"বৈধ টিকিট কেটে ট্রেনে চড়তেও অওকাত লাগে মশাই..."
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। 'অওকাত' অর্থাৎ ক্ষমতা লাগে। যদি কেউ কষ্ট করে হলেও রাজধানী ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলে। তাহলেও চড়তে পারবে কিনা, এটায় এখন বিস্তর সন্দেহ। কারণ পোশাকই আপনার পরিচয় বহন করবে। সেই পোশাক যদি অমলিন হয়, তাহলে বৈধ টিকিট সত্ত্বেও আপনি ঘাড় ধাক্কা খাবেন ট্রেনের দরজায়। উঠতে দেওয়া হবে না। রাজধানী জাতীয় কুলীন ট্রেনে চড়তে গেলে আপনাকে শুধুমাত্র টিকিট কাটলেই হবে না। কৌলিন্য বজায় রাখতেই হবে। ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে আসতে হবে। শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়তে হবে দামী পারফিউমের সুবাস। আমাদের বাতানুকুল ঐশ্বর্যের প্রতীকী গাড়িতে যে কেউ উঠে পড়বে ? এটা একেবারেই মানা যায় না।
বুধবার ৩০শে ডিসেম্বর, হাড় হিম করা ঠান্ডায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় দিল্লি - ভুবনেশ্বর রাজধানী ট্রেনের চেকার, জনৈক রামচন্দ্র ও অজয় যাদবকে এমনটাই করেছেন। তাঁদের মূল দোষ হল পরনে অমলিন পোশাক। চেকার ভদ্রলোকটির বুকের পাটা আছে, বলতে হবে। বেশ করেছে। এলি তেলি গুড়জাওয়ালি যে কেউ নোংরা জামাকাপড় পরে যেখানে সেখানে চড়ে বসবে, এটা মানা যায় ? নাইট ক্লাবে ঢুকতে গেলে বৈভব ঐশ্বর্য এসব লাগে। এখন থেকে দামী ট্রেনে চড়তে গেলেও ওইরকমই হতে হবে।
১২৭ বছর আগে ১৮৯৩ সালের ৭ই জুনে একই ঘটনা ঘটে ছিল। স্থান কাল আর পাত্রটি শুধু ভিন্ন। সেটি দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারমারিটজবার্গ স্টেশন ছিল। আর এটি স্বাধীন ভারতের ঝাড়খণ্ডের কোডার্মা স্টেশন, ২০২০ সাল। তখন ছিল বৃটিশ শাসন। আর এখন স্বদেশী শাসন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। যাক আমরা আবার পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করেছি। সামনে এগোতে সব্বাই পারে। আট মাসের শিশুও হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোয়। পিছাতে গেলে অন্যরকম এলেম লাগে। সেটা আমাদের পর্যাপ্ত আছে। সেটা ভেবেই দারুণ ভাল লাগছে। ইতিহাসেই পড়েছিলাম, বৃটিশ আমলের বৈষম্য, নির্দ্দিষ্ট কিছু মানুষের প্রতি ঘৃণা ইত্যাদি। সেই ইতিহাস যখন ফিরে আসছে, তাহলে একটু অপেক্ষা করলে প্রস্তর যুগও হয়ত দেখতে পাব। বন্য মানুষের বাকল পরে গোল হয়ে বসে আগুন জ্বালিয়ে শিকার করা কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খাওয়াও হয়ত ফিরে আসতে চলেছে। কিংবা আরো একটু পিছিয়ে গেলে যদি ডাইনোসরদের দেখতে পাই ! ব্যাপারটা কি খুব মন্দ হবে ?