এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জলের বোতল

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ আগস্ট ২০২২ | ৩০৩ বার পঠিত
  • রাত দেড়টা বাজল। নপরাজিত আর মনসিজের সঙ্গে শিমিকা আর আলিয়া এখনও সিজলার বার থেকে বেরোয় নি। 
    শিমিকা মনসিজের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, ' চল ইয়ার .... থাইল্যান্ড থেকে ঘুরে আসি .... ' ।
    সঙ্গে সঙ্গে আলিয়া নেচে উঠল, ' ইয়েস ...  ইয়েস ... ফ্যান্টাস্টিক ...  নো পয়েন্ট অফ ওয়েস্টিঙ টাইম .... ওখানে আমাদের একটা রিসর্ট আছে .... সো লেটস ফিক্স ...নেক্সট  স্যাটারডে ... ' ।

    সকলেরই কয়েক রাউন্ড করে চড়ানো হয়ে গেছে। কত হাজার টাকার বিল হবে তার ঠিক নেই। সেটা অবশ্য কোন 'ইস্যু' না। মস্তি করতে গেলে এই পেটি অ্যমাউন্ট নিয়ে 'ব্রুড' করলে হয় না। সকলেরই পকেটে ক্রেডিট কার্ড আছে। 

    নপরাজিতের বেশ খানিকটা ধমকি লেগে গেছে। ওকে এখান থেকে বার করা মুশ্কিল হবে। নিজের পায়ে খাড়া হতে পারবে কিনা সন্দেহ। বাইরে দুটো মার্সেডিজ দাঁড়িয়ে আছে। বডিগুলো কোনরকমে গাড়ির ভিতর ফেলতে পারলেই হল। একটা গাড়ি মনসিজ চালাবে, আর একটা শিমিকা। গাড়ি চালাবার সময় দুজনের স্পীড পিক আপের রেষারেষির প্রবণতা আছে। এখন অবশ্য মাঝরাত। রাস্তা ফাঁকা। তেমন হার্ডল থাকবে না। আর থাকলেই বা কি ..... উড়া দো উসকো... হাঃ হাঃ হাঃ..... 

    নপরাজিত টেবিলে একটা হাতের ওপর মাথা রেখে চোখ বুজে কেতরে পড়ে আছে। কিন্তু থাইল্যান্ড প্রসঙ্গটা কানে গেল ঠিক। জড়িত স্বরে বলল, ' নো প্রবলেম .... অ্যরেঞ্জ কুইকলি .... লুক ফর ভানাটু অ্যন্ড সিঙ্গাপুর অলসো। দ্যাটস ফ্যা...ন..ট্যা..স্টিক ডিয়ার... লট অফ ফান .... '।
    আলিয়া বলল, ' এক্সপেন্স ইজ নট মাচ ফর থ্রি ডেজ, টু নাইটস .... নট মোর দ্যান টেন ল্যাকস আই গেস .... লেটস হ্যাভ আ গো ... '।

    রাত দুটো বাজল । ফ্লোর ম্যানেজার এসে বলে গেল, ' টাইম হ্যাজ লং গট ওভার ... প্লিজ মুভ আউট ... ' ।
    ফুড অ্যন্ড বিভারেজের চারজনের মোট বিল হয়েছে বত্রিশ হাজার টাকা। শিমিকা ক্রেডিট কার্ডটা বার করে ওয়েটারের হাতে দিল। 
    মনসিজ, আলিয়া আর শিমিকা কোনরকমে নিজেদের শরীরগুলোকে টানতে টানতে মার্সেডিজের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ফেলল। দুজন গাট্টাগোট্টা সিকিউরিটি গার্ড প্রায় চ্যাঙদোলা করে নপরাজিতকে তুলে নিয়ে গাড়িতে ভরে দিল। একটা গাড়িতে রইল শিমিকা আর  নপরাজিত। চালকের আসনে শিমিকা। এই অবস্থায় নপরাজিতকে ওর বাড়িতে ড্রপ করা যাবে না। আজ রাতটা ওকে নিজের ঘরেই রাখতে হবে। আর একটা গাড়িতে মনসিজ আর আলিয়া। স্টিয়ারিং ধরবে মনসিজ। গতির তুফান উঠবে এবার। 

    মৃদুল নস্কর পিজি হাসপাতালের চত্বরে পড়ে আছে এক সপ্তাহ ধরে। সঙ্গে তার বৌ নমিতাও আছে। তাদের দশ বছরের ছেলের শরীর কেমন যেন অসাড় হয়ে যায় মাঝে মাঝে। আর কোন উপায় না পেয়ে পিজি-তে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। আউটডোরে ডাক্তার দেখে নানারকম পরীক্ষা করতে বলেছে। বাইরে কোথাও থেকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা ওদের নেই। তাই এখানে দাঁত কামড়ে পড়ে থেকে এক একদিন এক একটা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এখনও দুটো পরীক্ষা বাকি। সেই ফুলেশ্বর থেকে যাতায়াত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দিনে সব মিলিয়ে দেড়শো টাকার ওপর খরচ। তার ওপর ছেলের শারীরিক অক্ষমতা তো আছেই। 
    চিঁড়ে মুড়ি খেয়ে কোনরকমে হাসপাতালের এককোণে সেঁটে আছে, প্রবল আশা বুকে ধরে যদি ছেলের অসুখটা ভাল হয়। প্রাকৃতিক কর্মাদির ব্যাপারে, বিশেষ করে নমিতার,  যা বিশ্রী সমস্যা হচ্ছিল সে আর বলার নয়। তবু ছেলেটা যদি বাঁচে .... 
    টাকা পয়সা যে ক'টা ছিল তাও ফুরিয়ে আসছে। চিড়ে মুড়ি খেতেও তো পয়সা লাগে। তাছাড়া হাসপাতালের ভিতরে সব সময়ে খাবার জলও পাওয়া যায় না। তারা স্বামী স্ত্রী তেষ্টা চেপে বসে থাকলেও ছেলেটার জন্য দু বোতল জল কিনতে হয়েছে রাস্তার ওপারের দোকান থেকে নগদ কুড়ি টাকা দিয়ে। তার থেকেই মেপে মেপে একটু একটু করে ছেলেকে খাইয়েছে এ ক'দিন।
    এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে বোতলের জল। আর কয়েক ঢোক হবে হয়ত। রাস্তা পেরিয়ে ওপারে গিয়ে রবীন্দ্রসদনের দিকে খানিকটা গেলে একটা খাবার জলের কল আছে। রাত দুটো বেজে গেছে। এখনই জলটা বোতলে ভরে আনলে ভাল হয়। মৃদুল ভাবল, সকাল হলে আবার কলে ভিড় বাড়তে পারে। সে তার বৌকে বলল, ' এখনই যাই তালে .... '।
    নমিতা বলল, ' হ্যা... সেই ভাল ... ছেলেটা তো একটু পরেই জল চাইবে ..... '

    দুটো বোতল নিয়ে মৃদুল নস্কর রওয়ানা দিল হাসপাতালের গেটের দিকে। ছেলে বৌ শুয়ে রইল হাসপাতালের এক কোনায়।  মৃদুল এসএসকেএম-এর গেট পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। রাত দুপুর এখন। কিন্তু হাসপাতালে রাতবিরেত বলে কিছু নেই। রাস্তাঘাট নিঝুম হয়ে গেলেও ইমার্জেন্সিতে রুগীর আনাগোনা লেগেই থাকে। হাসপাতালের লাগোয়া দু চারটে আবশ্যিক দোকান নিশাচরের মতো রাস্তার কোলে জেগে বসে থাকে চোখে ঘুম মেখে।

    রাস্তা পার হয়ে মৃদুল ডানদিকে ঘুরে হাঁটতে লাগল রবীন্দ্রসদনের দিকে। নির্জন, কোলাহলহীন মধ্যরাতের রাস্তা।  কিছুটা হাঁটার পর এক জায়গায় দাঁড়াল । ওই যে, ওপারে জলের জায়গাটা। মৃদুল জলের বোতলদুটো বাগিয়ে রাস্তা পার হতে লাগল বোতলে জল ভরার জন্য।

    এক্সাইডের মোড় থেকে দুরন্ত গতিতে ডানদিকে ঘুরল দুটো বেপরোয়া উদ্ধত মার্সেডিজ বেনজ।  বোঝাই যাচ্ছে দুটো গাড়িতে গতি এবং অহমিকা প্রদর্শনের পাল্লা চলছে । 

    মৃদুল রাস্তার ঠিক মাঝখানে । চোখের পলক ফেলার আগে এবং কোন কিছু ঠাওর করার আগেই ঘন্টায় একশো কিলোমিটার গতিতে ছোটা দুই মত্ত মার্সেডিজ জনহীন রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা কোন সরীসৃপের মতো চটকে দিয়ে চলে গেল মৃদুলের শরীর।
     
    নমিতা ঠায় অপেক্ষা করে আছে কখন তার স্বামী ফিরবে তার রোগাভোগা ছেলের জন্য বোতল ভরা জল  নিয়ে।
     
    ************************************************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন