এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বই পছন্দসই

  • রঙিন জীবনছবি

    কৃষ্ণেন্দু চাকী
    পড়াবই | বই পছন্দসই | ০৩ জানুয়ারি ২০২১ | ২৭৫৮ বার পঠিত
  • দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর। আর তেমনই বৈচিত্রময় জীবন। কী করেননি? গুরুর জুতো পালিশ, ঘর ঝাঁট দেওয়া, নিজের ছবি ফেরি করা... শিল্পীর নিজের কথায় এবং তাঁর স্ত্রী চারুলতা রায়চৌধুরীর ভাষ্যে সেই চিত্তাকর্ষক জীবনের কথা। একটি বই। পড়লেন শিল্পী কৃষ্ণেন্দু চাকী


    ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর জীবন নিয়ে দুটি লেখাকে একত্রিত করে এই বই। একটি লেখা স্বয়ং দেবীপ্রসাদের, অন্যটি তাঁর স্ত্রী চারুলতা রায়চৌধুরীর। ‘নিজের কথা’ নামে দেবীপ্রসাদের এই আত্মজীবনীমূলক রচনাটি ১৯৪৮ সাল থেকে ‘শনিবারের চিঠি’-তে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। চারুলতা রায়চৌধুরীর মূল রচনাটি ইংরেজিতে। নাম, ‘Life with an Artist’। এটাও ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হযেছিল ‘The Modern Review’ পত্রিকায়, ১৯৬২ সাল থেকে। এটি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা অনুবাদে ১৯৬৪ সাল থেকে ‘মাসিক বসুমতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দেবীপ্রসাদ এবং তাঁর স্ত্রী চারুলতার এই দুষ্প্রাপ্য রচনাদুটিকে সংকলন করে এই বইটি সম্পাদনা করেছেন শিল্প সমালোচক ও শিল্প ইতিবৃত্তকার প্রশান্ত দাঁ।



    শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী ও স্ত্রী চারুলতা

    বাংলার এক প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের সন্তান দেবীপ্রসাদকে শিল্পী হয়ে ওঠার পথে প্রচুর বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ‘নিজের কথা’ নামে এই রচনাটিতে তার বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে। নিজের ডানপিটে স্কুলজীবনের নানা মজার ঘটনাও এখানে লিখেছেন তিনি। লিখেছেন তাঁর সার্কাসে খেলা দেখানো থেকে শুরু করে আরও নানা দুরন্তপনার কথা। সন্তানের পেশাদার শিল্পী হওয়া, তখনকার দিনের সম্ভ্রান্ত ধনী জমিদার পরিবারের পক্ষে মেনে নেওয়া ছিল কল্পনার অতীত। দেবীপ্রসাদের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। দেবীপ্রসাদের পিতা আপত্তি না করলেও তাঁর পিতামহ এবং মাতৃকুলের সকলেই দেবীপ্রসাদের শিল্পশিক্ষার প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে দেবীপ্রসাদের পিতা উমাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারকে অচ্ছুত করে দেওয়া হয়েছিল। এজন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে দেবীপ্রসাদকে। কখনও তিনি একরঙা ছাপা ছবিতে রং করার কাজ করে গেছেন, কখনও বা তাঁকে পথে পথে ফেরিওয়ালার মতো ছবি বিক্রি করতে হয়েছে। তাঁর জীবনের এই পর্যায়ের অনেক বিচিত্র ও চিত্তাকর্ষক অভিজ্ঞতার কথা এই স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনি।



    পিতা উমাপ্রসাদ রায়চৌধুরী। শিল্পী দেবীপ্রসাদের নিজের করা ভাস্কর্য

    রয়েছে অবনীন্দ্রনাথের কাছে তাঁর ছবি আঁকা শিখতে যাওয়ার কথা। প্রথমে তাঁর কাজ অবনীন্দ্রনাথের ভালো না লাগলেও, পরে দেবীপ্রসাদকে শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ঠাকুরবাড়ির সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ব্রতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট বন্ধুত্বও হয়ে যায়। প্রাচ্য শিল্পরীতি ও শৈলীর সঙ্গে দেবীপ্রসাদের প্রথম পরিচয় হয় অবনীন্দ্রনাথের কাছেই। এর পরই তিনি বিদেশি কায়দায় কাজ শেখার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইতালিয়ান শিল্পী Boiyess-এর কাছে প্রবল উৎসাহ নিয়ে তৈলচিত্র আঁকা শিখতে শুরু করে দেন তিনি। টাকাপয়সা নেই, তাই বিনিময়ে গুরুর জুতো পালিশ, বন্দুক পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে, ঘর ঝাঁট দেওয়া অবধি সব কিছুই নিঃশব্দে করে যেতে হয়েছে দেবীপ্রসাদকে।

    প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু একটা রোজগার না হলে যখন আর চলছে না, তখন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সুপারিশে মিত্র ইনস্টিটিউশনে চল্লিশ টাকা মাইনেতে ড্রয়িং টিচারের পদে যোগ দেন তিনি। এই সময় থেকে ‘ভারতী’ ও ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকাতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। ভাস্কর্য ও চিত্রকলা ছাড়াও সংগীত ও সাহিত্যে তাঁর অনুরাগ ছিল ছোটোবেলা থেকেই। এর কিছু পরেই দেবীপ্রসাদ তদানীন্তন মাদ্রাজের (চেন্নাই) সরকারি চারু ও কারুকলা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের পদে যোগ দেন এবং চারুলতা দেবীকে বিবাহ করেন। টানা আঠাশ বছর এখানেই অধ্যাপনা করেন তিনি। এই সময়টাতেই দেবীপ্রসাদের কাজের খ্যাতি ক্রমশ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই সময়কার স্বাধীন জমিদার, লাট-বেলাট ও বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষেরা নিয়মিত তাঁর স্টুডিওতে যাতায়াত করতে থাকেন দেবীপ্রসাদকে দিয়ে তাঁদের মূর্তি বা প্রতিকৃতি করানোর জন্য।



    তাঁরই তৈরি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির সামনে শিল্পী দেবীপ্রসাদ

    ইওরোপ ও আমেরিকার নানা নামি প্রদর্শনীতে প্রায়ই তিনি অংশগ্রহণ করে চলেছেন এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিদেশি পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর কাজের প্রশংসা।

    শিল্পীপত্নী চারুলতা রায়চৌধুরীর এই রচনাটিতে রয়েছে দেবীপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ এবং তাঁদের বিবাহিত জীবনের বিভিন্ন সময়ের নানা ঘটনার কথা। এই রচনায় শিল্পী দেবীপ্রসাদ ছাড়াও মানুষ দেবীপ্রসাদের এক অন্তরঙ্গ ছবি খুব সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। তাঁর ছোটোবেলার দুরন্তপনা থেকে শুরু করে পরিণত গার্হস্থ্য জীবনের নানা ঘটনার কথা প্রাঞ্জলভাবে ধরা রয়েছে এই রচনায়। শৈশব থেকে দেবীপ্রসাদের নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস, তাঁর সংগীত ও শিকারের প্রতি আকর্ষণ, এবং শিল্পচর্চার কথা খুব সহজ ও সাবলীলভাবে লিখেছেন এই লেখিকা। একজন শিল্পীর স্ত্রী হওয়ার সঙ্গে আর পাঁচজন মানুষের স্ত্রী হওয়ার পার্থক্য এবং সমস্যা ঠিক কোথায়, সেটা খুবই সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে এই রচনায়। যা বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া, লেখা অসম্ভব।

    বইটির মুদ্রণ ও বাঁধাই যথাযথ। বইয়ের প্রিন্টার্স লাইনে প্রচ্ছদের নামাঙ্কন যিনি করেছেন, তাঁর নাম থাকলেও, প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটির কোনো পরিচিতি নেই। থাকলে ভালো হত।




    নিজের কথা ও শিল্পীর জীবনসঙ্গিনী
    দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী ও চারুলতা রায়চৌধুরী
    সম্পাদনা: প্রশান্ত দাঁ
    পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি
    মুদ্রিত মূল্য: ২৭৫ টাকা
    প্রাপ্তিস্থান: কলেজস্ট্রিটে দেজ, দে বুক স্টোর


    বইটি অনলাইন কেনা যেতে পারে এখানে

    বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।


    গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত

    এই বিভাগের লেখাগুলি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করে 'পড়াবই'এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ০৩ জানুয়ারি ২০২১ | ২৭৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন