এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঋদ্ধি

    Surajit Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ এপ্রিল ২০২২ | ৭৯৮ বার পঠিত
  • -এতো বড় খবর টা তুই আমায় জানাস নি কেনো? 
    ফোনের ওপার থেকে ঋদ্ধির প্রশ্নের উত্তরে সৈকত তখনও চুপ।
    -কি হলো বল বলিস নি কেনো?আমরা কি কেউ হই না?
    সৈকত নিরবতা ভেঙে,
    -কি বলবো বল!!!!! বলবো যে,আমি এই পৃথিবীতে আর বেশি দিন নেই।এক মারন রোগের সঙ্গে ঘর করছি।আর তাছাড়া তুই  ওই পাহাড় দেশে একা থাকিস,সারাদিন বাচ্চাদের ক্যাচর ম্যাচর।কি আর করার আছে বল!
    -তোর মাথা আর মুন্ডু।কে বললো তোকে,তুই বেশি দিন নেই? আজকাল ক্যানসারে মানুষ মরে না। তাছাড়া তোর ভালো যায়গায় চিকিৎসা হচ্ছে,সেকেন্ড স্টেজ।সব শুনেছি,কিছু হবে না তোর।আমি বলছি কিচ্ছু হবে না তোর।একদম সুস্থ হয়ে যাবি।
    তাছাড়া তোর বিয়েটা দি,গলা অবধি খাবো।ভাই আমার জন্য একটা টুবার্গ লাগবে কিন্তু।
    অনেক দিন পর আজ সৈকত হাসলো,গলা ছেড়ে হাসলো।এ কয়েকদিনে কেমন করে হাসতে হয়,তাই যেনো সৈকত ভুলে গিয়েছিলো।
    -ওই ঐন্দ্রিলা কেমন আছে রে? তোর ওখানে আছে না এখানে?
    -না রে আমার সঙ্গে আনি নি,মা বাবার সঙ্গেই আছে। তাছাড়া ওখানে ওর সমস্যা হতো।আমি স্কুল চলেগেলে,ও সারাদিন একা একা বোর হতো।মা,বাবার সঙ্গেই ভালো আছে।
    প্রায় পঞ্চাশ মিনিট,স্কুল জীবনের দুই বন্ধুর কিচিরমিচিরের পর ঋদ্ধি ফোন টা রাখলো। এবং ফোন রাখার আগে বললো,আমি মাঝে মাঝেই তোকে ফোন করবো।আর অক্সিজেন নিয়ে তুই একদম চিন্তা করবি না। শুধু একবার আমায় ফোন করবি।আমি বাড়ির ওখানে ক্লাবে ফোন করে দেবো।ওরাই তোর বাড়ি অক্সিজেন  পৌছে দেবে।রাত এক টা দুটো যাই হোক।চিন্তা করবি না।আর যেই খাবার গুলোর লিস্ট হোয়াটঅ্যাপে পাঠালাম।নিয়ম করে খাবি।আর কিছু মটিভেসনাল ভিডিও পাঠালাম,দেখবি। "রনে বনে জঙ্গলে যেখানেই অসুবিধায় পরবি,টুক্কুস করে আমায় একটা ফোন করে দিবি।"

    -বাবা ঋদ্ধি,হাসতে হাসতে বললো সৈকত।

    ক্লাশ ফাইভ থেকে টুয়েলভ,আট টা বছর। এক ক্লাশ এক সেকসেন।আজ এতগুলো বছর পর জীবনে দুজনেই প্রতিষ্ঠিত।ঋদ্ধি, ডুয়াসের একটা সরকারি স্কুলে চাকরি করে।কাজের সূত্রে ওখানে একাই থাকে।পরিবারে বয়স্ক বাবা মা আর নতুন সদস্য জুড়েছে বাড়িতে।ঐন্দ্রিলা,ঋদ্ধির বেটার  হাপ্ফ।সদ্য বিয়ে করেছে।
    অন্যদিকে সৈকত এখনো বিয়ে করে নি,বয়স্ক বাবা মা নিয়ে পরিবার।আরো দুই দাদা রয়েছে,সরকারী চাকুরীজীবি।আলাদা জায়গায় বাড়ি করে থাকে।সৈকত,নিজেও একটা সরকারি চাকুরী করে।খুব বেশি পুরনো নয় সৈকতের চাকরি।চাকরি পাওয়ার পর সৈকতের জীবনটা চলছিলো খুব সুন্দর একটা নদীর স্রতের ন্যায়।সৈকত ও জীবনের ছোটো ছোটো লক্ষ তৈরী করছিলো আর সেগুলো পুরন ও করছিলো।একটু বোধ হয় সবার থেকে বেশিই এগোচ্ছিলো।তাই স্বয়ং ভগবান যেনো সৈকতের সামনে উদয় হয়ে বললো "এই ব্যাটা থাম,এবার একটু জিরিয়ে নে।এতো জোরে দৌড়াতে নেই।" তার পর এই মারন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ।এক কথায় জীবনটাই থেমেই গেছে।

    ফোন রাখার পরেও,সৈকত যেনো ওই ছোটো বেলাটায় ফিরে গেছে
    কোথায় যেনো এক ভালোলাগা জড়িয়ে আছে।টিফিনে স্কুলের বাইরের সেই দুই বন্ধুর আইসক্রিম খাওয়া,কমল দাদার সেই কটকটি।
    আজ অনেক দিন পর সৈকতের নিজেকে অনেক সুস্থ বলে মনে হচ্ছে।

    এর পর প্রায় ঋদ্ধির ফোন টা আসতো,সৈকত ও বসে থাকতো ঋদ্ধির ফোনের অপেক্ষায়।ওই ধুধু মরু প্রান্তরে ঋদ্ধি ছিলো সৈকতের কাছে এক টুকরো মরুদ্যান।
    তারপর এভাবেই দুটো বসন্ত কেটে গেলো।এই দুবছর ঋদ্ধির সেই কথাটা সৈকতের কাছে ছিলো এক মৃত্যুঞ্জয় মহাঔষধি, "তোর কিচ্ছু হবে না,তুই সুস্থ হয়ে যাবি।আমি বলছি"। পেট স্কানের রিপোট এলো,ডাক্তার বললো 
    -একটা খুশির খবর আছে,শরীরে আর ক্যানসারের সেল নেই।তবে আগের মতো স্বাভাবিক হতে এখনো সময় লাগবে। হতাস হলে হবে না।

    এই ভাবেই দিন কাটছিলো,অনেক টা কয়েকদিনের নিম্নচাপ মেঘলা আবহাওয়ার পর আস্তে আস্তে যেনো সূর্যমামার উদয় হচ্ছিলো।শারীরিক ভাবে  এখনো সৈকত স্বাভাবিক হতে পারে নি,ঠিকঠাক হাটতে পারে না।কিন্তু মনের জোর অনেক।সবই ওই ঋদ্ধির মৃত্যুঞ্জয় মহাঔষধি কথার ফল।

    এখন বছর দুই পর,সৈকত অনেক টা সুস্থ।ক্যানসার আর নেই,রাতে ঘুম হয় ঠিকঠাক,খাওয়াদাওয়া করে।আর এখন অক্সিজেন সাপোর্ট লাগে না।প্রায় আট মাস সব সময় ঘরের মধ্যে নাকে ওই গহনা টা সৈকতের সঙ্গী ছিলো,অক্সিজেনের গহনা।যখনই অক্সিজেন লেগেছে,ফোন গেছে ঋদ্ধির কাছে।৩০ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন পৌছে গেছে সৈকতের বাড়ি। 

    সৈকত এখন আবার  কাজের যায়গায় যাচ্ছে।তবে এখনও হাটতে পারে না।বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য একটা টোটো ঠিক করেছে।টোটো করে ঠিক সন্ধ্যায় আড্ডার ওখানে যায় আবার রাত ৯ টা হতে হতে বাড়ি ফিরে আসে।
    এক কথায় সৈকত চাইছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে।
    যখন কোনো ছোট খাটো কাজ করতে গেলে কাছের মানুষ গুলো না করে,বলে তুই পারবি না ।
    সৈকত মনে মনে ঋদ্ধির কথা গুলো আওড়ায়,সৈকত তোর কিচ্ছু হবে না।আমি বলছি।
    সৈকত এর মনেও ঋদ্ধির সেই মন্ত্র এক পারমানবিক বোমার মতো শক্তির সঞ্চার করে।
    সৈকত তাদের বিনয়ি ভাবেই উত্তর দেয়, "পারবো না বলে কিছু আছে নাকি!! মানুষই পারে। পারতে আমাকে হবেই।"

    এর মধ্যেই একদিন ঋদ্ধি বাবা হয়েছে,সে খবর কানে আসে সৈকতের।সৈকত ফোন করলো ঋদ্ধিকে।
    ফোনের ওপার থেকে কোনো কিছু শোনার আগেই ঋদ্ধি তারস্বরে চিৎকার করে বলতে লাগলো, 
    -ভাই বাবা হয়েগিয়েছি।আমার এক বেটু লাল হয়েছে।একদম আমার মতো  দেখতে হয়েছে,জানিস।না এবার আর ডুয়ার্সে থাকবো না।যে করেই হোক এ বার ট্রান্সফার নিয়ে বাড়ির কাছে আসবোই।অনেক বছর হলো,আর না।
    ঋদ্ধি আজ বলেই যাচ্ছে।সৈকত সেটা খুব ভালো মতোই বুঝতে পারছে,আজ শুধু ওর বলার দিন।
    ঋদ্ধি বলতে বলতে যখন হাপাচ্ছে,সৈকত বললো
    -ঐন্দ্রিলা আর তোর বেটুলাল কেমন আছে?
    -দুজনই ভালো আছে ভাই।নরমাল ডেলিভারি,হাসপাতাল থেকে খুব তারাতারি ছেড়ে দিবে।
    -তুই কোথায় আছিস,ওখানে না বাড়ি এসেছিস?
    -গতকাল বাড়ি এসেছি।
    -দুবছর আগে তোর বিয়েতেও যেতে পারলাম না।আর এই বার ও বাড়ির কাছেই তোর বেটুলাল আছে কিন্তু কি কপাল দেখ,আমি দেখতে যেতে পারছি না।এই ক্যানসার টা আমার শরীর ছেড়ে গেলেও,আমার মায়া ত্যাগ করতে পারেনি। তাই এখন ও হাটতে অক্ষম।
    -আরে ঠিক তো হয়েই গেছিস।আমার বেটুলাল একটু বড় হোক,তারপর নয় আসবি।থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না,আমার বেটুলাল একটু বড় হোক,আমিই একদিন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো তোর বাড়ি।
    -খুব ভালো হবে রে। ওর কোনো নাম রেখেছিস?
    -না রে এখনো কোনো অফিসিয়াল নাম রাখিনি,তবে আমি বলছি বেটুলাল।ওর দাদু ঠাকুমা ছোট্টু বলে ডাকছে।
    -আমি একটা নাম রাখি কেমন।আমাদের ঋদ্ধির ছেলে "ঋষি"।
    -এই সৈকত,আমার একের পর এক ফোন আসছে। ফোন টা এখন রাখি কেমন,পরে কল করবো।
    -OK..OK ঋষির বাবা। BYE

    এই ছিলো ঋদ্ধির সঙ্গে সৈকতের শেষ ফোনে কথা।যদিও সবার সঙ্গে সৈকতের এখন কথা গুলো ফোনেই হয়,সবার সঙ্গে সৈকতের দেখাকরা  সম্ভব নয়।এই মারন রোগ এক কথায় সৈকতকে ঘর মুখো করে দিয়েছে। কত দিন যে সূর্যদয় দেখেনি! তারপর দিগন্ত রেখা মাঠের কোনায় সেই লাল আভার সূর্যাস্ত।সেই গোধূলি বেলার সেই মায়াবী রহস্যময় রূপ। কয়েক বছর আগেও,কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে,পথ টা যখন ঝিলের ধারে আসতো, সৈকতের বাইকের স্টাট জেনো আপনা আপ বন্ধ হয়ে যেতো।তার পর ঝিলের ধারে বসে সেই জলের কল কল শব্দ,জেলে গুলোর সেই ঝুরির মতো একটা জাল দিয়ে মাছ ধরা,এই সব দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যেতো সৈকত বুঝতেই পারতো না।

    এখন সৈকত মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে,আর গৃহবন্দি হয়ে থাকবে না।একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে হবেই।হাটতে পারবে না তো কি হয়েছে!! কতো মানুষের তো জন্মের থেকে দুটো পা ই নেই।তারা কি থেমে গেছে।সৈকত সকাল বিকেল মনে মনে বিরবির করে,এগিয়ে যেতে হবেই আমাকে, থামলে হবে না।
    সৈকত এখন অফিসে যায়।একটা টোটো রিজার্ভ করেছে,যা ঠিক সকাল ৯:৩০ এ সৈকতকে বাড়ি থেকে সৈকত কে নিয়ে যায়, আবার ঠিক বিকেল ৪টা তে বাড়ি নিয়ে আসে।
    ওই যে বাড়ির বাইরে টোটোর হন বাজছে। তার মানে সুজয় চলে এসেছে।সুজয় টোটো চালায়,ভালো ছেলে।পড়াশোনা করে কোনো সরকারি কাজ হলো না।তাই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড টোটোই কিনে নিয়েছে।
    সৈকত ঘরের ভেতর থেকে হাক দেয়,
    -একটু দারা,আসছি ভাই।
    সৈকত হন্ত দন্ত করছে এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো।
    I am unstoppable......
    -আর সময় পায়না রে বাবা।একে তো তারা হুরো করছি তার ওপর আজ পয়লা এপ্রিল।অফিসে একটু তারাতারি যেতে হবে,মাসের প্রথম দিন।সৈকত একা একাই নিজের বিরবির করে বকতে থাকে।
    সৈকত ফোনে দিকে তাকায়,দেখে স্কিনে আশিষের নাম।
    ও তো জন্মেও ফোন করে না,তবে আজ ফোন কেনো রে বাবা! ও এপ্রিলফুল করার জন্য। আর সময় পেলিনা ফোন করার!! একে তো দেরি হচ্ছে তার পর সুজয় বাইরে অপেক্ষা  করছে।একা একাই আপন তালে বকছে সৈকত।
    ফোন টা কেটে যাওয়ার আগেই ফোন টা তুলে।
    -হ্যালো বল,আশিষ।
    -কি করছিস? একটা কথা ছিলো।
    -এই অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি।কি বলছিস বল।
    -একটা খবর পেয়েছিস?
    -কি খবর বল।দেরি করিস না আমার দেরি হচ্ছে।তারাতারি বল।
    -সত্যি তুই কোনো খবর পাস নি।
    -আর হেয়ালি করিস না।সত্যি আমার দেরি হচ্ছে।
    -ঋদ্ধি মারা গেছে।
    প্রথমে মাথাটা ঝন ঝন করে ওঠে সৈকতের।তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
    -এপ্রিল ফুল বানাচ্ছিস,হাসতে হাসতে বলে সৈকত।কিন্তু মানুষের মৃত্যু হয়েছে,এ সব কথা বলে এপ্রিল ফুল বানাতে নেই রে ভাই। ঠিক আছে ফোন টা রাখ,আমি অফিসে যাই।পরে ফোন করবো।
    -নারে সৈকত আমি সত্যি বলছি,ঋদ্ধি আর নেই,ফোনের ওপার থেকে কাদো কাদো গলায় বললো আশিষ।গতকাল বিকেলে স্টোক করে মারা গিয়েছে।এখন ও ডুয়াসেই আছে,ময়নাতদন্ত হবে।ওখান থেকে বডি আনতে আনতে আগামীকাল ভোর হয়ে যাবে।আমরা খবর টা গতকাল ই পেয়েছি কিন্তু ইচ্ছা করে তোকে কেউ জানাই নি।তোর শরীর টা তো ঠিক নেই।

    ফোনের এপারে সৈকত কথা গুলো শুনতে শুনতে,মাথার মধ্যে সত্য মিথ্যের তাল গোল পাকিয়ে যায়।
    ফোনের ওপার থেকে আশিষ কথা বলতেই থাকে।
    -সৈকত।সৈকত।শুনতে পাচ্ছিস।সৈকত সৈকত।অনেকক্ষন সৈকত কিছু না বলায়,অগত্যা ফোন টা কেটে দেয় আশিষ।
    বাইরে সুজয় হর্ন বাজাতে থাকে।
    -সৈকত দা,ও সৈকত দা।
    সৈকত উত্তরে,আসছি ভাই।
    মা রান্না ঘর থেকে ভাতের থালা নিয়ে ছুটে আসে।
    -তুই ভাত খেয়ে যাবি না?
    -না মা আজ বড্ড দেরি হয়ে গেছে,একদম সময় নেই।তাছাড়া দুপুরে অফিসে একটা পিকনিক আছে।ওখানেই খেয়ে নিবো,তুমি চিন্তা করো না।
    -তুই আগে বললি না কেনো,তবে এত তারাহুরো করে রান্না করতাম না।
    মুখের সামনে আগ ভাত রেখে যেতে হয় না,অকল্যাণ হয়।
    -আর তোমার অকল্যাণ,এই বলে সৈকত ভাতের একটা দানা মুখে নিয়ে বললো,হয়েছে তোমার কল্যাণ!
    সৈকত তারাহুড়ো করে টোটো তে উঠে বসলো।মনে মধ্যে এক উৎকণ্ঠা,উদ্যেগ তার স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে সৈকতের চোঁখে মুখে।সৈকত ঘামছে,মুখ লাল বর্ণ,চোঁখ দুটো রক্তাভ  হয়ে গেছে।
    এবার সুজয় বললো
    -দাদা,তোমার অফিসের রাস্তায় যাবো তো ?
    বেশ নরম ভাবেই সৈকত উত্তর দিলো
    -না।তুই ঋদ্ধির বাড়ি চিনিস তো?
    -ঋদ্ধি দাদার বাড়ি তো,হ্যা চিনি তো।
    -বেশ সোজা এখন ওখানে চল।
    -কিন্তু দাদা,তোমার তো অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
    সৈকত খেকিয়ে উঠলো
    -তোকে যেটা বলছি সেটা কর।
    সুজয় কোনো কথা না বারিয়ে সোজা চলতে লাগলো।সুজয়ের অনেক দিন থেকে সৈকতের বাড়ি আনাগোনা।কিন্তু সৈকতের এই রূপ,রেগে যাওয়া কোনো দিন দেখে নি।
    টোটোয় বসে সৈকতের শুধু ঋদ্ধির কথা গুলো মনে পরতে থাকে।
    "তোর কিচ্ছু হবে না সৈকত।তুই ভালো হয়ে যাবি।আমি বলছি।"
    "রনে বনে জঙ্গলে যখানেই অসুবিধায় পরবি,টুক্কুস করে আমাকে একটা ফোন করে দিবি।"
    "অনেক হোলো বাড়ির বাইরে থাকা,আর না এবার বাড়ির কাছে ট্রানফার নিয়ে চলে আসবো।"
    "তোর বিয়েটা দেবো,গলা অবধি খাবো।"
    "আমার বেটুলাল একটু বড় হোক,একদিন ওকে সঙ্গে করে তোর বাড়ি নিয়ে যাবো।"

    তার মাঝেই সৈকত নিজে নিজে বিরবির করতে থাকে,এই ব্যাটা আশিষ আমাকে এপ্রিল ফুল বানানোর জন্য এই সব মিথ্যা কথা বলেছে।একবার যাই ঋদ্ধির বাড়ি তারপর যখন দেখবো সব মিথ্যা বলেছে।তার পর দেখবো ওর একদিন কি আমার একদিন।
    সৈকত একা একা বিরবির করে,তবে কি একবার ঋদ্ধির ফোনে ফোন করবো?
    না না আমি ফোন করবো না,ফোন করতে আমার ভয় করছে।সৈকত একা একাই বিরবির করে।
    সুজয় একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখো,সৈকত যেনো কেমন পাগলের মতো করছে।
    সৈকত আবার বিরবির করে বলতে থাকে
    -ঠাকুর আশিষের কথা যেনো সব মিথ্যে হয়।পতিজ্ঞা করছি,আমি আশিষ কে কোনো গাল মন্দ করবো না।
    ঠাকুর এমন কিছু করো না গো।ঋদ্ধি আমার শক্তি,ও আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে।তুমি এমন কিছু করো না গো ঠাকুর।দরকার হলে তুমি আমার জীবনটা নিয়ে নেও।মরেই তো গিয়েছিলাম,এখন যদি মরেও যাই লোকে ভাববে,অনেক দিন ক্যানসারে কষ্ট পাচ্ছিলো'মারা গিয়েছে।আমি মারা গেলে,মা কষ্ট পাবে।বাকি দের কষ্ট হলেও কিছু দিনেই ভুলে যাবে।আর আমি চলে গেলেও যা থাকবে,মা বাবার খাওয়া থাকা পরার কোনো দিন কষ্ট হবে না।বিয়েও করেনি,বাচ্চা কাচ্চাও নেই, ফলে ওই দায়িত্ব টা নেই।
    কিন্তু ঋদ্ধি  ও তো সবে বিয়ে করেছে,বাচ্চা টার বয়স আড়াই মাস,বয়স্ক বাবা মা।ঋদ্ধি না থাকলে এদের কি হবে!!!
    হঠাৎ টোটো ক্যাচ করে ব্রেক কষে দাড়ালো।সামনে প্রচুর লোকজন,কান্নার আত্বনাদে সৈকতের ঘোর ভেঙে গেলো।
    গাড়ির ভেতর থেকেই লোকের ফাক থেকে তাকিয়ে দেখলো,শির্নকায় আলুথালু বেশে এক মহিলা পাশের শিব থানে মাথা ঠুকছে আর সেই মর্মস্পর্শি করুন আর্তনাদ " ঋদ্ধিরে,আমার বাবা ঋদ্ধি"
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন