এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  সমাজ

  • যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি সারাবেন

    Saikat Mistry লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ২৯ মে ২০২১ | ১৫৮৪ বার পঠিত
  • বাইগাছি অঞ্চল থেকে ফোন এসেছিল সন্ধ্যানাগদ। Nur Alam ফোন করেছিল। একজনের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেন কমে আসছে। কি করা যায়? লোকটাকে হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওখান থেকে বারাসাত বা আর জি করে রেফার করা হয়। বাড়ির লোকজন সদর হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বাড়ি নিয়াসে। দরিদ্র পরিবার। সাথে সচেতনতার স্তরও তলানিতে। যে কজন কোভিড পজেটিভ রোগীকে টেলিমেডিসিন পরিসেবা দেওয়া হয়েছে, ডা Swapan Kumar Jana দা বা অন্যরা প্রথমেই প্রেসার, সুগারের কথা জিজ্ঞেস করেন। রোগীর এই প্রাথমিক তথ্যটুকু কোভিড চিকিৎসায় জরুরি। তুফানকে আবার ফোন করে জানালাম যাচ্ছি। এসএনএফের Sandipদাকে সাথে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বাইগাছি পৌঁছাই। পড়ায় ঢোকার মুখে, রাস্তার মোড়ে জনৈক যুবককে জিজ্ঞেস করতে হল "এই লোকটির বাড়ি কোথায়?" যুবকটির প্রশ্ন - "ওই বাড়ি কেন যাবেন?" সন্দীপদা, জানাল - ব্যক্তিগত কাজে৷ ছেলেটি জানাল, "ওদের করোনা, যাবেন না।" লোকটির দাদাও পাঁচদিন আগে মারা গেছে। লোকটি ভুগছে। বলতে হল, সেজন্য আমারা যাচ্ছি। পৌঁছে দেখি, তুফান দাঁড়িয়ে। ততক্ষণে আর একটি স্থানীয় এনজিওয়ের থেকে বিনে পয়সায় অক্সিজেনের একটি লিড জোগার করেছে। এর আগে এই দরিদ্র পরিবারটি হাজার তিনেক টাকায় অক্সিজেন জোগার করেছিল। আজই বিকেলে সেটি শেষ হল।

    বাড়িতে ঢুকতে একটা থমথমে ভাব। ঘরে ঢোকার মুখে মধ্যবয়সী লোকটির স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞেস করতে হল -" কি হয়েছে? " তার স্ত্রী জানালেন -" কিছু না, একটু হেঁচকি।" "অক্সিজেন লাগছে কেন? এর কি করোনা রিপোর্ট হয়েছে?" মহিলাটি সজোরে প্রতিবাদ জানালেন - "ওনার করোনা নেই। কে বলল করোনা?" আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। লোকটির সুগার আছে কিনা, জানতে চাইলে লোকটি শ্বাসকষ্ট জড়ানো কন্ঠে জানালেন - না। ওর স্ত্রী আরও জোরে জানালেন - "ওনার সুগার কখনও নেই"। নিয়ামাবলী মেনে ঘরে ঢুকতে হল।

    অক্সিজেন চলছিল। অক্সিমিটারে তখন স্যাচুরেশন ৭০ এর কাছে। লোকটির জবানীতে সুগার নর্মাল৷ তবু সুগার মাপতে হবে। মহিলাটি প্রায় বাধার ভঙ্গীতে যেন বললেন - "এসব কেন?" কোনো কথা না বলে, রেনডম সুগার পরীক্ষা করে পাওয়াগেল ৩৫৫। এবার কি করণীয়? ডাক্তারবাবুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে হবে। লোকটিকে বললাম, আপনার সমস্যাগুলো ডাক্তারবাবুকে বলবেন। ফোন বের করতেই মহিলাটি এগিয়ে এলেন, "ভিডিও কল করা যাবে না"। বলতে হল, যিনি চিকিৎসা করবেন, তিনি এর সঙ্গে কথা বলবেন। মহিলাটি রাজি হলেন না। "যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি সারাবেন"। বিষয়টি যেন এমন। বলা হল বার বার ফ্রীতে অক্সিজেনের লিড তো জোগাড় করা যাবে না। একে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এই ব্যাপারে সাহায্য করব। মহিলা বা লোকটি রাজি হলেন না। মহিলাটির তীর্যক প্রতিক্রিয়া - "এনার কি করোনা যে নিয়ে যাবেন?" লোকটির ঘরের লাগোয়া তার ভাইদের ঘর। তারাও আতঙ্কিত। দূর থেকে তারা বলেচলিছেন - "এনারা যখন হাসপাতালে নিয়ে যাবে, যাক না।" মহিলাটি কোন জবাব দিলেন না। শুধু জানালেন - "ওনার শালা আসুক। শালাই সেসব বলবে।"

    শ্যালেককে ফোন করা হল। তিনি খুব দূরে থাকেন না। পরিস্থিতি জানানো হলে তিনি বললেন, তারও তো পরিবার আছে। অবাক লাগল, কোভিড নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের কি পরিবার নেই? শ্যালকের সংযোজন, তার ভাই নাকি কোভিড আক্রান্ত। তাই জামাইবাবুকে এখনই দেখতে আসতে পারছেন না। দেরি হবে।

    অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে চলে আসতে হল। আশেপাশের দু একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। ধর্মীয় কারণে নাকি ভিডিও কলিং করতে রাজি হননি লোকটির স্ত্রী। বলতে বাধ্য হলাম, তাহলে তো অক্সিজেন নিতেও ধর্মীয় বাঁধা থাকার কথা? উত্তর এল না। শ্যালক আসতে দেরি করলেন। আমরা চলে এলাম। পরে তুফানের সাথে কথা হচ্ছিল। শ্যালক জানিয়েছেন, আজ থাক। কাল তুফানদের সাহায্য পেলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার অর্ধেকটার ব্যবস্থা করে দিলেও, তারা আজ হাসপাতালে যেতে রাজি হলেন না। রোগবালাইয়ের থেকে ধম্ম এতটা উঁচুতে সেটা টের পাওয়া গেল। পরবর্তী খবর আর আসে নি। কাল সকাল পর্যন্ত ধম্ম তাকে সুস্থ রাখুন, এটাই এখন প্রত্যাশা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন