এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  পড়শির কথা

  • ভিন্ন কাহিনি, ভিন্ন চরিত্র, ভিন্ন স্বাদ—রক্তস্রোতের মতো কী যেন দিয়ে জোড়া

    তৃষ্ণা বসাক
    পড়াবই | পড়শির কথা | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ | ২৬৬৭ বার পঠিত
  • ই. সন্তোষ কুমার। আধুনিক কাহিনিকার। ভাষা মলয়ালমএকগুচ্ছ গল্প। রহস্যময়—প্রকৃতির অতীন্দ্রীয় রহস্য নয়, মানবজীবনের ছোটো ছোটো অপরাধ বড়ো বড়ো পাপ আর গোপনীয়তায় সে রহস্যের নির্মাণ। প্রতি মুহূর্তে পাঠকের মনে এক উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কাহিনির চলনে থাকে থ্রিলারের স্বাদ। পড়লেন লেখক ও তরজমাকার তৃষ্ণা বসাক


    দক্ষিণ দ্রাবিড়ীয় গোষ্ঠীর ভাষা মালয়ালমে প্রথম সাহিত্যকর্মটি সম্ভবত একটি মহাকাব্য ‘রামচরিতম’ যা ত্রয়োদশ শতকে লেখা। এর পর পাই জনপ্রিয় পাট্টু (সংগীত) সাহিত্য, মণিপ্রবালম (রুবি প্রবাল) কাব্যধারা যার মধ্যে মিশেছিল মালয়ালমে ও সংস্কৃত সাহিত্যের ইরোটিক কবিতা। এর পরে এল গদ্যে পদ্যে মিশেল ‘চম্পূ’ ও ‘সন্দেশা’ কাব্য। পঞ্চদশ শতকের কবি চেরুসেরি নামবুদিরি, যাঁকে বলা হয় মালয়ালম্‌ সাহিত্যের জনক, ভক্তিমূলক কবিতার সূচনা করলেন। অন্য ভারতীয় ভাষাগুলির মতোই মহাকাব্য, শৃঙ্গার ও ভক্তি পেরিয়ে মালয়ালম ভাষা উনিশ শতকে এসে খুঁজে পেল তার আধুনিক স্বর, যার পত্তন বিখ্যাত ত্রয়ীর হাতে—কুমারন আসান (১৮৭৩-১৯২৪), উল্লুর এস পারমেশ্বরা আয়ার (১৮৭৭-১৯৪৯) ও ভাল্লাথোল নারায়ণ মেনন (১৮৭৮-১৯৫৮)।





    (উপর থেকে) কুমারন আসান (১৮৭৩-১৯২৪), উল্লুর এস পারমেশ্বরা আয়ার (১৮৭৭-১৯৪৯) ও ভাল্লাথোল নারায়ণ মেনন (১৮৭৮-১৯৫৮)

    এই আদিযুগ থেকে আধুনিক যুগ, পরে উত্তর-আধুনিকতায় মালয়ালম্‌ গদ্যসাহিত্যের যে বিবর্তন, তার স্থপতি অনেকেই। তবে সর্বাধিক পরিচিত মুখগুলি অবশ্যই ভৈকম মহম্মদ বশীর, তাকাষি শিবশংকর পিল্লাই, এম মুকুন্দন, কমলা দাস (বা সুরাইয়া) প্রমুখ। এঁদের সৃষ্টির জগতটি অতি বিচিত্র। তাকাষি শিবশংকর পিল্লাই-র ‘চেম্মিন’ (চিংড়ি)-র প্রান্তিক মৎসজীবী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এম মুকুন্দনের ‘মায়াঝি নদীর ধারে’-র ফরাসি উপনিবেশের মানুষজনের আসমান জমিন তফাত। হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের সহাবস্থানের জটিল ম্যাট্রিক্স, দীর্ঘ কমিউনিস্ট শাসন, বিদেশি উপনিবেশ—এমন অগণন উপাদান মালয়ালম্‌ সাহিত্যকে এক অসামান্য উচ্চতা দিয়েছে।

    পরবর্তী প্রজন্মের গল্পকাররা যে সেই উচ্চতা ধরে রাখতে সক্ষম হবেন, এক ঝাঁক নতুন লেখক উঠে এসে সেই আশা জাগাচ্ছেন। যেমন সুস্মেশ চন্দ্রথ, যেমন শিবা, যেমন ই সন্তোষ কুমার। ই সন্তোষ কুমার (জন্ম ১৯৬৯) মালয়ালম্‌ ভাষার এই প্রজন্মের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য লেখক। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা পনেরোর বেশি। সেরা গল্প সংগ্রহের জন্যে এবং উপন্যাস ‘অন্ধাকরানঝি’–র জন্যে দুবার পেয়েছেন কেরালা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার যথাক্রমে ২০০৬ আর ২০১২ সালে। এই উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ—আইল্যান্ড অফ লস্ট শ্যাডোজ ২০১৫ সালের ক্রসওয়ার্ড পুরস্কারের জন্য বাছাই করা হয়েছিল। তাঁর দুটি গল্প থেকে মালয়ালম সিনেমা হয়েছে। ই সন্তোষের বারোটি ছোটো গল্প মালয়ালম্‌ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন বেণুগোপাল। তিনি অনুবাদ না করলে আমরা জানতেও পারতাম না, ভারতের অন্য প্রান্তে বসে এমন সব গল্প কেউ লিখে চলেছেন।



    ই. সন্তোষ কুমার

    লেখক ভূমিকায় জানিয়েছেন এই বারোটি গল্প প্রায় দু-দশক ধরে লেখা (ভাবা যায়!) আর তাই জন্যই বোধহয় একটি গল্পের থেকে আর-একটি গল্প বিষয়ে, চরিত্রে এত আলাদা। তবে এগুলিকে জুড়ে রেখেছে রক্তস্রোতের মতো কিছু একটা। সেই কিছু একটা কী? সন্তোষের দর্শন এবং কথনভঙ্গি, জীবনসংরাগ আর সৌন্দর্য বোধ। ‘রাইটার্স ক্রিয়েট নিউ ওয়ার্ল্ড, অ্যান্ড নিউ পিপল। হোয়াইল রাইটিং স্টোরিজ অ্যাট লিস্ট, দে ডু প্লে গড, ইন দেয়ার লিটল ওয়ে’।

    এই বারোটি গল্প যেহেতু তাঁর লেখক জীবনের বিভিন্ন সময়ে লেখা, তাই এখানে তাঁর বিবর্তন যেমন ধরা পড়ে তেমনি কথাজীবনের পাল্‌স পয়েন্টটাও বোঝা যায়। যেটা আমাদের মতো পাঠকের পক্ষে সুবিধাজনক যারা অনুবাদে লেখককে এইটুকুই পড়তে পারছে।

    সন্তোষের গল্পে একধরনের রহস্য আছে, তা প্রকৃতির অতীন্দ্রীয় রহস্য নয়, মানবজীবনের ছোটো ছোটো অপরাধ বড়ো বড়ো পাপ আর গোপনীয়তায় সে রহস্যের নির্মাণ। এই রহস্যের বয়ন এমন ভাবে করেন সন্তোষ যে প্রতি মুহূর্তে পাঠকের মনে এক উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কাহিনির চলনে থাকে থ্রিলারের স্বাদ।

    যেমন প্রথম গল্পটি—হিল্‌স্‌, স্টার্স। পাহাড়ের ঢালে তিনটে বাড়ি আর সেখানে বাবা মা কাজে চলে গেলে নিঃসঙ্গ চার পাঁচটি বাচ্চা। তারা নানান খেলা খোঁজে। একদিন কেউ একটা হুইসল পেলে তাদের খেলার ধরন বদলে যায়। তারা আড়াল থেকে হুইসল বাজিয়ে ট্রাক থামিয়ে মজা দেখে। এখন থেকে তাদের খেলার বিষয় হয়ে যায় পাহাড়ি রাস্তায় যাওয়া গাড়িগুলো। একদিন এক বালক কিছু ভাঙা কাচের টুকরো জোগাড় করে, সেগুলো তারা রাস্তার মাঝখানে রেখে ট্রাকের চাকার শক্তি পরীক্ষা করে। একদিন এক বয়স্ক লোকের গাড়ির চাকা ফেটে যায় সেই কাচে। ছেলেটি আড়াল থেকে দেখে সেই গাড়িতে একজন খুব অসুস্থ বৃদ্ধা শুয়ে। সে বুঝতে পারে এঁকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ। চাকা পালটে স্টেপনি লাগিয়ে রওনা দিতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

    ছেলেটি অপরাধবোধে ভোগে। বাবা কাজ থেকে ফিরলে সে সব খুলে বলে। এরপর গোয়েন্দা কাহিনির মতো শুরু হয় অনুসন্ধান। অনেক খুঁজে পাওয়া যায় বৃদ্ধ লোকটির বাড়ির হদিশ। বাবা নিয়ে যায় ছেলেকে পাহাড়ের আরও উঁচুতে সেই বৃদ্ধের বাড়িতে। ক্ষমা চাইতে। সেখানে উন্মোচিত হয় এক ভয়ংকর সত্য। সেদিন বৃদ্ধ তাঁর স্ত্রীকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেই স্ত্রী ইতিমধ্যেই মৃত। আর তাঁকে খুন করেছেন এই বৃদ্ধ। কেন? সেই প্রকৃতির কোলে একটি বালকের কাছে ধীরে ধীরে খুলে যায় বিচিত্র মানব মন, তাদের জটিল গতিবিধি, নরনারীর দুঃসহ দাম্পত্য। কিন্তু ফেরার সময় সেই উঁচু পাহাড় আর তারাভরা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে কারো দোষ দেখার কথা মনে থাকে না। আমরা বুঝি কোনো পাপ কঠিন নয়, কোনো দুঃখ ব্যক্তিগত নয়।

    ‘জীবন যতই মহৎ বা বিচিত্র হোক, সত্য বৃত্তান্ত না জানালে আত্মজীবনীর কোনো দাম থাকে না।... সত্য বড়ো ভয়ংকর, সত্য বড়ো রহস্যময়... আজকাল মনে হয় গুণগুলিও যেমন গুণ না, দোষগুলিও তেমন দোষ না, স্বভাবের বিচ্ছুরণ। অর্থাৎ প্রকৃতির বিচ্ছুরণ। প্রকৃতিকে এড়াবে কে! কী করে এড়াবে! এই বিশ্বই তো প্রকৃতি। ক্রমশ মনে হবে দোষগুণ কিছু না—উত্তল এবং অবতল, উচ্চ এবং অবচ, সমতল জল মাটি বাতাস আগুন এই উঠছে এই নামছে’ (গদ্যসংগ্রহ, মণীন্দ্র গুপ্ত)

    এই গল্পটি পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়। বহুদিনের বুভুক্ষু মন এইরকম কিছু পড়তে চাইছিল যে।

    কিংবা ‘লাইট ইয়ার্স’ গল্পটি, যা একটি অন্ধ মেয়েকে ঘিরে। যে অন্ধ, কিন্তু অসহায় নয়। এক চক্ষুষ্মান পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে সে বেড়াতে যায়, গিয়ে তার বারবার মনে পড়ে তার প্রাক্তনকে, যা বর্তমান সঙ্গীর ঈর্ষার ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কে ছিল তার প্রাক্তন সঙ্গী? আদৌ কি চক্ষুষ্মান এই বর্তমান প্রেমিক? মেয়েটির ঘুমের সুযোগে সে যে তার নগ্ন শরীরের ছবি তুলেছে তা গোপন থাকে না মেয়েটির কাছে। সে এর প্রতিবাদ এবং প্রতিকার করে অপ্রত্যাশিত ভাবে।

    ‘জেমস, তুমি আমাদের বেড়ানোর ছবি তুলেছ তো, না?’ কমলা জানতে চাইল ‘কার্ডটা কোথায়?’

    ‘ক্যামেরার মধ্যে’ জেমস বলল ‘ম্যাঙ্গালোরে গিয়ে প্রিন্ট করাব।’

    ‘প্রিন্ট দিয়ে আমি কী করব? তুমি আমাকে কার্ডটা দেখাও। আমি একটু ছুঁই, অনুভব করি।’

    সে ক্যামেরা থেকে কার্ডটা বার করে ওর মুঠোয় রাখল। ওকে হতবাক করে কমলা ওটা মুখে পুরে চিবোতে লাগল। তারপর গাড়ির দরজা খুলে থু থু করে ফেলে দিল।

    ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি কমলা? সমস্ত ছবিগুলো নষ্ট হয়ে গেল, বুঝেছ?’ জেমস চিৎকার করে বলল।

    ‘যেতে দাও’ ক্যাজুয়ালি বলল কমলা।

    জেমস বাইরে তাকাল। গাড়ি একটা ছোটো শহরে ঢুকছে। ট্রাফিকের ভিড় বাড়ছে।

    ‘বেজন্মা কোথাকার! আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম, আমার ছবি তুলেছ না?’ কমলা জিগ্যেস করল। ‘আমার নগ্ন অবস্থায় তুলেছ। আমি সেটা আন্দাজ করেছিলাম।’

    জেমস ওর দিকে সতর্কভাবে তাকাল। ওই সাদা চোখের তারা... তার মধ্যে থেকে বিচ্ছুরিত আলো... যেন তাকে আঘাত করবে, সে ভয় পেল।

    কমলা জোরে হাসল ‘তুমি একজন অন্ধকে ব্ল্যাকমেল করতে পারবে না। কক্ষনো না! অন্ধের নগ্নতা থাকে তার মনে। তবু, আমি চাই না ওই ছবিগুলো তোমার জিম্মায় থাকুক। তুমি এগুলো রাখার যোগ্য নও। তুমি জাস্ট একটা বড়ো... বড়ো বেজন্মা।’

    তিন অন্ধকে নিয়ে আর-একটি গল্প। সেখানে তার নিজের একটি প্রজেক্টের কাজ শেষ করতে হাজির হয় সাংবাদিকতার এক ছাত্র। ‘অন্ধের হস্তিদর্শন’ এই প্রবাদটির ওপর সে কাজ করবে ভাবে। তিন অন্ধকে সে হাতির অভিজ্ঞতা বলতে বলে। তিনজন, যারা কোনোদিন হাতি দেখেনি, তাদের অনুভবের তীব্রতা কাঁপিয়ে দেয় তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ ছাত্রটিকে, যে নির্লজ্জের মতো নিজের কাজ হাসিল করতে এদের কাছে এসেছিল।

    ‘... এই প্রথমবার আমি এত কাছ থেকে ঢাকের আওয়াজ শুনলাম, উন্মাদ মৌমাছিদের গর্জনের মতো ঢাকের আওয়াজ সাংঘাতিক জোরে বাজছিল। ঠাসা ভিড়ে এ ওর গায়ে পড়ছিল। অন্যের ঘামের নিশ্বাস নিতে হচ্ছিল আর একজনকে।

    ‘হঠাৎ... শেখরনের মুখের পেশি শক্ত হয়ে গেল। একটা ভয় ওকে গ্রাস করে নিল। ওর সাদা চোখের মণি পিটপিট করে উঠল। অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতা ওকে পেয়ে বসল, মনে হল ঘরে আর কোনো লোক নেই।

    ‘হঠাৎ বন্ধুরা, আমার চারদিক যা তখনও পর্যন্ত মজবুত আর স্থির মনে হচ্ছিল, নড়তে শুরু করল। আর খুব দ্রুত এটা ঘটছিল। ঘনসন্নিবদ্ধ ভিড়, যাকে মনে হচ্ছিল একটা পাথরের দেয়ালের মতো, মুহূর্তে ছড়িয়ে গেল। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল—হাতিটা ক্ষেপে গেছে। আমি ভিড়ের পায়ের তলায় পিষে যাচ্ছিলাম। কেউ আমার ওপর দিয়ে লাফিয়ে গেল, আবার কেউ মাড়িয়ে গেল। আমি আমার ভাইয়ের হাত ছেড়ে গেছিলাম। উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু প্রতিবারই আরও বেশি লোক আমাকে মাড়িয়ে যাচ্ছিল আর আমি বারবার পড়ে যাচ্ছিলাম। আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে, আমি আমার চারপাশে নৈঃশব্দ্য আর শূন্যতা টের পেলাম, যেন উৎসব প্রাঙ্গণে আর কেউ নেই। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। এর বেশি কিছু করতে পারলাম না। কোন্‌ দিকে যাব বুঝতে না পেরে আমি কাঁদতে আরম্ভ করলাম।’

    এইরকম আরও কিছু অসাধারণ গল্প—থ্রি ফিঙ্গার্স, অ্যানাদার সামার, দা গসপেল অ্যাকরডিং টু ডেভিল। বরঞ্চ আ ফিস্টফুল অব মাস্টার্ড সিডস গল্পটিই কিছু হতাশ করে।

    তুলনায় সামান্য তিনপাতার গল্প ‘হেলমেট নট ফর সেল’। কোনো মারপ্যাঁচ নেই। কিন্তু কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মৃত ছেলের পড়ে থাকা বাইকটা বাবা বেচে দিচ্ছেন, এক গাড়ির দালালকে। অর্থের প্রয়োজন তাঁর। দালালটি অনেক কথা বলে যাচ্ছে পুরো গাড়ির বাজারদর নিয়ে, বাবা চুপ করে আছেন। একেবারে শেষে সে যখন চলে যাচ্ছে, ঘর থেকে তিনি হেলমেটটা এনে বললেন—এটা নিয়ে যাও, এর জন্য পয়সা লাগবে না। তুমি এটা পরে যাবে।

    যেন চিত্রভাষাময় এই মুহূর্তটি। সন্তোষের অনেক গল্পেই চলচ্চিত্রের ট্রিটমেন্ট রয়েছে।

    ‘ছেলেটা দেখতে পাচ্ছিল লোকটার চোখ জলে টলমল করছে।

    ছেলেটা হেলমেট পরে নিল। যদিও হেলমেটটা একদম তার ঠিক মাপে মাপে, তবু কেন জানি তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

    ‘ঠিক আছে, না?’ বয়স্ক লোকটি তাকে জিগ্যেস করল।

    ছেলেটা বলার চেষ্টা করল, হ্যাঁ, ঠিক আছে, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরল না।’

    সন্তোষের গল্পও আসলে এইরকম। মনে হয় মাপে মাপে, কিন্তু পড়তে পড়তে কোথায় যেন দম বন্ধ হয়ে আসে।
    (গল্পগুলির উদ্ধৃত অংশের বঙ্গানুবাদ করেছেন তৃষ্ণা বসাক)




    আ ফিস্টফুল অব মাস্টার্ড সিডস
    (আ কালেকশন অব শর্ট স্টোরিজ)
    ই সন্তোষ কুমার
    মূল মালয়ালম্‌ থেকে ইংরেজি অনুবাদ: বেণুগোপাল
    নিয়োগী বুকস
    মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা


    বইটি অনলাইন কেনা যেতে পারে এখানে



    গ্রাফিক্স: মনোনীতা কাঁড়ার

    এই বিভাগের লেখাগুলি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করে 'পড়াবই'এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ | ২৬৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 61.68.146.29 | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১০:০০102223
  • অন্যরাজ্যের লেখা বিশেষত কন্টেম্পোরারি লেখা সম্পর্কে আমি এতটাই অজ্ঞ যে বৎসরান্তে কলেজস্ট্রীটে বা বইমেলায় সাহিত্য আকাডেমির স্টলে খোঁজাখুঁজিতে তল মেলে না। তাই, পড়শির কথা সিরিজটি আমার অত্যন্ত জরুরী মনে হয়েছে। তৃষ্ঞার কথায় ভরসা করে বইপত্র কিনে ফেলা যায় চোখ বুজে।

    কাকতালীয়বৎ, দুদিন আগেই তৃষ্ঞারই অনুবাদে ই সন্তোষকুমারের শয়তানের বাণী পড়ছিলাম। কিন্তু ঐ অবধি-ই। অতটা আগ্রহী হয়ে উঠতে পারি নি সে দিন।
    কিন্তু এই আলোচনায় যে গল্পগুলির উল্লেখ করা হয়েছে- আগ্রহ জন্মাল তো বটেই। কিনে ফেলতেই হবে।

    অনেক ধন্যবাদ- এই সিরিজের পরিকল্পনা আর উপস্থাপনার জন্য।

  • ar | 96.230.106.154 | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১৪102228
  • tRishhNaa = = তৃষ্ণা
     

  • ইন্দ্রাণী | ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৮518469
  • এবার বইমেলায় গিয়ে কিনেছি। পড়েও ফেললাম। আইল্যান্ড অফ লস্ট শ্যাডোজ পেলাম না, ফুরিয়ে গিয়েছিল। আনিয়ে দেবেন দুদিনের মধ্যে বলেছিলেন স্টল থেকে, কিন্তু আমি তার আগেই চলে এলাম। সাহিত্য আকাদেমির স্টলে সন্তোষকুমারের লেখার বঙ্গানুবাদ খোঁজ করে পেলাম না।

    বুলবুলভাজার এই লেখাটি পড়েই বইটি সম্বন্ধে আগ্রহী হই। তৃষ্ণা ( ar, দেখুন এবারে ভুল হয় নি) যা লিখেছিলেন, তার বাইরে খুব বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। টুকরো টাকরা কিছু পাঠপ্রতিক্রিয়া, অনুভূতি পরে কখনও লেখা যাবে।
    লেখাটির জন্য তৃষ্ণাকে ধন্যবাদ জানালাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন