এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রহস্য গল্পঃ মেঘলা আকাশ

    pradip kumar dey লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ৫৬৯ বার পঠিত
  • #রহস্যগল্পঃ মেঘলা আকাশ - প্রদীপ দে

    আমি আর আকাশ আজ চুটিয়ে রঙ খেললাম ওদের ছাদে। কালো বেগুনী রঙ যে তেল দিয়ে মাখালে এত বীভৎস দেখতে লাগে - আগে আমি কোনদিন দেখি নি। আকাশকে চেনাই যাচ্ছিল না। ওকে নিয়ে আমি মজা করে হেসে উঠেছিলাম -- হো হো -- দ্যাখ এবার কেমন লাগে?

    আকাশ তাড়াতাড়ি করে মোবাইলে ওর মুখটা দেখার চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে মজা উপভোগ করছিলাম, হাসিটা দেখিয়ে, আবার লুকিয়ে।

    আচমকা আমি এক নারী কন্ঠের হা-হা শব্দে অনাবিল এক ব্যাঙ্গাত্মক হাসির আওয়াজে চমকে উঠলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এক কিশোরী চকিতে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। এক চকিতে সে আমার কাছে তার নীল পরিধানে এক অপরুপা লাস্যময়ী হয়ে ধরা পড়েও হারিয়ে গেল।

    আকাশ ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে। তরুনীর হাসি তাকে উদ্দেশ্য করেই এটা সে বুঝে ফেলেছে। কিন্তু কিছু করার নেই দেখে মানে মানে সেই যাত্রায় তার হার মেনে নিয়েছে।

    আমি আর থাকতে পারলাম না - কে রে ওই ফাজিলটা?
    - ও মেঘা, মানে মেঘলা।
    - তা এমন করে হাসলো কেন? তোকে কি ভালোবাসে?
    - না, ও আমায় বাসে না। আমি বাসি।

    আমি একটা ধাক্কা খেয়ে চুপ করে গেলাম। কি উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ক্ষেত্রে কি উত্তর হওয়া উচিত তাই ভাবছিলাম। হঠাৎই কেন জানি না মনের কোণে যেন সূর্যদেব একটু উঁকি দিয়ে গেল। কিশোরীর লাস্যময়ী হাসিমাখা মুখ আমার হৃদয়ের কোমল পদ্মে যেন এক মধুর রাগিণী হয়ে গুমরিয়ে উঠল। মাথায় দুষ্টুমি খেলা করল।
    - চল চল, অনেকে হয়েছে, এবার বাড়ি যাই। বলেই তড়তড়িয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে এলাম।

    খাওয়া দাওয়া সেরে বিশ্রাম নেওয়া আর হল না। ওই নীলাম্বরী আমাকে যেন বারবার ডাকছিল। বিকালের আগেই বেড়িয়ে পড়লাম - সে কিশোর বয়সে, অন্য এক কিশোরীর খোঁজে।

    মাথায় কথাটা ঘুরছিল - ও আমায় বাসে না। তাহলে কাজটা খুবই সহজ হবে। হয়ত বিধাতা ওকে আমার জন্যই বানিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে আকাশের পাশের বাড়ির আশে পাশে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। যদি একবার তার দেখা পাই। আর তো তর সইছে না। একঘন্টা ঘুরে প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছি - এমনই সময় দরাম করে দোতলার জানালা খুলে গেল। আমি চকিতে মাথা তুলে দেখি আমার চাওয়া - মেঘ।

    তখন আর মাথার ঠিক রাখতে পারলাম না। ইশারায় ওকে ডাকলাম। অবাক কান্ড! ও আমাকে ওর সুন্দর টানা চোখ দিয়ে ইশারা করলো যেন - দাঁড়াও।

    পাশের সরু গলির মধ্যে চলে গেলাম। মেঘলা ওই নীল লম্বা জামাটা পড়েই খালি পায়ে চলে এল - কি তাড়াতাড়ি বলো?

    ওর চোখের চাওনিতে এক নেশা মাখানো আগুন। আমি জানতে চাইলাম - তুমি কি আকাশকে?
    কথা শেষ করতে দিল না। চোখ নামিয়ে নিল।
    - অন্য কিছু বলবে?

    আমি বুঝে গেলাম। সব জানা হয়ে গেছে। আমি তো এটাই চাইছিলাম। আকাশকে আমারও ভাল লাগে না। মেঘলাকে আমার চাই।

    - আমি তোমায় কি বলব --- আমতা আমতা করছি।

    নীলাম্বরী মেঘ মুক্তোর দাঁতে হাসল - বাব্বা! এত কষ্ট?

    লাজ-লজ্জার গুলি মেরে আমি বলে ফেললাম - আমি যদি ভালোবাসি?
    - যদি?
    বলেই হি-হি করে তার কি হাসি!

    আমি সাহস পেয়ে গেলাম। বুঝলাম মেঘলা খুব সাহসী। আমি সত্যি কত বোকা। মেয়েরা কি ছেলেদের থেকে বেশী সাহসী হয়?

    এইসব ভাবছি। দেখলাম মেঘ আমার কাছে চলে এসেছে। আমি দুহাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম। ওর ওষ্ঠ কাঁপছে। আমারও। এত সহজে ওকে পাবো ভাবি নি। ও বোধহয় আগে থেকেই আমাকেই চেয়েছিল। আকাশকে আমার জন্যই কায়দা করছিল। আমি খুব খুশি। আকাশ মরুক। ও আমার শুধু বন্ধু, আর মেঘ আমার জীবন। আমরা দুজনে দুজনের খুব কাছে - দুহাতের নাগালে। অন্ধকার হয়ে এসেছে। সরু গলিটা নির্জন। হঠাৎ মাথার পিছনে বিরাট কিছুর প্রহারে আমি কাতরে উঠলাম। এক বেগুনে রঙের শয়তান যেন দ্রুত গতিতে সরে গেল। কিছু বোঝার আগেই চোখে অন্ধকার দেখে ধপাস করে পড়ে গেলাম।

    এরপর একমাস পরে হসপিটাল থেকে বাড়ি এলাম। বাবা মা কি বুঝেছিল জানি না। বাড়িতে আসার পর বিছানায় ছিলাম। একদিন মা জানালো আকাশ দেখতে আসছে। আমি বিছানায় উঠে বসলাম। চোখ কচলে দেখলাম আকাশ ঘরে ঢুকলো সঙ্গে মেঘ। মেঘলার সিঁথি লাল।

    মা জানালো - তুই যখন হসপিটালে তখনই ওদের বাবা মা ওদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আকাশ নাকি তোর ফেরার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ওদের পরিবার তাড়াতাড়ি করে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেয়।

    আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। দেখলাম অন্ধকারে আকাশ মেঘলা!

    প্রদীপ দে। কলকাতা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন