এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সংরক্ষণ সম্পর্কে কিছু কথা (ষষ্ঠ পর্ব) 

    Swapan Kumar Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ নভেম্বর ২০২১ | ৫০৮ বার পঠিত
  • “হিন্দু সভ্যতা.... হচ্ছে মানবতাকে দমন এবং পরাভূত করতে একটি পৈশাচিক কৌশল। এর প্রকৃত নাম হবে সামাজিক কুখ্যাতি। কাকে সভ্যতা বলে ডাকা যায়, যার একগাদা মানুষ...., যাদের সত্তা মানবসত্তার নিচে বলে গণ্য হয় ও শুধু যাদের ছোঁয়াই দূষণ উদ্রেকের জন্য যথেষ্ট?”- ড: বি আর আম্বেদকর।

    ড: আম্বেদকর সকল বাধা উপেক্ষা করে, সংবিধানে জনজাতি ও অনুসূচিত জাতির জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখেন। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সরকারি চাকরিতে দলিতদের সংখ্যা, উচ্চবর্ণের সরব বিরোধিতা সত্ত্বেও বাড়তে থাকে। আসলে, সঠিক প্রতিনিধিত্ব মূলক সমাজ ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা টেঁকসই হয় না। এই বোধটুকু আম্বেদকরের ছিল।

    আম্বেদকর কংগ্রেসের অর্থোডক্স অংশের সাথে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন, হিন্দু কোড বিল নিয়ে। এর ফলশ্রুতিতে তিনি ১৯৫১ সালে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি মারা যান ১৯৫৬ সালে।

    ১৯৬৪ সাল নাগাদ দলিতদের একটা শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের মূল দাবি ছিল জমির। ভূমিহীনদের ভূমির দাবি সব সময়েই শাসক শ্রেণীর কাছে খুব বিপজ্জনক। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তদানীন্তন শাসক দল কংগ্রেস বিভিন্ন কৌশলে আস্তে আস্তে সেই আন্দোলনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। দলিতদের ছোট ছোট বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে দেয়।

    ১৯৭২ সালে দলিত প্যান্থার নাম দিয়ে দলিত যুবকদের সংগঠন গড়ে ওঠে। এই মিলিট্যান্ট সংগঠনটিও আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। দলিত নেতারা ক্রমে ক্রমে সুবিধাবাদী হয়ে কম্যুনিস্ট দলকে বাদ দিয়ে অন্যান্য দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই ধরনের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, রিজার্ভেশনের মাধ্যমে কিছু দলিত নিজ নিজ অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে উঁচু জাতের এলিটদের মতো তারা দলিতদের মধ্যে এলিট গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এবং তারা উঁচু জাতের এলিটদের মতো একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলিতদের অবস্থা একই রয়ে যায়।

    উঁচু জাতের ক্রোধ এবং ঘৃণা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এই হ্যাভ নটস দের ওপর। অতি সামান্য কারণে দলিতদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে থাকে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে নির্বিচারে দলিত হত্যা কিংবা নিপীড়ন চলতে থাকে। আর বর্তমান ব্রাহ্মণ্যবাদী সরকার আসার পর থেকে তো দলিতদের ওপর নিপীড়ন ভীষণ ভাবে বেড়েছে। তার প্রমাণ নিম্নে উদ্ধৃত NCRB র রিপোর্টে পাওয়া যায়।

    The report released by the National Crime Records Bureau (NCRB) showed that crimes against Scheduled Castes (SCs) and Scheduled Tribes (STs) rose by 9.4% and 9.3%, respectively, in 2020, compared to 2019.

    The atrocities or crimes against Scheduled Castes or Dalits rose from 45,961 cases in 2019 to 50,291 last year — an increase of 9.4%. Atrocities or Crime against Scheduled Tribes rose from 7570 cases in 2019 to 8272 cases in 2020 — an increase of 9.3%. UP reported the highest number of atrocities (12,714 cases) against SCs and Madhya Pradesh reported the most number of crimes (2,401 cases) against STs. Of the 28 states and nine UTs, 17 registered an increase in cases of atrocities against SCs.

    মূলত গো-বলয়ে এই বৃদ্ধিটা পরিলক্ষিত হয়। কিছুদিন আগে, মহিলা অলিম্পিক হকি দলের বন্দনা কাঠারিয়া নামে দলিত খেলোয়াড়ের বাড়িতে, দলের হারের জন্য দলিত খেলোয়াড়ই দায়ী এই অভিযোগে হামলা চালায় উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী দলের সমর্থকরা। আমাদের এই তথাকথিত ‘জাতপাত মুক্ত পশ্চিম বাংলায়’ অধ্যাপিকা মেরিনা মূ্র্মু ট্রোল হন নিচু জাতের জন্য।

    ৭ই আগস্ট, ১৯৯০ সাল, ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটি ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে একটি জলবিভাজিকা হয়ে দেখা দিলো। ঐ দিন প্রধানমন্ত্রী শ্রী ভি পি সিং লোকসভা ও রাজ্যসভায় ওবিসি (other backwards class) দের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ২৭% সংরক্ষণের ঘোষণা করলেন।

    ১ লা জানুয়ারি, ১৯৭৯ সালে মোরারজি দেশাই বি পি মণ্ডলকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গঠন করেন। যার কাজ ছিল এসসি এসটি বাদে অন্যান্য, সামাজিক ভাবে অনগ্রসর এবং শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া, জাতিগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা। ঐ সব পিছিয়ে থাকা জাতিদের উন্নতির পথ বাতলে দেওয়া। এই কমিশন তার রিপোর্ট দাখিল করে ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৮০ সালে। রিপোর্টে যে পথের নির্দেশ ছিল, সে পথে হাঁটবার ইচ্ছা আজ পর্যন্ত কোন শাসক দলের হয়নি। ভি পি সিং শুধুমাত্র কমিশনের প্রথম রেকমেণ্ডশনের অর্ধেক অংশ, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ওবিসি কোটা চালু করার কথা বলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের সুযোগ পাওয়ার জন্য ওবিসিদের আরো ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয় অর্থাৎ ২০০৬ সাল পর্যন্ত। মণ্ডল কমিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশটি ছিল ভূমি সংস্কার বিষয়ক। এখানে সেটা উদ্ধৃত করা হল :

    “Reservations in government employment and educational institutions, as also all financial assistance will remain mere palliatives unless the problem of backwardness is tackled at its root. Bulk of the small landholders, tenants, agricultural labour, impoverished village artisans, unskilled workers, etc, belong to Scheduled Castes, Scheduled Tribes and Other Backward Classes.”The Commission further commented, “It is the Commission’s firm conviction that a radical transformation of the existing production relations is the most important single step that can be taken for the welfare and upliftment of all backward classes. Even if this is not possible in the industrial sector for various reasons, in the agricultural sector a change of this nature is both feasible and overdue.”

    অর্থাৎ, নেহাতই উপশমকারী যেগুলি সেগুলো লাগু করলো ১৯৯২ সালে, নরসিংহ রাওয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার। এই কংগ্রেসই কিন্তু বিজেপির সাথে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ এর বিরুদ্ধে উঁচু জাতের যুবদের আন্দোলনকে পেছন থেকে সমর্থন করেছিল। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন যে এই রিজার্ভেশন ব্যাপারটাকে কি রকম ভাবে শাসক দল গুলো ব্যবহার করে। সুতরাং, এসসি এসটিরা সংরক্ষণ না চাইলেও শাসক শ্রেণীরা কিছুতেই তুলবে না।

    ডা: পায়েল তদবির আত্মহত্যায় আমাদের কিছু যায় আসে না। যে রকম চুনি কোটালের আত্মহত্যা আমাদের চেতনায় আঘাত হানে না।

    “In Hinduism, conscience, reason and Independent thinking have no scope for Development.” - Dr. B R Ambedkar

    (ক্রমশ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন