এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শোলে এবং সত্যজিৎ

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৮৪৩৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (৩ জন)
  • বেনেগাল লিখেছেন, "বোম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবসময়েই ভেবেছে, সত্যজিৎ রায় ভারতের জন্য ঠিক কাজ করছেননা। রাজকাপুরের সঙ্গে তাঁর একবার বিরাট ঝামেলা হয়েছিল। রাজ কাপুরের সিনেমা 'জাগতে রহো' পরিচালনা করেছিলেন বাংলার বিখ্যাত নাট্যপরিচালক শম্ভূ মিত্র। সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের যা উচ্চতা, নাটকে তিনি তার সমানই ছিলেন। শম্ভূ সিনেমাটা বানিয়েছিলেন, এবং ১৯৬৪তে কারলভি ভেরি উৎসবে সেটা রাজকাপুরকে সেটা একটা পুরষ্কারও জিতিয়ে দেয়। ওই একই বছর ভেনিসে অপরাজিত জেতে স্বর্ণ সিংহ। তারপর রাজকাপুর এবং সত্যজিৎ রায়ের কোনো একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়। সত্যজিৎ বলেন, বাংলা সিনেমার জন্য এটা একটা বিরাট সম্মান। 
     
    রাজ কাপুর বলেন, 'বাংলা কেন, আপনি ভারতীয় না? আপনি কেন বলেন, আপনি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালক?'
     
    সত্যজিৎ বলেন, কারণ, 'আমি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালক'। 
     
    রাজ কাপুর বলেন, 'ভগবানের দিব্যি, আপনি নিজেকে ভারতীয় চিত্রপরিচালক বলতে পারেননা কেন?'" *
     
    বোম্বের সঙ্গে, দিল্লির সঙ্গে বাঙালির এই দড়ি-টানাটানি সেই ১৯৪৭ থেকে। দেশভাগের পর এই সেই সময়, বাংলা যখন প্রবল গাড্ডায় । বাংলা সিনেমার বাজার এক ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে গেছে, বিপুল সংখ্যক হল পূর্ব পাকিস্তানে চলে গেছে, এক তৃতীয়াংশ স্টুডিওর কাজ নেই। তদুপরি ফিনান্সের সংকট, একটা একটা করে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিউ থিয়েটার্স সহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলি ঝাঁপ ফেলে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা সিনেমা রপ্তানির ব্যবস্থা না বোম্বের সিনেমাকে বিশ্বজুড়ে প্রোমোট করছে। কলকাতা থেকে বোম্বেতে ব্রেনড্রেন চলছে। হিন্দি সিনেমাকেই সরকারি মদতে "ভারতীয়" সিনেমা হিসেবে প্রোজেক্ট করা হচ্ছে। যার একমাত্র অর্থ হল, সিনেমার অন্য কেন্দ্রগুলিকে ধ্বংস করা। বাংলার সিনেমা তারপরেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। একদিকে সত্যজিৎ রায়রা। অন্যদিকে মায়ামায় সাদাকালো জনপ্রিয় জলছবি। বাঙালি রোমান্স, বাঙালির  রূপকথা, উত্তম-সুচিত্রার মহাজুটি এমনি আসেনি। চড়াদাগের রঙিন মোটাদাগের হিন্দি সিনেমার জবাবে সেই ছিল বাংলার শৈল্পিক প্রতিরোধ। সত্যজিৎ রায় নামক ঢ্যাঙা লোকটি, একটুও উচ্চকিত না হয়েই, এই প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন। বল্লভভাই প্যাটেল বলেছিলেন, বাঙালি শুধু কাঁদতে জানে।  নার্গিস বলেছিলেন সত্যজিৎ রায় দারিদ্র‌্য বেচেন। ভুল কিছু বলেননি, ওঁরা ভারতীয়ত্বর নামে মোটা দাগের হিন্দুস্তানি বেচেন, এইটা কেবল বলেননি। 
     
    তো, তারপর যা হয়। মহানায়কের স্বর্ণযুগ তো আসলে ততটা স্বর্ণালী ছিলনা। স্রোতের মতো আসছে, হলে-হলে চলছে, বোম্বের সস্তা সিনেমা। যে পদ্ধতিতে ইংরেজ ধ্বংস করেছিল বাংলার বস্ত্রশিল্পকে, বাংলা সিনেমার ধ্বংস হওয়া তার চেয়ে আলাদা কিছু না। স্বয়ং মহানায়ক এবং মহানায়িকাও দৌড়চ্ছেন বোম্বেতে সিনেমা করতে, স্বর্ণযুগ যে আসলে পতনের যুগ, তার অব্যর্থ প্রমাণ এর চেয়ে বেশি আর কী হয়। এরপর বাংলার লো-টেক, লো-বাজেট শৈল্পিক উৎকর্ষময় সিনেমা-টিনেমা ক্রমশ উঠে যাবে, রাজত্ব করবে চড়া-দাগের হিন্দি সিনেমা। এই নিয়েও চমৎকার মন্তব্য আছে রায়বাবুর। শোলে বেরিয়েছিল ৭৫ সাল নাগাদ। পরবর্তীতে শোলে নিয়ে সত্যজিৎ বলেছিলেন, "খুবই দক্ষ, খুবই যোগ্য সিনেমা, যদিও শৈল্পিক ভাবে খুবই নিচু মানের"।** এর চেয়ে ভদ্র হ্যাটা আর কী হতে পারে। যে, ব্যাটারা ওয়েস্টার্ন টুকে একটা ফ্ল্যাট ভারতীয়ত্ব খুব দক্ষতার সঙ্গেই বানিয়েছে। কিন্তু ওটা শিল্প হয়নি। এটা কিন্তু "শিল্প হয়নি" বলে এলিটদের নাক কোঁচকানো নয়। এটা হল নকলনবিশীকে হ্যাটা। 
     
    হিন্দি সিনেমা, গান-টান সমেত, এইসময় মূলত টুকে-টুকেই চলেছে। আর দিগ্বিজয় করে ফেলার পর, বাঙালি মননও ক্রমশ ওটাকেই মোক্ষ বলে ভেবেছে। যেভাবে ম্যাঞ্চেস্টারের কাপড় বাজারে জনপ্রিয় হয়েছিল, ফর্মুলা সেই একই। ওটাই বেঞ্চমার্ক হয়ে গেছে। তারপর বাঙালি সেই হিন্দি সিনেমা টুকে-টুকে খারাপতর সিনেমা বানিয়েছে ক্রমশ। সৃষ্টিশীলতা উবে গেছে। মধ্যও না, ক্রমশ নিম্নমেধার কারবার চারদিকে।
     
    তো, সে যা হবার তাইই হচ্ছে, হবে। কিন্তু শোলের কথা উঠলেই, বারবার, ঢ্যাঙা লোকটির "যদিও শৈল্পিক ভাবে খুবই নিচু মানের", কথাটা মনে পড়ে। 
     
    *মিহির বোসের বলিউড আ হিস্টরি, পাতা ১৮৮-৯ থেকে অনুদিত।
    ** সাক্ষাৎকার। ইন্ডিয়া টুডে। ১৯৮৩।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সম্বিৎ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০৭497533
  • বক্তব্যটা কী? শোলে শৈল্পিকভাবে নিম্নমানের? 
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:১৮497534
  • আমার মনে হয় বক্তব্যটা এরকমঃ 
     
    আধে, ইধার যাও। আধে, উধার যাও। বাকি....মেরে সাথ আও। 
  • :|: | 174.255.131.176 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৪৩497536
  • যা বুঝলাম বক্তব্য হলো সব্বাই খারাপ। হিন্দি তখন, বাংলা এখন।
  • সুকি | 49.207.198.106 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৪৮497537
  • সৈকতদা-কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে সিরিয়াস প্রবন্ধকার হিসেবেই পেয়েছি অনেক লেখাতে - অন্যালেসিস খুব ভালো, মূলত অনুসিদ্ধান্তের সাথে একমত হই বা না হই, লেখা পড়ে ভেবেছি।
     
    কিন্তু এই হিন্দি সিনেমা (বা হিন্দিস্তানি কালচার এসে) এসে বাংলার সব ধ্বংস করে দিল - এই সব প্রবন্ধ গুলো কেমন যেন লাগে। এখানে সে বক্তব্যগুলো রাখা হয় মূল ব্যাপারটা যে অত একরৈখিক নয় এটা কি সৈকত-দা জানে না, নাকি বুঝতে চায় না! এটা ভাবলে অবাক লাগে।
     
    আমি বলছি না যে নেহেরুর সব পলিসি ঠিক ছিল, দেশের প্রধান মন্ত্রী হিসাবে অবশ্যই তাঁর জোর দেওয়া উচিত ছিল আঞ্চলিক ব্যাপারগুলোর জোর দেবার। কিন্তু কেন তিনি হিন্দি বেছে নিয়েছিলেন, হিন্দি সিনেমার সাথে রাজনীতি জড়িয়ে তাঁর ভাবনার 'এক ভারত' গড়তে চেয়েছিলেন, এই নিয়ে তো অনেক লেখা আছে। বাংলা সিনেমা ধ্বংস করার জন্য নেহেরু উঠে পড়ে লাগেন নি বলেই মনে হয়, যেমনটা ঈঙ্গিত করা হচ্ছে এখানে।
     
    আর স্বাধীনতার আগে কলকাতাতেই সব ছিল, বোম্বে শুধু ১৯৪৭ পর থেকেই টপকে গেছে এটাও ঠিক নয়। সৈকত-দা মিহির বাবুর বইটার উদাহরণ দিয়েছে। সেই বইতেই তো ১২০ পাতায়, ৬ নম্বর চ্যাপ্টারে আছে "মেকিং এ নেশন থ্রু ফিল্মস", সেখানে হিসেব আছে ১৯৩৮ সালেই বোম্বেতে প্রোকাডশন কোম্পানী ছিল ৩৪ টি, কলকাতার ১৯ টির  তুলনায় - মাদ্রাজে তখনি ৩৬টি।  এই চ্যাপ্টারেই লেখা আছে তামিল আর তেলেগু সিনেমা কি ভাবে স্বাধীনতার আশেপাশে স্ট্রাগল করছিল - এবং তার থেকে কি ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে (অবশ্য এটাও ঠিক ওদের ভাগ হয়ে মার্কেট কমে যায় নি)
     
    সামগ্রিক ভাবে আলোচনা না করে - এই খাপছাড়া আলোচনা করলে তো আমরা সেই প্যাটেলের ব্যক্তব্য-কেই ঠিক প্রমাণ করব বারে বারে। 
     
    ওই ১৮৯ পাতায় সেটা সৈকত-দা উল্লেখ করে নি, তা এরকম, "Raj Kapoor did not think that (i.e., Patels' comment 'Bengal knows only how to cry') but he reflected a very different Indian culture, where to be identified as a regional person was not a badge of honour, but a sign of lack of patriotism and proof that the person was not really Indian".
     
    তো যেটা বলার মতানৈক্যটা শিল্পে চড়া বা নরম ব্যাপারের জন্য নয় - দেশাত্মবোধের দর্শন নিয়ে। 
     
  • avi | 2409:4061:2ebc:d37a:dd61:c543:4da7:be6a | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫২497538
  • শোলে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট সিনিমার সফল বোম্বেকরণ। ডলার সিরিজের গল্প চম্বল পটভূমিতে বেশ মানিয়ে গিয়েছিল, এই আর কি।
  • সিএস | 49.37.32.200 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫৯497539
  • শোলেতে শিল্প তো নেই। ঘোড়া ছোটানোর দৃশ্য শ্যুট করতে যন্ত্রপাতি লাগে, দক্ষতা লাগে। শিল্প লাগে না।

    এবার শিল্প বলতে কী বোঝেন প্রশ্ন এলে বলতে হবে রায়মশাইয়ের সিনেমায় শিল্প আছে।

    আর শোলে এদেশে হিট হওয়ায় ডাব করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। চলেনি, সেখানে তো লোকে ওয়েস্টার্ণ দেখে অভ্যস্ত আর এ তো সেই ওয়েস্টার্ণের নকল।
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:০৯497540
  • কিন্তু শোলেতে শিল্প থাকার দাবীও তো কেউ করেনি বোধায়। "হিন্দি সিনেমা" আর "শিল্প" একই বাক্যে একসাথে আসছে দেখেই কেমন যেন লাগছে। 
  • সম্বিৎ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:১২497541
  • সিল্পো কি সিল্পো নয় - খুবই সাবজেক্টিভ। আমি তো শোলেতে সিল্পো পাই মানিকবাবুর শেষের কটা ছবির থেকে বেশিই।
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:১৯497542
  • হিন্দির এতো থ্রেট সত্ত্বেও মালায়ালম তামিল এসব ইন্ডাস্ট্রি কেন সারভাইভ এন্ড ডেভেলপ করতে পারলো , কেন বাংলা পারলো না , বরং রায় মশাই যাওয়ার পরে একেবারে ডুবে গেলো , আর্ট কি কমার্শিয়াল ফিল্ম সব দিকে , কেন সব বলিউড থার্ড গ্রেড ছবি র কপি করতে লাগলো নিজে অরিজিনাল কিছু না বানিয়ে -সেসব নিয়েও একটু কথা হোক না  ? 
     
    হ্যা , ওদের দেশভাগের ​​​​​​​মধ্যে ​​​​​​​দিয়ে ​​​​​​​যেতে ​​​​​​​হয়নি। ​​​​​​​সত্যি ​​​​​​​কথা। ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​লো ​​​​​​​বাজেট ​​​​​​​এও ​​​​​​​যে ​​​​​​​ভালো ​​​​​​​ছবি ​​​​​​​বানানো ​​​​​​​যায় ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​এসব ভাষার ​​​​​​​ইন্ডাস্ট্রির ​​​​​​​খবর ​​​​​​​যারা ​​​​​​​রাখেন ​​​​​​​তারা ​​​​​​​ভালোই ​​​​​​​জানবেন।
     
    এখন যাবতীয় ফেলিওর এর রুট কজ ঘুরে ফিরে সেই এক দেশভাগের কুমিরছানা অবধি পৌঁছে গেলে কিছু বলার নেই। ওটা ক্লিশে হয়ে গেছে অলরেডি। আর টাইম মেশিন না এলে ফিরে গিয়ে পাল্টানোও যাবেনা। 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:4581:35e2:9a3c:2548 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২৭497543
  • দেশভাগ ব্যাপারটা কুমিরছানার থেকে অনেকটাই বেশি সিরিয়াস। এর প্রভাব বাঙালী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতি পদে পড়েছে, ওটা একটা পার্মানেন্ট স্কার।
  • সিএস | 49.37.32.200 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২৭497544
  • না না, শেষ বয়সে বিভিন্ন অক্ষমতার জন্যে সিনেমা খারাপ হয়েছে, সেগুলো দিয়ে শোলের শিল্প - হীনতা জাস্টিফাই করা যায় নাকি।

    আর শিল্প একেবারে সাবযেক্টিভ নয় মনে হয়, তাহলে অ্যারিস্টট্ল থেকে এত শিল্পতত্ত্ব হত না।

    তবে, এই লেখাটা শিল্প কী, সেই তর্কের চেয়ে হিন্দী সিনেমা কীভাবে, কেন শিল্পকে গিলে খেল সে নিয়ে মনে হয়।
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৩497545
  • এগ্রি. এটা একটা পার্মানেন্ট স্কার. কিন্তু সেটাকেই মেন্ অজুহাত খাঁড়া করে বা নেহেরু / হিন্দিকে পার্মানেন্ট ভিলেন খাঁড়া করে নিজের বাকি সব শর্টকামিঙ কে যুগ যুগ ধরে ইগনোর করাটাও কোনো কাজের কথা নয়। প্রতিটা অজুহাতের একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে। 
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৬497546
  • আমার মনে হয়না শোলে সিনেমাটা কেউই গুড, ব্যাড, অ্যান্ড আগলি বা ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট এর সাথে তুলনা করে। ভারতের আমজনতা মনে হয়না শোলে দেখতে দিয়ে ওয়েস্টার্ন এর কথা ভাবে। শোলে হলো ভারতের সবচেয়ে বড়ো হিট সিনেমা, সবচেয়ে বড়ো ব্লকবাস্টার। নাথিং মোর, নাথিং লেস। শোলের সাথে সত্যজিত এর দূরতম সম্পর্কও আসার কথা না, এরকম তুলনা করাটা স্রেফ স্ট্রম্যান আর্গুমেন্ট মনে হয়। 
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৯497547
  • আমি প্রচুর লোকজনকে জানি যারা শোলে দশবার, কুড়িবার, তিরিশবার ইত্যাদি দেখেছে। বহু লোক আছে যারা শোলের প্রায় সমস্ত ডায়লগ মুখস্থ বলতে পারে, সিন বাই সিন বর্ণনা করতে পারে। তাদের কেউই শোলেতে শিল্প থাকা বা না থাকা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত বলে মনে হয়না। 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:4581:35e2:9a3c:2548 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৯497548
  • আবারও, দেশভাগ কোন অজুহাত না, আর তার প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। স্বাধীন ভারতের কাছে যথাযথ সাপোর্ট সিস্টেম পেলে হয়তো হতো, কিন্তু তা যে হয়নি সেটা খুবই সহজলভ্য তথ্য।
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৯497549
  • এর আগে র প্রিকুয়েল এ অবশ্য ডন ভার্সেস বসন্ত বিলাপ এসেছিলো
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৪৯497550
  • আমি দেশভাগের ওভারঅল ইফেক্ট নিয়ে তো একদমই ডিসেগ্রি করছিনা। সেটা ঘটনা। ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​বাংলার ​​​​​​​মুভি ​​​​​​​ইন্ডাস্ট্রির এখনকার ​​​​​​​ওভারঅল ​​​​​​​ডিগ্রেডেশন এর ​​​​​​​সাথে ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​কতটা ​​​​​​​রিলেটেড ?
     
    লো বাজেট এও প্রচুর ভালো ভালো মুভি বানিয়ে যাচ্ছে মালায়লাম বা অন্য ভাষার ডিরেক্টর রা। সেসব থেকে বলিউড কপি করে  রেগুলার। তো সেরকম অরিজিনাল গল্প কেন বানানো যাচ্ছেনা বাংলায় ? সেসবও কি দেশভাগ বা হিন্দি বা নেহরুর দোষ ? 
     
    এরপর তো রান্নায় নুন কম পড়লে সেসবও এগুলোর ঘাড়ে ফেলে দেওয়া হবে মনে হয়। 
  • সম্বিৎ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৫৫497551
    • সিএস | 49.37.32.200 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২৭497544
    • না না, শেষ বয়সে বিভিন্ন অক্ষমতার জন্যে সিনেমা খারাপ হয়েছে, সেগুলো দিয়ে শোলের শিল্প - হীনতা জাস্টিফাই করা যায় নাকি।

      আর শিল্প একেবারে সাবযেক্টিভ নয় মনে হয়, তাহলে অ্যারিস্টট্ল থেকে এত শিল্পতত্ত্ব হত না।
     
    প্রথমতঃ আমি শোলের শিল্পহীনতা মানিনা। এটাই তো সাবজেক্টিভিটির বড় উদাহরণ।
     
    শিল্পতত্ত্ব ব্যাপারটাই গোলমেলে। দীর্ঘ আলোচনা। সাবজেক্টিভিটিটা শুধু ব্যাক্তিভেদেই নয়, দেশ, কাল আর সমাজভেদেও।
  • r2h | 2405:201:8005:9947:4581:35e2:9a3c:2548 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৫৬497552
  • হতেই পারে। দেশভাগের ফল এতটাই সুদূরপ্রসারী যে রান্নার নুনের ওপরও তার প্রভাব থাকতেই পারে, কিছুই বলা যায় না।

    লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার লড়াই, ওভারঅল জীবনের মানের ওপর তার প্রভাব, সংস্কৃতির ওপর তার প্রভাব, অ্যাস্পিরেশনের শিফ্ট - হাজার একটা কারন আছে যার শুরু দেশ ভাগ থেকে।
  • সিএস | 49.37.32.200 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:০০497554
  • দ্যাখেন, বাংলায় শিল্প কথাটির দুটি অর্থ। একটি হল art অন্যটি industry। ঈশান বিভিন্ন লেখায় সিনেমায় এই আর্ট আর ইন্ডাস্ট্রীর তফাত কেন হয়ে গেল, সেসবের কারণ খোঁজার চেষ্টা করে। কারণ হিসেবে দেশভাগ, ভারত রাষ্ট্রের নীতি, পুঁজি ইত্যাদি খুঁজে পায়। বক্তব্য মনে হয়, বাংলা সিনেমাকে আর্টের পথে যেতে হয়েছে বিশেষ কারণে বা বাধ্য হয়ে এবং এক সময়ে সেসবও ভেঙে পড়েছে। তার সাথে হিন্দী সিনেমার প্রতাপ এবং সেটিই এ দেশে সিনেমা তৈরী একমাত্র মডেল, সেটি যুক্ত আছে, ব্লকবাস্টার, 'শিল্প' নিয়ে না ভাবিত হওয়া, নকল করা  ইত্যাদি তার সাথেই যুক্ত।
     
     
  • কোশ্ন | 43.251.171.191 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:০২497555
  • ডিসি কি "শোলেতে শিল্প নেই" তে এগ্রি করলেন?  আর তারপরে বলতে চাইলেন তিনি নিজে বা ৯৫% লোক সিনেমা দেখেন এন্টারটেইনমেন্টের জন্য, শিল্পের জন্য নয়? তা, এতে তো কেউই ডিসএগ্রি নয় বলেই মনে হয়। ঈশেনও না, ন্যাড়াদা ছাড়া।
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:০৫497556
  • হ্যা কিন্তু দেশ ভাগ হলো ৪৭ এ। পথের পাঁচালি এলো ৫৫ এ। তারপরের ১৫-২০-২৫ বছর রায় মশাই থেকে উত্তম সুচিত্রা থেকে সৌমিত্র -  হেমন্ত বাংলা সিনেমার র গানের স্বর্ণযুগ যাঁকে বলে। তখন বহু বলিউড সিনেমা গান বাংলা থেকে কপি হতো। তো দেশভাগের এত সুদূরপ্রসারী ইফেক্ট প্রথম ২০-৩০-৩৫ বছরে কিছু এলোনা ? ওই টাল টামাল সময়টা দিব্যি সামলে গেলো ? 
     
    তারপর হটাৎ করে ৮০-৯০ এ কি এমন তার ইফেক্ট এলো যে তারপর বাংলা সিনেমার স্ট্যান্ডার্ড একেবারে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলো ? 
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:০৭497557
  • "সিনেমার আর গানের"হবে থার্ড লাইনে 
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৩497559
  • কোশ্ন অনেকটাই ঠিক ধরেছেন। শোলে দেখতে গিয়ে আমি শিল্প খুঁজতে বসি না, কারন শোলে সেই সিনেমাই না। শোলেকে আমি এমনকি এনিও মোরিকেনের কাজের সাথেও তুলনা করিনা। আর সিনেমায় শিল্প খুঁজতে গেলে আমি হয়তো কুব্রিক বা কুরোসাওয়া দেখতে বসবো, যাদের সাথে শোলের দূর সম্পর্কও নেই। আমি শোলে দেখেছি বা এখনও দেখি এন্টারটেনমেন্ট এর জন্য। হিন্দি সিনেমার ৯৫% ই দেখা হয় বোধায় এন্টারটেনমেন্টের জন্য। তার মধ্যে শিল্প খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা, আর জোর করে শোলে কেন শিল্প নয় বলে কারন খুজতে যাওয়াটা স্ট্র ম্যান আর্গুমেন্ট। হিন্দি সিনেম নেভর প্রিটেন্ডস টু বি আর্ট ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস :d
  • সিএস | 49.37.32.200 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৩497561
  • ন্যাড়াবাবু , বড় আলোচনা তো বটেই। অ্যারিস্টটলের শিল্পতত্ত্ব আর ব্রেখটের তত্ত্বের মধ্যেও তো তফাত, তার মধ্যে দেশ কাল সবই ঢুকে বসে আছে, কিন্তু তফাত তো আছেই। কিন্তু সাবযেক্টিভিটি বা আমি মানি না, এইটুকু মনে হয় যথেষ্ট নয়। সাব্জেক্টিভিটিরও একটা তত্ত্ব থাকতে হয় বা তত্ত্ব না বলে বলি, বিশ্লেষণ থাকতে হয়। শোলে সিনেমা নিয়ে সেরকম কিছু আশা করি; ব্লকবাস্টারের যুক্তি ছাড়া বা ধরুন রায়মশাইদের সিনেমার বিপরীতে।
     
     
  • সম্বিৎ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৫497562
  • একেবারে ঠিক কথা, নইলে সম্পূর্ণ হ্যান্ড ওয়েভিং হয়ে পড়ে। একেবারেই বড় লেখার সময় নেই, নইলে দেখিয়ে দিতাম।
  • r2h | 2405:201:8005:9947:4581:35e2:9a3c:2548 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৬497563
  • সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে।

    তবে ঐসময়ের স্টলওয়ার্টরা সব দেশভাগের আগের সময়ের লোকজন। একটা ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হতেও তো সম লাগে একটু।

    উল্টো দিক দিয়ে এটাও জিজ্ঞেস করা যায়, ৫০ ৬০ ৭০এর প্রতিভাবান বাঙালী ৮০তে এসে সবার পেছনে কী করে গেল।
  • dc | 122.174.81.161 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:২০497564
  • "শোলেকে আমি এমনকি এনিও মোরিকেনের কাজের সাথেও তুলনা করিনা"
     
    ওটা সার্জিও ​​​​​​​লিওনে হবে, ​​​​​​​সরি ​​​​​​​চেয়ে ​​​​​​​নিলাম। ​​​​​​​
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:২১497565
  • এই ধরণের তুলনা টাই তো হাস্যকর। যার যা ইচ্ছে সে তাই দেখুক। কিসে আটকাচ্ছে ?
  • Amit | 103.60.200.23 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:২৭497567
  • ওইটাই তো আমারও প্রশ্ন। ৫০-৬০ এ এগিয়ে থাকা বাঙালি ৮০-৯০ এ সবার পেছনে পড়ে যাওয়ার সব দোষ তার ৩০-৪০ বছর আগের ঘটনাবলীর ওপর চাপিয়ে কার কি আদতে লাভ হবে ?
     
    অবশ্য যার যার নিজের এজেন্ডায় ফিট করতে চাইলে করতেই পারে। এরকম লেখা সৈকতবাবু আগেও লিখেছেন। নতুন কিচ্ছু নয়.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন