এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দুইটা বল ,আলমগীর রহমান

    Alam Rahman লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ মার্চ ২০২২ | ৩৫০ বার পঠিত
  • দুইটা বল
     আলমগীর রহমান

    বিকেলের খেলা শেষ করে রিসু তার বল নিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ীর দিকে যায়। আগামী কাল থেকে তারা সিরিয়াসলি প্র্যাকটিস  শুরু করবে। কারন বন্ধুরা সবাই মিলে কলা বাগানের একটা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিবে। নিজেদের মধ্যে টিম সেট করে ফেলতে হবে, অনুর্ধ চৌদ্দ বৎসরের ছেলেদের টুর্নামেন্ট। সুতরাং যোগ্যতা ছাড়া টিমে সবাই চান্স পাবেনা এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর টিমের নাম সেট করতে হবে। বড় ভাইদের সাথে আলাপ করে কিছু চাদার ব্যবস্থা ও করতে হবে। জার্সি, এ্যাংকলেট, নতুন একটা বল আরো যা যা লাগে তা যোগার করতে না পারলে ঐ টুর্নামেন্টে যাওয়ার আশা করাই ভূল। আবার এন্টি ফ্রিও দিতে হবে, সব মিলিয়ে হাতে সময়ও বেশী নাই, এই সব আলাপ করতে করতেই রাস্তায় সন্ধার আযান পড়ে যায়। রিসু তার বলটা হাতে নিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে যে আমার  টিচার চলে আসবে আমি বাসায় গেলাম। এ সব আলাপ কালকে মাঠে  হবে। আর কালকে পারলে একটু আগে মাঠে আসিস সবাই, খোদা হাফেজ (রিসুর বন্ধুদের মধ্যে শিপন হচ্ছে রিসুর বিশেষ বন্ধু, সকল বন্ধুরাও এই দুজনের উপর ভরসা রাখে। বিদায় নেওয়ার সময় শিপনকে আলাদা করে রিসু কিছু একটা বলে আর বাকী কথা কাল স্কুলে হবে। শিপন আর রিসু একই ক্লাসে এবং একই স্কুলে পড়ে আর পাড়ার অন্য বন্ধুরা একেকজন  একেক স্কুলে পড়ে)। রিসু বাসায় ডুকেই সোজাসুজি বাথরুমে চলে যায় হাতমুখ ধোয়ার জন্য। তখন সে খেয়াল করে যে, তার পায়ের স্যান্ডেল মাঠে ফেলে কথার ছলে খালি পায়েই বাসায় চলে আসছে। ওটা তার মাঝে মাঝেই হয়। এর জন্য অনেক মারও খেয়েছে মা বাবার হাতে। সাথে সাথেই বাথরুম থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে ভো দৌড় দিল রিসু। মাঠের মধ্যে এখন অন্ধকার আর খেলতে নামার সময় স্যান্ডেল টা যে কোনদিকে রেখেছিল মনেও করতে পারছে না। এদিকে রিসুর টিচার এসে হাজির কিন্তু রিসু বাসায় নাই। মা বোন সবাই বলে যে, এখনই তো বাসায় ঢুকলো দেখলাম এখনই আবার কই চলে গেল? মা ডাকছে রিসু- রিসু................................।  

    বেশ কিছুক্ষণ পর ভগ্ন মেজাজ নিয়ে রিসু ঘরে প্রবেশ করে। আবার বাথরুমে যায় এবং মাকে কিছু না বলে  টিচার এর কাছে চলে যায়। নিজের টেবিলের এক পাশে টিচার  বসে চা বিস্কুট খাচ্ছে আর অন্য পাশে চেয়ারে রিসু বসতেই  টিচার এর ধমক, রিসু কেঁপে উঠে......................................।
    টিচার : শুনলাম তুমি বাসায় ঢুকেছ আবার বের হয়ে কই গিয়েছিলে?
    রিসু : স্যার  ভুল করে আজও সেন্ডেল ফেলে এসেছিলাম, তাই আবার মাঠে খুজতে গিয়েছিলাম।
    টিচার : তার নিজের মত করে কিছু ক্ষণ বকা বকি করে পড়াতে মনোযোগ দেয়।

    রিসুর বাবা খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিসুর রুমে এসে দেখে যে রিসু একটা বই খুলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, কি যেন ভাবছে,
    বাবা : রিসু তুমি নাকি আজও মাঠে স্যান্ডেল ফেলে আসছো? জ্বি বাবা, ভুল হয়ে গ্যাছে আমি এখন থেকে খালি পায়েই মাঠে যাবো আর যেন স্যান্ডেল না হারায়, রিসুর ঘরে মায়ের প্রবেশ- মা- তুমি কি জমিদারের ছেলে নাকি যে মাসের মধ্যে জোড়ায় জোড়ায় স্যান্ডেল হারাবে? আর এত ভুলে যাও কেন? ফুটবল টা তো কোনদিন ভুলে ফেলে আসোনি, আর এত খেলা খেলা মাথায় রাখলে পরিক্ষায় তো একটা গোল্লা নিয়া আসবা, তোমার টিচার বললো তোমার পড়া থেকে দিন দিন তোমার মন উঠে যাচ্ছে। আমিও টিচার কে বলে দিয়েছি, পিটিয়ে হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলতে যদি পড়া খারাপ হয়।

    রিসু মন খারাপ করে মাথা নিচু করে থাকে, মা দুধের গ্লাস, বিস্কুটের কৌটা রেখে দিয়ে কিছুক্ষন বক বক করে চলে যাওয়ার সময় রিসু মাকে বললো
    রিসু : মা আমাকে ফুটবল টুর্নামেন্টের চাদা দিতে হবে, ১০০ টাকা।
     মা : একশ টাকা? তোমার বাপের কি টাকার গাছ আছে?

    পরদিন স্বুল থেকে বাসায় ফিরে খাওয়া শেষ করে রিসু একটু আগেই মাঠে চলে যায় বল নিয়ে। মাঠে গিয়ে দ্যাখে যে নিজের বন্ধুরা কেউ এখনো আসেনি। প্রতিদিন যে পাশে রিসুরা খেলে আজ ওখানে অনেক রোদ। তাই অন্য পাশে ছায়া আছে এমন জায়গায় ছোট ছোট কয়েকটি ছেলে খেলছিল। তাই রিসু একটু এদিকে চলে আসে। এপাশে আবার একটা বড় দেওয়াল দিয়ে ঘেরা একটা বাড়ী বাইরে থেকে কিছু দেখা যায় না। শুধু গাছ আর গাছ। বন্ধুদের অপেক্ষায় থেকে রিসু ঐ ছোট ছেলেগুলির সাথে খেলতে খেলতে রিসুর একটা শট লেগে বলটা পাশের বাড়ীর ভিতরে চলে যায় সে বাড়ীটার চার দিকেই উচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। রিসুর মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। শটটা মারলে বলটা যে এত উচুতে উঠে ঐ বাড়ীতে চলে যাবে বুঝতেই পারেনি। এখন কি হবে? খেলবো কি করে? ঐ বাড়ীর দাড়োয়ান টা একটা বদ লোক। ডাকাতের মত দেখতে ওকে বলের কথা বলতে গেলে তেরে আসবে। বন্ধুরাও কেউ এখনো এলোনা তাই রিসু সাহস করে কয়েকটা ইট যোগার করে ঐ বাড়ীর দেয়াল টপকে ভিতরে নামলো। বাড়ী বোঝাই গাছ আর গাছ। কেমন জঙ্গল মতো। ভুতুরে একটা বাড়ী। এর আগে রিসু জানতোই না। যে তার খেলার মাঠের পাশে এমন একটা ভুতুরে বাড়ী আছে। বিসুর কাছে পুরো বাড়িটাই একটা কল্প কাহিনীর মতো লাগছে।

    অদ্ভুত বাড়ীটা বিশাল বড়, মাটি দেখতে সবুজ, এসব দেখে মনে হয় এখানে কোন মানুষই থাকেনা। কিন্তু গেটের কাছে ঐ হাম্বুল ডাকাত মার্কা দারোয়ান টা  মাঝে মাঝে গেটের বাইরে এসে বিড়ি খায় আর মাঝে মাঝে গাড়ী ঢুকে কখনো লাল রঙ্গের কখনো সাদা রংগের গাড়ী। ঐ গাড়ীতে তা হলে কারা আসে ? হঠাৎ রিসুর খেয়াল হয় আমার বলটা কই? কই পরেছে। যে দিকে যাওয়ার কথা ঠিক সে দিকেই বলটা দেখা গেল, কিন্তু একটা নয় দুইটা বল। একই রকম দুইটা বল কোন ভাবেই নিজের টা আলাদা করা যাচ্ছেনা। রিসু বুঝতে পারছে না কোনটা তার বল! দূরে গেটের কাছে দেখা যাচ্ছে দারোয়ান টা ঝিমাচ্ছে। ঝুমতে  ঝুমতে পরে যায় আবার সোজা হয়। কিন্তু রিসুর বল কোনটা? রিসু কি করবে বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ মনে হলো আমাদের তো অনেক বল লাগে আমি বরং দুইটা বলই নিয়ে যাই। আবার ভাবলো এটা কি ঠিক হবে? শেষমেস দুইটা বল নিয়াই রিসু দেওয়াল টপকে বাইরে চলে আসে। এখনো বন্ধুরা কেউ আসেনি। তাই রিসু ছোট ছেলেদের একটা বল খেলতে দিয়ে আরেকটা বসায় রাখতে চলে যায়।

    বাসায় এসে বলটা নিজের টেবিলের নিচে রেখে একটু পানি খেয়ে রিসু মাঠে চলে যায়। এদিকে রিসুর কিছু বন্ধু মাঠে এসে দেখে যে রিসুর বল নিয়ে অন্য ছেলেরা খেলছে কিন্তু রিসু নাই। রিসু মাঠে আসতেই বন্ধুরা : কিরে তুই কই গেছিলি ?
    রিসু- আমিতো অনেক আগেই আসছি। তোদের কোন খবর নাই এর মধ্যে আমার হাগু চাপল তাই আমি ওদের কাছে বল রেখে বাসায় গিয়ে বাথরুম সেরে আসলাম।

    আজও ভালই প্র্যাকটিস  সহ খেলা হলো এবং টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া সম্পর্কে আলোচনায় বসলো সবাই রিসু আজ এক জোরা স্পঞ্জ পরে এসেছে। আজ ওটা কাছেই রেখেছে সবাই কে ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। দুই কপি করে ছবি দিতে হবে। আর সবাই মিলে বড় ভাইদের ধরতে হবে তারা যেন আমাদের সাহায্য  করে। কারণ আমরা আমাদের এলাকার একমাত্র টিম। যারা ঐ টুর্নামেন্টে অংশ নিবো,  সুতরাং মহল্লার টানেই আমরা অনেকের সাহায্য  আশা করতে পারি। এখন আযান দিবে চল আমরা বাসার দিকে যাই। প্রতিদিনের মত রিসু ও বাসায় ঢুকলো আর মনে মনে ঐ বলটার কথা ভবছে। কাউকে বলেনি......................................। 

    টিচার আসলো। রিসু খুব ভদ্র লোকের মত সব বই খাতা নিয়ে ঞধনষব এ বসলো, এক ফাকে টেবিলের নিচে তাকিয়ে দেখলো দুইটা বল আছে কি না! বল দুইটাই আছে রিসু আবার পড়া লেখায় খুবই ভালো। স্কুলে ঝরৎ/গধফধস রাস্তা রিসুকে খুব পছন্দ করে। খুব ভালো ছাত্র আবার দুষ্টুমির জন্য সব চেয়ে বেশি ঈড়সঢ়ষধরহ রিসুর নামেই। সেদিনও স্কুলের পাশের বাড়ীর জাম্বুরা পেরেছে, পাশের বাড়ীর মালিক তো সোজা ঐবধফ ঝরৎ এর কাছে নালিশ করেছে এবং ধরা পরেছে যে রিসুই সেই লোক। সব ঝরৎ/গধফধস মিলে ঐবধফ ঝরৎ কে বুঝিয়ে শান্ত করেছে। আর যতই দুষ্টুমি করুক সে খুব ভাল ছাত্র।

    রিসু আবার টেবিলের নিচে তাকালো বল দুইটা দেখার জন্য ঝরৎ ধমক দিয়ে বললো টেবিলের নিচে তোমার কি ? এত বার বার তুমি ও দিকে তাকাচ্ছো কেন? বলেই টিচার ও টেবিলের নিচে তাকালো
    টিচার : তোমার বল দেখি দুইটা....... আরেকটা কই পেলে? রিসু থতমত খেয়ে  টিচার ওই আরেকটা বল আমার বন্ধুর, আমার কাছে রেখে গেছে। টিচার ও বুঝেছি এবার পড়।

    টিচার চলে যাওয়ার পরও রিসু অনেকক্ষন টেবিলেই বসে আছে। তার মাথায় শুধু ঐ বলটা। দ্বিতীয় বল, কোনটা যে রিসুর বল সেটা আলাদাই করা যাচ্ছেনা এখন কি এটা বন্ধুদের বলে দিবে? নাহ্ একটা বল যদি নষ্ট হয় তা হলে আরেকটা বল দিয়ে বন্ধুদের তাক লাগিলে দিব। থাক কাউকেই বলার দরকার নাই। ঐ হাম্বুল ডাকাত মার্কা দাড়োয়ান টার মুখটা হঠাৎ মনে পরে রিসুর, এ সময় মায়ের ডাক শুনে রিসু মার কাছে যায়, খাওয়া দাওয়া বিষয়ক আলাপ করে সে রুমে যায়,

    খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিসু তার নিজের ঘরে যায় স্কুলের বই ছাড়া অন্য একটা বই নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বইটা নারতে থাকে, তার বিছানার পাশেই পড়ার টেবিলে। খাট থেকে মাথা নিচু করে একবার দেখে নিলো দুইটা বল ঠিক আছে কিনা, মা এসে দুধ মুরি, মিস্টি - এসব রেখে স্কুলের পড়াটা পরে খেয়ে শুয়ে পড়ো বলে মা চলে গেলে রিসু দরজা বন্ধ করে দেয়।

    এর পর দুইটা বল বের করে এক সাথে নিয়ে খাটের উপর বসে নিজে নিজে বিড় বিড় করে অনেক কিছু বলতে থাকে। এক সময় বল দুইটা টেবিলের নিচে রেখে ঘুমনোর প্রস্তুতি নেয়।

    দুস্বপ্নঃ
    নিজের বিছানায় শুয়ে আছে রিসু, রিসুর জানালায় কেউ একজন নক করে, নক করেই যাচ্ছে, রিসু জানালা খুলে দেখে যে রিসুর মতই একটা ছেলে রিসুকে বললো রিসু তুমি বাইরে আস। রিসু কিছূ না বুঝেই দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে যে খুব অস্থির দেখতে ছেলেটা ওর গলা চেপে ধরে। রিসুর চাইতে দশগুন শক্তিশালী ছেলেটা রিসুর গলা আর ছারছেনা এক সময় রিসু বুঝতে পারে যে তার বাচার কোন উপায় নাই এর ফাকে রিসুর চোখের সামনে ভেসে উঠে ঐ হাম্বুল ডাকাত মার্কা দাড়োয়ানটার ছবি। পাগল টাইপের ছেলেটি ওর গলায় চেপে ধরে কি কি যেন বললো রিসু বুঝতে পারলোনা কিন্তু রিসুর দম এখনই বের হয়ে যাবে এবং সে মারা যাবে। এমন সময় মা বলে রিসু একটা চিৎকার দেয় এবং তার দরজা ধাক্কার আওয়াজ পায়। রিসুর মা বাবা রিসুকে বলছে রিসু দরজা খোল......................

    এটা ছিল রিসুর একটা দুঃস্বপ্ন, রিসু দরজা খুললে বাবা মা দুজনই এসে জানতে চায়। কি হয়েছে ? বাবা তুমি কি হয় ভয় পেয়েছ? রিসু বাবা মাকে বললো যে না আমি মনে হয় স্বপ্ন্ কিছু দেখেছি এখন মনে করতে পারছি না, রিসুর মা দেখলো যে রিসু দুধটা  খায়নি রিসুকে দুধটা খেয়ে ঘুমিয়ে পরতে বলে মা বাবা চলে যায়।

    রিসু আবার ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের বিছানায় উঠে বসে। তার আগে টেবিলের নিচে দেখে নেয় দুইটা বল আছে কি না। বিছানায় শুয়ে সে ভাবলো যে, আমি কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম আর ঐ বাড়ীর দারোয়ান টাকেই বা কেন স্বপ্নে দেখলাম ? আমাকে যে ছেলেটি গলাচেপে ধরেছিল সেই ছেলেটি কে ? ওকে তো আগে কোনদিন দেখিনি! আর আমি ওর কি করেছি যে ও আমাকে মেরে ফেলতে চাইলো ?

    রিসুর আর চোখে কোন ঘুম নাই। খালি পানি পিপাসা লাগে............................

    ভোরের আযান শোনা গেল রিসুর ঘুম নেই, সকাল হলো স্কুলে যাওয়ার সময় হলো কিন্তু রিসু ঘুমে ক্লান্ত।

    রিসুর ঘুম ভাংলো তার দরজায় প্রচন্ড ধাক্কার আওয়াজ আর মায়ের চিৎকারে, রিসু বিছানা থেকে উঠে সে দরজা খুলবে সেই শক্তি তার গায়ে নেই।

    কোনমতে উঠে দরজা খুলে দিয়ে রিসু কাপছে। মা বলছে সেই সকাল থেকে তোমার দরজা ধাক্কাচ্ছি। আর একটু হলে দরজা ভাংতাম। এখন ৮ টা বেজে গেছে স্কুলে যাওয়ার টাইম তো শেষ। রিসুর ঠোট লাল, কাপছে। আর খুব আস্তে আস্তে মা মা বলছে। মায়ের বুকের উপর ঢলে পড়ে গেল রিসু, রিসুর গা আগুনের মতো গরম তার মা তো চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকা ডাকি, রিসুর গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে। তোরা কে কই ? আমাকে আগে ডাকোনি কেন ? দুধ টাও তো খাওনি। মাথায় পানি দিতে হবে। আর কিছু খেয়ে তারা তারি দু টো প্যারাসিটামল খেতে হবে। ওরে আমার যাদুরে এত জ্বর তোমার? তাড়াতাড়ি করে রিসু উঠার চেষ্টা করে। বমি পাচ্ছে তার মাও পিছে গিয়ে পিঠে হাত বোলায় আর রিসু বমি করছে।  বোন এসে একটা মগে পানি এনে মাথায় ঢালছে। তারপর অল্প কিছু খেলে মায়ের কথা মতো দুটো প্যারাসিটামল খেল। ঔষধ খেয়ে রিসু এবার ঘুমাতে গেল এবং বিছানায় ওঠার আগে টেবিলের নিচে একবার দেখে নিল দুইটা বল আছে কিনা!

    দূস্বপ্ন ঃ
    রিসু দেখতে পাচ্ছে বিশাল একটা মাঠ, মাঠের শেষ কোথায় বোঝা যাচ্ছে না। রিসু তাকিয়ে আছে সামনের দিকে তার সঙ্গে একটা বল, হঠাৎ খেয়াল করলো যে, অনেক দুর থেকে কে যেন হেটে আসছে। রিসুর দিকেই আসছে, আস্তে আস্তে রিসুর দিকেই আসছে, আরো কাছে আসছে, ঠিক রিসুর সমনেই এসে দাড়ালো একটি ছেলে, রিসুর মনে হলো ছেলেটাকে কোথায় যেন দেখেছি! ঠিক মনে করতে পারছেনা। ছেলেটি একদম  রিসুর মুখের কাছে এসে বললো লোভি, তুই লোভি বলেই রিসুর গলা চেপে ধরলো। রিসু মরে মরে অবস্থা চোখের সামনে সেই ডাকাত মার্কা দারোয়ান টার ছবি ভেসে উঠে। ছেলেটির হাত এতই শক্ত যে রিসু অনেক চেষ্টা করেও তার গলা থেকে ওর হাত ছাড়ানো যাচ্ছেনা, রিসু মরে গেল মরে গেল।

    রিসুর রুমের দরজা খোলাই ছিল। রিসুর অতিচিৎার শুনে মা বোন সবাই চলে এসেছে। রিসু বলছে মা. মা. মা: রিসু কি হয়েছে বাবা ? মা আমি পানি খাব। এই নাও বাবা পানি খাও মা রিসুর গলায় কাছে হাত নিয়ে জ্বর দেখতে যাবে এমন সময় রিসু আবার ভয় পেয়ে যায়, গলার কাছে মানেই সেই দুঃস্বপ্ন মা জানতে চায় কি হয়েছে বাবা? তোমার হঠাৎ করে এত জ্ব হলো কেন ? মা কপালে হাত রেখে দেখলো প্রচন্ড জ্বর রিসুর গায়ে, মা রিসুর বোনকে ডেকে বলে যে তোর বাবাকে একটা ফোন করে বল যে তোর ভাইয়ার খুব জ্বর ডাক্তার ডাকতে হবে। আমার কাছে জ্বরটা ভালো মনে হচ্ছেনা।

    বাসায় ডাক্তার এসে সব পরিক্ষা করে দেখলো যে রিসুর কোন সমস্যা নাই শুধু জ্বরটাই বেশী রিসুর মা: ডাক্তার কি বুঝলেন ?
    ডাক্তার : তেমন কিছু নয় বডি টেম্পারেচার টা বেশি, আমি ঔষধ দিয়ে যাচ্ছি এখনই আনিয়ে খাওয়াবেন আর খাদ্য খাবার যেন খায়। কিছুক্ষণ পর মা ঔষধ রুটি দুধ কলা নিয়ে রিসুর কাছে আসে তার বোন তার মাথায় কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছে, রিসুর কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা। তবুও একটু রুটি আর দুধ খেয়ে ঔষধ খেয়ে রিসু ঘুমিয়ে পরে।

    রিসু দেখতে পায় সেই ছেলেটি ওর ঘরে ঢুকে ওকে ওর বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরছে। এত শক্তযে রিসু একটা আওয়াজ ও বের করতে পারছেনা। ছেলেটি রিসুর গলায় হাত রেছে রিসুর টেবিলের নিচে তাকায় সেও দেখতে পায় দুইটা বর। রিসুর চোখে ভেসে উঠে ঈড়সঢ়ঁঃবৎ খেলা ঐড়ঁংব ড়ভ উবধঃয এর ভূতগুলির মত অসংখ্য ভূত ওর ঘরের মধ্যে। আর ছেলেটিও সেদিন দেখা একটা হরর ছবির ভূতের মতো হয়ে গেছে।

    ছেলেটি  একটা হাত দিয়ে কোথায় যেন টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে রিসুকে রিসু অসহায় মাকে বাবাকে বন্ধুদের সবার কথা মনে হয়, রিসুর গলা চেপে ধরে আছে ঐ হাম্বুল মার্কা দারোয়ানটা আর ঐ ছেলেটি রিসুকে বলছে। তুই লোভি তুই আমার বল নিয়ে এসেছিস। কেন তুই আমার বল নিয়ে আসলি তোকে আমি মেরেই ফেলবো। রিসু মুখ খুলতে পারছেনা। তার গলা চেপে ধরেছে ঐ দারোয়ান টা ছেলেটি ওকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রিসুর চারিদিকে না না রকম ছবি ভেসে উঠে। তার স্কুলের মাঠ, বন্ধুরা, বাসা, তার পাড়ার মাঠ, বন্ধুরা সবাই, মা বোন রিসুকে ডাকছে, কিন্তু রিসুকে একজন গলা চেপে ধরেছে আর একজন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আর ছেলেটি বলছে দাড়া তোকে মৃত্যুর খুব কাছেই নিয়ে আসছি। তুই এখনই মরবি। রিসুর মরার জন্য রেডী হয়। আর শেষ বারের মত একটা হাত বাড়ায় বন্ধুদের, দিকে মায়ের দিকে।
    রিসু মরে যাওয়ার আগে তার চোখে ভেসে উঠা সব মুখগুলি তাকে ডাকছে তার দিকে হাত বাড়ীয়ে রিসুও শেষ চেষ্টা মনে করে হাত বাড়ায় ঐ আপন মুখ গুলির দিকে এবং কেউ একজন তার হাত ধরে ফেলে এবং রিসু ঝপাত করে উঠে বসে। তার ছোটবোন রিমু তার হাত ধরে আছে আর তাকে বলছে ভাইয়া তোমার সব বন্ধুরা এসেছে তোমাকে দেখতে, রিসুর সারা শরীর ঘাম দিয়ে উঠে, এবং বুঝতে পারে যে এতক্ষণ সে ঐ একই রকম দুঃস্বপ্ন দেখেছে, হাফ ছেড়ে বাচলো রিসু, আর মানে মনে বললো আমার ঐ বলটা আনা ঠিক হয়নি, না হলে ঐ বলটার জন্য আমি এত দুঃস্বপ্ন দেখছি কেন? ঐ ছেলেটা কে? কই থাকে?

    এর মধ্যে রিসুর ঘরে কয়েকজন বন্ধুর প্রবেশ, কিরে রিসু তোর হঠাৎ করে এমন জ্বর হলো কেন? তুই অসুস্থ থাকলে তো আমাদের টুর্নামেন্টে যাওয়া আর হবেনা। খেলাও হবে না।

    রিসুর ঘর ভর্তি রিসুর অনেক বন্ধু। একজন বন্ধু রিসুর টেবিলের নিচে দুইটা বল দেখে প্রশ্ন করে কিরে রিসু দুইটা বল? আরেকটা বল কোথা থেকে এল? রিসু বলে- আছে আমারই বল যাই হোক তোদের খবর কি? আজ খেলতে যাবি না? একটা বল নিয়ে তোরা খেলতে যা আমার শরিরটা ভালো লাগছে না, একজন বন্ধু বললো তা হলে টুর্নামেন্টের চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারটার কি হবে? রিসু বলে- তোরা সবাই নিজেদেরটা একজনের কাছে জমা রাখ। আমি সুস্থ হয়ে সব ঠিক করবো। আজ তোরা মাঠে যা চৎধপঃরপ কর। আর বড়ভাইদের বলিস আমাদের যেন ঐবষঢ় করে। বন্ধুরা একটা বল নিয়ে মাঠে চলে যায়। তার মা কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে, বেশ গরম শরিরটা, নাও কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও, রিসু- মা আমি কিছু খেতে পারছি না। তুমি এখন যাও আমার ঘুম পাচ্ছে। মা কিছু একটা খেয়ে ঔষধটা খেয়ে ঘুমাও বাবা, ঐড়ঁংব ঞঁঃড়ৎ আসলে চলে যেতে বলবো। নাও বাবা একটু জেলি দিয়ে দুই পিছ রুটি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও।
    দুস্বপ্নঃ
    রিসুর ছোখের সামনে ছেলেটি ঠধসঢ়রৎব ঞুঢ়ব এর চেহারা করে রিসুকে বলছে যে তুই একটা লোভী তোর মরা উচিৎ তুই আমার বল কেন নিয়ে চলে এসেছিস ? রিসুর গলা চেপে ধরতে যায় ছেলেটি রিসু কোন ভাবেই তাকে থামাতে পারে না। ছেলেটি রিসুর গলা চেপে ধরে খালি বলেই যাচ্ছে আমার বল দিয়ে আয়, আমার বল যেখানে ছিল সেখানে রেখে আয় আর না হলে তোকে খুন আমি মেরেই ফেলবো। রিসু চিৎকার করে উঠে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, এবং দেখে যে এখন রাত চারটা বাজে, একদম অন্ধকার বাহিরে, রিসুর গা ঘামে ভিজে গেছে। খুব ভয় পেয়ে গেছে রিসু, মা বাবা কেউ টের পায়নি। ছেলেটি তো আমাকে মেরেই ফেলতো, আর বার বার বলছিল যে আমার বল দে আমার বল দিয়ে আয়। রিসু মনে মনে খুব ভয় পেয়ে যায়। আর ঘুম আসছে না................

    রিসু বুঝতে পারে এবং খেয়াল করে যে দ্বিতীয় বলটা নিয়ে আসার পর থেকেই তার জ্বর, দুঃস্বপ্ন, জীবনে যা রিসুর ঘটেনি, রিসু সিদ্ধান্ত নেয় যে তার একটা বল রেখেই দ্বিতীয় বলটা ঐ বাড়ীতে ফেলে দিয়ে আসবে, মাঠের ঐ পাশে গিয়ে ঐ বাড়ীর দেওয়ালের ভেতরে ফেলে আসবে। অপেক্ষা করতে থাকে বাইরে একটু ফর্সা হলেই এখন বল নিয়ে এখনই মাঠে যাবে এবং ঐ বাড়ীতে বলটা ফেলেই তার সস্তি। একটু পর রিসু বলটা নিয়ে ভোর হতেই মাঠের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার বাবা মা কোন সবাই ঘুমাচ্ছে, মাঠে যেতে যে রাস্তাটা পার হতে হয় পুরা রাস্তাটাই ফাকা। একটা কুকুর শুধু আছে। রিসু হেটে যাচ্ছে হঠাৎ মসহিদে আযান তার দিকে পারার মসজিদ থেকে আযানের সুর ভেষে আসছে লোবেটি চলে গেল রিসুর পাশ দিয়ে রিসু মাঠে পৌছায় এবং ঐ পাশটায় যায়। বলটা গায়ের সকল শক্তি দিয়ে ঐ বাড়ীতে ছুরে মারলো এবং সস্তি নিয়ে নিজের বাসায় দিকে ফিরে আসলো।

    রিসু বলটা ফেলে বাসায় এসে ঢুকতে গেলেই দেখে তার মা বারান্দায় বসে আছে। চিন্তিত মা কি রিসু তুমি কই গেছিলে ? তোমার জ্বর এখন কেমন? দেখি কাছে আস কই গেছিলে? রিসু মায়ের কাছে মিথ্যা বলে, না মা আমার এখন জ্বর নাই অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে ঘুম আসছিলনা তাই একটু বাইরে হাটতে গেছিলাম এই খুব কাছেই ছিলাম। মা কপালে হাত দিয়ে দেখলো যে রিসুর জ্বর নেই। মা- যাও আজ তো শুক্রবার স্কুল ও বন্ধ শুন কিছু খেয়ে আর একটু ঘুমাও, মা কিছু খাবার আনতে গেলে রিসু নিজের ঘরে ঢুকে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। এবং তার নিজের বলটা দেখে মনে মনে বলে যে, আমার একটা বলেই চলবে। যাই হোক আমার দুঃ স্বপ্নের অবসান করে আসলাম ঐ বল আমি ঐবাড়ীতে রেখে এসেছি কিছুক্ষণ পর রিসু কিছু খেয়ে একটা ঘুম দেয়।

    ছুটির দিন বলে দুপুরের আগেই রিসুর বন্ধু শিপন এসে রিসুর ঘুম ভাংগায়, রিসু হাত পা মোরামুরি দিয়ে বলে, কিরে শিপন খবর কি? শিপন- তোর কি খবর বল জ্বর আছে? আর তুই অসুস্থ থাকলে তো আমাদের সব চষধহ শেষ, রিসু- না দোস্ত এখন ঠিক হয়ে যাবে, আমার জ্বর নেই আর এই দুই দিন যে দুঃস্বপ্ন গুলি দেখলাম তারও শেষ বলে মনে হচ্ছে। শিপন- দুঃস্বপ্ন মানে ? তুই আবার কি দুঃস্বপ্ন দেখলি? আর শেষ ই বা কি ভাবে হলো ? রিসু আর বলিস না দোস্ত সেদিন

    পুরো ঘটনা খুলে বলে

    আমিও দুইটা বল নিয়ে আসলাম তোদের কউকে রলিনি সেদিন রাতেই
    প্রথম জ্বর,  তার পর দুঃস্বপ্ন, সব শুনে শিপন  বললো ওমা বলিস কি? ঐ বাড়ীর দাড়োয়ান টা আদে না ? সে আমাদের বাসার যায় । তার মেয়ে আমাদের টিনশেড়ের বাসায় ভাড়া থাকে ঐ দারোয়ান টা সেদিন যা বললো।

    ঐ বাড়ীটা তো এখন একটা রহস্যময় বাড়ী।
    তুই করেছিস কি ? শোন ঐ বাড়ীটা ছিল খান সাহেব নামের এক ভদ্রলোকের, সেই ভদ্রলোক নাকি সব ভূত প্রেত নিয়ে খেলা করতেন। তারপর এই গত দুই বৎসর আগে খান সাহেব এই বাড়ীটা বড়লোক এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। খান সাহেব কই চলে গেছেন কেউ জানেনা, তার ছেলে মেয়েরা সবাই বিদেশ থাকে, ওখানেই ঝবঃঃবষব, আর তার বউ বিশ বছর আগেই মরে গেছিল। এর পর থেকে পুরো ঐ বাড়ীটায় খান সাহেব একা একা ভূত প্রেত নিয়ে সময় কাটাতেন, যাই হোক যে ভদ্রলোক ঐ বাড়ীটা কিনেছে তার নাম হচ্ছে ইমরান চৌধুরী। ইমরান চৌধুরীর অনেক টাকা, তার দুইটা ছেলে মেয়ে ছেলেটা বড় সেই ছেলের নাম ইথুন, তো আসল ঘটনা টা এখন বলি সেই ইথুন ঐ বাসায় বাগানে একদিন ফুটবল নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ ইথুন নাই হয়ে যায়। বাগানের কোথাও বাড়ীর কোথাও ইথুনকে কেউ খুজে পায়নি। দারোয়ান ও গেট দিয়ে ইথুনকে যেতে দেখেনি বাগানে বলটা পরে ছিল।

    শিপনের এসব কথা শুনে রিসুর গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রিসু বলিস কি ? ঐ ছেলেটা কে আর পাওয়াই গেল না ? শিপন দারোয়ান টা আমাকে খুব পছন্দ করে, আমাকে মাঝে মাঝে ঐ বাড়ীর কৎবেল, কামরাঙ্গা, জামরুল এনে দেয় সে বলছিল যে ছেলেকে পুরো বাড়ী খুজে না পেয়ে সেই পরিবারটা প্রায় পাগলই হয়ে যাচ্ছে এখন শুধু দারোয়ানটা থাকে আর ঐ এমরান সাহেরের অফিসের কিছু লোক মাসে মাসে আসে আর এমরান সাহেব তার বউ এবং মেয়ে নিয়ে অন্য কোন বাড়ীতে চলে গেছে। অনেক থানা পুলিশ পেপার পত্রিকায় খবর হয়েছে কিন্তু ইথুন কে আর পাওয়া যায়নি। রিসু দোস্ত তা হলে এ কয়দিন আমি স্বপ্নে যে ছেলেটাকে দেখেছি যে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল সেই তাহলে ইথুন?
    শিপন- হতে পারে তবে তুই ওর বল নিয়ে আসটা ঠিক হয়নি।
    রিসু- বন্ধু আমি আসলে কেন যে দুইটা বল নিলাম যাই হোক আজ ভোর বেলা ওর বল আমি ঐ বাড়ীতে ছেলে দিয়ে এসেছি শিপন- ভালো করেছিস।

    আজ রিসুর মন একদম ভাল, তার দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। লোভ সামলাতে না পেরে যে আরোকটি বল নিয়ে আসছিল এবং তার জন্য যে তাকে মাশুল গুনতে হয়েছে তাতে তার শিক্ষা হয়ে গেছে। বিকেল হতেই রিসু তার বলটা নিয়ে মাঠের দিকে রওনা হয়। আজই টুর্নামেন্ট এর ব্যাপারে সব আলাপ শেষ করতে হবে এবং আলাদা করে যার যার দায়ীত্ব দিয়ে দেয়া হবে। মাঠে যায় এবং চৎধপঃরপব করে খেলা শেষে সবাই একসাথে বাড়ীর দিকে রওনা হয়, রিসুর নজর কয়েক বার ঐ বাড়ীর দিকে গিয়েছিল। আর বার বার সেই দুঃস্বপ্ন ভোলার চেষ্টা করেই সব চালিয়ে যাচ্ছে, এবং আজ সে তার স্যান্ডলটা ঠিকই পায়ে পরে নিয়ে বাসায় ঢুকেছে আজ ঝরৎ আসবেন না তাই ঞঠ দেখার একটা লম্বা সময় পাওয়া গেল ঐড়ঁংব ডড়ৎশ শেষ করে রাতের খাবার শেষ করে রিসু নিজের ঘরে এসে একটা গল্পের বই খুলে পরতে পরতে ঘুমিয়ে পরে।

    দুস্বপ্নঃ
    রিসু বসে আছে নিজের বাড়ান্দায়। হঠাৎ রিসু দেখতে পায় সেই ছেলেটি রিসুর দিকে রক্তাত্ত চোখে তাকিয়ে তার দিকে আসছে। একদম রিসুর কাছে চলে এসে আবার রিসুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে, রিসু নিজেকে ছারানোর চেষ্টা করে মা বাবা বোনকে ডাকার চেষ্টা করে কিন্তু সেই ছেলে তার গলা চেপে ধরে বলেই চলেছে লোভিকুত্তা আমার বল এখনও দিসনি কেন? আমার বল কই ? রিসু ছেলেটাকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করে যে আমি তোমার বল তোমাদের বাসায় দিয়ে এসেছি। ছেলেটি না তুই আমার বল দিসনাই ওটা আমার বল না আমার বল দিয়ে দে না হলে তোকে আজ মেরেই ফেলবো ছেলেটি রিসুর আর বাচার কোন পথ নাই। রিসু শেষ চেষ্টা হিসেবে এক চিৎকার দেয়, এবং তার ঘুম ভেঙ্গে যায় তার দরজায় মা বাবা নক করে রিসু দরজা খুলে দেয় এবং পানি খায় আর মা বাবাকে দুঃস্বপ্নে বোঝাতে পারেনা কেন সে চিৎকার করেছে।

    রিসুর আর ঘুম হয়নি আজ ও স্কুলে বন্ধ সকাল বেলাই শিপনের বাসায় ফোন করে শিপনকে গত রাতের দুঃস্বপ্নের কথা খুলে বলে।

    বেলা দশটা এগারোটার মধ্যে শিপন প্রায় আট দশজন বন্ধ নিয়ে রিসুর বাসায় হাজির রিসু তো অবাক সবাই তার বাসায় একসাথে রিসু কিরে সববাই! শিপন হ্যা বন্ধু সবার সাথে তোমার ঐ ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছি সবাই মোটামুটি ভয় পেয়েছে ব্যাপারটা শুনে তারপর একজন একজন করে অনেকে অনেক কথা বলে।

    শেষ মেষ শিপন বলে উঠে যাই হোক যা হবার হয়ে গেছে আমরা এক কাজ করি, রিসু যে ঐ বাসায় বলটা ফেলে এসেছে, ঐ টা আসলে রিসুর বলটা ছিল, ঐ ছেলে রিসুর বল পেয়ে আরো রেগে গেছে। এখন আমাদের কি করা উচিৎ?

    শিপন- আমরা সবাই যা চাঁদা যোগার করবো আর বড় ভাইদের কাছ থেকে যা যা পাবো তাতে আমাদের টুর্নামেন্ট এবং বাকী সময় খেলার সব যোগার হয়ে যাবে, আজ আমরা আমাদের এই বলটাও ঐ বাড়ীতে ফেলে দিয়ে আসবো, একজন বন্ধু বলে বসে তা হলে রিসুর বলটা কি হবে ?

    শিপন- আমাদের আর এই বলের দরকারই নাই, ঐ এক ভূলের জন্য রিসুর যা অবস্থা, রিসু কি বলিস? রিসু- ঠিক আছে আমরা সব নতুন কিনে নিবো কষ্ট হলেও যোগার করে নিবো কিন্তু ঐ বল আমি আর চাই না।

    সবাই মিলে সম্মতি দেয় যে, ঐ বল আমাদের আর দরকার নাই আমরা এখনই মাঠে গিয়ে ঐ বাড়ীটার সামনে গিয়ে বলটা ফেলে দিয়ে আসবো।

    রিসু তার সব বন্ধুদের নিয়ে মাঠে যায়। শিপন সবার আগে আগে সবাই মাঠে প্রবেশ করে। ঐ বাড়ীটার দেয়ালের পাশে গিয়ে একটা যায়গায় বলটা রাখে বলের জায়গাটা এমন যেখান থেকে ঋৎবব উরংশ করলে বলটা ঐ বাড়ীতে বলে যাবে, শিপন- রিসু তুই এদিকে আয়, রিসুকে কাছে ডেকে নিয়ে শিপন রিসুকে বলে এই যে এখানে বলটা থাকলো তুই ঐবাড়ীটা টার্গেট করে একটা শর্ট দিয়ে বলটা ঐ বাড়ীতে পাঠাতে পারবিনা? রিসু- একটা কোন ঘটনা হলো? বলেই রিসু বলটা থেকে একটু দুরে চলে গেল তার পর বলটার উপর চোখ রেখে দৌরে এসে বলটাকে একটা শর্ট মারলো বলটা উপরে গিয়ে ঐ বাড়ীর দেওয়ালের ভিতরে গিয়ে পরলো, রিসু তাকিয়ে থাকলো বলটার দিকে বলটা চলে যাচ্ছে, ঐ ছেলেটার মানে ইতুনের একটা হাসি মুখ রিসুর চোখের সামনে ভেসে উঠে।

    বন্ধুরা সবাই দেখছিল রিসু যে বলটাকে কিক দিয়ে ঐ বাড়ীতে পাঠালো শিপন হাত তালি দিলো সাথে সাথে সবাই হাত তালি দিয়ে রিসেুর দিকে এগিয়ে এসে রিসুকে নিয়ে শিপন জয়ির বেশে মাঠ থেকৈ বের হয়ে আসলো সেদিন ও পরের দিন রিসু ঠিক আর সেই দুস্বপ্ন দেখেনি কিন্তু ঐ ছেলেটার মুখ মাঝে মাঝে ভেসে উঠে রিসুর সামনে।

    নতুন বল নিয়ে রিসুরা আবার খেলে যায় দিনের পর দিন, ফুটবলের সব স্বরঞ্জাম এখন রিসুদের আছে।

    স্কুল ঃ
    ক্লাস চলছে রিসু প্রতিদিনের মত ঠিক জায়গাতেই বসেছে। সব ছাত্ররা স্যারের দিকে তাকানো। রিসুর মনে পড়ে বলটার কথা, মনে পড়ে গতরাতের দূস্বপ্ন, কেমন জানি লাগে রিসুর.................. হঠাৎ স্যারের ধমক শুনে রিসুর নজর পড়ে স্যারের দিকে। কিন্তু এ কি? স্যারের পিছনে কে ওটা? ব্লাক বোর্ডের সামনে? রাতের দূস্বপ্নে যে ছেলেটা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল সেই ছেলেটা না? কিন্তু ও আমার ক্লাসে কি করে? রিসুর শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল। রিসু কি করবে বুঝতে পারছে না। সে ভাবল শিপনকে একবার বলি দেখতো ওটা কে? শিপন বসে রিসুর বামদিকে। রিসু যেই শিপনের দিকে তাকিয়ে শিপনকে বলতে যাবে তখন দেখে যে শিপনের ঠিক পেছনে ঐ ছেলেটা বসে। স্যারের টেবিলের দিকে তাকালো রিসু ওখানে নেই। সেই ছেলেটি এখন শিপনের পেছনে। রিসুর দিকে তাকিয়ে আছে মার মুখী রক্তাক্ত চোখে। রিসু ভয়ে কাপছে ছেলেটি আস্তে আস্তে রিসুর দিকে আসছে। রিসু বসা থেকে উঠে দাড়ালো, একবার স্যারের দিকে তাকালো, স্যার বোর্ডে কি যেন লিখছে, ছেলেটি এসেই ঠিক রিসুর গলার মধ্যে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল। রিসু এক চিৎকারেই মাটিতে পড়ে অজ্ঞান, পুরো ক্লাসের ছাত্ররা এবং স্যার। রিসুকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল এবং রিসুর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পর রিসু চোখ খুলে। রিসু : ঐ ছেলেটা গেছে? কে ঐ ছেলেটা?

    রিসুর মায়ের মোবাইলে ফোন আসে স্কুল থেকে, রিসুর স্যার ফোন করেছে। স্যার : হ্যালো ম্যাডাম আমি স্কুল থেকে রিসুর স্যার বলছি, রিসুর কি শরীর খারাপ করেছিল? মা : জি হ্যাঁ গত রাতে খুব জ্বর হয়েছিল আর ঘুমের মধ্যে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছিল দূস্বপ্ন দেখে। রিসুর মা আবার বললো কেন কি হয়েছে বলুনতো স্যার। স্যার : না তেমন কিছু না ও হঠাৎ চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এখন ঠিক আছে। ওর গা খুব গরম। ওকে আমরা বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। মা: জি আচ্ছা ঠিক আছে স্যার ঐ শিপনকেও সাথে দিয়ে দিয়েন। আমার রিসু আর শিপন খুব ভালো বন্ধু আমরা পাশাপাশি বাসাতেই থাকি। স্যার: ওকে ম্যাডাম চিন্তা করবেন না। আজকালকার ছেলেরা কত রকম হরর ছবি দেখে। ভুতপ্রেত নিয়ে বানানো ছবি ছেলেরা বেশি পছন্দ করে আর এটা হলো কোন একটা হরর ছবির প্রতিক্রিয়া।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন