এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  কাব্য

  • নিহত বন্ধুর প্রতি

    সুজিত বসু
    কাব্য | ২১ নভেম্বর ২০২০ | ৯৭৯ বার পঠিত
  • গাছপালাগুলি আর নয় যেন তেমন সবুজ
    বাতাস কাঁপে না আর ঝড়ে
    আমরাও আজকাল খুব একটা অবুঝ
    হই না, শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করে নিই পরস্পরে
    মনে কোনো তরুণীর লাজুক কোমল পদধ্বনি
    আনে না তেমন বিহ্বলতা
    একটু একটু করে স্মৃতি ঝাপসা হয়, মুছে যায় মৃত
    বন্ধুদের কথা।

    এরকমভাবে আমি বার্ধক্যের দ্বারে উপনীত
    হবো জানি, আজকাল ঋতু মানে শীত
    দূরে যাবি বলেছিলি, তাই কি জন্মের শোধ তুই এরকম
    দেশান্তরে গেলি রে রনজিত !
    জানিস অনজন আর চিঠিপত্র লেখে না আমাকে
    আমিও কারুকে আর বিশেষ লিখি না
    মাঝে মাঝে অবশ্যই লিখতে হয় মা কে।

    ফটোর অ্যালবাম খুলে নিজের উপর হলো কাল বড়ো ঘৃণা
    সারি সারি ছবি তাতে, আরো কিছু সংযোজন হয়েছে সম্প্রতি
    এমন অনেক নারী পুরুষ শিশুর ছবি রয়েছে বোঝাই
    যার অনুপস্থিতিতে কারো কোনো ক্ষতি
    হতো না, অথচ নেই তোর ছবি নেই তাতে নেই কেন নেই ?
    বুকের আগনেয়গিরি জ্বালায় না তবুও আমার
    স্বপ্ন সাধ আকাঙক্ষার সোনার পমপেই।

    বহুবার তোর সঙ্গে যেতে আমি চেয়েছি রে, আজও বহুবার
    মনকে বোঝাই চলো চলো চলে যাই
    কি হবে এখানে থেকে, গাছপালা নয় আর তেমন সবুজ
    বাতাস তোলে না আর ঝড়
    চলো রনজিতের মতো খুঁজে নিই দূর দেশান্তর
    কি হবে এখানে থেকে , শুধু বহুভুজ
    অক্টোপাস বসে আছে মেলে ধরে ইস্পাতের থাবা
    এখানে ফোটে না আর গন্ধরাজ চাঁপা ।

    কি হবে এখানে থেকে, এখানে স্বপ্নের রঙ নীল নয়, আকাশিও নয়
    সোনালি সুখেরা নেই, বিষাদেরা কাল্পনিক পাথরের নিচে আছে চাপা
    শুধু আতঙ্কেরা আছে, স্তূপ হয়ে আছে হিমভয়
    সব অনুভূতি বড়ো সাধারণ, ওজনে সমান
    সুখ দু:খ ব্যথা শোক কেজির বাটখারা দিয়ে মাপা হাতের আঙুলে টিপে মেরেছি সবাই
    মশামাছিদের মতো স্নেহ প্রেম দয়ামায়া নচছার বিবেক
    আমাদের আর কোনো বাবা নেই, নেই মা ও নেই বোন ভাই
    সন্তান বউ বা বন্ধু মায়া ভেবে আমরা কজন
    সেজে আছি দার্শনিক, চলায় যান্ত্রিক ভাব, ভুলে গেছি গান
    বুকে ব্যথা হলে আমরা সমবেতভাবে
    হিংসার আগুনে নিই সেঁক
    রনজিত গেছিস তুই, আমাদের যদুবংশে আস্তে আস্তে সকলেই যাবে
    আমাদের নেই আর আত্মীয়স্বজন।

    অগ্নিকান্ডে জ্বলে গেছে, জ্বলুক না আরো ঘরবাড়ি
    আমরা বানাবো তার বদলে অনেক বড়ো খাঁচা
    সিমেন্ট, বালির আর মালমশলার এতদিন ছিলাম সন্ধানে
    বহু ব্যর্থতার পর এতদিনে পাই যাদুকাগজের খোঁজ
    কাগজের স্তূপ নিয়ে ঘুরি ফিরি বাজারে দোকানে
    ভাবছি শিগগির কিনবো মারসিডিজ গাড়ি
    গরিব থাকবি না তুইও, কথা দিচ্ছি, মোছ চোখ মোছ
    কেন না টাকায় টাকা নিয়ে আসে আরো টাকা আনে
    প্রতিটি মুহুর্তে মরে বেঁচে আছি, বাঁচা বলে একে বলে বাঁচা!
    কোথায় লুকোবো মুখ রনজিত রে লজ্জা অপমানে!

    আমার প্রেমিকা যাকে কুলবতী আখ্যা দিয়েছিলি
    আমাদের ফুলশয্যারাতে
    প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেটে দেবে বিলি
    তোর চুলে, তার কথা মনে তোর পড়ে কি রনজিত?
    তার ফুলশয্যা কবে হয়ে গেছে, মিলিত শয্যাতে
    আমার হয়নি স্হান, তবু তার জন্য মনে দু:খ রাখিনি তো
    রনজিত, তুই যে আজ মৃত
    মোমের মতন স্নিগ্ধ নয় আর নারীদের উরু
    চিন্তাকোষ কুরে কুরে খায় স্মৃতিকীট
    অকাল বার্ধক্য নিয়ে বসে আছি রনজিত রে
    জরাগ্রস্ত পুরু।

    আমার স্বপ্নের বনে রজনীগন্ধার একটি চারা
    মনে আছে তোর আমি লাগিয়েছিলাম
    আমার সে রজনীগন্ধাকে
    পা দিয়ে মাড়ালো এসে যারা
    সে সব শত্রুর মুখও মনে নেই, ভুলে গেছি কি তাদের নাম
    তোর মতো বন্ধুদের মুখ শুধু মনে থাকে, সারাটি জীবন মনে থাকে।

    জর্জরিত হয়ে আমি একদিন আত্মঅভিমানে
    তোকে একটা ছোট্ট অনুরোধ
    করে যে ছিলাম তার কথা তোর আজও মনে পড়ে ?
    তুই বলেছিলি পাগলা মরতে যাবি কোন দু:খে, মরার কি মানে!
    চেয়ে দেখ পৃথিবীর আলো হাওয়া রোদ
    সব কিছু তোর জন্যে, সব কিছু তোর
    যে চায় মৃত্যুকে হাত পেতে নিতে সে বরং নিক
    তুই কেন নিতে যাবি, কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি থেকে কড়া আর্সেনিক
    সেদিন দিতিস যদি, তাহলে তো তোর সঙ্গে দেখা
    হতো বহুদিন আগে, বুকে আজ কি বিষম পাথর পাথর!
    গাছেরা সবুজ নয়, বাতাস ভাঙে না আর ঝড়ে
    রোজ জেগে ভাবতে হয় বেঁচে আছি কি না
    রনজিত বিশ্বাস কর আমি বড়ো একা
    মনে মনে বহুদিন আর বেঁচে নেই
    প্রিয়জন ভেবে তুই নিয়ে যা নিজের কাছে রাত পোহালেই

    রনজিত আমার শেষ অনুরোধটুকু রাখবি না ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন