এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জিগীষা

    Tanima Hazra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ | ৪১৮ বার পঠিত
  •  
     
    বৌদি, তোমার মেয়ের ইস্কুলের নম্বরটা একবার দেবে? 
    --কেন রে শ্যামলী?
    --আমার ছেলেকে এডমিশন করাইতাম?
    -- আমার মেয়ের স্কুলে? জানিস, ওটা শহরের কত্ত নামী স্কুল, মাইনে কত? পারবি টানতে?  নিজেদের জীবনের সুখ সাধগুলো নিয়ে ভাবিস রে শ্যামলী। দিন ফুরোলে আর কিন্তু ফিরবে না। নিজের সাধ্য বুঝে ছেলেকে তেমন স্কুলে দে
     বরং। 
    --ঝানি গ বৌদি, সুদাম খোঁজ নিইচে, আর এট্টা রান্নার কাজ ধরে নিলে ঠিক পারবো। ছেলেটা সারাদিন বইমুকে বসে থাকে, পড়া ছাড়া আর কিচ্ছুটিতে ধ্যান নেইক, সারা বস্তির ছেলেপুলে কিরিকেট খেলচে, টিভি দেখচে হামলে পড়ে, কিন্তু আমার বাবানের সেই এক বই বই বই।। 
    -- ভেবে দ্যাখ, শ্যামলী, শুধু মাসের মাইনে না, সারাবছর হাজার রকম এটা সেটা খরচ আছে, একবার ঢুকে পড়লে সব সামলাতে পারবি কিনা।
    -- অ বৌদি, তুমি আর বাদ সেদোনি, দাও না একবার নম্বরটা, টেষ্টে বসায়ে একবার পরক করে দেকি যদি উতরোয়।। 
     
    অগত্যা নম্বর দেয় অভিদীপ্তা।। এবং শ্যামলীর বুদ্ধিমান বাবান উতরেও যায়।। 
    শ্যামলী আর সুদাম বাবানের জীবনের স্বপ্নে বিভোর। বাবান নিজের পড়ার বাইরে আর কিচ্ছুটি জানে না। শ্যামলী আরও দুটো বাড়িতে কাজ নেয়, খোক্কুরে ক্ষয়াটে চেহারা আরও জীর্ণ হয়।। হার্টের অসুখ ধরা পড়ে।।  সুদাম ফাইবার ফিটিংস এর মিস্ত্রি।।আরও আরও কাজের  চাপে গুঁড়ো গুঁড়ো ফাইবার গ্লাস ফুসফুস ভেদ করে ঢুকে শ্বাসের রোগ ধরা পড়ে।। 
     
    বাবান এতাবৎকাল একটুও ফাঁকি দেয় নি তার নিজস্ব পড়াশোনায়। না,সে কোনো বদসঙ্গে পড়েনি। সুতরাং শ্যামলী বা সুদামের আশাহত হবার কোনো কারণ দেখি না।। 
    তারা যে স্বপ্নটা গড়বার জন্য তাদের নিজেদের স্বপ্নগুলোকে একেবারের জন্যও   প্রশ্রয় দেয়নি, যে স্বপ্নটা দেখবার জন্য নিজেদের জীবন নিয়ে একদম ভাবেনি, যে স্বপ্নটা দেখবার জন্য নিজেদের শরীর নিয়ে একবারও  ভাবেনি। ভাবনা তো দূর, সারাদিন উদয়াস্ত খেটে ক্লান্ত শরীর দুটো বিছানা পেলেই গভীর ঘুমে ডুবে যেতো। কেউ কারো শরীলের খোঁজ, হিসেব, যৈবন লোভ সব গুলে মেরে বসেছিলো বাবানের স্বপ্নের ঘোরে। সেই যেন সাধনা, সেই যেন নির্মাণ। বাবানের উঁচুতে ওঠার স্বপ্নটার গোড়ায় সার জল ঢেলে চলা সেই জন্যই যেন তাদের বেঁচে থাকা।। সেই স্বপ্নটা এদ্দিনে সার্থক হয়েছে।। 
     
    বাবান আমেরিকা যাচ্ছে।। 
     
    না মেলোড্রামাটিক সিরিয়ালের মতো বাবান মোটেও দায়িত্বজ্ঞানহীন খারাপ ছেলে প্রমাণিত হয়নি। সে সপ্তাহে তিন চারদিন ভিডিও কলে মা বাবার সাথে কথা বলে।। প্রতিমাসে মোটা টাকা পাঠায়।। সেই টাকা দিয়ে শ্যামলী আর সুদাম ডাক্তার দেখায়।। দামী খাবার, দামী ওষুধ কিনে খায়।। তবে তারা দুজনেই খুব  হাঁপায়, এখন আগের মতো খাবারে তেমন সোয়াদ পায় না।। 
     
    বস্তির এক উঠোন আঠেরো ঘরের জন্য বরাদ্দ এক পায়খানার জীবন ছেড়ে শ্যামলী আর সুদাম ভালো ফ্ল্যাটে উঠে এসেছে কিছুদিন আগে। বাবানই কিনে দিয়েছে।। কাজের জন্য একটা মেয়েও আছে সারাক্ষণের।। বাবান কিচ্ছুটি অভাব অভিযোগ রাখেনি তাদের।।
     
    জীর্ণ দুটি দেহ দামী দুটো চেয়ারে গা এলিয়ে দামী ফ্ল্যাট বাড়ির ব্যালকনিতে এখন ফুরফুরে হাওয়া খায়। এখানে বস্তির মতো দুর্গন্ধ নেই, এখানে দুজনের জন্য দুটো ঘর, দুটো পায়খানা বাথরুম। রোজ ভোরে মুত হাগা আটকে একটা পায়খানায় আটান্নজন হাগার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার যাতনা নেই।। 
     
    সময় কেমন কলকল করে বেরিয়ে যায় নদীর জলের লাখান।।
     
    আজ হঠাৎ শ্যামলীর কেমন যেন বুক ধড়ফড় করে। সুদামকে বলে, দ্যাকো দিকি বুকটায় হাত দিয়ে খুব কি জোরে জোরে লাফায়?  কেমন যেন আটুপাটু লাগে।।
     
    বেলাউজের হুক খুলে বুকের বাঁ ধারে নিজের শীর্ণ হাত রাখে সুদাম। দুটো শুকনো মাই পিট পিট করে তাকিয়ে আছে যেন তার দিকে,  যেন মরা নদীর গায়ে জেগে ওঠা চর। সে চরে এখন জল নেই, সবুজও নেই।। শুধু ইতিউতি ছড়িয়ে আছে পোড়া পোড়া কাঠ।। সে চরে একোন গেরামের শ্মশান।। ত নি মা।। 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন