এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অন্য এক পূজোর পাঁচালী 

    Samarjit Jana লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ অক্টোবর ২০২০ | ৯১৩ বার পঠিত
  • ।। *অন্য এক পূজোর পাঁচালী* ।।


    সমরজিৎ জানা


    কোভিডকালে একরাশ শিউলি ফুলের গন্ধ হঠাতই ভেসে এল। মাছের ভেড়ি, নদীবাঁধে ঘেরা বাদাবনে বড়োপূজোর বাজনা প্রতিবারই যেন বেসুরো বাজে, কোনবার আয়লা, কোনবার আমফান, কোনবার বাঁধ ভাঙ্গা বৃষ্টি, হিঙ্গলগঞ্জের, মামুদপুরের, বায়লানীর পূজো কে সর্বদাই অন্যরকম বুভুক্ষুপীড়িত করে রাখে। এবার আবার কি এক ছোঁয়াছুঁয়ি অসুখ এসেছে, দুগ্গা দেখেছে ভেড়ির উপর যে বাবুরা পলিথিনের প্যাকেটে করে চাল ডাল আলু সয়াবিন এর নাগেট দিতে আসে, তারা বলে নাকে কাপড়টা দেবেন টোকেন নেওয়ার সময়। এই টোকেন এক আশ্চর্য  সাত রাজার মানিক ধন, থাকলে মা পাবে রেশন, নইলে ফক্কা। এখনো গ্রামের মধ্যে পুরনো বাড়িটার চাল নেই, আমফানে উড়ি গ্যাছে, বাপটা পঞ্চাইত থেকে একটা তেরপল পেয়েছিল বটে, কিন্তু বাড়িটা পুরোটা ঢাকবেনি। 


    তাই দুগ্গারা সিমেন্টের বাঁধের নীচেই ই তিরপল টানিয়ে দড়ি দড়া বেঁধি ই ঘর বানিয়েছে। রোজ সকাল হলেই নদীর দিকে চেয়ে থাকে দুগ্গা , ভটভটি এলে সবার আগে প্লাস্টিকে মোড়া  টোকেনের কাগজ নিয়ে দৌড়তে হবে যে।


    দুগ্গা পরাণের ইস্কুল বন্ধ, দুপুরির খাওয়াটাও। কেন কে জানে ? 


    পরাণের আবার অন্য আরেক কাজ পাশের বাঁওড়টা জলে ভরা, তাতে রুপোলি কাজলি পুঁটি, মৌরলা চকচক করে ওঠে, সেই চটা চটা পুঁটি, মৌরলা আর কাদা ছেঁচে গুলে মাছের পিছনে পড়ে থাকে সব্বোক্ষন। এবারে বড়ো পূজোও হবেনি শুনছে, গতবারেও অষ্টমী, নবমী তে খিচুড়ি খেইছিল পাত পেড়ে প্যান্ডেলের পিছনে। কি তার স্বোয়াদ। বড় পূজো আসে, বাপটা ঢাক বাজাতে যায় বসিরহাটে, পরাণও চলে বাপের সাথে কাঁসি নিয়ে। চার পাঁচ দিন কেটে যায় স্বপনের মতন, বাপটা পূজোর শেষে ট্যাহা পেলে কেনে মা'র শাড়ী, দুগ্গা র ফ্রক ইজের আর পরাণের জামা হাফ পেন্টুল হিঙ্গলগঞ্জে র আড়ত থেকে। পূজোর পর বিদাই, ঘরে ঘরে ঢাক বাজায়, ট্যাহা পায়, চাল আলু পয়সা সিধাও পায়, এবার তো বায়নাই হোল না, বাপটা ঢাক নিয়ে বসে আছে এখনও নদীর দিকে তাকিয়ে, ছাইতেও পারিনি বায়নার টাকা নেই। 


    কি একটা অসুখ এয়েছে যেন, ভেড়িতে আসা ভটভটি চাল ডালের সয়াবিন এর সাথে আকাশ নীল কাপড়ে র গার্ডার দিয়া নাক মুখ ঢাকার মাসক দিয়ে গেছে তিনবার  । পরান উতে পয়সা বেঁধে রাখে।


    তবুও বড়োপুজো আসছে দুগ্গা পরাণ বুঝতে পারে, শাপলা ফুটছে, দৈয়ের বিলে সিঙারাফল ও হ্চছে, কত লোক ডুব দিয়ে তুলছে, দুই কুড়ি তুলতে পারলে ইজারাদার দশ ট্যাহা দেয়, পরাণের বাপটা মানা করে, বলে অত জলে পড়ে থাগলি সান্নিপাতিক ব্যামো হবে, ওষুধ কোথায় পাবে, তাই পরাণ মাছ ধরে, পুঁটি,খলসে, পায়রাচাঁদা, গুলে, মা তাতেও রাগ করে, রাঁধার তেল কই ?


    রোদ নরম সোনাপানা হইছে, আকাশটা নীল, মাঝ রেতে মায়ের আঁচলটা গায়ে জড়ায় দুগ্গা, নদীর ভেড়ির নীচে সাদা সাদা কাশফুলও ফুটছে, শিউলি ফুলে ভরে গেছে ইস্কুলবাড়ির গাছটা, মন কেমন করা শিউলি গন্ধ পায় দুগ্গা  রোজ ভোর রাতে, কোঁচড়ভরে তুলেও আনে কোন কোন দিন, মা রাগ করে ফেলে দেয় ঝাঁটিয়ে, প্যাটে ভাত নাই, বড়োপূজার আগজনী। 


    দীনালী জ্যেঠা আর তার ছেলে পরিদাদা পাঁচ মাস আগে ফিরে এইছিল গাঁয়ে, উদিকপানে কুথায় কাজ করত বম্বে না কেরালায়, বলল আর গেরাম ছেড়ে যাবেনি, ইখানেই কাজ করবে, নাহয় মীন ধরবে, গত সপ্তাহেই তারা চলি গেল আবার, এখানে প্যাট চলবেনি। মীনের দাম পাওয়া যাচ্ছে না হাসনাবাদের আড়তি।


    কেন কে জানে ?? 


    দুগ্গার মনে পড়ে একবার বছর তিনেক আগে হিঙ্গলগঞ্জে পূজো প্যান্ডেলের পাশে ম্যারাপ বেঁধে ফটফটিয়া ছিনিমা তে দেখেছিল "ভূতের রাজা দিল বর। জবর জবর তিন বর।"


    রেতেরবেলা গাঁয়ের পরে বিলের ধারে ঝুপসি হিজলগাছটার পাশে বাঁশবনে দুগ্গা যায় মাঝেমধ্যে ই, যখন শন শন করে বাতাস চলে, বাঁশঝাড়ে শব্দ হয় ক্যাঁইচকোঁউচ, গা ছমছম করে দুগ্গার;  যদি দেখা হয়ে যায় ভূতের রাজার সঙ্গে তাহলে চাইবে এই বর - "পৃথিবীটাকে ভালো করে দাও ভূতের মহারাজা, বাপটা আবারও যেন কাজ পায়, বায়না হয় আবারও, ভেড়ির উপরে ঠায় না বসি থাকতে হয় সব্বোক্ষন, দীনালী জ্যেঠা পরিদাদারা থাকুক ইখানেই; বড়োপূজা হোক, বড়োমা আসুক সব্বাইকে নিয়ে।"


    *মা, তোমার হাত বুলিয়ে দাও পৃথিবীর মাথায়।*


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন