এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • কী পড়বেন, কেন পড়বেন

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২৫ জানুয়ারি ২০১০ | ৪৭৬ বার পঠিত
  • বইমেলা দোরগোড়ায়। গুরুচন্ডালিতেও শুরু হলো বই ইস্পিশাল। এবার রইলো, গুরুচন্ডালির একটি ফিচার, 'বই : কি পড়বেন, কেন পড়বেন'

    এ কথায় একেবারে কান দেবেন না, যে, অন্য মিডিয়ার আক্রমণে বই নাকি উঠে যাবার মুখে। ওসব দুর্জনের অপপ্রচার মাত্র। এই রিসেশনের বাজারে বই কেন পড়বেন জানতে হলে পড়ুন গুরুচন্ডালির ফিচার:
    কী পড়বেন, কেন পড়বেন

    ফান্ডাবিতরণের জন্য পড়ুন কোটেশনের বই

    দাদুর বই। রবিদাদুর অনেক বই প্রকাশিত হলেও বই আসলে একটাই। রচনাবলী। প্রকাশকভেদে ছয়, দশ, আট, বারো ইত্যাদি নানা সংখ্যার খণ্ডে পাওয়া যায়। ভালো কাগজ ও উত্তম কার্ডবোর্ড বাঁধাইয়ে।
    কেন পড়বেন? প্রথমত, না পড়ে উপায় নেই, নইলে লোকে অশিক্ষিত বলবে। দ্বিতীয়ত, দু-একটা বিখ্যাত কবিতা একটু-আধটু পড়ে রাখলে বিভিন্ন জায়গায় কোট করতে সুবিধে হয়। যেমন ধরুন বাঙালি মেয়েদের বধ করতে দাদুর উদ্ধৃতির কোন তুলনা নেই। মেয়ের নাম নন্দিনী হোক বা না হোক, সাহিত্যে এমএ করেছে জানলেই ঝট করে বুক ঠুকে বলে দিন, আমিই রঞ্জন। কিংবা চোখে চোখ রেখে বলুন "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে'। ব্যস, কেল্লাফতে। প্রোপোজ ও তৎসংক্রান্ত পেট ব্যথা, হাত-পা-ঘামা, বুক-ধড়ফড় জাতীয় ক্লিনিকাল উপসর্গ থেকে একদম মুক্তি।
    যদি আঁতেল/খারখাট্টা/দাদু-পুজো-বিরোধী হন, তাহলেও দাদুই আপনার অভিব্যক্তির আকাশ। শুধু ভক্তিগদগদ হয়েই রেফার করতে হবে তা নয়। সেই কল্লোল-কালিকলমের আমল থেকেই বিদ্রোহীদের জন্যও রবিঠাকুরের তুল্য চাঁদমারি নেই। আপনি যদি রক-গায়ক হন, বা বিদ্রোহী তৈমুরলং , নিজেকে প্রকাশের এক যথাযথ উপায় পাবেন রবিবাবুর রচনায়। বস্তাপচা সন্দীপন কোট করার আর দরকার নেই। কোন ঠেকে ভক্তিগদগদ-ধুপ-ধুনো-দেওয়া রবীন্দ্রচর্চা হলেই বিগলিত সুরে বলুন, ও: এই সেই কবি, যিনি "স্তন' নামক একটি অপূর্ব কবিতা লিখেছিলেন? ব্যস, দেদার ভ্রূকুঞ্চন এবং প্রবল অ্যাটেনশন একদম ফ্রি। নিখরচায় কাম খতম, কেল্লা পতন। আপনার কালাপাহাড় হওয়া আর আটকায় কে?
    কোথায় পাবেন? যেকোন বইয়ের দোকানে। না পেলে অর্ডার দিন, এনে দেবে।

    ইংরিজি ম্যাগাজিন। গসিপের বই না, ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি কিংবা দা লিটল ম্যাগাজিন ধরণের পত্রিকা। যার ভাষা ইংরিজি, ধরণ গোমড়া, গম্ভীর প্রচ্ছদ, কম লোকে পড়ে, এবং হাইফাই লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। সঙ্গে শখ করে এক-আধটা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনও পড়তে পারেন।
    কেন পড়বেন? নানা অপ্রত্যাশিত জিনিস জেনে নেবার জন্য। যথা: অনামা ভিয়েতনামী কবির নাম, হুইটমানের কবিতায় তুলোচাষের প্রভাব, রবীন্দ্রনাথ ও সুদের কারবার, ইত্যাদি। এমনিতে এসব আপনার জীবনে কোন কাজে লাগবেনা, কিন্তু যত্রতত্র পাবলিককে চমকে দিতে এর কোন জুড়ি নেই। পুরো বই পড়তে হবে, বা পড়ে সবটাই মনে রাখতে হবে তা নয়। শুধু লেখক, লেখার নাম, বিষয়, আর এক-দুটো লাইন আধাখ্যাঁচড়া হলেও, একটু কষ্ট করে মাথায় রাখুন। তারপর সামান্য সুযোগে অথবা সুযোগ ছাড়াই দুমদাম বলে বা লিখে দিন। চাষের কথা হলেই নিয়ে আসুন বিটি কটনের কথা, কবিতার প্রসঙ্গ এলেই লিখে দিন চিলির এক অনামা কবির প্রকাশভঙ্গীর অসামান্যতার বিবরণ। যেকোন মজলিশে তৈরি হবে আপনার এক লার্জার-দ্যান-লাইফ গম্ভীর ও পণ্ডিত ভাবমূর্তি। তৈরি হবে নিজস্ব এক স্টাইল স্টেটমেন্ট। সম্পাদকরা আপনার লেখার জন্য হা-পিত্যেশ করবে। যেকোন পত্রিকায় অন্যের থেকে আপনার লেখা আলাদা করে চেনা যাবে।
    কোথায় পাবেন? হাইফাই লাইব্রেরিতে।

    রেড বুক। মাও-সে-তুং এর নানা মারকাটারি উদ্ধৃতির সংকলন। আগমার্কা বিপ্লবীদের পকেট বই। অগ্নিযুগের স্বদেশীরা যেমন পকেটে গীতা রাখতেন, এ যুগের মাওবাদীরা, শোনা যায়, হাত থেকে বন্দুক নামিয়ে রেখে, চট করে এই বই থেকে দু-লাইন পড়ে নিয়ে প্রেরণা সংগ্রহ করেন।
    কেন পড়বেন? না-না, কিষেণজীরা রমরমিয়ে আপনার এলাকায়ও চলে আসতে পারেন বলে নয়। পড়বেন অন্য কারণে। বাঙালি মূলত উদ্ধৃতিপ্রবণ। বাঙালির সমস্ত রচনার আসলে গোরু রচনা। ইশকুলের রচনা থেকে শুরু করে মনোজ্ঞ প্রবন্ধ পর্যন্ত সর্বত্রই কোটেশন মার্কের ছড়াছড়ি। লেখায় মিনিমাম পঞ্চাশ শতাংশ উদ্ধৃতি না থাকলে পরীক্ষায় গোল্লা। যথেষ্ট কোটেশন না থাকলে সম্পাদক আপনার গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ছাপবেন না (বিশদ বিবরণের জন্য এই সংখ্যায় প্রকাশিত সহজে প্রবন্ধ লেখার পদ্ধতি পড়ে নিন)। রেড বুক এ ব্যাপারে অতুলনীয়। এই বাজারে টিকে থাকতে গেলে, করেকম্মে খেতে গেলে, স্রেফ কনটেক্সট হীন উদ্ধৃতি দিয়েই কেমন করে একটা আস্ত বই বানিয়ে ফেলা যায়, না পড়ে দেখলে বিশ্বাস হবেনা।
    কোথায় পাবেন? ইন্টারনেটে অবশ্যই পাবেন। পুরোনো বইয়ের দোকানেও পেতেই পারেন। বিপ্লবীদের কাছেও পেতে পারেন, তবে কাইন্ডলি আমাদের রেফারেন্স দেবেন না।

    চিত্তবিনোদনের জন্য পড়ুন সাহিত্যের বই

    আনন্দবাজার পত্রিকা। যেকোন দিনের যেকোন সংখ্যা। এটা অবশ্য ঠিক বই নয়। শারদীয়া-টারদীয়া বিশেষ সংখ্যা-টংখ্যাও নয়, পাতি রোজ সকালের খবরের কাগজ। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায়না। ফুল ফুটুক না ফুটুক বসন্ত, আর বই হোক বা না হোক পড়া গেলেই হল।
    কেন পড়বেন? খবরের জন্য নয়। খবর দেবার জন্য আরও বিস্তর জায়গা আছে। টিভি আছে নিউজ চ্যানেল আছে, চাট্টি বাংলা কাগজ আছে, যারা একই কোয়ালিটির মালই ডেলিভার করে। তাতে না পোষালে ইংরিজি কাগজ আছে। আছে ইন্টারনেট, যা পৃথিবীর তাবৎ খবরাখবরকে এনে দিয়েছে এক্কেবারে হাতের মুঠোয়। তাই খবরের জন্য নয় পড়বেন সাহিত্যগুণের জন্য। খবরকে বাংলায় স্টোরি বলে, আর স্টোরির গুণে এই কাগজটিকে আর কেই বা টেক্কা দিতে পারে? এই কাগজের খেলার রিপোর্ট সাক্ষাৎ ম্যাজিক রিয়েলিজম। নেভিল কার্ডাস তো তুচ্ছ, এই রিপোর্ট পড়লে আর মার্কেজ পড়ার প্রয়োজন থাকেনা। প্রথম পাতা পড়লে কোনো কোনো দিন মনে হয় রহস্যরোমাঞ্চ মোহন সিরিজের থ্রিলার, কখনও মনে হয় বিভূতিভূষণের আদর্শ হিন্দু হোটেল। কখনও মানবিকতায় ভরপুর, কখনও ঘৃণায় সোচ্চার, কখনও রোমাঞ্চে থরহরি। একটি মাত্র কাগজে ছোট্ট করে পাঞ্চ করে দেওয়া আছে যাবতীয় সাহিত্যের টেকনিক, রীতিনীতি। এই কাগজ একবার পড়লে অন্য কোন সাহিত্য পড়ার প্রয়োজন নেই।
    কোথায় পাবেন? যেকোন দোকানে। না দিতে পারলে আপনার সংবাদপত্র বিক্রেতাকে অন্য পেশা ট্রাই করতে বলুন।

    ধারাবাহিক উপন্যাস। আলাদা করে নাম বলার দরকার নেই। বাজার-চলতি যেকোন সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক পত্রিকা থেকে যেকোন একটি বা দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস বেছে নিন। তারপর সময়-সুযোগ মতো চিত হয়ে শুয়ে যেকোন একটি পর্ব পড়ে নিন।
    কেন পড়বেন? মূলত চিত্তবিনোদন। দু-একটা পর্ব পড়লে আর ছাড়তেই পারবেন না। লক্ষ্য করে দেখবেন, নামে এবং কার্যত ধারাবাহিক হলেও এমন কায়দায় লেখা, যে, যেকোন পর্বই যেকোন জায়গা থেকে শুরু করতে আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছেনা। কারণ ভিতরে রাজা-রানী বা রাম-সীতার যাই হাবিজাবি প্রেমকাহিনী থাকুক, সেটা ধারাবাহিকে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল আকর্ষণ গপ্পে নয়, গপ্পের শেষে। প্রতিটি পর্বের শেষেই দেখবেন একখানা সাসপেন্স-সুতো ছেড়ে রাখা হচ্ছে। যথা, "পিছনে ঘুরে সীতা যা দেখল, তাতে সে স্তম্ভিত হয়ে গেল (আগামী সংখ্যায়)', বা "(একটি ছেলের সঙ্গে হিহি করে হাসতে হাসতে ) পাশের মারুতিতে ওটা রানী না? (আগামী সংখ্যায়)'। এই শেষ লাইনই ধারাবাহিকের আসল আকর্ষণ। এই সাসপেন্সে আপনার সীতার জন্য বুক-ধড়ফড় করবে, রাজার জন্য মন-কেমন করবে, অবধারিতভাবেই পরের সংখ্যা পড়তেই হবে। নিয়মিত টিভি সিরিয়াল দেখার সুযোগ না পেলে এই ধারাবাহিকগুলি পড়বেন, অবিকল একই ফল পাবেন।
    কোথায় পাবেন? যেকোন সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক পত্রিকায়।

    বিবিধ বই। সম্পূর্ণ তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়, তাই বিবিধ। অসম্পূর্ণ লিস্টিতে আছে জ্যোতিষের বই (ইংরিজি), পাঁজি, একশটি শ্রেষ্ঠ ভূতের গল্প, হারেমের বন্দিনী (প্রচ্ছদে স্বল্পবাস নারী), লাভলি উওম্যান (বাংলা নভেল) ইত্যাদি।
    কেন পড়বেন? আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এইসব বিভিন্ন বই পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকবে। যেমন পাঁজি পড়তে হবে ফ্রিতে পুরোনো বাংলা শেখা, সূর্যগ্রহণ, বিয়ের রাজযোটক লগ্ন ও নিরাপদে অলাবু ভক্ষণের টাইমটেবল জানার জন্য। জ্যোতিষের বই (ইংরিজি) থেকে জানা যাবে আপনার সানসাইনের সঙ্গে আপনার অ্যাপেন্ডিক্সের সাইজ, পেটব্যথা ও মেজাজ গরমের গূঢ় সম্পর্ক। "হারেমের বন্দিনী'তে পাওয়া যাবে নানা আকারের যুবতী মেয়েদের ছবি এবং স্কেচ আর "লাভলি উওম্যান' এ পাওয়া যাবে তাদের বর্ণনা। ইত্যাদি। কিন্তু এই পার্থক্য কেবল বাহ্যিক। বৈচিত্র্যের মধ্যেই যেমন ঐক্য, তেমনই এই বইগুলির মধ্যে ঐক্যের সুতোটি হল মনোরঞ্জন। পড়বেন দু ঘন্টা হাসবেন চারদিন। মন ভরে যাবে আনন্দে। অন্য কিছু নয়, আনন্দের জন্যই তো সাহিত্য-টাহিত্য।
    কোথায় পাবেন? বইমেলায়। কেবলমাত্র আমাদের তালিকার উপর নির্ভর করে থাকবেন না। নিজের মতো করে খুঁজে নিন।

    জ্ঞানার্জনের জন্য পড়ুন অরিজিনাল বই

    আমাদের প্রাচীন সংস্কারের বৈজ্ঞানিক কারণ সমূহ। বইটির নাম লেখক-বিশেষে কিঞ্চিৎ ভ্যারি করে। কিন্তু জোলাপকে যে নামেই ডাকুন, প্রাত:কৃত্যে একই ফল পাবেন। এই বইয়েরও নাম যাই হোক বিষয়বস্তু দেখলেই চিনতে পারবেন। বইটি মূলত নানা প্রশ্নোত্তরের সমষ্টি। প্রশ্নোত্তরগুলি এরকম: প্রশ্ন: মেয়েদের মাথায় সিঁদুর কেন দিতে হয়? উত্তর: মাথায় সিঁদুর দিলে মাথা ঠাণ্ডা হয়। কামভাব নিবৃত্ত হয়। অন্য পুরুষকে কামনা করার বাসনা জাগেনা। প্রশ্ন: মেয়েদের মাথায় হাত দিতে হয়না কেন? উত্তর: মেয়েদের চুলে যৌন অনুভূতি থাকে। সে কারণেই হাত দেওয়া বারণ। ইত্যাদি।
    কেন পড়বেন? যদি ভারত তথা হিন্দু সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যে গভীর বিশ্বাস থাকে, তবে সেই বিশ্বাসকে জোরদার করার জন্য পড়বেন। তারপর হাতে বই নিয়ে জোর-গলায় বলবেন : সব ব্যাদে আছে। যদি বন্ধুদের তাক লাগিয়ে দেবার জন্য কোটেশনের সন্ধানে থাকেন, তাহলে এই বই থেকে যেকোন লাইন ঝট করে উদ্ধৃত করে দেবেন। যেকোন জমায়েতে হাসির বন্যা বইবে। নারীবাদী মেয়েরা আপনার দিকে চটুল কটাক্ষ করবে। "বইটা একটু দেখি' বলে যেচে আলাপ করতে আসবে। আপনার সাফল্য অনিবার্য। যদি কঠিন-হৃদয় পোকো-পোমো তাত্ত্বিক হন তো এর থেকে অতি সহজে একটি "প্রাচ্যে বিজ্ঞান' জাতীয় কিছু থিসিস নামাতে পারবেন।
    কোথায় পাবেন? ট্রেনে-বাসে। স্টেশনের স্টলে।

    কেসি পালের বই। কেসি পাল কে যাঁরা মনে করতে পারছেন না, তাঁরা বছর দশেক আগের কথা মনে করুন। যখন রাজনৈতিক গ্রাফিত্তিকে ছাপিয়ে এক একক বীর কলকাতা শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে রাখতেন "পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে নয়, সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে'। হ্যাঁ, ইনিই কেসি পাল। শুধু দেওয়াল লেখা নয়, তিনি লিফলেট লিখেছেন, বই লিখেছেন, নিজের উদ্যোগে বিলি করেছেন। আমাদের বাচ্চাবেলার মুখস্থবিদ্যাকে চ্যালেঞ্জ করতে নাসাকে চিঠি লিখেছেন, দেওয়াল লিখতে গিয়ে মারধোর খেয়েছেন, তবু থামেননি। পৃথিবী নয়, সূর্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, এই তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে, আমাদের ইশকুলবেলার শিক্ষাদীক্ষাকে নস্যাৎ করতে একার উদ্যোগে যা-যা করা সম্ভব, সব করেছেন।
    কেন পড়বেন? ইয়ার্কি মারতে পড়বেন না। ইয়ার্কি মারার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের নিজেদের লেখা বলতে তো শুধু টোকাটুকি। ভুল না ধরে তাই অরিজিনালিটিকে শ্রদ্ধা করুন, কারণ ঠিক-ভুলের সাদা-কালো বলতে এখন আর কিছু হয়না। জগতের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে নিজের কথা বলতে পারার স্পর্ধাকে সম্মান করুন। শুধু স্পর্ধাই নয়। ঢাল-নেই-তরোয়াল-নেই মিডিয়া নেই-পাবলিশিং হাউস নেই, নিধিরাম শর্মা যেভাবে নিজের কথা ছড়িয়ে দিলেন সারা দুনিয়ায়, সেই জেদকে সম্মান করবেন না তো কাকে করবেন?
    কোথায় পাবেন? সম্ভবত কোত্থাও নয়।

    ঠেকায় পড়ে পড়ুন ভাটের বই

    গুরুচন্ডালি। আকারে চৌকো। সাইজে এ-ফোর। এতে আছে দু-আনা স্মার্টনেস। চার ইঞ্চি প্রতিভা। খানিক রিপোর্টিং এর অপচেষ্টা। কিঞ্চিৎ সমালোচনা। বাকিটা স্রেফ ফাজলামি। এখনও পর্যন্ত পাঁচটি সংখ্যা বেরিয়েছে। সবকটিই সমান অখাদ্য। প্রকৃতিতে অনেকটা কেসি পালের বইয়ের মতই।
    কেন পড়বেন? অখাদ্য তবু পড়বেন। কেন পড়বেন বলা শক্ত। তবে না পড়লে স্মার্টনেস শিখবেন না। সাহিত্য বুঝবেন না। কেসি পালের মাহাত্ম্য বুঝবেন না। নিঠুর পৃথিবীতে কেসি পাল হয়ে, এক্সপার্টের হামলায় সম্পূর্ণ ল্যালা হয়ে কীকরে টিকে থাকতে হয়, সাহিত্যরচনাই হোক বা পুস্তক সমালোচনা, কবিতা লেখাই হোক কি উপন্যাস, শর্টে কীকরে কিস্তিমাৎ করতে হয়, সেই টিউটোরিয়াল একমাত্র পাবেন গুরুচন্ডালিতেই। না পড়লে এমনিতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু দুনিয়ার যাবতীয় লোকে এই টেকনিকগুলো শিখে নিলে একা পড়ে যাবেন। লোকে তখন প্যাঁক দেবে। দুয়ো দেবে। রাস্তায় দেখলেই বক দেখাবে। সাহিত্য গুণফুন না (ওসব জলপুলিশের আন্ডারে), এই শেষের-সেদিন-ভয়ঙ্করের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে রণে-বনে-বাসে-ট্রেনে, জলে-জঙ্গলে-শপিং মলে আপনার একমাত্র সহায়-সম্বল গুরুচন্ডালি।
    কোথায় পাবেন: এই বই যেখান থেকে পেয়েছেন।

    ২৫ জানুয়ারী, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২৫ জানুয়ারি ২০১০ | ৪৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
  • টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ : পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন