এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় 

    Abhishek Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ মার্চ ২০২১ | ৭১০ বার পঠিত
  • সুবর্ণলতা জীবনে বেশী কিছু চায়নি। একটা বারান্দা, দখিন খোলা বারান্দায় খানিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহমান জীবনকে চেয়ে চেয়ে দেখবে। কিছু চাওয়া থাকে, ভাত-কাপড়ের প্রয়োজনের বাইরে সেগুলো। মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে যাদের চাওয়ার কিছু থাকে না, বাধ্যতঃ যারা জীবনের দাবির বাইরে আর কিছু চাইতে পারে না বা জানে না, সুবর্ণলতার চাওয়া-না চাওয়া তাদের কাছে খানিক বেশী বেশী মনে হয়। তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে হয় না, তার লড়াই নিজের সঙ্গে, পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে। খাঁচার পাখি আর বনের পাখির মনোজগতের যা ফারাক, অচলায়তনের সুভদ্র আর পঞ্চকের যে মানসিক কাঠামো, সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে সুবর্ণলতার দক্ষিণের বারান্দার সুপ্ত বাসনা। এই একটা জায়গাতেই সুবর্ণলতার মনোজগত্ খাঁচার পাখির থেকে পৃথক্। খাঁচার দরজা খুলে দিলেও খাঁচার পাখি উড়তে পারে না। সুবর্ণলতা আমরণ সোনার পিঞ্জরে থেকেও মনে মনে সে বনের পাখি। খাঁচার পাখি দুঃস্বপ্নেও কোনও অ্যাডভেঞ্চারের আশা রাখে না, কিন্তু সুবর্ণলতা একটা উন্মুক্ত দখিনের বারান্দা চায়। লালন যাকে বলেন, হাওয়াঘর, সপ্ততালা ভেদ করে যেখানে অপ্রাপ্তির অবসান ঘটে। "অধর মানুষের" সন্ধান মেলে। সুবর্ণলতার জীবনে মুক্ত বাতাসের ব্যঞ্জনা খুবই প্রবল। হঠাত্ করেই মনে করিয়ে দেবে কিছু পঙক্তি.. "হাওয়াতে হাওয়া মিশায়ে/ যাও রে মন উজান বেয়ে"..... এই জায়গাতেই কোথাও যেন সুবর্ণলতায় লালনকে খুঁজে পাই, যে সযত্নে লালন করে চলে কিছু অচিনপুর আর আরশিনগরের স্বপ্ন।

    "গুরুপদে যার মন ডুবেছে রে/ সেকি ঘরে রইতে পারে
    রত্ন থাকে যত্নের ঘরে/ কোন সন্ধানে ধরবি তাই।।
    মৃণালের পর আছে স্থিতি/ রূপের ছটা ধরবি যদি
    লালন কয় তার গতাগতি/ সেইখানেতে চাঁদ উদয় হয়।"

    তখন সত্যবতী-সুবর্ণলতা-বকুল ট্রিলজির আধারে একটি প্রবন্ধ লিখছিলাম। যা লিখছি বাদ দিয়ে দিচ্ছি পরেরদিনই। মূলসত্যে যেন কিছুতেই পৌঁছে দিতে পারছি না লেখাটাকে। অগত্যা কিছু একটা দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যে। বেশ কিছু হেঁটে বাসস্ট্যান্ড। গ্রীষ্মের দুপুর। একটু ছায়া খুঁজে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমাটা খুলতেই বাড়িটা চোখে পড়ল। আশাপূর্ণা সাহিত্য ভবন। দোতলার বারান্দা। উপচে পড়া কোনও এক লতাগাছের বাঁধনে কিছুটা আবডালে সেদিন বারান্দাটা ভাল করে দেখলাম। এখানেই বসে হয়ত... হয়ত না, এখানে বসেই লিখে গেছেন পর পর। আমার আজন্ম দেখে আসা বাড়িটাকে সেদিন মনে হল হাওয়াঘর। দুখান চাকার উপর তিনমহলা বাড়ি। মানবশরীর, মানবজমিন। সেখানেই অচিন পাখির আনাগোনা। বাড়ির মধ্যিখানে সেই হাওয়াঘর, হৃদয়, দখিনের বারান্দা। বুকে সঞ্চিত থাকে রত্নরাজি, বুক হাতড়ে হাতড়ে সাগরমন্থন করে সন্ধান মেলে মানুষরতনের।

    অটোয় বসে ভাবছিলাম। কখন যে থেমে গেছে গাড়িটা খেয়াল নেই। ডান-দিক থেকে গরম হাওয়া মুখে আছড়ে পড়ল। বললাম - -" যাবে না? নেমে যাব? " অটোর চালক বললেন - - - "দাদা, একটু দাঁড়িয়ে যাই এই হাওয়াগলিতে। যদি একটা প্যাসেঞ্জার পাই।"

    "হাওয়াগলি কীরকম?"

    "এই তো, দেখছেন না, বাঁদিকে তাকান।"

    একটা সোজা লম্বা রাস্তা। একদিকে কিছু ছোটছোট বাড়ি। আর একদিকে হাইরাইজ। বিজ্ঞানের নিয়মে অপরিসর জায়গায় হাইরাইজে বাধা পেয়ে হাওয়া সেখানে তীব্রগতিতে ছুটে চলেছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের নানারঙের পতাকা পতপত করে উড়ছে। পাগল হাওয়া যেন উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে কোন দিকশূন্যপুরে। বেশ তো ব্যাপারটা। আগে কখনও খেয়াল করিনি। অটোচালকের কথাগুলো শুনতে পেলাম - - "এখানে এলে দাদা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে যাই। শরীর মন সব জুড়িয়ে যায়।"

    আমার চোখে তখন একটা আস্ত দক্ষিণের বারান্দা যেন রাজকাহিনীর বই-এর পাতা থেকে উঠে এসে ভেসে বেড়াচ্ছে... হাওয়ায় হাওয়ায় যেন বলে যাচ্ছে কেউ..

    "ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
    নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।
    যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
    লাউমাচাটার পাশে।
    ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
    সন্ধ্যার বাতাসে!!!"

    ©️অভিষেক ঘোষ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন