এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বড় বড় কথা

    Swati Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ মে ২০২২ | ৫৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • বড্ড বড় বড় কথা বলে। যেন সবজান্তা। আসলে ভিতরটা ফাঁপা হলে আওয়াজ বেশী হয়‌। ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম কথাতো একজনকে আর একজনের সম্বন্ধে বলতে শুনি। নিজেও হয়তো কখনো বলেছি। এখন যত বয়স বাড়ছে ততই সবকিছু যাচাই করার অভ্যেস বাড়ছে। সবসময় ঠিকঠাক পারছি না যদিও। ওই সবেতেই মধ্যবিত্ত আর কি। তা এমন একজন বড় বড় কথা বলা (আমার মনে হয়েছে) মানুষের সাথে আলাপ হল। দেখলাম ভদ্রলোকের সব ব্যাপারে কথা বলার আগ্ৰহ। আমি আবার মাঝে মধ্যে ভালো শ্রোতা হয়ে উঠি। তো ভদ্রলোকের কথা শুনতে শুনতে বুঝলাম সব বিষয়টা যে খুব ভাল জানেন তা নয় কিন্তু যে কোনো বিষয় বেশ সুন্দর কথা বলে যেতে পারেন। তার মানে গল্প করতে ভালো বাসেন। কিন্তু ব্যাপার হল উনি বোধ হয় বুঝতে পারছেন না আমি ওনাকে মাপছিলাম। আমি যে নিজে কত বড় বোদ্ধা তা অবশ্য ওনাকে মাপতে দিই নি। তা যাই হোক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয়টা দীর্ঘস্হায়ী হল। ওনাকে মনে হল একটু অগোছালো মনের। কি যেন খোঁজেন মনে মনে। পরশপাথর? না, উনি নিশ্চয়ই ক্ষ্যাপা নন। তবে কি সেয়ানা? বেশ আগ্ৰহ জন্মালো ওনার সম্পর্কে। ওঃ নামটা বলি নি তো। ওনার নাম প্রাঞ্জল। একদিন, দুদিন করে এক মাস, দু মাস। তারপর বছর গড়ালো আমাদের সম্পর্কের। মানে বলতে পারেন চেনা জানার। সম্পর্কটার কোনো নাম ছিল না। পরিচিত। এই পর্যন্ত। একদিন বললেন আমার বাটা কম্পানির জুতো পরতে সবথেকে ভালো লাগে। মনে মনে ভাবলাম চাঁদু কত কম্পানির নাম তুমি জান? জানো চাড্ডিখানি বিদেশি কোম্পানির নাম? এখন বিশ্বায়নের সময়, ওসব ন্যাতানো শ্রীলেদার্সে পূজোর সময় কেমন গ্যাদানো ভিড় হয়। বাপের জন্মে এই বোধ হয় প্রথম বাটার জুতো পরল। খালি বড় বড় কথা। আবার একদিন আলটপকা বলে বসল আমার অমুকের লেখা বড় ভাল লাগে। ভাবলাম বাবাঃ লেখাও পড়ে? এত এলেম? অমনি একটা ব‌ই এর নাম ঝেড়ে দিলাম। বেচারা সরল মনে বলল না এটা তো জানি না। ভাবলাম খালি বড় বড় কথা, পথে এসো চাঁদু। কিন্তু এত গোল খাইয়েও তাকে রোখা যায় না। খালি লক্ষনের গন্ডি ছাড়িয়ে যায়। এমন আহাম্মক। আবার দেখি একদিন বসল আঁকতে। ও বাবা টেরাবেঁকা করে ভালোই একটা দাঁড় করিয়েছে। ও বাবা এই নিয়ে আবার চাড্ডিখানি বড় কথা বলবে নাকি? দিলাম ভ্যান গগ্, পিকাসোর নাম ঝেড়ে। চেয়ে র‌ইল ফ্যাল ফ্যাল করে। আমি অবশ্য নন্দলাল আর গগনেন্দ্র নাথের আঁকা আলাদা করতে পারবো না। তাতে কি? ওর অত বড় বড় কথা কেন? এইভাবে চলতে লাগল। একদিন ভাবতে লাগলাম এত কিছু করার দরকার কি? কি বোঝাতে চায়? অলরাউন্ডার? মাল্টিট্যালেন্টেড? লোকটাকে নিয়ে বেশ খেলতে ইচ্ছে হল। চুপিচুপি একদিন ওর লেখার জায়গায় কালো কালি লেপে দিলাম। দেখি ও কি সবথেকে ভালোবাসে? অপেক্ষা করলাম ওর বিকৃত মুখটা দেখার জন্য। কিন্তু আমি তো ভাবতে পারিনি ও নিঃশব্দে তার ওপর চক্ দিয়ে লিখবে। আমার মাথা গরম হল। আমি ওর চক্গুলোতে জল ঢেলে দিলাম। আমি হতভম্ব হলাম যখন ও তাই দিয়ে আলপনা আঁকল। আমি উন্মাদের মত ওর আল্পনার শুকনো চকের গুঁড়ো ঘেঁটে দিলাম। ও তাতে একটা মুখ আঁকল। আমি পাগল হয়ে উঠলাম। ওকে ক্ষেপিয়ে তুললাম। ওর বড় বড় কথা শুনব বলে। কিন্তু ও তো আর কিছুই বলে না।
    কথা গুলো একটানা বলে থামল অভ্রেষ। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম কেন এমন করেছিলি? হতবাক হয়েছিলাম বন্ধুর আচরণে। ওকে বলেছিলাম, তুই কি বুঝতে পারিস নি ও শুধুই কথা বলতে ভালোবাসে? এটাই ও সব থেকে বেশি ভালোবাসে। অভ্রেষ বলেছিল, ও এত খুশি থাকে কেন সবসময়? চারপাশে এত হতাশা, ব্যর্থতা ও কেন এত হাসে? ও এত নিশ্চিন্ত থাকে কেন?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন