বিভাগ-বিভেদ বস্তুটি ভারি সাংঘাতিক। এ যে মানুষেরই বুদ্ধি বা অবুদ্ধিপ্রসূত একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি এ তো বলাই বাহুল্য।
বিভাগ বিভেদ কি আর একরকম, সে হাজার প্রকার। মানুষ রতন যত সভ্য হয়েছে তত তার অন্ত্রের আকার ছোট হয়েছে, মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সে তত জটিল কুটিল ভাবে মানব জাতিটিকে নিয়ে এই বিভাগ বিভেদ বিভাজন করে কাটাকুটির মজার খেলায় উল্লসিত হয়ে নেচে-কুঁদে উঠেছে।
ধর্মের বিভাগ, জাতপাতের বিভাগ, গুণের বিভাগ, মানের বিভাগ, চামড়ার রঙের বিভাগ.......
বিভাগ কি আর কম আছে? খুঁজে পেতে গুণে গেঁথে দেখলে অমন হাজার হাজারটা পাবেন। এইসব বিভাগের মধ্যেও আবার কিনা মশাই লঘু গুরু, উঁচু নীচু খানা খন্দ আছে, বলার তারিকায় মানুষের অন্তরটিতে বেশ কষিয়ে অন্তরটিপুনি দিয়ে পরম সুখ লাভের বাসনা আছে। আমাদের পারিপার্শ্বিকতার অন্ধকারজনিত দোষে দুষ্ট হয়ে আমরা বেশ এইসব বিভাগ গুলো জেনেবুঝে পেকে হেজে উঠি।
দুম করে বলে ফেলি,
১.ওই যে কালো সাঁওতাল খ্রিস্টান মেয়েটা
২. ওই যে শুঁটকো বেকার ছেলেটা
৩. গোরুখেকো মুসলমানদের পাড়া,
৫. ছোটলোকের কালচার
৬.ভিখিরির মতো আচরণ
৭. ওই কালা বুড়োটা
৮. ওই কানা ভিখিরিটা
৯. ওই যে মোটা মতন কাকীমা, যার মেয়ে ডিভোর্সি,
১০. ওই ভদ্রলোক, যার একটা ন্যালাক্ষেপা ছেলে আছে
১১. মেয়েটা উচ্ছন্নে গেছে, চুলে রঙ করে, হাফ প্যান্ট পরে ঘোরে।
১২. ছেলেটার বারোটা বেজে গেছে চুলে পনিটেল বাঁধে।
১৩. বিধবা মেয়ে, কী বেহায়া, অষ্টমীর দিন লাল পাড় শাড়ি পরে অঞ্জলি দিতে এসেছে।
১৪. ওদের দামী গাড়ি বাড়ি, বাব্বা, ওরা আলাদা লেভেলের মানুষ।
১৫. তোর আর কি হবে,সারাদিন ছোটলোকদের বস্তিতে ছেলে পড়িয়ে বেড়াচ্ছিস, ওই দেখ অমুক বাবুর ছেলে কি দারুণ মানুষ হয়েছে, বিদেশের সিটিজেনশীপ পেয়ে গেল।
১৬. এমা, শনি-মঙ্গলবারে যে নিরামিষ খেতে হয় তুমি জানো না?
১৭. তোমার ছেলের বৌ ছেলের চেয়ে বয়সে বড়? ছিঃ ছিঃ, দিনে দিনে আর কত কান্ড দেখব।
১৮. ছেলেটা বিয়ের পরে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকে, কি অপদার্থ ছেলে, ছিঃ।
১৯. দেখেশুনে অন্য জাতের কালো মেয়ে বিয়ে করবি কেন, তাও যদি প্রেম করতিস সেটা আলাদা ব্যাপার ছিল।
২০. সম্পাদক মশাইকে একজন লেখক জিজ্ঞাসা করলেন সূচীপত্রে কবি লেখকদের নামে এইরকম বড় ছোট হরফের ব্যবহার কেন? সম্পাদক বল্লেন, ওটা লেখক লেখিকাদের বড় ছোট বোঝাবার জন্য, যিনি বিখ্যাত, তাঁর নাম প্রথমে এবং বড় হরফে, যিনি তুলনায় কম পরিচিত তাঁর নাম পরে এবং ছোট হরফে।
হা, হা, হা, কি কান্ড, যাঁরা সংস্কৃতির ধ্বজাটি ধরে আছেন বলে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাঁরাই যদি এই বেড়া টপকে বেরিয়ে আসতে না পারেন, তাহলে আমি আপনি তো নেহাতই তুচ্ছ মানুষ মশাই।। ত নি মা।।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।