিয়ে একটা লেখা লিখেছিল সাবু। সাবু জ্যামিতি ভালবাসে। অনেকসময় মায়ের সাথে হাঁটতে হাঁটতে থমকে দাঁড়িয়ে হাঁ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারার মাঝে তারার ফাঁকে অদৃশ্য জ্যামিতি বুনতে থাকে।

    অভিরুপদা লিখেছিল একটা ভারিক্কি প্রবন্ধ - ‘সংগ্রামের আমি ও তুমি’। কিছুই বোঝেনি সাবু। ওদের পত্রিকা কেউ বিশেষ পড়েওনি।

    এর কয়েকদিন পরে - মহালয়ার দিন কতক পরেই - সকালের দিকে ছুটতে ছুটতে এসে হীরু বলল ‘দাদা পালিয়েছে’ আর বলেই দৌড়। সাবুও তার পিছন পিছন। ঊর্ধ্বশ্বাসে পার হয়ে যাচ্ছিল বাঁদিকে মণ্ডলদের উঁচু পাচিল দেওয়া বাড়ি, ডানদিকে ডাক্তারজেঠুর চেম্বার, কার্ত্তিক দার মুদি দোকান, পাড়ার বুড়ো শিবমন্দির। সব ভেসে যাচ্ছিল দুলে দুলে লাল কোয়ার্টার ছাড়িয়ে ওয়ারলেসের মাঠের ওদিকে। ওরা ছুটে যাচ্ছিল। সামনে হীরু, পিছনে সাবু। ওরা থামল সেই নবযাত্রীর কালীপূজোর মাঠের ওধারে যেখানে কিছু ইতস্ততঃ ঝোপঝাড় অযত্নে জঙ্গলের চেহারা নেবনেব করছে।

    হীরু কিছুটা দম নিয়ে বলল, ‘বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। কাল রাতে।’ ‘তারপর?' ‘দাদার একবন্ধু তার আগেই এসেছিল। দুজনে অনেক পরামর্শ করল। তারপরেই দাদা ব্যাগ গুছিয়ে উধাও। মা অনেক কান্নাকাটি করেছে সারারাত। বাবা বারান্দায় পায়চারি এখনো করছে দেখে এলাম।’  

    সাবুর দুইপা জলে। সাবু ভাবে সেই শনিগ্রহের পোকাটার কথা। সেই করছে নাকি এইসব? আবার ভাবে বাতিঘরের কথা। কিছুদিন আগে একটা বইয়ে একটা বাতিঘরের ছবি দেখেছিল। দূর সমুদ্রের বুকে একলা আলো, সঙ্গী কিছু শঙ্খচিল।

    ‘আমি চললাম। তোকে আমার সাথে দেখাটা ঠিক নয়।’ বলেই হীরুও উধাও।

    এর কিছুদিন পরে হীরুর বাড়িতে গিয়ে দেখেছিল মস্ত তালা ঝোলানো। সেদিন সাবু এত জোরে ছুটে ফিরেছিল যে রাস্তাঘাট, লোকজন, রিক্সাকাকুদের ডাক সব ঝাপসা হতে হতে ফিকে হয়ে গেছিল। নরম ভেজা মেঘের মধ্যে দিয়ে উড়ছিল সাবু। কিউমুলাস। ওই ত বাবা দাঁড়িয়ে আছে কোমরে দুহাত দিয়ে নীলচেককাটা লুঙ্গি পড়ে।

    সেই প্রথম সাবু উড়তে শেখে। 
     
    (ক্রমশঃ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যদুবাবু | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:২৭511697
  • সাগুদা, দারুণ লাগলো, চলুক চলুক। 

     
  • swagatam sen | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:৩০511701
  • ধন্যবাদ যদুবাবু smiley। হালহকিকত কেমন? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন