এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রহিম ব্যাপারীর অন্তর্ধান

    বিমুক্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ আগস্ট ২০২১ | ৪৫৪ বার পঠিত
  • ~রহিম ব্যাপারীর অন্তর্ধান~


    সবচে' চটকদার ব্যাপারটা হলো, রহিম ব্যাপারীর চলে যাওয়া। 


    রহিম ব্যাপারী কোথায় গিয়েছে? ওর শ্বাশুড়ির বদ্ধমূল ধারণা রহিম ব্যাপারী এই পৃথিবী ছেড়েই হাওয়া হয়ে গেছে, যদিও ওর স্ত্রী রিনা মনে করে রহিম ব্যাপারী জাহাজ বা অন্য কোনো যানের সাহায্যে ওদের ছেড়ে বিদেশ চলে গেছে, অর্থাৎ দেশ ছেড়েছে। 


    যেহেতু, রহিম ব্যাপারী বর্তমানে আশেপাশে উপস্থিত নেই। তাই, ওর অন্তর্ধান নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করা মানায় না। কারণ, এই চিন্তাভাবনার ফলাফল একটাই আসবে, রহিম ব্যাপারী কোথায় হারিয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে আমরা কেউ-ই  জানি না। 


    এবার ওর পরিবারের দিকে তাকানো যাক। ব্যাপারীর সতেরো বছরের একটি মেয়ে রয়েছে, যাকে ওর দাদী কালী বলে ডাকে। এই কালী ডাক থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, মেয়েটির গায়ের বর্ণ কালো। অবশ্য এটা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল, কারণ কালীর মা-বাবা অর্থাৎ রহিম ব্যাপারী এবং তার স্ত্রী রিনা, দুজনের কেউই তেমন কালো না। তাই যখন রহিম ব্যাপারীর মা নিজ নাতনির মুখ দেখলো তখন মুখ কুচকে চরম বিরক্তি নিয়ে বলেছিল, মাইয়াডা তাইলে নানার রঙই পাইলো! রিনার বাবার রঙ কালো ছিল। 


    ঘটনাটা এখানেই শেষ হয়ে গেলে ভালো হতো, কিন্তু তা হয় না। রহিম ব্যাপারী নিজের ঝুলে থাকা অঙ্গের সম্মান স্বরূপ, নিজের পৌরুষত্ব প্রদর্শনের জন্য নিজ স্ত্রীর উপর হাত তোলা শুরু করে। অতঃপর একদিন ও ভাতের প্লেট মেঝেতে ছুঁড়ে মারে, আর তখন ওর মা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠলেও মুখটা বেশ বিকৃত করে রাখেন এবং রিনাকে বলে ওঠেন, কোলের বেডিরে রাখো। ছুরৎ দেইখাই তো লাগতেসে আরেক ব্যাডার লগে হুইতা ওর জন্ম দিছো।


    এইভাবে কালীর জন্মপরিচয়েই একটি দগদগে ঘা তৈরি করে ফেলে ওর আপন দাদি শবজান বানু৷ এবং এইসব কিছুর সূত্রপাত হয় জন্মের সময় তার বর্ণ কালো হওয়ায়, এবং তার একটি ঝুলন্ত অঙ্গ অনুপস্থিত থাকায়। এমনকি রহিম ব্যাপারীর অন্তর্ধানের দিনও ব্যাপারী চোখ দুটো লাল রঙে রাঙিয়ে বলেছিল, এতো তেল থাকলে তোর বাপের কাছে যা। আমার ঘাড়ে পইড়ে আছস ক্যান?


    কালীর বর্ণ কালো হলেও ওর চোখ মুখ কেমন গাণিতিক সৌন্দর্য মেনে চলতো। পাশের বাড়ির রোহেনা চাচীর মতে, মাইয়া কালো হইলেও চেহারাখান একদম খোদার নিজ হাতে খোদাই করা। অর্থাৎ, আমরা বুঝতে পারি কালীর রূপ ছিল৷ নিজ গায়ের বর্ণ ওই রূপকে দমিয়ে রাখতে পারতো না, এইজন্য পাশের বাড়ির চাচী তারিফ না করে থাকতে পারে না। এই রূপ দেখেই পাড়ার ক্লাবে ক্যারাম খেলায় পারদর্শী হানিফ ভাই ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কানাঘুষা শুরু হয় যে হানিফ ভাই ওর দলের ছেলেদের বলে দিয়েছে, কালী স্কুলে যাওয়ার সময় অন্য কোনো ছেলে যেন ওর ধারেকাছে না ঘেঁষে। এমনকি মুদির দোকানি আনোয়ার অনেককেই বলে বেড়ালো, সে কোথাকার কোন চিপায় হানিফকে কালীর হাত ধরতে দেখেছে, এবং ঐ সময় দু'জনের মুখেই বেশ উজ্জ্বলতা ছিল। পরবর্তীতে আমরা খবর পাই, হানিফ এই কথা শুনে দীর্ঘকাল আনোয়ারের কাছ থেকে স্বাভাবিকের থেকে বেশি চাঁদা নিয়ে দোকানিকে 'টাইট' দিয়েছে


    আমরা আবার রহিম ব্যাপারীর অন্তর্ধানের দিনের ঘটনাবলীতে ফিরে আসি। রহিম ব্যাপারী নিজ মেয়ের জন্মপরিচয় নিয়ে হাজারতম বা তারও বেশিতম বারের জন্য অপবাদ ঘোষণা করে যথারীতি তার স্ত্রী রিনার পিঠে ঝাড়ুর দাগ বসাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। কালী সবকিছুই দেখে, এবং নিজের মনে মনে ওর বাবাকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দেয়। ওইদিন বিকেলে তাকে হানিফের সঙ্গে দেখা করতে দেখা যায় এবং চাঁদা ও মার খাওয়ার ভয়ে ভীত না থাকলে আনোয়ার হয়তো পাড়ার অনেককেই জানাতো যে কালীকে ওইদিন বেশ উত্তেজিত দেখা যায় এবং সে হানিফের কলার চেপে ধরে৷ এতে আনোয়ার যথেষ্ট অবাক হয়। কারণ যে হানিফ কথায় কথায় ছুরি চালায়, তার কলার ধরার মতো উঁচু হাত খোদা কাউকে দিয়েছেন, তা তার বিশ্বাস হয় না। 


    যাই হোক, ওইদিন রাতে রহিম ব্যাপারী আর বাড়িতে ফিরে না। অনেক খোঁজাখুঁজি চলে, এমনকি থানায় একটি জিডিও করা হয়। তবে সপ্তাহ খানেকের পর পুরো পাড়ার সবাই-ই বলাবলি শুরু করে যে রহিম ব্যাপারী হয়তো মারা গেছে বা কোথাও চলে গেছে। ওকে খোঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আরও মাসখানেক পর রিনা ওর মেয়েকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়ি বেড়াতে যায় এবং সেখানে ওরা রহিম ব্যাপারীকে নিয়ে আলোচনায় মগ্ন থাকে। যদিও রিনা এবং তার মায়ের কোনো ধারণাই নেই রহিম ব্যাপারী কোথায় চলে গেল, কিন্তু বারান্দার কোণে বসে চাল বাছতে থাকা কালীকে(যার ভালো নাম লিপি) দেখে আমাদের একটি ধারণা হয়, সে তার বাবার অন্তর্ধান নিয়ে হয়তোবা সম্পূর্ণ ধারণাই রাখে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন