এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কবি আজাদের ব্যর্থ প্রেম

    Al Shahriyar Mahi লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ জানুয়ারি ২০২২ | ৬৪২ বার পঠিত
  • কবি আজাদের মন খারাপ। দুপুরে ফোনের পর্দায় খবরটা দেখার পর চোখের কোণ থেকে জল ছিঁটকে বেরিয়ে এসে
    সংবেদনশীল যন্ত্র ভিজিয়ে দিয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে বুকের 
    বাম পাশটায় ভূকম্পে নেপালে পরিণত হয়৷ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ছাড়খার করে দেয় সমস্ত সম্ভাবনা।
     
    ঢাকাই সিনেমার জনৈক নায়িকা মা হতে চলেছেন। অথচ কবি আজাদ এসম্পর্কে অবগত নয়। দ্বিপ্রহরের আহার সেরে
    সবেমাত্র মোবাইলটা হাতে নিয়েছেন, এক ভক্তের বার্তা- 
     
    'আজাদ ভাই, নায়িকা তো মা হতে যাচ্ছে। আপনি কি হতে যাচ্ছেন?' 
     
    বজ্রাহত বিস্মিত বিপর্যস্ত আজাদ আঙুল চালিয়ে জবাব দেওয়ার শক্তি পেলেন না৷ 
     
    নায়িকার সাথে কবি আজাদের পরিচয় বোধহয় বইমেলায়। 
    আজাদ তখন ২২ বছরের টগবগে তরুণ। প্রথম কবিতার বই
    এসেছে সেইবার, পাঞ্জাবীর হাতামুড়ে চাদর জড়িয়ে চটের ব্যাগ কাঁধে এক কোণায় চাতক পাখির মত চেয়ে থাকেন। 
     
    এ বই কেনে, ও বই কেনে। আজাদের গুলো পড়ে থাকে, বাড়ে তার দীর্ঘশ্বাস। সেই দীর্ঘশ্বাসে সামান্য প্রাণের সঞ্চার ঘটায় এক অষ্টাদশীর কিশোরী। সে এক দীর্ঘ আলাপ। অন্যদিন করা যাবে। আপাতত কৌতূহলী পাঠক জেনে রাখুক কবি ও নায়িকার সংমিশ্রণ মূলত বইমেলার মাধ্যমে সংগঠিত হয়। 
     
    দিন যায়, রাত যায়। মেসেঞ্জারে গোটানো বার্তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সম্পর্ক গভীর হয়। গভীরতার এক পর্যায়ে কবি ভাবতে থাকেন আসছে বইটা নায়িকার নামে ছেপে দেবে৷ সাহসে কুলোয় না। 
     
    জুনের কোনও এক বিকেলে নায়িকা আঠেরো ছেড়ে উনিশে পা দিল। যদিও এসম্পর্কে নানারকম কানাঘুষো আছে। নায়িকার  জন্মদিন মানে তো তার হুলুস্থুল কাণ্ড। চিন্তা নেই, সামান্য কবি হলেও দাওয়াত পত্র নায়িকা ভুলে যাননি। 
     
    পরিপাটি বেশে বনলতা সেন হাতে প্রবেশদ্বারে দাঁড়াতেই নায়িকার উষ্ণ অভ্যর্থনায় হৃদয় ছুঁয়ে যায় কবি আজাদের৷ জনাকীর্ণ ঘরে প্রথমবারে মত আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন তারা৷ 
    সেদিনের সামান্য কিছু মূহুর্তের আলিঙ্গনে কবি আজাদ সহস্র আলোকবর্ষের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিলেন, সম্ভবত এখনও 
    থমকেই আছেন। 
     
    সেদিনের সোনালী সন্ধ্যায় কবিকে পাশে রেখে জন্মোৎসবের উদযাপনে মেতেছিল শ্রেয়সী, খাইয়েছিল কেক, কবির বিক্ষিপ্ত হৃদয় দেয়নি কোনও ব্রেক!
     
    সেসব দিন ফুরিয়েছে। নায়িকাদের আর কবি ধরার প্রয়োজন পরে না। দূরত্ব বেড়েছে, গভীরতা কমেছে। তবে 
    উতলা মনে প্রেম কমেনি৷ নেহাৎ রবীন্দ্রনাথ আগে জন্মেছিলেন বলে লিখতে পেরেছেন৷ নতুবা কবি আজাদের কন্ঠে আমরা শুনতে পেতাম, 
     
    ' আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি 
     নেই বাকি?' 
     
    মাসখানেক আগের কথা। এই বছরের বইমেলা এখনও বেশ দেরি আছে। কবির তেমন ব্যস্ততা নেই। মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন যে এবার তার প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থের প্রথম অনুলিপি নায়িকার হাতে তুলে দেবে৷ হয়তো এতে করে সময়ের পরিক্রমায় ধূসর হয়ে যাওয়া সম্পর্ক খানিকটা সজীব হবে। নায়িকার সামান্য ছোঁয়ায় নতুন উদ্যমে সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হবেন কবি আজাদ৷
     
    কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস তা আর হতে দিল না। 
    সেদিন ছিল শুক্রবার। জুম্মার নামাজ শেষে সবে ফোনটা
    হাতে নিয়েছেন, ফেসবুকের নীল সাদা ডোরাকাটা বোতামটা চাপতেই উঠে এলো এক অন্তরঙ্গ দৃশ্য। 
     
    কোনও এক অভিজাত রেঁস্তোরায় জনৈক নায়িকা সাদাসিধে এক ছেলেকে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন। কেক খাওয়ানোর পদ্ধতিটাও ছিল অভিনব এবং সৃজনশীল। নবাগত পাখির
    বাচ্চাদের মা পাখিটা যেমন ঠোঁটে করে খাবার খাওয়ায়, জনৈক নায়িকা সাদাসিধে ছেলেটাকে ঠোঁটে করে আলতোভাবে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন।
     
    অতি কোমল কবি হৃদয় মূহুর্তের মধ্যে বিস্ফোরিত হলো। 
    বিরহের দাবানল ছড়িয়ে পড়লো সমস্ত অঙ্গে। নিস্তেজ হয়ে
    গেল প্রেমবোধ। অভিশাপের বর্শায় ছিন্নভিন্ন হলো কবির প্রেম প্রকোষ্ঠে স্বযত্নে আগলে রাখা নায়িকার অস্তিত্ব। ক্রন্দন আর চিৎকারে প্রেমলোকে নেমে এলো ধ্বংসযজ্ঞ। 
     
    অন্যদিকে জনৈক নায়িকার কেক কাণ্ডে দেশে হইহই পড়ে গেল। তর্ক-বিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনায় থমথমে 
    পরিবেশের সৃষ্টি হলো। বহু সম্মানিত সুধীর সঙ্গে জনৈক নায়িকার ওষ্ঠে ওষ্ঠ ঠেকিয়ে কেক খাওয়ানোর দৃশ্য ইন্টারনেটের কল্যাণে চোখের সামনে ধরা দিল। 
     
    এমতাবস্থায় বহু জনপ্রিয় লেখক,ব্লগার, প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবীরা জনৈক নায়িকার পাশে দাঁড়ালেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ নায়িকার প্রসংশা করতে গিয়ে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তুলনা করে  বললেন, সৌন্দর্যের সুষম বিকাশ আছে তার (নায়িকার) দেহাবয়বে।
     
    ''নায়িকা, তুমি আমার জন্য কেঁদোনা'' শিরোনামে কবিতা লিখে আলোচনায় আসলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। 
     
    আখতারুজ্জামান আজাদ দুঃখ করে বললেন, 
     
    'ওদের বেলায় কাচ্চি-কাবাব, আমার বেলায় সবজি কেন? 
    ওদেরটা খাও ওষ্ঠ থেকে, আমার বেলায় সবজি কেন?'
     
    অন্তর্জালের অধিবাসীরা যখন মুখরোচক আলোচনায় ব্যস্ত তখন কবি আজাদ বন্ধ ঘরে বিরহ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার
    কানে বাজছে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্'র বিখ্যাত কবিতা-
     
    'আমি একা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুর মতো একা৷'
     
    তবে আজকাল কোনও কবিই ঠিক একা হতে পারেন। 
    এদিক থেকে জীবনানন্দ দাশ ব্যতিক্রম। তবে সে অন্য আলাপ৷ 
     
    মানুষের সাথে মানুষের রক্তের সম্পর্ক হয়, ভালোবাসার
    সম্পর্ক হয়, প্রেমের সম্পর্ক হয়। আর কবিদের সাথে কবিদের 
    সম্পর্ক হয় কবিত্বের। এ এক আলাদা রকমের সম্পর্ক। 
    কবিত্ব পাকাপোক্ত না হলে কবিত্বের সম্পর্ক অনুভব করা
    যায় না। একবেলা দেখা না পেলে তারা মুমূর্ষু হয়ে পড়ে।
     
    ফকিরাপুলের কবি সত্য গুণের সাথে কবি আজাদের 
    জোরালোভাবে কবিত্বের সম্পর্ক। কবি আজাদের মনের অসুখের খবর পেয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে গুণদা এসে হাজির হলেন
    আজাদের ঘরে। বিচূর্ণ বিধ্বস্ত আজাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন কবিতার হাত। 
     
    কবি আজাদ সেই হাত স্পর্শ করেছিলেন কিনা জানা যায়নি তবে সত্য গুণের মুখে কবি আজাদের বিরহ পুরাণ শুনে
    কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন, 
     
    "ভালোবেসে যাকে ছুঁই, সে যায় দীর্ঘ পরবাসে।''
     
    ~
    আল শাহরিয়ার মাহী।
    অপরাহ্ন ৫:৩৩
    ঝিলকানন, রামপুরা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন