এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অঙ্কের সঙ্গে আমার প্রেম 

    শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ জুন ২০২১ | ৯২৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • [২০১৬ সালে, ভ্যালেন্টাইন'স ডে-র প্রাক্কালে লিখেছিলাম। এখন বেনামে এই লেখা ফেবুতে মাঝেমাঝে দেখা থাকবেন অনেকে; whatsapp এ ফরোয়ার্ডও করে থাকবেন। এই প্রমাণ রেখে গেলুম গুরুর কাছে, এর রচয়িতা আসলে শ্রীশুভংকরঘোরাচৌ (আসল)।]

     

    । অঙ্কের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় রাম আর শ্যামের মাধ্যমে। দুজনেই গোপালের চেয়েও বেশি সুবোধ বালক। রাম চারটে লজেন্স নিয়ে খই ভাজছিল, শ্যাম এসে আরও পাঁচটা লজেন্স দিল তাকে। সব মিলিয়ে কটা হল? ৯টা। বন্ধুপ্রীতি দেখে আমার চোখে জলও এসে গেল। অঙ্কও মিলল।

     

    । একটু বড় হলাম। রাম-শ্যামও। এখন তারা আর অতো সহজ সরল নয়। সামান্য বালখিল্য দুষ্টুমি এসে জুটেছে। মার্বেল চুরি করা, তিনের পাঁচ অংশ পরোটা খেয়ে বাকিটা ফেলে দেওয়া, মাটির ঘড়াকে ১৯ টুকরো করে ভেঙে তার যে সাতের উনিশ অংশ আয়তক্ষেত্রে ভেঙেছে, সে দিয়ে ঘর কেটে কিতকিত খেলতে গিয়ে প্রতি তিন ঘর অন্তর এক ঘর করে পিছিয়ে আসা, ইত্যাদি। পড়ে খুব কষ্ট পেতাম। দুটো সুবোধ বালক কেমন মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে গেল। অবসাদে আমারও অঙ্ক ভুল হতে শুরু করলো।

     

    । ইতিমধ্যে কিছু শ্রমিক এসে ভিড় করেছে। ১৯ জনে হেসে খেলে কাজটা ২৫ দিনে করে দিতেই পারত, কিন্তু করবে কেন! করলে তো আমি পরীক্ষায় পাশ করে যাব। কাজেই, ১০ দিনের মাথায় তাদের ৮ জন হাওয়া খেতে চলে গেল। এবার তাহলে বল তো বাবু, বাকি ১১ জন বাকি কাজটা কদিনে করবে? – আরে তার আমি কি জানি রে ভাই! এর পিছনে প্রোমোটার থাকলে কাজটা আর শেষ নাও হতে পারে! তাতে আমার কি দোষ?

     

    । আরেকটু বয়স বাড়ল। একদম ঘেন্না ধরে গেল মানুষের ওপর। ক্লাস নাইন নাগাদ বুঝলাম, ওই রাম-শ্যাম হল দুটো আস্ত পিশাচ। পাশের বাড়ির চৌবাচ্চা ফুটো করা তো ছেড়েই দিলাম, একে অন্যের বাঁশে তেল মাখাতেও ছাড়ে না এরা!

     

    । আর এই এক হয়েছে, প্রত্যেক পুজোর ছুটির আগে হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষায় একটা ট্রেন কাশ্মীর আর আরেকটা ট্রেন কন্যাকুমারী থেকে ছেড়ে ঘণ্টায় ৮১.৩৯৭১ কিমি বেগে একে অপরকে ইন্দোরে পেরিয়ে গেল, আর আমি মুখে পেন গুঁজে বসে রইলাম, কারণ আমাদের বেড়াতে যাওয়ার টিকিট তখনও RAC!

     

    । এর সঙ্গে এসে জুড়েছিল থিওরেম, বাংলায় যাকে বলে উপপাদ্য, এবং যার প্রতিপাদ্য বিষয় আমার আজও অধরা। কি, না একটা ত্রিভুজ, যার বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই, তার যদি দুটো বাহু সমান হয়, সেটা আমার কোন কাজে লাগবে শুনি! থিওরেমের সঙ্গে একটা লেজুড় থাকতো, ‘এক্সট্রা’ বলে। আমি বরাবরই সেটাকে এক্সট্রা হিসেবেই ধরতাম। একবারও হাত দিইনি ওতে। এক্সট্রা তো।

     

    । এবার এল ক্যালকুলাস। এতদিন অব্দি টিনটিনের সঙ্গী, আমার প্রিয়। এবার অঙ্ক বই সামনে ধরে, সোজা করে ধরে, উল্টো করে ধরে, আয়নার সামনে ধরে, প্রতি মঙ্গলবার নিরামিষ খেয়ে – কোনওভাবেই ওই উৎকট চিহ্নগুলোকে ধরতে পারলাম না। ইন্টিগ্রেশনের চিহ্নকে (∫) আমি বরাবরই এফ (f) পড়তাম [আমার ভাষাপ্রেমটা একবার ভেবে দেখুন]।

     

    । আর তেমনই লাগত অঙ্ক স্যরদের। উফফ! ঠাণ্ডা চাহনি। চোয়াল শক্ত। টেবিল থেকে চকটা তুলতেন, যেন চাকু। তারপর বোর্ডের দিকে ফিরে একের পর এক অঙ্ক, খাতায় টুকে নেবার আগেই ধুলো উড়িয়ে বোর্ড মুছে চলে যাচ্ছেন পরের অঙ্কে। অঙ্ক শেষ করে তলায় চক দিয়ে একটা দাগ টেনে দিচ্ছেন, আমার গলা দিয়ে চাকুটা যেন স্যাট করে চলে যাচ্ছে।

     

    । বুক ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতাম। আমার টিমে শচীন-সৌরভের সঙ্গে ১০-১১ নম্বরে দুজন বিশ্বের-ত্রাস বোলার হিসেবে রাখতাম কে সি নাগ আর এস এন দে-কে। ম্যাকগ্রা-আক্রম-ওয়ালশ খেলা যায়। এদের দুজনকে খেলবে, কার সাধ্যি!

     

    ১০। এত সব দুর্বিষহ স্মৃতি, তাও অঙ্ককে মনে রেখেছি। কেন? কারণ, পরীক্ষাহলে অঙ্ক টোকার স্মৃতিতে আমার বন্ধুরাও জড়িয়ে আছে। সময় কমে আসছে, স্টেপ জাম্প করে শুধু উত্তরটা বল্‌। আমি কে সি নাগের ফাদার, প্রশ্ন পড়ে জাস্ট উত্তরটা লিখি। বাকিটা মাথায় থাকে।

     


    আরও মনে রেখেছি কেন জানেন? কারণ, বড় হয়ে সাহিত্য পড়েছি। সাহিত্য বলেছে, দুঃখ ভোলার নয়। তাই, ভুলিনি।

     

    (আজ্ঞে বিন্দাস শেয়ার করুন, তবে কপি-পেস্ট নয়। লিঙ্ক পাঠান।)

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন