এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একটা ফোন কল

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৭২৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে সবে একটু বসেছি। ল্যাপটপটা হাতে নেব কিনা ভাবছি। খুব টায়ার্ড লাগছিল আসলে আজকে। হঠাৎ পাশে থাকা গুপীযন্ত্রটা বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম আননোন নম্বর। মনটাকে ব্যোমকেশ বক্সি করে ফোনটা রিসিভ করে বললাম “হ্যালো।”

    ওপার থেকে প্রথম যেটা শুনলাম সেটা হল “ধরেছে ধরেছে। এনাও।”

    আমি তখন আর একবার অলরেডি হ্যালো বলেছি। কিন্তু ওপার থেকে নির্দিষ্ট কোন রিপ্লাই আসে নি। যাই হোক দ্বিতীয় বার “হ্যালো” বলার পর একজন বৃদ্ধের গলা পেলাম। তিনি আমাকে বেশ কাঁপা গলায় বললেন “রাজকুমার মাহাতো বলছেন?”

    আমি বললাম “হ্যাঁ বলছি। আপনি?”

    কাঁপা গলায় উত্তর এল “আসলে আপনি আমায় চিনবেন না। আমি শশীধর বাড়ুই বলছি। হুগলীতে থাকি।”

    আমি বললাম “বেশ বলুন।”

    শশী বাবু বললেন “আসলে আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই বই পড়তে খুব ভালোবাসি। আমার ভাইঝি আমাকে আপনার লেখা 'ফুলশয্যা' বইটি পড়তে দিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে ফোনটা করলাম। কিছু মনে না করলে আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।”

    আমি বললাম “একেবারেই না। কিছু মনে করব না। আপনি বলুন, আপনি আমার বই পড়ে আমাকে ফোন করেছেন এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। বলুন স্যার।”

    উনি আমাকে রুখে দিয়ে বললেন “দয়া করে স্যার বলবেন না। আমি আপনার দাদুর বয়সি। বাষট্টি পেরিয়েছি। তাই আমাকে নাম ধরে ডাকলে অসুবিধা নেই কিন্তু এই স্যার নামটা শুনতে শুনতে কেমন জানিনা বিরক্ত হয়ে পড়েছি।”

    আমি বললাম “ঠিক আছে শশিবাবু বলুন।”

    দাদু বলতে কেমন একটা লাগছিল তাই শশীবাবুই বললাম। তার জন্য আমি ওনার থেকে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি।

    উনি বললেন “আমার দুই ছেলে। বউ নিয়ে আলাদা থাকে। আমাদের মাসে টাকা পাঠায় তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য। আমি শিক্ষকতা করেছি পঁয়ত্রিশ বছর। অনেক লেখক, ডাক্তার, পুলিশ তৈরি করেছি একসময়। কিন্তু মনে হয় একটাও মানুষ তৈরি করতে পারি নি। তারা একবারও খবর নেয়নি তাদের এই শিক্ষকের।” শশিবাবুর স্বরে হতাশার ছাপ স্পষ্ট বুঝলাম। তিনি না থেমে বলে গেলেন “আপনার বইটা পড়ে আমরা দুজন যেন আবার একবার আমাদের যৌবনে ফিরে গেছিলাম। আজ দায়িত্বটা পালন করতে করতে দুজন আমরা এই বয়সে এসে পৌছেছি। আর আমৃত্যু এই দায়িত্ব আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থেকে যাবে। তবে বইটা আমি আমার দুই ছেলেকে পাঠাতে চাই। আমি চাই তারাও পড়ুক, বুঝুক আসলে একটা বিয়ে মানে একজনের দায়িত্ব নয়। দুটো পরিবারের দায়িত্ব।”

    আমি চুপ করে শুনছিলাম শশিবাবুর কথা। তিনিও একমনে বলে গেলেন পুরো কথাটা। আমি চুপ দেখে তিনি বললেন “খুব বিরক্ত করছি তাইনা?”

    আমি হাল্কা স্বরে বললাম “একদম না আপনি বলুন আমি শুনছি।”

    তিনি বললেন “আসলে ভাইঝি প্রতিলিপি থেকে আপনার নম্বরটাও জোগাড় করে দিল। তাই ভাবলাম একবার ফোন করে দেখি। যে লেখক কেবল লেখার জন্যই লিখেছেন নাকি কিছু বুঝে লিখেছে পুরো গল্পটা।”

    আমি একটু হেসে বললাম “তা কি বুঝলেন?”

    তিনি বললেন “ফোনে আর কতটুকু বোঝা যায় বলুন। একদিন আসুন হুগলীতে। আমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে যান। খুব ভালো লাগবে আমাদের। এই দুই বুড়ো-বুড়ি থাকি আর পাশে ভাইঝিটা থাকে ও বই দিয়ে যায়। কখনও আমি পড়ে বুড়িকে শোনাই অথবা কখনও ও পড়ে আমাকে শোনায়। এইভাবে কাটছে। দেখি করোনা যতদিন বাড়িতে না আসছে। পড়ে নিই বেঁচে নিই একসাথে।”

    আমি উওরটা কি দেব ভেবে পেলাম না। শুধু বললাম “মন থেকে চাই। যেন আপনারা একসাথে আরও অনেক গুলো বসন্ত দেখতে পারেন।”

    শশিবাবু বললেন “একটা আবদার আছে আপনার কাছে।”

    আমি বললাম “বলুন।”

    তিনি বললেন “আপনি আরও লিখুন। আর আপনার লেখার অন্তত একটা কপি আমাদের পাঠিয়ে দেবেন। আপনার লেখা আরও পড়তে চাই। ভালো থাকবে বাবা।”

    চোখ দুটো ফেটে জল আসছিল আমার। জানিনা কোন কথাটায়। ওনার ছেলেদের ওনার সাথে না থাকাটা, ওনার এত বছরের তৈরি করা ছাত্রছাত্রীদের ওনার খবর না নেওয়াটা নাকি আমার বই পড়ে আমাকে ফোন করাটা। এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। তবে জানি আমার সৃষ্টি আজ ধন্য হল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন