পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
ছেলেবেলার কাহিনী সবার লিখতে ভালই লাগে। এখানে বলে রাখা ভালো ছেলে বেলার কাহিনী লিখতে বসলেই ব্যক্তি নিজেই নিজের অজান্তে বয়স্ক হওয়ে পড়ে ও ঘটনার আবহে জ্ঞান বিতরণ করেন। বর্তমানে আমি বেশ ইঅং। নিন্দুকেরা আমার এই মন্তব্য কে বাজে কথা বলে উড়ি যে দিতে পারেন, কিন্তু আমি যেহেতু একজন নাছোড়বান্দা ভদ্রলোক তাই নিজের সম্পর্কে আমি এই মনোভাব পোষণ করবোই করব। যাই হোক আমার মতে আমি একজন মাত্র 45 বছরের তরতাজা ছোকরা হওয়ার দরুন আজ আমি আমার এক গুরুর ছেলেবেলার কাহিনী শোনাবো।।। আমাদের গ্রাম গুষ্করা তখন বেশ ছোট্ট গ্রাম ছিল। সেটা আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে। এটা সেই সময়ের কথা, যখন আমরা ধর্ম বলতে এলাকার বারোয়ারি তোলার দুগ্গা ঠাকুর বা ঈদের সিমাই বুঝলেও মুসলমান পড়ার ভেতরে মাদারসাহেব তলা টা কোন ধর্মের সেটা ঠিক বুঝতে পারতাম না। কারণ আমাদের চেনাজানা সব ধর্মের মানুষদের কাছ থেকে জানতে পারতাম তারা মাদার সাহেবের পুজো দিতে ওখানে যায়।
আমার গুরু দেব সেই সময় বেশ ছোটো, নিজ এলাকায় তার ব্যক্তি ক্যারিশমা এর দৌলতে তখন বেশ কয়েকটা শিষ্য ও তিনি জোটাতে পেরে ছিলেন। এহেন গুরুর পাড়ার বেশ কিছু কাকা বা দাদা গোছের মানুষের ছিপে মাছ ধরা দেখে তার ও মনে হলো যে মাছ ধরা ব্যাপারটা বেশ কঠিন কাজ কিন্তু গুরু হওয়ার জন্য মাছ ধরার মত কাজে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করতে হবেই। অত এব যেমন ভাবা তেমন কাজ শুরু। বারান্দায় রাখা প্রচন্ড পরাক্রম শালী বাবা এর ছিপ নিয়ে এলাকার ছোট্ট পুকুরে মাছ ধরার নিজেই নিজের প্রশিক্ষণ শুরু। দিন দুয়েক যাবার পরেই আমার গুরুদেব টি বুঝতে পারলেন যে ব্যাপারটি যত টা কঠিন ভাবা হচ্ছিল এটা তার থেকেও কঠিন। এদিকে গুরুদেবের ঠাকুমা প্রত্যেক দিন অপেক্ষা করে থাকতেন আজ বোধ হয় তাঁর গুণধর নাতি একটা পাঁকাল মাছ ও ধরে আনবে। এরকম কয়েক দিন অকৃতকার্য হবার পরে একদিন যখন গুরুদেব মন খারাপ করে পড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন কি করা উচিৎ ঠিক তখন দেখলেন যে গুরুঠাকুরের বাবা বাজার থেকে একটি মাছ কিনে পড়ার ই একজনের হাত দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। সেই ব্যক্তি টি পথি মধ্যে আমার গুরুদেব এর সাথে দেখা হওয়ার জন্য বাড়ি পর্যন্ত না গিয়ে তার হাতে কৃষ্ণের অবতার টি সমর্পণ করলেন। ব্যাস অমনি আমার গুরুদেব টির মাথায় সুবুদ্ধির আগমন। মাছ টির মুখে বোঁড়শি ঝুলিয়ে পুকুরে বোঁড়শী সমেত মাছ টিকে নিক্ষেপণ ও কিছুক্ষন মাছ ধরার নাটক নিজের সাথে করার পরে বোঁড়শি সহ মাছ টিকে ঝুলিয়ে রাজপূতানা জয় করে মানসিং এর মত বিজয় গর্বে ঘরে প্রবেশ এবং ঠাকুমার মুখ থেকে নিজের নামে অনন্ত প্রসংশা বাক্য শোনা। বাড়িতে এরকম প্রায় প্রত্যেক দিন শুরু হলো। আসতে আসতে আমার গুরুদেব টি গুরু দশা ছেড়ে দিয়ে অনেক শিষ্য কে পথে বসিয়ে জেলে হইবার উপক্রম করতে লাগিল। কিন্তু বিধি বাম। ভগবান বোধ হয় নিজের চোখে দেখে এবং নিজের কানে শুনে গুরুর ব্যাবস্থা করে ফেললেন। এরকম একটি বর্ষা মুখরিত দিনে গুরুদেব এর বাবা প্রত্যেক দিনের ন্যায় মাছ পাঠালেন। গুরু আমার প্রত্যেক দিনের মত পড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাছের জন্য অপেক্ষা রত। মাছ আসিল। গুরু ও মাছ বোঁড়শি তে গাঁথিয়া পুকুরে নিক্ষেপ করিল। কিন্তু ওই দিন মাছ টি বোঁড়শি ছাড়িয়া মাঝ পুকুরে নিক্ষেপিত হইল। অতঃপর পাথর সহযোগে অনেকক্ষন চেষ্টা করিয়াও কৃষ্ণের অবতার টিকে না পাওয়াতে রণে ভঙ্গ দেবার মনস্থির। আরও কিছুক্ষন চেষ্টা করিয়া গুরু আমার ঘরে আসিয়া জানাইল যে আজ মাছ পাওয়া যায় নি। প্রত্যেক দিন দুপুরে আমার গুরুদেব যিনি বাবার সাথে বসিয়া দুপুরের খাদ্য গ্রহণ করেন সেদিন তার প্রচন্ড খিদের তাড়নায় একাই খাবার গ্রহণ করিল ও আসন্ন ঘটনার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলো। গুরুদেবের বাবা ও ঈষৎ চণ্ডাল রাগের অধিকারী ছিলেন (আমাদের সময় সমস্ত বাবা ই চণ্ডাল রাগের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন) কিছুক্ষন খাবার পরে জানাইলেন যে আজ তিনি একটি ইলিশ মাছ পাঠিয়েছিলেন সেটি তিনি এখন ও পাচ্ছেন না কেনো? অতঃপর ঠাকুমা তার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে জানাইলেন যে আজ তার গুণধর নাতি টি কোনো মাছ পায় নী তাই মাছ পাতে আসে নি। যা হবার তাহাই হইল। এরকম অবস্থায় আসল ঘটনা প্রকাশিত হইল ও আমার গুরু উত্তম মধ্যম খাইল। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আমার গুরু দেব টির নিজের গোঁফ কামাইয়া ছুঁচলো দাড়ি রাখিয়া আদবুল মাঝি হইয়া পদ্মা নদী তে মাছ ধরিয়া বর্তমান ঠাকুর পরিবারের কাউকে খাওয়ানোর আশা ছাড়িয়া সাধারণ গুরু কর্মে মন নিবেশ করিলেন। বর্তমানে শুনতে পাই বর্তমানে তিনি সুবীর রানা নাম গ্রহণ করিয়া আছেন। এবং নতুন দিশা নামে একটি অর্গানাইজেশন খুলে অনেকের সেবায় অনেক কে নিয়ে ব্রতী হইয়াছেন।।।
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | গ্রাহক | পুনঃপ্রচার |