এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • রাজপথে কৃষক : কৃষি সংস্কার, অবিশ্বাস ও দুটো ইকো-সিস্টেমের লড়াই

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৪৯৪ বার পঠিত


  • বরফ গলছে না

    কৃষক আন্দোলনের রাজপথ অবরোধ ও ধর্না প্রায় একমাস পুরো করে ফেলল। অতঃ কিম?

    দেশের রাজধানীতে এখন তীব্র শীত লহর চলছে। রাত্রে পারা নেমে আসে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।পাঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে দেশের রাজধানী দিল্লির চারদিকে রাজপথে অবস্থান করে অবরোধ গড়ে তোলা কৃষকদের মধ্যে ঠান্ডা লেগে বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃতের সংখ্যা এক ডজন ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু নয়ডা-দিল্লি রাজপথের সংযোগস্থল সিংঘু মোড়ে শিবির খাটিয়ে তৈরি করা আন্দোলনকারী সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্ব দেয়া চল্লিশটি ইউনিয়নের অস্থায়ী সদরদপ্তরে কেউ পিছিয়ে আসার বা তুমিও-ভাল আমিও-ভাল গোছের সমঝোতার কথা ভাবছেন না।

    সরকার ও কৃষকেরা নিজের নিজের পূর্ব-অবস্থানে অনড়। সুপ্রীম কোর্টে রাজপথ থেকে অবস্থানকারী কৃষকদের সরিয়ে দেবার দাবিতে বেশ ক’টি মামলা দায়ের হয়েছে। পালটা মামলা দায়ের হয়েছে ওই তিনটি কৃষি আইন সংবিধানসম্মত কিনা তার বিচার করতে। কোর্ট কৃষকদের আন্দোলনের অধিকার স্বীকার করেও অন্যের অসুবিধে না করে আন্দোলনের অন্য ফর্ম খোঁজার কথা বলেছে। পরামর্শ দিয়েছে

    সরকার এবং কৃষকদের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গড়ে আইনগুলো খুঁটিয়ে দেখে দু’পক্ষের মেনে নেওয়ার মত সমাধান খুঁজতে এবং সরকারকে বলেছে আদালতের ফয়সালা না হওয়া পর্য্যন্ত আইনগুলোর প্রয়োগ স্থগিত রাখার কথা ভেবে দেখতে।

    সরকারের ভাববঙ্গী নেতিবাচক। কৃষিমন্ত্রী আন্দোলনকারী কৃষকদের উদ্দেশে আঁট পাতার চিঠি লিখে মিডিয়াকে জানিয়েছেন। কিন্তু অখিল ভারতীয় কিসান সমন্বয় সমিতির মুখপাত্র বলছেন এই চিঠিতে কংগ্রেস, আকালী, অন্যান্য বিরোধী দল নিয়ে তেতো মন্তব্য আছে, বর্তমান সরকারের কাজকর্মের ফিরিস্তি আছে, নেই শুধু আন্দোলনরত কৃষকদের আপত্তিগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ ও জবাব। গত ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের উদ্দেশে দীর্ঘভাষণ এবং খ্রীস্টমাসের পূর্বাহ্নে আন্দোলনের পেছনে হেরে যাওয়া বিরোধী দলগুলোর হিংসুটেপনা ও উস্কানি নিয়ে তিক্ত অভিযোগ সমস্ত মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে টেলিকাস্ট করেছে।কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকেরা বিরক্ত। ওদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশের প্রধানসেবকের ভূমিকা ছেড়ে নিজের দলের মুখপাত্রের মত কথা বলছেন।

    কৃষকেরা এখন অবধি সুপ্রীম কোর্টে ওদের পক্ষ রাখতে কোন অ্যাডভোকেট নিযুক্ত করেনি। তবে নেতারা বলছেন ওঁরা সুপ্রীম কোর্টের নামকরা কিছু অ্যাডভোকেট যেমন বার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দুষ্যন্ত দাভে বা মানবাধিকার আইনজীবী প্রশান্তভূষণ ও কলিন গঞ্জালভেসদের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

    এদিকে দিল্লির ‘আম আদমী পার্টি’র সরকার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে কৃষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওই তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে প্রস্তাহ পাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ওই ‘কালা কানুনের’ কপি ছিঁড়ে ফেলে নাটকীয় ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।সুপ্রীম কোর্টের প্রাথমিক বক্তব্য কৃষকদের আন্দোলনকে একরকম বৈধতা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কৃষকদের চোখে এটা ওঁদের নৈতিক জয়। কারণ, এর ফলে আর ওই আন্দোলনকে মাওবাদী-খালিস্তানি- হেরো কংগ্রেসিদের উস্কানিপ্রসূত বলা লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।

    আজ দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও কেরলের দশজন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, এঁদের মধ্যে জবাহরলাল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অরুণ কুমার ও অধ্যাপক হিমাংশু রয়েছেন, কৃষিমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে এই তিনটে আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। ওঁরা পাঁচটি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন কেন এই সংস্কার ছোট ও প্রান্তিক চাষিদেরও সর্বনাশ করবে।

    আজ ক্রিসমাসের রাত পর্য্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, গৃহমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর আলোচনায় বসার আবেদনে কৃষকরা সাড়া দেননি। ওঁদের বক্তব্য আলোচনার জন্যে গোলগোল কথা না বলে লিখিত এবং স্পষ্ট এজেন্ডা চাই। খোলামেলা আলোচনা (গৃহমন্ত্রী সমেত) পাঁচ রাউন্ড পেরিয়ে গেছে। এভাবে পূর্ব নির্ধারিত এজেন্ডা ছাড়া আলোচনার কোন মানে নেই।

    এই কুয়াশা কাটতে একটু সময় লাগবে মনে হয়।

    আসুন, ততক্ষণ আমরা এক পারস্পরিক অবিশ্বাসের আবহাওয়ায় দুই ইকো-সিস্টেমের লড়াইকে বোঝার চেষ্টা করি।



    পিঠ চাপড়ানি ও অবিশ্বাসঃ কৃষক ‘অন্নদাতা’ নাকি ‘ গন্ডোগোল পাকাতা’?

    গোড়ার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে দিল্লির দিকে এগোতে থাকা আন্দোলনকারীদের হরিয়ানা সরকার চারসপ্তাহ আগে প্রথম অভ্যর্থনা করে লাঠি, টিয়ারগ্যাসও জলকামান দিয়ে এবং রাস্তা খুঁড়ে বাধা দিয়ে। অবিশ্বাসের ভিত তখন থেকেই গাঁথা হচ্ছিল, সঙ্গে জুটছিল অপমানও কুৎসা – এরা বিরোধীদের বা খালিস্তানিদের বা মাওবাদীদের উস্কানিতে আন্দোলনে নেমেছে। এরা আসল কিসান নয়।

    প্রশ্ন হল যে রাজ্য বা অঞ্চল থেকে আন্দোলনকারীরা এসেছেন সেখান থেকে মোদী সরকার গত সংসদীয় নির্বাচনে প্রচূর ভোট পেয়েছেন। কিন্তু আজ এদের সরকারের প্রতি আস্থায় ফাটল ধরল কেন?

    · গত কয়েকবছর ধরে চাষীরা সমানে ফসলের ন্যায্য দামের দাবিতে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে বাড়তি দরে (অর্থাৎ সমগ্র উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ৫০% বেশি) ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) চেয়ে মিছিল ধর্না সব করেছেন। প্রতিবারই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এবার বিশাল সমর্থনে ক্ষমতায় আসা সরকার এটা কি করল? করোনার সময় এপ্রিল মাসে তিনটে অর্ডিন্যান্স এনে চাষিদের মাথার থেকে ভরসার হাত সরিয়ে নিল। ভাবটা তোমরা এখন বড় হয়ে গেছ, এবার চরে খাও গে’ বাছারা!

    · সেপ্টেম্বরে সংসদের অধিবেশন ডেকে তিনদিনে হুড়ুম দুড়ুম করে বিলগুলো পাশ করানো এবং তার একমাসের মধ্যে অর্থাৎ, অক্টোবর, ২০২০তে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে তাকে আইন বানিয়ে ফেলা! কৃষিব্যবস্থায় ধাঁচাগত পরিবর্তনের এই আইনগুলো নিয়ে কারও সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা নয়, বিলগুলো সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো নয়। এমন প্রথাবিরুদ্ধ কাজ কেন? করোনা ঠেকানো কি ফসলের খোলাবাজার তৈরি করা? কোনটা বেশি দরকারি? এত তাড়া কিসের?

    · নিন্দুকে বলে—তাড়াহুড়োর কারণ আছে। গৌতম আদানির “আদানি অ্যাগ্রো লজিস্টিক্স লিমিটেড” (এ এ এল এল) দশ বছর আগে থেকে ভারত সরকারের ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে যে ওরা আধুনিকতম ফসলের গোদাম বা ‘সিলো’ বানাবে যাতে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং স্বচালিত সিস্টেমের মাধ্যমে ফসল সংগ্রহণ, ঝাড়াই বাছাই সব খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। কৃষক চাইলে সোজা ওই সিলোতে এসেও ফসল সাপ্লাই দিতে পারে। কোন কমিশন এজেন্ট বা আড়তিয়ার দরকার নেই। চাষির এবং সরকারের চটের বস্তা, তেরপল এবং মাল তোলা নামানোর খরচা বাঁচবে। এইভাবে সরকার ও আদানির যৌথ উদ্যোগে ফুড সাপ্লাইয়ের চেন তৈরি হয়ে খাদ্য সুরক্ষার সহায়তা হবে।আদানির বেস ডিপোগুলোকে ‘নোটিফায়েড মার্কেট ইয়ার্ডস’ বা কৃষিপণ্যের ‘ঘোষিত মুক্তাঙ্গন’ বলা হয়। এভাবে এফসিআইয়ের হয়ে আদানীর কোম্পানি প্রায় ৫,৭৫,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু , কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র বঙ্গের জন্যে গুদামজাত করেছে। মধ্যপ্রদেশে এরা আরও ৩,০০,০০০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করেছে। ফলে গত আর্থিক বছরে মধ্যপ্রদেশ থেকে সরকারের গম সংগ্রহ প্রথমবার পাঞ্জাবকে ছাড়িয়ে গেছে।

    এখন এদের পরিকল্পনা হল শীগগির এম পি, বিহার ইউ পি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে আরও ৪,০০,০০০ এম টি ভান্ডারণ বা মজুত করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা । এইজন্যে বহু জায়গায় জমি কিনে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে জায়ান্ট গোডাউন বা ‘সিলো’ বানানো চলছে। সূত্রঃ আদানি পোর্টস এন্ড লজিস্টিক্স এর সাইট।

    · এর মধ্যে ২০১৭ সালে হরিয়ানার একটি গ্রামে ১০০ একর জমি কিনে বিশ্বের আধুনিক্অতম ফসল ভান্ডার গড়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু কমদামে কৃষিজমি কিনে সেটাকে অ-কৃষি কাজে ব্যবহার করার জন্যে দরকারি অনুমতি চেয়ে আবেদন হরিয়ানার ভূমি-রাজস্ব বিভাগে দু’বার খারিজ করে শেষে গত মার্চ ২০২০তে মঞ্জুর করেছে।

    আর তার একমাসের মধ্যেই সরকার জারি করল কৃষি পণ্যের বেচাকেনা নিয়ে তিনটি অর্ডিন্যান্স!

    চাষীদের সন্দেহঃ এই অর্ডিন্যান্স কার স্বার্থে?

    · চারবছর আগে এমনি ভাবেই এক রাত আটটায় ঘোষণা করা হয়েছিল এক সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের – ডিমনিটাইজেশন বা রাতারাতি ৫০০ এবং ১০০০ টাকার সব নোট বাতিল। বলা হয়েছিল এর ফলে কালোটাকা ধরা পড়বে, কাশ্মীর ও অন্যান্য জায়গায় আতংকবাদের কোমর ভেঙে যাবে এবং নতুন ২০০০ টাকার বিশেষ নোট জাল করা যাবে না।

    -আজ চাষিরা দেখছে এর কোনটাই হয়নি বরং জাল নোট বাজারে দ্যাখা যাচ্ছে এবং কৃষি উৎপাদন ও পণ্যের যে নগদ লেনদেনভিত্তিক ইনফর্ম্যাল মার্কেট তা ভীষণ ভাবে মার খেয়েছে।

    · কাজেই সরকারের মুখের কথায় শুকনো আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজছে না। আন্দোলনকারীরা চাইছেন সরকার বিতর্কিত তিনটে আইন বাতিল করে নতুন আইন বানাক।

    · প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ওঁর আর্থিক নীতিতে ২০২৪ সাল নাগাদ সমস্ত কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। কিন্তু কীভাবে হবে তার কোন স্পষ্ট রোডম্যাপ এখনও কারও কাছে নেই।তাহলে কি বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে সব গরীবের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা এবং ২১ দিনে করোনা কৌরব বধের মত এটাও একটা কথার কথা বা ‘জুমলা’?

    · কোন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথাবার্তা নয়, পাবলিক ডোমেইনে কোন আলোচনা নয়। কিন্তু বড় গলায় বারবার বিত্তমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বলা যে এই ‘যুগান্তকারী’ সংস্কার দেশের চাষিদের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘উপহার’।

    কৃষকেরা বলছেন—এই উপহার কি আমরা চেয়েছি ? আমরা তো খালি স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মেনে C2 cost (পরে ব্যাখ্যা করছি) এর ওপর ৫০% বেশি এমএসপি দেবার দাবি করেছিলাম। তৃষ্ণায় কাতর হয়ে চাহিলাম জল, তাড়াতাড়ি এনে দিলে একজোড়া বেল!

    উপহারটি দেয়ার আগে আমাদের একবার জিজ্ঞেসও করলেন না?

    ভারত কিসান ইউনিয়নের নেতারা বলছেন—অর্ডিন্যান্স জারি হওয়ার পর আমরা আমাদের শংকা জানিয়ে সরকারের কাছে সাত বার চিঠি পাঠিয়েছিলাম, কোন উত্তর আসেনি।

    · উলটে প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের ‘ভার্চুয়াল’ বাণী দেবার সময় সমানে বলে চলেছেন –এসব হেরে যাওয়া হিংসুটে বিরোধী দলগুলোর কাজ। ওরা ক্ষমতায় থাকার সময় এই ‘রিফর্ম’গুলো করবে বলেও করেনি। এখন আমি করে ফেলেছি তাই বাগড়া দিচ্ছে।

    · আন্দোনকারীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে পাঞ্জাবের প্রধান বিরোধী দল ‘আকালি’ গোড়া থেকেই মোদীজির সহযোগী ছিল। আজ কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ওঁরা বিজেপির সঙ্গে জোট ছেড়ে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল ‘পদ্ম- সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলছেন—অন্য কেউ নয় , বিজেপি হল বিভেদকামী। ধর্মের নামে দেশের মানুষদের মধ্যে কৃষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে।

    · এই যে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বড্ড ‘ভোলেভালে’ (সাদাসিধে), ওদের মুখে স্বার্থন্বেষী উন্নয়নবিরোধী এলিমেন্ট তামাক খেয়েছে গোছের কুকথা বলে চলেছেন, এতে কৃষকদের ’অপমান’ করা হচ্ছে বলে আন্দোলনকারীরা মনে করেন। কৃষকরা চান সরকার ওঁদের সম্মান দিয়ে কথা বলুক। দেশের সীমান্তে রক্ষাকর্তা সৈনিক (বেশিরভাগই কৃষকঘরের সন্তান) এবং দেশের মধ্যে অন্নদাতা কিসান—দুজনই সমান গুরুত্ব এবং সম্মান পাওয়ার অধিকারী। ওদের বোকাসোকা না ভেবে দাবিগুলো নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করুক। সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শের পরেও এ নিয়ে কোন প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না। অবিশ্বাসের কুয়াসা কাটছে না।

    · কুৎসা রটনা চলছে। এরা শুধু হরিয়ানা পাঞ্জাবের। এরা ধনী কৃষক। এরা ড্রাই ফ্রুট খাচ্ছে। এদের লঙ্গরের পয়সা কে জোটাচ্ছে? আসলে আমরা শহুরে মধ্যবিত্তরা কৃষক বলতে টিভিতে দেখা দিলীপকুমারের ’নয়া দৌড়’, নার্গিসের ‘মাদার ইণ্ডিয়া’, মনোজ কুমারের ‘উপকার’ সিনেমায় চাষি বলতে মাথায় পাগড়ি, হেঁটো ধুতি, কাঁধে লাঙল বা কোদাল চরিত্রে মজে আছি।

    · অবিশ্বাস গ্রাম-শহরের মধ্যেও। সবুজ বিপ্লবের পরে পঞ্চাশ বছর কেটে গেছে। আজকের ট্রাক্টর চালানো এবং ছেলেকে শহরে পড়তে পাঠানো পাঞ্জাব-হরিয়ানার চাষির সঙ্গে এ ছবি মেলে না।তাই আমাদের বামপন্থী অন্তরাত্মা সরকারি প্রচারতন্ত্রের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলে ওঠে—এ হল কুলাকদের আন্দোলন। দলিত- শোষিত- নিপীড়িত চাষি কোথায়? আসলে আমরা শুধু শ্রেণীচেতনার কথা বলি । কৌমী চেতনা বা কৌমী সংস্কৃতির কথা আমাদের মানসে নেই।

    তাই বোঝা সম্ভব নয় রাস্তায় বসে পড়া লাখো কিসানদের দুবেলা খাওয়াতে কেন গুরুদ্বারা লঙ্গর খোলে? কেন লোক- এবং পপ- গায়কেরা এদের পাশে দাঁড়িয়েছেন? কেন রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্ত লেখক এবং খেলোয়াড়েরা কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে ‘লও ফিরে তব স্বর্ণমুদ্রা, লও ফিরে তব পুরস্কার’ ধ্বনি তোলেন?



    দুটো ইকোসিস্টেম এবং ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য (এমএসপি)

    প্রথমটি হল সরকার নিয়ন্ত্রিত কৃষি বাজার এবং খাদ্য বন্টন ব্যবস্থা।

    · এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই যে মূল সমস্যা হল চাষিদের ফসলের ন্যায্য দাম পাইয়ে দেওয়া। কিন্তু সরকাররের আরেকটি দায়িত্ব হল আম নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সুলভ অন্ন জোগানোর ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এটা বোঝা গেল যে ব্যাপারটা পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে জনতার একটা অংশ না খেয়েই থাকবে। বিশেষ করে যখন খাদ্যান্নের উৎপাদন জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল।তাই প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ১৯৫৫ সালে সংসদে ‘এসেনশিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট’ পাশ করালেন যার মানে একটা নির্দিষ্ট বেশি খাদ্যান্ন মজুত করা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। আর আনলেন পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিডিএস) বা রেশন ব্যবস্থা যাতে গরীব মানুষ কম দামে অন্ততঃ মোটা চাল গম খেয়েও বাঁচতে পারে। এই আইনটিই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে বাতিল করেছেন। তাই আশঙ্কা, গণবন্টন ব্যবস্থা থেকেও সরকার হাত ধুয়ে ফেলবে নাতো? এখন ভারত খাদ্যশস্য রফতানি করা দেশ। আমাদের দেশে চাল গম প্রয়োজনের তুলনায় উদ্বৃত্ত। সরকারের গোডাউনে বাড়তি অন্ন পচে যায়। তবু কিছু লোক অনাহারে মারা যায়। কারণ আয়বৈষম্য ও বিতরণ ব্যবস্থায় অসাম্য।

    · ষাটের দশকের শেষে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে দুটো যুদ্ধ সামলে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ারে মা-ভবানী। কিন্তু পরপর দুটো অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষে রেশনে দেওয়ার মত চাল-গমেও টান পড়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে কৃষিঅর্থনীতিবিদ স্বামীনাথন নিয়ে এলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ নরম্যান বোরলাগকে। এল মেক্সিকো থেকে উ্রচ্চ-ফলনশীল হাইব্রিড বীজ। শুরু হল কেমিক্যাল সার ও কীটনাশকের ব্যবহাসমৃদ্ধ ‘সবুজ বিপ্লব’। এর অনেক দুর্গুণ আছে, যেমন গ্রামাঞ্চলে আর্থিক অসাম্য ও জমির কেন্দ্রীকরণ বাড়িয়ে দেওয়া এবং জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট করা।

    · কিন্তু এর সুফল হল এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে ভারত খাদ্যশস্যের ব্যাপারে আমদানি-নির্ভর হাত পেতে থাকা দেশের বদলে খাদ্যে আত্মনির্ভর রফতানি-কারক দেশ হয়ে গেল। এখন সমস্যা হল উদ্বৃত্ত ফসলের, ফলে দাম পড়ে গেলে কৃষক খাবে কি, পরবে কি? আবার দাম বাড়ালে শহুরে অকৃষক জনতা রেগে যাবে। সরকারের হল শাঁখের করাত।

    · গত শতাব্দীর শেষে সরকার ওই সমস্যার মোকাবিলা করেছে তিন ভাবে।

    o ইনপুট কস্ট বা উৎপাদন ব্যয় কম করতে সরকার কৃষককে ভর্তুকি দিয়েছে বীজ ও কেমিক্যাল সারে, বিদ্যুৎ বিলে এবং সেচ করে।

    o পুঁজির ব্যাপারে ব্যাংক ঋণে সুদের হারেও ভর্তুকি দিয়েছে।

    o কৃষককে ফসলের ন্যায্য দাম পাইয়ে দিতে এগ্রিকালচারাল প্রোডাকশন অ্যান্ড মার্কেটিং কর্পোরেশন (এপিএমসি) গঠন করে সরকারি মন্ডী শুরু করেছে। যেখানে লাইসেন্স প্রাপ্ত ক্রেতা নিলাম করে ফসলের দর ঠিক করবে। কিসান হয় ওই দামে বিক্রি করবে, নয় সরকার ন্যূনতম সমর্থন মূল্য বা এম এস পি দরে (যা বাজার দরের চেয়ে সামান্য বেশি)কিনে নেবে। আর সরকার এর থেকেই রেশন দোকানে চাল গম দেবে ।

    o ইউপিএ -২এর অন্তিম দিনগুলোতে মনমোহন সিং সরকার পাশ করল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা খাদ্য সুরক্ষা আইন, অর্থাৎ সরকারের দায়িত্ব হল পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য সরকারি ব্যবস্থায় মজুত করে সুনিশ্চিত করা যে কেউ না খেয়ে মরবে না। এর প্রয়োগে এল গণবন্টন ব্যবস্থা মজবুত করে নাগরিকদের দুটো ভাগে – গরীবি রেখার নীচে(বিপিএল) ও ওপরে (এপিএল)—ভাগ করে গম ২ এবং চাল ৩ টাকা ও ১০ টাকা কিলো দরে বিতরণ করা। পাশাপাশি সক্ষম মানুষেরা খোলা বাজারে বেশি দামে সরু চাল ও সরবতি গম কিনে খাচ্ছেন।

    o সুপ্রীম কোর্ট তখন একধাপ এগিয়ে বলল যে কোন জেলায় কেউ অনাহারে মারা গেলে তার জন্যে জেলার কালেক্টর দায়ী হবে। এও বলল যে সরকারি গুদামে উদ্বৃত্ত অন্ন পচতে না দিয়ে নিরন্নদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা উচিত।

    o এর থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে এমএসপি শুধু কিসানের জন্যে পয়মন্ত না, সরকারের জন্যেও। নইলে খোলা বাজারে সরকারকে বেশি দামে চাল কিনে রেশন ব্যবস্থা চালাতে হবে।

    বেশ, এর মধ্যে গলতা কোথায়?

    আছে, ফাঁক ফাঁকি দুইই আছে, ভালর সংখ্যা সাতান্ন হলেও মন্দ তিন-চল্লিশ হবেই—রবি ঠাকুর বলে গেছেন।

    * গোটা দেশে মন্দী বা সরকারি এপিএমসি বাজার মাত্র ৭৪০০; তারমধ্যে ৪০০০ হল পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে।

    * পাঞ্জাব, হরিয়ানা বাদ দিলে অধিকাংশ রাজ্যেই মন্ডী অনেক দূরে দূরে; মন্ডী পৌঁছনোর রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অবহেলিত। তাই নিরুপায় গরীব চাষি তার অল্প উৎপাদন স্থানীয় ফড়ের কাছেই বেচে।

    * রেজিস্টার্ড ক্রেতা ও আড়তিয়াদের কমিশনের ফলে চাষি প্রাপ্যের চেয়ে কম দাম পায় ।

    * ওই বিক্রেতারা সম্পন্ন এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত। ওরা নিজেদের মধ্যে সাঁট করে (কার্টেল বানিয়ে) ক্রয়মূল্য চড়তে দেয় না।

    * সরকারি গোডাউন(এফসিআই) এবং ভান্ডারন বা স্টোরেজ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। কাজেই চাষিরা চাইলেও সরকারের কাছে সবটা বিক্রি করতে পারে না। এছাড়া এফসিআইয়ের করাপশনও কৃষককে ন্যায্য দাম পাইয়ে দেওয়ার পথে একটা বাধা।

    * আর একটা ব্যাপার হল এম এস পি’র লিস্টিতে ২১টি নাম থাকলেও সরকার কেনে শুধু ধান ও গম, কখনও কখনও সামান্য ডাল। ফলে শাকসবজি ফলফুলের চাষ করতে গিয়ে চাষি বাজারের ওঠানামায় ধোঁকা খায়। একবছর পেঁয়াজ ও আলুর দাম চড়ল তো চাষি পরের বছর ধার করে আলু বুনল বিশাল লাভের আশায়। সবাই তাই করায় অতি-উৎপাদনের ফলে দাম ঝপ করে পড়ে গেল। নিরুপায় চাষি আত্মহত্যা করল।

    অবশ্য সন ২০১৬ থেকে বর্তমান সরকার কৃষকের আত্মহত্যার ডেটা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

    কাজেই পুরনো সঞ্চয় নিয়ে ফিরে ফিরে যত বেচাকেনা, আর চলিবে না। কৃষি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় ধাঁচাগত পরিবর্তন বা সংস্কার চাই।

    দ্বিতীয় ইকোসিস্টেম বা ‘বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও’

    বর্তমান সরকার তিনটি কৃষি সংশোধনী আইনের মাধ্যমে যে বিকল্প ব্যবস্থাকে ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ বলে গর্বিত হচ্ছে তার মূল স্বরূপ হল কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে ঠিক শিল্পের মত খোলা বাজার তৈরি করা। কেন ?

    - ভারতের প্রায় ৫০% জনসংখ্যা আজও কৃষিতে নিযুক্ত। অথচ জিডিপিতে তার যোগদান ১৭% এর বেশি নয়। এদের মধ্যে ৮০% হল ছোট ও প্রান্তিক চাষি; এবং দেখা যাচ্ছে চাষের জমির উপর জনসংখ্যার ভার অনেক বেশি। অনেক কৃষকই সারা বছর পুরো কাজ পায় না। এর জন্যে কৃষকদের মধ্যে অন্ততঃ আদ্দেক লোকজনের উচিত কৃষি ছেড়ে কারিগরি, শিল্প বা শহরে অন্য জীবিকা খুঁজে নেয়া। এটা হলে পরিবারে কৃষিতে নিযুক্ত লোকের সংখ্যা কমে প্রতি ব্যক্তি আয় বেড়ে যাবে।

    - এছাড়া দরকার উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য দাম পাইয়ে দেয়া যা সরকার নয় মুক্ত বাজার ঠিক করবে। কীভাবে?

    - কৃষক কেবল সরকারি মন্ডিতে ফসল বেচার বাধ্যবাধকতার থেকে মুক্ত হয়ে গোটা দেশে যেখানে ভাল দাম পাবে সেখানেই বেচতে পারবে। ফলে আয় বৃদ্ধি হবে।

    - কেমিক্যাল সার, কীটনাশকের সাহায্যে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ধান-গমের চাষে খরচ প্রচুর, লাভের মার্জিন কম। তাই দরকার হল ধান-গমে আটকে না থেকে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপন্ন করা (ডাইভারসিফিকেশন)।কিন্তু চাষিরা ভয় পায় ফল-ফুল-শাক-সব্জীর বাজারের ওঠানামায়। এর সমাধান হিসেবে মোদী সরকার এনেছেন ‘কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং’। তাতে গাঁয়ের ছোট কৃষকেরা উপকৃত হবে। বড় পুঁজিপতি খবর রাখে শুধু দেশের বাজারের নয়, বিশ্ববাজারেরও। সে দেখবে কোন বিশেষ ফসল বা ক্যাশ ক্রপে বাঁধা বাজার আছে এবং লাভের মার্জিন ভাল। একজন পুঁজিপতির সঙ্গে চুক্তি করবে গোটা গাঁয়ের ছোট বড় সব চাষি। দাম আগাম ঠিক করা হবে। কোন ফসল বোনা হবে তা ঠিক করবে চাষি নয়, পুঁজিপতি। চাষির কাজ খালি চাষ করা। বাজারের চিন্তা ওকে করতে হবে না। খোলা বাজারে দাম কমুক বাড়ুক, ওর কী ? ওতো আগাম চুক্তি অনুযায়ী যা দাম তাই পাবে। “তুফান যদি এসেই থাকে তোমার কিসের দায়”!

    - এর জন্যে চাই কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগ। সরকারের বিনিয়োগ হল ২০২০-২১ এর বাজেটের ৫%, এবং জিডিপি’র ১% এরও কম। সরকার কত করবে? তাই চাই বেসরকারি বিনিয়োগ, দেশি-বিদেশি সব চলবে।

    - ফসল ভান্ডারণ ইত্যাদিতে বেসরকারি বিনিয়োগ আনতে হলে কৃষিতে সরকারি হস্তক্ষেপ কমিয়ে বাজারনির্ভর এবং লাভজনক করতে হবে। স্থানীয় নয়, দেশ জোড়া বড় বিনিয়োগ চাই। কর্পোরেট পুঁজি এসে বিশাল সব স্টোর বানাবে। মিডলম্যানদের বাদ দেবে। বিশ্ববাজারে কৃষিজাত পণ্য রফতানি হবে। তাই মজুতের ওপর কোন নিষেধ, কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ চলবে না।

    - এই নতুন ইকো-সিস্টেমে কোন মিডলম্যান, আড়তিয়া বা ফড়ে থাকবে না।এতে কিসান হবে বেচারাম, বড় পুঁজি হবে কেনারাম। এভাবে ফসল, বড় ক্রেতা ও অ-কৃষক শহুরে উপভোক্তার মধ্যেও সিধে সম্পর্ক তৈরি হবে। আদানির অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বিশাল ‘সিলো’ গোদাম এবং রিলায়েন্স বা অ্যমাজন রিটেইলস চেনে আমরা তার আগামী পদচাপ শুনতে পাচ্ছি।

    - গোটা দেশে একটাই বাজার হবে সেটা মোদী সরকারের e-NAM যোজনার মাধ্যমে ইন্টারনেট দিয়ে যুক্ত হবে। তাতে বঙ্গের কিসান নেটে চেক করে কেরালায় যদি ভাল দাম পায় তো সেখানে চাল পাঠানো বুক করে নেবে। ক্রেতা তার এজেন্ট দিয়ে চাষির দোরগোড়া থেকে ফসল তুলে নেবে। চাষির অ্যাকাউন্টে অনলাইনে পেমেন্ট এসে যাবে। কী মজা! যেন আমরা ঘরে বসে অ্যামাজন বা ওলেক্সে কেনাবেচা করছি!

    - সমস্যা হল ১৪ এপ্রিল ২০১৬তে প্রধানমন্ত্রী এই ই-নাম যোজনার উদ্ঘাটন করেছিলেন। এখন সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারী রিপোর্ট অনুযায়ী মেরেকেটে ১০০০ মন্ডী যুক্ত হয়েছে।মাত্র ১৫%। প্রশ্ন ১০০% লক্ষ্য প্রাপ্ত হলেও দেশের ৫ কোটি কৃষক অনলাইনে ধান গম ফল শাকশব্জী কেনা বেচা করবে? নেটওয়ার্ক? অবশ্য আগামী বছরে গোটা দেশে ৫-জি নেটওয়ার্ক কে আনছেন আমরা সবাই জানি।

    বেশ, এর মধ্যে গলতা কোথায়?

    * এই মডেলের পেছনে ধারণাটি(অ্যাসাম্পশান) হচ্ছে ক্রেতা কর্পোরেট হাউস এবং বিক্রেতা চাষিরা সমান সমান। যেন বার্সেলোনা ও রিয়েল মাদ্রিদের ম্যাচ! তাই দুপক্ষকে সমান স্বাধীনতা দিলে সবার ভাল হবে। কিন্তু বেসিক ধারণাটিই ভুল। সারাদেশ জুড়ে আম্বানী আদানীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি অত্যাধুনিক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গোডাউনের জালের সঙ্গে অবাধ মজুতের আইনি অধিকার যুক্ত হয়ে এমন বিশাল শক্তি যার সঙ্গে চাষিদের এঁটে ওঠার প্রশ্নই নেই। কারণ কৃষকদের ৮০% হল ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি।

    * নিও ক্ল্যাসিক্যাল ইকনমিক্সের ফ্রি মার্কেটের মডেলের পেছনে ধারণাটি হল ক্রেতা ও বিক্রেতা দুপক্ষেই এত অসংখ্য সদস্য যে কোন একজন ক্রেতা (পড়ুন ব্যবসায়ী) বা কোন একজন বিক্রেতা( পড়ুন কৃষক) একা বাজারের দামকে প্রভাবিত করতে পারবে না। দাম নির্ধারণ হবে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতার দরাদরিতে চাহিদা ও যোগানের সাম্যবিন্দুতে।

    * এটা টেক্সটবুকে বা পরীক্ষার খাতায় ভাল লাগে। কিন্তু যেই আপনি এর সঙ্গে এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে সংশোধন করে ক্রেতা -ব্যাপারিকে পণ্য স্টক করার অসীমিত আইনি অধিকার দিলেন অমনি ফ্রি মার্কেট ফ্রি কম্পিটিশন রইলো না। আদানি আম্বানিদের পুঁজির জোর ও জায়ান্ট আধুনিক গোডাউন(গোটা দেশে এর মধ্যেই আদানি ভদ্রলোক কয়েক শ’ ওই ‘সিলো’ বানিয়ে ফেলেছেন) পিকচারে আসতেই ফসল ক্রেতাদের মধ্যে ‘লেভেল প্লে-গ্রাউন্ড’ এবং ফ্রি-কম্পিটিশন খতম। যদি একজন ব্যাটসম্যানকেই হেলমেট পরতে দেন আর বাকিরা ‘নট অ্যালাউড’, এবং লাগাতার বাম্পার দিতে থাকে লিলি ও টমসন? এরপর কী হবে বুঝতে কোন রকেট সায়েন্স লাগেনা।

    ছোট, মাঝারি ও স্থানীয় ক্রেতারা আউট। ফলে একদিকে দু’তিনটে বড় কর্পোরেট ও তার প্রতিনিধি ফড়েরা (আম্বানি আদানি কি গোডাউনে গোডাউনে ঘুরে বেড়াবেন?) অন্যদিকে কয়েক লক্ষ মাঝারি ও ছোট চাষি। বাজার হল ডুয়োপলি বা অলিগোপলি।

    * অধিকাংশ ছোট চাষিরা ভাল দামের আশায় ফসলকে গুদামে ধরে রাখতে পারেনা। ওদের নতুন ফসল ওঠামাত্র কম দামে ছেড়ে দিতে হয় ধার শোধ করতে এবং ঘরের খরচা চালাতে। এই সহজ সত্যিটা অমর্ত্য সেন ও অশোক রুদ্র বোলপুরের কাছে ফিল্ড স্টাডি করে দেখিয়েছিলেন “ নন-ম্যাক্সিমাইজিং বিহেভিয়র অফ ফার্মার’ প্রবন্ধে; ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলিতে সম্ভবতঃ আশির দশকে বেরিয়েছিল।

    * কিন্তু করপোরেট একবছর ফসল গোডাউনে ধরে রেখে পরের বছর প্রথমে কেনার গরজ না দেখিয়ে চাপ দিয়ে দর কমাতে বাধ্য করতে পারে। অর্থাৎ, শক্তিমান ও দুর্বলের সমান স্বাধীনতা বাস্তবে শক্তিমানের স্বাধীনতা।

    * তাই কৃষকদের মণ্ডী ব্যবস্থায় ‘খাঁচার পাখি’ আর নতুন আইনে ‘মুক্ত বিহঙ্গম’ বলার কোন মানে নেই।নীল আকাশে বাজপাখি ও টিয়া একসঙ্গে উড়লে কী হবে সবাই বোঝে।সেই রিস্ক নেয়ার চাইতে খাঁচার সুরক্ষা ছোট চাষিদের জন্যে বেশি দরকারি। চাষির স্বাধীনতা রয়েছে যেকোন বাজারে ফসল বেচার—সরকারি মন্ডী বা বাঈরে প্রাইভেট মন্ডী—কথাটা সত্যি নয়। পরিস্থিতি ও ইকোসিস্টেম ঠিক করে ও কোথায় যাবে।

    * আপনি ছাপোষা মানুষ। সামান্য সঞ্চয় কোথায় রাখবেন কম সুদে সরকারি ব্যাংকে? নাকি বেশি লাভ করে বড়লোক হবার আশায় শেয়ার বাজারে? একদিকে আপনার অবস্থা বদলাবে না কিন্তু খারাপও হবে না, আপনি সেফ। অন্যদিকে রাতারাতি রাজা হতে পারেন বা ফকির। দেখুন, এই ফাটকায় বড়ভাই মুকেশ রাজা হয়েছে, ছোটভাই অনিল ফকির।

    চাষিরা আপনার আমার মতই ভাবছে—চাইনা মাগো রাজা হতে! কিন্তু আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।

    * কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং হলে চাষি নিজের ইচ্ছেমত ফসল বোনার স্বাধীনতা হারাবে। কর্পোরেট লাভের জন্যে বা নিজের শিল্পের কাঁচামালের জন্যে যে চাষ করতে হবে তাই ওকে করতে হবে। এইভাবে ক্যাশ ক্রপ বেড়ে এবং খাদ্যশস্যের চাষ কমে ‘খাদ্য সুরক্ষা’ মার খেতে পারে।

    * এইখানেই দরকার সরকারের হস্তক্ষেপের। সরকারকে খেলতে হবে না, আম্পায়ারিং করলেই হবে। ফাউল হলে বা এলবিডব্লিউ হলে অন্তিম নির্ণয় কে দেবে?সরকার সেই দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে?

    * কৃষি এবং শিল্পকে এক আসনে বসিয়ে দেখলে ভুল হবে। শিল্পপতির প্রেরণা হল মুনাফা এবং পুঁজি বৃদ্ধি। কৃষকের জমির সঙ্গে রয়েছে এক পুরুষানুক্রমিক আত্মীয়তা বোধ। জমিকে বা মাটিকে আদিম কাল থেকে সবাই মা বলে। খাদ্য ও সুরক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে ভাবে। চাষ করাকে কেন্দ্র করে কত গান, উৎসব লোকাচার গড়ে উঠেছে। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে?

    * এই কৌমী চেতনা থেকে রবীন্দ্রনাথ লেখেন “ দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে, এমনি লক্ষ্মীছাড়া!” বাম সরকার এই আবেগকে বোঝেনি বলেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম হয়েছে।

    * কিছু মিডিয়া ও অর্থনীতিবিদ বলছেন যে এই আইনের ফলে খোলাবাজারের ওঠানামায় কেউ কেউ চাষবাস ছেড়ে অন্য জীবিকা খুঁজবে। ফলে জমির উপর চাপ কমে কৃষি আবার লাভজনক হবে।

    * কৃষক পরিবার থেকে আদ্দেক লোক শহরে গিয়ে ভীড় করবে? কাজ কোথায় খুঁজবে? শিল্পে? পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে? এই প্রেস্ক্রিপশন সবচেয়ে মারাত্মক। এটি ২০০ বছর আগের ইকনমিক হিস্ট্রির ইউরোপীয় মডেল থেকে ধার করা। আজকের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে যোগ কোথায়?

    * শহরে কাজ কোথায়? শিল্পে করোনা আসার আগে থেকেই ভারতে গত ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারি ৬.৫%। শিল্পে মন্দা। মনমোহন সরকারের মুক্তবাজারের শিল্পনীতিতে হয়েছে রোজগারবিহীন বিকাশ বা ‘জবলেস গ্রোথ’। এখন তো ফ্যাশন হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগে আরও লেবার কমানো। উন্নত প্রযুক্তি মানেই মেশিন বেশি, শ্রমিক কম।

    * শিল্পে বিক্রেতা নিজের পণ্যের দাম বলে দরাদরি শুরু করে। সার্ভিস সেক্টরের পণ্য অর্থাৎ বীমা, শিক্ষা, ডাক্তার , উকিল –সবার জন্যেই এটি সত্যি।

    কিন্তু কৃষিপণ্য বা ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উলটো। ফসলের দাম ঠিক করে উৎপাদক কৃষক নয়, ক্রেতা ফড়ে।

    * তাই ফসল বিক্রির খোলা বাজারে কৃষকের স্বাধীনতা সীমিত। কারণ ৮০% হল ছোট ও প্রান্তিক গরীব চাষি। ওরা কর্পোরেটের প্রতিনিধির সঙ্গে কি করে দরাদরি করবে? ওদের নগদ টাকা চাই। ডিজিটাল পেমেন্ট বা একমাস পরে টাকা পেলে ওদের চলবে না।

    * অর্থনীতিবিদ রামকুমার এবং দেবিন্দর শর্মা বলছেন এই মডেলটি কোন আকাশ থেকে পড়া ইউনিক মডেল নয়। কৃষির ক্ষেত্রে এই মডেলটি ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যর্থ। এতে কোথাও চাষিদের আয় দ্বিগুণ হয়নি। উলটে এটা আজ প্রমাণিত যে কৃষিকাজ আর লাভজনক নয়।কিন্তু খাদ্য সুরক্ষার স্বার্থে একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ভর্তুকি দিয়ে। নব-উদারবাদী অর্থনীতিবিদরা চেপে যাচ্ছেন যে আমেরিকাতে চাষিদের আয়ের ৪০% আসে সরকারি ভর্তুকি থেকে। ইউরোপ জাপান সর্বত্র একই চিত্র। তাহলে ভারতে কেন আমরা এমএসপি বন্ধ করার কথা ভাবব?

    * মুখ খুলেছেন মোদী সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে কয়েক্ মাস আগে ইস্তফা দেয়া হরসিমরন কৌর। বলছেন আম্বানীর জিও যেমন আগে মিনিমাগনায় মোবাইল ধরিয়ে সব প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে শেষে সমানে দাম বাড়াচ্ছে, নতুন আইনে স্বাধীনতা পাওয়া কর্পোরেট হাউস ঠিক ওইভাবে প্রথমে চাষিদের লোভ দেখিয়ে মন্ডীর বাইরে আনবে, তারপর একচেটিয়া অধিকার জমিয়ে ওদের লুঠে নেবে।

    তাহলে কীরকম সংস্কার চাই?

    - এই তিনটে আইন যেন মাথাব্যথা সারাতে মাথা কেটে ফেলা গোছের সংস্কার। সরকারি মন্ডী ব্যবস্থায় গলদ আছে। সেগুলো না শুধরে সরকারের ভূমিকাই বাতিল করে দেওয়া? বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী এবং স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদবের ভাষায় এই আইন এপিএমসি অ্যাক্ট ও মণ্ডি ব্যবস্থার ভাঙা ছাদের ফুটো সারানোর বদলে কিসানদের বাড়ী থেকে বের করে খোলা আকাশের নীচে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।

    - বুঝলাম। কিন্তু কী করা দরকার?অনেক কিছুই।

    * সবচেয়ে আগে দরকার মণ্ডী ব্যবস্থা বন্ধ না করে গোটা দেশের জন্যে বিস্তৃত করা। প্রথম পর্যায়ে কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্টস অ্যান্ড প্রাইসেস( সি এ সি পি) এর অনুশংসা অনুযায়ী ৪২,০০০ মন্ডীর এক নেটওয়ার্ক যাতে কৃষকেরা ক্ষেত থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে একটি মণ্ডী পায় ।

    * দরকার এফ সি আইয়ের গোডাউনের চেন তৈরি করা, এটা আদানি আম্বানিদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। এখনও কৃষি পরিকাঠামো এবং গবেষণায় সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১% এর বেশি নয়।

    * দরকার কৃষকেরা যাতে ধান-গম ছাড়াও অন্য ফসল যেমন ফল-ফুল-শাকসব্জী চাষের দিকে যান, তার জন্যে নগদ ইন্সেন্টিভ দেওয়া। ষাটের দশকের শেষে তৎকালীন সরকার অনিচ্ছুক কৃষকদের ওই উচ্চফলন শীল চাষ এবং গোবরের বদলে কেমিক্যাল সার ব্যবহার করতে অমনই ‘ইন্সেন্টিভ’ দিয়ে ফল পেয়েছিল।

    * দরকার খাদ্য সুরক্ষা এবং কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবে রক্ষাকবচ হিসেবে এমএসপিকে আইন করে বেস প্রাইস করে দেওয়া এবং অন্য ফসল যেমন ফল-ফুল-শাকসব্জীকেও এর অধীনে আনা।

    * এসেনশিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্টের পরিবর্তন বাতিল করে অতি আবশ্যক বস্তু, বিশেষ করে খাদ্যশস্যের ব্যাপারে মজুতদারিকে নিয়ন্ত্রণ করা।তাহলে ক্রেতা ব্যাপারিদের মধ্যে কিছুটা সমানে সমানে কম্পিটিশন হতে পারবে।

    * কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর চুক্তি ত্রিপাক্ষিক হোক। তাতে চাষি এবং কর্পোরেট ক্রেতার সঙ্গে সরকারও গ্যারান্টর হোক।

    * ফসল বীমা সুরক্ষা কোম্পানী অনিল আম্বানী আদি করপোরেটের হাতে ছেড়ে না দিয়ে সরকার আগের মত দায়িত্ব নিক। বীমা কোম্পানি সরকারের জন্যে মুনাফা দেয়, এটা প্রমাণিত ।

    * মন্ডী এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার পরিচালনা ব্যবস্থায় করাপশন ঠেকাতে আন্তরিক চেক সিস্টেম মজবুত করা হোক।

    শেষ করি কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দিয়ে।

    প্রশ্নঃ এই আন্দোলনে কেবল পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশের চাষিরাই বেশি কেন?

    § একটু পেছনে ফেরা দরকার। নরম্যান বোরলাগের দিশানির্দেশে সবুজ বিপ্লব শুরু হয়েছিল পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায়। কারণ ওখানকার মাটি এবং সেচের নেটওয়ার্ক দেশের মধ্যে এই কাজের জন্যে সবচেয়ে ভাল বলে উনি মনে করেছিলেন।ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ এবং নলকূপ খননের এতে বড় ভূমিকা ছিল।গোটা দেশের কৃষক অনেক পরে পাঞ্জাবকে অনুসরণ করেছে।্তার ফলে পাঞ্জাবে দ্রুত গড়ে উঠেছে মধ্য কৃষকদের এক সম্পন্ন সমাজ। লাগোয়া পশ্চিম উত্তর প্রদেশেও এর ছোঁয়া। যদিও কৃষিতে নিযুক্ত চাষিদের ৩০% কৃষিশ্রমিক।

    § খেয়াল করুন গোড়ায় বর্ণিত গত শতাব্দীর ইকোসিস্টেমে পাঞ্জাব হরিয়ানাই সরকারের খাদ্য ভান্ডারে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত ফসল জমা করে গোটা দেশকে খাইয়েছে। কয়েক বছর আগেও ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার গমের মোট ৭০% এবং চালের ৬০% যোগাত ওই তিনটি অঞ্চল।

    § কৃষিতে ট্যাক্স নেই, অথচ গ্যারান্টি রয়েছে যে মন্ডীতে অবিক্রীত চাল-গম সরকার এমএসপি দরে কিনে নেবে যা কিনা সবসময় বাজার দরের চেয়ে একটু বেশি। ফলে এই অঞ্চলের কৃষকদের উইন-উইন সিচুয়েশন। এবং গড়পড়তা আয় গোটা দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যদি এক একরে একটি ফসলে দেশের অন্য এলাকায় কৃষকের গড়পড়তা নীট আয় বছরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা, তো পাঞ্জাব-হরিয়ানা-পশচিম উত্তর প্রদেশে এই আয় ১৪০০০ টাকা।

    ওরা চিন্তিত নতুন আইনের প্রয়োগে ওদের ‘সুরক্ষিত’ ইকোসিস্টেম ভেঙে যাবে এই আশঙ্কায়।

    § দাঁড়ান, দাঁড়ান। মিডিয়ায় তো জ্ঞানীগুণীরা বলে চলেছেন যে এমএসপির সুবিধে পায় দেশের মাত্র ৭% কৃষক। এমনকি বিজেপির এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত শান্তাকুমার কমিটির বক্তব্যও তাই। কারণ ওই ৭% কৃষকই শুধু এপিএমসি সরকারি মন্ডীতে ফসল বেচে। তাহলে অমন মন্ডী বা এপিএমসি ব্যবস্থার প্রয়োজন কি ? এসব তুলে দেয়াই উচিত। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার জন্যে করদাতাদের পয়সা নষ্ট করারই কি মানে? এই কমিটি ২০১৫তে রেকমেন্ড করে যে কৃষকদের থেকে শস্য এফ সি আইয়ের গোডাউনে রাখার কাজটা রাজ্যসরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হোক।

    § তাইতো বর্তমান সরকার আইন বদলে দিচ্ছে। এবং সেপ্টেম্বর ২০১৯শে বিত্তমন্ত্রী সীতারমণ এবং তার আগে নীতি আয়োগ এই কথাই বলেছিলেন।

    § ওরা কি মিত্থ্যা কথা বলছেন?

    § না; মিথ্যা নয়, কিন্তু অর্ধসত্য। লুকোনো হচ্ছে যে গোটা দেশের ৭০০০ মন্ডীর ৪০০০ এর ওপর শুধু এই এলাকায় রয়েছে। ফলে মন্ডীতে যাওয়া ৭% এর ৮০% কৃষক ওই এলাকার।এবং ওই অঞ্চলের ৯০% মন্ডিতেই ধান বিক্রি করেন।

    § কিন্তু এই ধনী কৃষকেরা আন্দোলন করছে, কেন?

    আমি বলব , এই রহস্যের চাবিকাঠি পেতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ছিনিয়ে খায়নি কেন” গল্পটি দেখুন । যোগী ডাকাতের নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষে অনাহারে থাকা মানুষ টুপ করে রাস্তায় মরে পড়ে গেছে কিন্তু ছিনিয়ে খাওয়ার কথা ভাবেনি। বরং একবার লূঠের ভাত পেটে পরার পর গুদাম লুঠতে রাজি হয়েছে।

    মানুষ লড়াইয়ে নামে দারিদ্র্য থেকে নয়, সেটা মেনে নেয় ভবিতব্য বা বিধির বিধান মেনে। লড়তে রাজি হয় যে সুবিধা বা অবস্থায় রয়েছে(পড়ুন বর্তমান ইকোসিস্টেম) তা ধ্বংস হবার সম্ভাবনা দেখলে।

    সিপাহী বিদ্রোহে নানাসাহেব, তাঁতিয়া টোপী, লক্ষ্মীবাঈ ও কুঁয়র সিং কেন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

    এরা দেখছে মোদীজি মুখে মন্ডী এবং এমএসপি থাকার কথা বললেও অসম প্রতিযোগিতার ফলে মন্ডী এবং এমএসপি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।

    বেশি দামের আশায় উত্তর প্রদেশ ও বিহার থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি ফসল পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এসে বাজারে খোলা বাজারে দাম কমিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এমএসপি বাদ দেয়া নয়, বরং তাকে সমস্ত রাজ্যে চালু করা দরকারি।

    § সরকার যে বলছে মন্ডীর বাইরে খোলা বাজারে বিক্রি করলে কৃষকেরা ভাল দাম পাবে?

    অন্ততঃ ন’টি রাজ্যে এপিএমসি থেকে বেরিয়ে গেছে। কারণ কৃষি রাজ্যের এক্তিয়ারে। কিন্তু তাদের আয় কি দ্বিগুণ হয়েছে? বিহারে নীতিশ কুমার ১৫ বছর আগে ওই কৃষি উৎপাদন এবং বিপণন কমিটি (এপিএমসি) আইনের থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ফলটা কী হয়েছে? আজও বিহারের কৃষক এবং কৃষি ভারতে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের অন্যতম। এমএসপির ঠেকনো থাকায় যে ধানের দাম পাঞ্জাবে ১৮০০ টাকা কুইন্টাল, সেটা পূর্ব বিহারে অসহায় চাষিরা ১১০০-১২০০ টাকা কুইন্টলে বেচতে বাধ্য হয়েছেন।

    চাষিরা কী চাইছেন?

    ওঁরা চাইছেন যে এমএসপি আইন হলে গোটা দেশের চাষিদের লাভ হবে। এই এমএসপি দামের বটমলাইন হোক। এর নীচে বেচলে শাস্তি হোক। এদের সমর্থনে কৃষি অর্থনীতিবিদ দেবিন্দর শর্মা বলছেন যে শান্তাকুমার কমিটির কৃষিকে কর্পোরেট পুঁজির অধীন করার রেকমেন্ডেশন বাতিল করে কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্টস অ্যান্ড প্রাইসেস (সিএসিপি)এর রেকমেন্ডেশন মেনে নিয়ে ৭০০০ মন্ডীর জায়গায় গোটা দেশে সংখ্যা বাড়িয়ে অন্ততঃ ৪২,০০০ করা হোক। তাহলে চাষির ক্ষেত থেকে মন্ডীর গড়পড়তা দূরত্ব ৫ কিলোমিটারের বেশি হবে না।

    সরকার বলছে চাষিদের স্বামীনাথন কমিশনের হিসেবে বর্ধিত এম এস পি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু চাষিরা মানছে না। সত্যিটা কী?

    সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি ঠিক নয়। স্বামীনাথন কমিশন দু’রকম উৎপাদন ব্যয়ের কথা বলেছেঃ সি-১ ও সি-২।

    সি-১ = (বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ কর, বিদ্যুৎ, পরিবহন, ডিজেল, হালগরু ইত্যাদি) + পারিবারিক শ্রম।

    সি-২= সি-১ + অপর্চুনিটি কস্ট, ( অর্থাৎ কৃষক যদি চাষে খরচা না করে ওই টাকাটা ব্যাংকে রাখত বা অন্য কোন বিনিয়োগে যা আয় করত সেটা)।

    স্বামীনাথনের সুপারিশঃ সরকারের উচিৎ চাষীদের থেকে

    সি-২ রাশির দেড়গুণো বা ১৫০% দামে ফসল কেনা। অর্থাৎ। এম এস পি হবে সি-২ খরচের ১৫০%। চাষীরা তাই চাইছে।

    কিন্তু সরকার এম এস পি হিসেবে দিচ্ছে সি-১ এর ১৫০%।

    এই অভিযোগটি কি সত্যি যে কংগ্রেস সরকারও এই ধরণের রিফর্ম করে কৃষি উৎপাদন ও বিপণনকে খোলা বাজারের আওতায় আনতে চেয়েছিল?

    পুরোপুরি সত্যি।

    এমনকি গত ২০১৯শের কংগ্রেসের ইলেকশন ম্যানিফেস্টো বলছে—“Congress will repeal the Agricultural Produce Market Committee Act and make trade in agricultural produce—free from all restrictions’.[1]

    এটাও কি সত্যি যে সেই সময় , মানে ইউপিএ-২ সরকারের আমলে বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারাই এর বিরোধিতা করেছিলেন?

    এটাও সত্যি। আজ বিজেপি মন্ত্রীরা কৃষকদের ‘আড়তিয়া’ বা ‘বিচৌলিয়া’দের খপ্পর থেকে বের করে আনার কথা বলছেন, আন্দোলনের পেছনে আড়তিয়াদের টাকা বলে আঙুল তুলছেন। কিন্তু সন ২০১২র ৬ এবং ৭ ডিসেম্বর বিজেপির দুই খ্যাতিমান সাংসদ (বর্তমানে প্রয়াত) সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি কংগ্রেসের এপিএমসি তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে মন্ডী ব্যবস্থার পক্ষে ‘স্পিরিটেড ডিফেন্স’ দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। উৎসাহী পাঠকেরা ইউটিউবে ওঁদের চমৎকার যুক্তিতর্ক শুনতে পারেন।

    o জেটলির বক্তব্য ছিল—আপনারা মশাই ক্যাপিটালিস্ট মার্কেটের ডায়নামিক্স কিস্যু বোঝেননি । গোড়ায় গলদ। আড়তিয়া নামক স্থানীয় ছোটখাট মিডলম্যানদের সরিয়ে দিলে তার জায়গা নেবে কর্পোরেটের রাঘববোয়াল মিডলম্যানেরা। চাষির সর্বনাশ হবে।

    o সুষমার বক্তব্য – আড়তিয়ারা স্থানীয়, চাষিদের পরিচিত এবং ওদের ইকোসিস্টেমের অংশ । এরা ওদের সময়ে অসময়ে সার-বীজ, নগদ টাকা ধার এবং দরকার হলে মেয়ের বিয়েতে সাহায্য সবই করে।

    o বাকিদের কথা ছাড়ুন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী গত ১২ এপ্রিল, ২০১৬তে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটের অনলাইন কেনা বেচার প্ল্যাটফর্ম বা e-NAM এর উদ্বোধন করতে গিয়ে জোর দিয়ে বলেন যে আড়তিয়ারা কৃষি পণ্য কেনাবেচার গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ। এরাও এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাভবান হবে। আজ নতুন আইনে কয়েক হাজার আড়তিয়া কাজ হারাচ্ছে। এরা যে সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে সামিল হবে তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?

    প্রধানমন্ত্রীর ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ই- উদ্ঘাটনে
    সুষমা স্বরাজের সংসদে ৫ ডিসেম্বর, ২০১২
    অরুণ জেটলির ৬ ডিসেম্বর, ২০১২।

    উপসংহার

    কৃষি অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র শর্মা সম্প্রতি বিভিন্ন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছেন –এই কৃষির খোলাবাজারের মডেলটি নতুন কিছু নয় বরং ইউরোপ আমেরিকায় অনেক আগে থেকেই পরীক্ষিত একটি ব্যর্থ মডেল। এর ফলে ওদের দেশে কৃষকদের আমদানি বছরের পর বছর সমানে কমছে এবং কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। প্রথম বিশ্বের ওসব দেশে কৃষি এবং তার পণ্য রপ্তানি মূলতঃ সরকারি সাবসিডি নির্ভর। প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাপার সংগঠন বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন প্রতিবছর রীতিমত বৈঠক করে এই ভর্তুকির পরিমাণ ঠিক করে।[2]

    দিল্লির জে এন ইউয়ের ‘সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিং’ এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিমাংশু’র বক্তব্য ভাবার মত। উনি বলছেন যদিও কৃষকদের মন্ডী ব্যবস্থার অদক্ষতা/ত্রুটি/আড়তিয়াদের কার্টেল নিয়ে প্রচূর ক্ষোভ রয়েছে তবু তারা এটাকে তুলে দেয়ার বদলে সংস্কারের পক্ষপাতী। কেন ? ওদের চোখে বর্তমান ইকো-সিস্টেমে আড়তিয়ারা গাঁয়ের কৃষকদের জন্যে ‘ তথ্য, খবরাখবর, বীজ-সার এবং কখনও কখনও বিনা কোল্যাটারাল সরল ঋণ পাওয়ার উৎস’।এছাড়া যেভাবে ওদের প্রতিনিধিদের , মন্ডী সংগঠনের বা রাজ্যসরকারের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে বিলগুলো ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হল তাতে ওরা ক্ষুব্দ। ওরা বলছে এই বিলগুলো কৃষকদের নয়, বড় কর্পোরেটদের কৃষিতে যা খুশি করার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। এর আগে কৃষি উৎপাদন বা বিপণন নিয়ে যত সংস্কার হয়েছে তাতে সবসময় স্টেক-হোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়েছে।[3]

    গত ১১ ডিসেম্বর মুখ খুলেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা কৌশিক বসু। বলছেন ভারতের কৃষিতে সংস্কার দরকার। কিন্তু এই তিনটে আইন করপোরেটের স্বার্থে তৈরি এবং কৃষকদের জন্যে ক্ষতিকর।

    তাই সরকার যদি জিদ ছেড়ে কৃষকদের কথা মেনে এই আইন তিনটে বাতিল করে এবং কৃষকদের প্রতিনিধি ও অর্থনীতিবিদদের এক কমিটি বানিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে নতুন বিল আনে তাহলে তাঁর গৌরব বাড়বে বই কমবে না।

    কিন্তু সরকার কি ধর্মকথা শুনবে? তাহলে এই করোনা বাজারে সাত তাড়াতাড়ি ওই তিনটে বিল অমন হুড়ুম দুড়ুম করে পাশ করালো কেন?

    অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ি একটি প্রবন্ধে (4thpillars.com দেখুন) কোন রাখঢাক না করেই বলছেন- এই বিলগুলো আসলে আনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যের পুরনো দুই পেয়ারের কর্পোরেট বন্ধুদের সহায়তার জন্যে।

    হঠাৎ খবরটা চোখে পড়ল যে আরটিআই অ্যাক্টের চিফ কমিশনার ভদ্রলোক ইলেকশন ফান্ডে ডোনারদের নামগুলো জানানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

    =====================================================

    [1] Ashok Gulati, Indian Express, 28th September, 2020.

    [2] দেবেন্দ্র শর্মা, ২৪ সেপ্টেমবর, ২০২০।

    [3] হিমাংশু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | 161.65.237.26 | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২৯733426
  • রঞ্জনবাবু, কিছু বিষয় নিয়ে দেশের কৃষির পণ্ডিতদের কোন বক্তব্য দেখি না, যদিও বিষয়টি কৃষি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভারত কৃষি উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারিতে (এবং বহু দশক জুড়ে), আমাদের শস্য উদবৃত্ত, তার সত্ত্বেও বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত তলায় পড়ে থাকে। 


    কেন? 


    কেন ভারতে কৃষকেরা আত্মহত্যা করেন? 


    আপনারা সবাই পলিটিক্স নিয়ে যতটা মাথা ঘামান, কাউকে দেখিনা এই বুনিয়াদি বিষয় গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। 


    আপনারাও যারা সবিস্তারে কৃষি নিয়ে লেখেন, দেশের খাদ্য এবং ক্ষুধা সংকট নিয়ে খুব একটা লেখেন না। কেন এই ব্যাপারটাকে অবহেলা করেন? 

  • Ranjan Roy | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:২৪733428
  • অরিন 


    সরি।


    আসলে আমি এই প্রথম মানে দুমাস আগে কৃষি নিয়ে লিখব। অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ট্রাস্টের স্টাডিতে বেরিয়েছিল কীভাবে বাম আমলেও এককোটি লোক একবেলা খেতে পেত।


    আমি অনাহার লিখব , একটু পড়াশোনার পরে। এ ব্যাপারেও কিছুই জানিনা।

  • Somnath Roy | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৪৫733433
  • খুব ভালো লেখা। খুব দরকারি

  • Samarendra Biswas | ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৫৪733435
  • গুরুত্বপূর্ণ লেখা। কৃষিতে কর্পোরেট পুঁজির থাবা প্রতিহত হওয়াই উচিত। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন