এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক সান্টা আর ধর্মেরা

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৩১১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • এলগিন মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। হাঁটার পথটা পেরিয়ে এসে আমার প্রিয় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এদিক ওদিক দিয়ে নানারকম যানবাহনের আপন গতিতে ছুটে চলা দেখতে বেশ ভালোই লাগে এই সময়টা। পাশে নানা লোকজনের নানা রকম মুখের ভাজ দেখতে আরও ভালো লাগে। মুখের ভাঁজ গুলো অনেক রকমের হয়। যেমন বাস দেরি করে আসার একরকম ভাঁজ আবার বাস মিস হয়ে যাবার আর এক রকম ভাঁজ। নানা-রকম ভাঁজের মাঝে নিজেকেও গুলিয়ে ফেলি মাঝে মাঝেই। কারণ আমারও বিরক্ত লাগে বাসের জন্য দশ মিনিটের বেশি দাঁড়াতে।

    আজ সেই বিরক্তিই হচ্ছিল। প্রায় পনের মিনিট দাড়িয়েও বাসের দেখা পাচ্ছি না। মনে মনে রাগও ধরছে। পাশে একজন আমার মতই ছেলে দাঁড়াল এসে। দেখে বেশ ভালো পরিবারেরই মনে হল। পুরো ফরম্যাল ড্রেস পড়ে, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে। মনে হল ছেলেটা কারোর অপেক্ষা করছে। এদিক ওদিক বারবার দেখছিল।

    কিছুক্ষন পর আর একটা ছেলে এল ওপার থেকে। তাকে দেখেই ছেলেটার মুখে একটা অজানা হাসি ফুটে উঠল। চোখ দুটো যেন আশায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ওপার থেকে আসা ছেলেটি বলল, “কি রাহুল কেমন আছিস?” বুঝলাম ছেলেটার নাম রাহুল।
    রাহুল বলল, “ভালো আছি দাদা। তুমি কেমন?”
    ছেলেটি বলল, “ভালোই আছি। যা পরিস্থিতি। বল কেন ডেকেছিস? সব ঠিক আছে তো?”
    রাহুলের মুখের হাসিটা যেন মূহুর্তে উধাও হয়ে গেল। মুখটা নীচের দিকে করে বলল, “দাদা একটা হেল্প করতে পারবে?”
    ছেলেটি বলল, “বল, চেষ্টা করব।“
    রাহুল বলল, “এবারের ক্রিসমাসে মেয়েটা বিশ্বাস করে আছে ওর সান্টাক্লস ওকে একটা বড় ডল গিফট করবে। ওই সেদিন বাইরে বেড়িয়ে বড় একটা টেডি দেখেছিল। কেনার বায়না ধরেছিল আর আমি বলেছিলাম ক্রিসমাসে সান্টাক্লস এই টেডিটা ওঁকে গিফট দেবে। আর কাল টিভিতে দেখেছে যে পরশু ক্রিসমাস। আশা নিয়ে বসে আছে মেয়েটা। কিছু টাকা ধার দিতে পারবে দাদা?“

    ছেলেটি সব শুনে বেশ অবাক হল। আমার অন্তত ওঁর মুখটা দেখে তাই মনে হল । এদিকে আমার বাসও আসছে না। কুড়ি মিনিট হয়ে গেছে দাঁড়িয়ে আছি। তবে মনে মনে ভাবছি বাসটা যেন আর একটু দেরি করেই আসে। কেন জানিনা একটা অজানা কৌতুহল কাজ করছিল জানার জন্য। রাহুল কি পারবে তার মেয়ের সান্টাক্লস হতে !

    ছেলেটি রাহুলের পিঠে হাত্ দিয়ে বলল, “কত টাকা?”
    রাহুল বলল, “১৭০০ টাকা।”

    ছেলেটি পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে একটা দু-হাজার টাকার নোট বের করে রাহুলের হাতে দিয়ে বলল, “এবার আসল কথাটা বল। তোর থেকে আমি টাকা ধার নিতাম আজ তুই আমার থেকে টাকা চাইছিস! কি ব্যাপার?”

    রাহুলের চোখদুটো ছলছল করে উঠল। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল, “চাকরিটা আর নেই দাদা। লকডাউনের একমাস পর থেকেই বসে আছি। প্রিয়াকে নিয়ে মেয়েকে নিয়ে যাই হোক করে চলছিল এই কয়েকমাস। এখন তো আর একদম চলছে না। তাই একজনের হাতে-পায়ে ধরে একটা সিকিউরিটি গার্ড এর জব নিয়েছি এই এক সপ্তাহ হল।”

    ছেলেটি রাহুলের মুখের দিকে এত স্নেহ ভরে তাকাল। কোন নিজের লোকও বোধহয় ওইভাবে তাকায় না। মিনিট দুই চুপ থেকে ছেলেটি বলল, “শোন ভাই, যখন যা দরকার হবে আমাকে ফোন করবি। আমি দেখি মালিককে বলে কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কিনা। কোন চিন্তা করবি না। একদিন আমাকে দেখেছিস তুই। কত করেছিস আমার জন্য। আজ তোর জন্য কিছু করতে পারলে আমার ভালোই লাগবে। একদম চিন্তা করিস না। তোর আনোয়ার দা এখন বেঁচে আছে। আমি থাকতে ভাবী আর মুন্নির কোন জিনিসে কমতি হতে দিবিনা।”

    রাহুল আর নিজেকে রুখতে পারেনি। আনোয়ারের হাত দুটো ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠেছিল। আর আমি দেখলাম এক হিন্দু সান্টা নিজের মেয়েকে গিফট দিতে এক মুসলিম মশীহার কাছ থেকে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব পালনের জন্য উপহার নিল। একসাথে তিনটে ধর্ম মিলে মিশে একাকার হতে দেখলাম আজ আমার এলগিন রোডে।

    আমার বাস এসে গেল। মুখে একরাশ হাসি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বাসে উঠলাম। বাস এগিয়ে চলল সামনের দিকে। মনে মনে ভাবলাম এইভাবেই রাহুল আর আনোয়াররা মিলেমিশে খুশীতে ভরিয়ে দিক পৃথিবী। ভালো থাকুক বন্ধুত্ব।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Deepankar Mukherjee | ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১৭101352
  • দুটো হাজার টাকার নোট...?

  • Rajkumar Mahato | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:০৮101361
  • দুটো লেখা নেই।  দু-হাজার লেখা আছে

  • অরিন | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:০২101362
  • " আর আমি দেখলাম এক হিন্দু সান্টা নিজের মেয়েকে গিফট দিতে এক মুসলিম মশীহার কাছ থেকে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব পালনের জন্য উপহার নিল। একসাথে তিনটে ধর্ম মিলে মিশে একাকার হতে দেখলাম আজ আমার এলগিন রোডে।"


    সান্টা ক্লস আর ক্রিসমাসের যে ট্র্যাডিশনের গল্প লিখেছেন, সেটি মূলত একটি জারমানিক প্যাগান প্রথা | পারলে শুধরে নেবেন। তবে গল্পটা ভারি সুন্দর লিখেছেন, ধর্মের হাবিজাবিগুলো বাদ দিলে। 

  • Rajkumar Mahato | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৩101370
  • কোনটা শোধরানোর কথা বলেছেন অরিন বাবু। প্রথা টাকে না গল্পটাকে। আর জেনে খুব খুশি হলাম যে আপনি পড়েছেন। আর এটি জার্মানি প্রথা এটাও জানলাম। 

  • অরিন | 161.65.237.26 | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০৪101376
  • গল্পটা যেমন আছে আঙ্গিকে দিক থেকে ভাল, সুন্দর গল্প। শুধু ক্রিসমাস প্রথাটি ঠিক ক্রিশ্চিয়ান নয়, এইটুকুই বলার। গল্পটায় ধর্ম  না এলেও হত, এইটাই বলতে চাইছি। 

  • aranya | 2601:84:4600:5410:2188:f354:a69c:e632 | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৩101377
  • গল্পটা সুন্দর। 


    লেখক বোধহয় দেখাতে চেয়েছেন - এক ধর্মের প্রথা অন্য ধর্মের লোক পালন করছে, এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুকে সাহায্য করছে , ধর্ম না এলে এই মেসেজ কি গল্পে দেওয়া যেত? 


    'সান্টা ক্লস আর ক্রিসমাসের যে ট্র্যাডিশনের গল্প লিখেছেন, সেটি মূলত একটি জারমানিক প্যাগান প্রথা'- এটা আমিও ​​​​​​​জানতাম ​​​​​​​না। জেনে ​​​​​​​ভাল ​​​​​​​লাগল। ​​​​​​​আমার ​​​​​​​ধারণা ​​​​​​​ছিল  বড়দিনে ​​​​​​​এই উপহার ​​​​​​​দেওয়ার প্রথা ​​​​​​​টা , ​​​​​​​কর্পোরেট ​​​​​​​চক্রান্ত, ব্যবসা ​​​​​​​বাড়ানোর ​​​​​​​ফিকির। 


    যাই হোক, পৃথিবীর বহু লোক এই সান্তা-র শিশুদের উপহার দেওয়ার প্রথাটিকে ক্রিসমাসের সাথে এক করে দেখে। গল্পের চরিত্র-রাও সেভাবেই দেখবে - সেটাই প্রত্যাশিত। 

  • Rajkumar Mahato | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৩৫101385
  • আপনাদের এই আলোচনা থেকে অনেক ধারনা স্পস্ট হল। ধন্যবাদ। পড়তে থাকবেন। আমি শিখতে থাকব

  • অরিন | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:১১101386
  • এটা পড়ুন,


    https://theconversation.com/the-borrowed-customs-and-traditions-of-christmas-celebrations-149527


    "The influence of Yule on the festive season of Northern European countries is still evident in linguistic expression too, with “Jul” being the word for Christmas in Danish and Norwegian. The English language also maintains this connection, by referring to the Christmas period as “Yuletide”.

    Here comes Santa

    Through the idea of gift-giving, we see the obvious connections between Odin and Santa Claus, even though the latter is somewhat of a popular culture invention, as put forward by the famous poem A Visit from St Nicholas (also known as The Night Before Christmas), attributed to American poet Clement Clarke Moore in 1837"

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন