এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এমার্জেন্সি এনকাউন্টার ইত্যাদি

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ | ১১৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 192.64.117.122 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:১২726399
  • এমার্জেন্সি এনকাউন্টার ইত্যাদি
    ====================
    প্রথম ভাগ
    ----------
    সেদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার রামনাথ গোয়েন্কা সাংবাদিকতা পুরষ্কার বিতরণে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদিজী অনেক দামি কথা বললেন যার সারাংশ হল-- জরুরী অব্স্থার ভাল করে পোস্ট মর্টেম হওয়া উচিত যাতে কেউ ভবিষ্যতে অমনটি না করে। বক্তব্যটি প্রাসংগিক।
    কারণ এই পুরষ্কারটি যাঁর নামে তিনি জরুরী অবস্থার সময় সাহস দেখিয়েছিলেন। ওঁর কোমায় চলে যাওয়া অবস্থায় ভি সি শুক্লা (তৎকালীন I & B মিনিস্টার) ওঁর অফিস দখল করে নিয়ে সেটা চালানোর ভার এক বশংবদ সাংবাদিক ( অন্য পত্রিকার এডিটর) কে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভগবানের ভুলে বুড়ো কোমা থেকে উঠে অফিসে ফিরে এসে এক দাবড়ানি দিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পত্রিকাটি আগের মতই চালাতে লাগলেন।
    আবার রাজীবের জমানায় বোফোর্স নিয়ে অসুবিধেজনক প্রশ্ন তোলাতেও এই পত্রিকার ( এবং দি হিন্দুর এন রাম) জুড়ি ছিল না। তাই এই পুরষ্কারে ছিল --যারা সাহসের সঙ্গে শাসকের জন্যে অস্বস্তিকর কিন্তু জরুরী প্রশ্ন তুলেছিল, তাদের জন্যে সম্মান।
    কিন্তু একই সময়ে মোদিজীর দলের সরকার রমরমিয়ে চলছে এমন একটি রাজ্যে জেল ভেঙে নিষিদ্ধ দল সিমির আটজন বিচারাধীন কয়েদির পলায়ন ও কয়েক ঘন্টা পরে একটি গাঁয়ের প্রান্তে বিশাল পুলিশ বাহিনীর হাতে ওদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ও তার পর যা চলল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যে মোদীজির গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে কথাবার্তা কতটুকু আন্তরিক?
    না, আপাততঃ কোন পত্রিকা ব্যান করা হয় নি, কোন পত্রিকার অফিস দখল হয় নি। কোন খবর সেন্সর করা হয় নি। তাহলে এত কথা কিসের?
    কথা আছে। ইন্দিরাজীর সময়ে বিরোধীদের জেলে পোরা বা গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের গলা টিপে ধরা এক দিনে হয় নি। শুরু হয়েছিল এইভাবে-- ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা!
    দেবীজি দেশের গর্ব; পাকিস্তানকে ভেঙে দু'টুকরো করেছেন। গরীবের ভালো করতে চান। রাজা-মহারাজাদের প্রিভি পার্স বন্ধ করেছেন। ব্যাংকগুলোকে জনমুখী ও বিকাশমুখী করতে ন্যাশনালাইজ করেছেন। দেশ-বিদেশে ভারতের ইমেজ বাড়িয়েছেন। এবার উন্নয়ন হবে। স্ট্রাইক/হরতাল বন্ধ হয়েছে। রেলগাড়ি সময়মত চলছে। এইবার দেশ সামনে এগিয়ে চলেছে। যারা উল্টো গাইছে তারা দেশের শত্রু, উন্নয়নের শত্রু।
    এবার কথা বন্ধ করে কাজ করতে দাও দিকি!
    যা হচ্ছে দেশের ভালর জন্যে। তাই প্রথমে সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ট্র্যাডিশনের বিরুদ্ধে জুনিয়রকে পদে বসানো। তারপর দেশের স্বার্থে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া।বিরোধীদের জেলে পোরা, অপছন্দের কাগজ বন্ধ করে দেওয়া।
    কিন্তু সেসব তো পুরনো গল্প। চল্লিশ বছর আগের। এখন সেরকম কিছু কোথায় হচ্ছে? কোথায় দেবীজি আর কোথায় মোদীজি? সবতাতে বাড়াবাড়ি!
    সত্যিই কি তাই?
    আসুন মিলগুলো দেখি।
    ১) মোদীজি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে পাকিস্তানের জঙ্গীপৃষ্ঠপোষণের এমন কোমর ভেঙে দিয়েছেন যে ! আগেও হয় নি, পরেও হবে না। এসব করতে হলে ৫৬ নয় ১০০ ইঞ্চি বুকের ছাতি চাই, বল্লে হবে।
    এই নিয়ে শাসকদল কথা বলবে, উৎসব করবে। কিন্তু অন্য দল প্রশ্ন করলে দেশের সুরক্ষা নিয়ে রাজনীতি করার বা দেশদ্রোহিতার অপরাধ হবে।
    ২) মোদীজি বিদেশভ্রমণ করে পাকিস্তানে উপমহাদেশের দেশগুলির সম্মেলনের বৈঠক বাতিল করিয়ে এবং গোয়াতে ব্রিক্স সম্মেলন করিয়ে দেশের মুখোজ্বল করেছেন।
    ৩) জে এন ইউতে ইন্দিরার সময় ৬৬ জন ছাত্র গ্রেফতার হয়েছিল-- এখানে মাত্র ৫, তাদের জামিন হয়েছে। কিন্তু রৈসার্চ আটকে গেছে।
    ৪) ইন্দিরা অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে নিজের লোকজনকে দিয়ে বই লেখানো প টাইম ক্যাপসুল তৈরি করে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন করে লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন।
    এখন বিজ্ঞান কংগ্রেস, ইতিহাস পরিষদ, দর্শন পরিষদ, পুণে ফিল্ম ইন্স্টিটুট সব ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কোর্স পাল্টানো হচ্ছে।
    তাই প্রধানমন্ত্রী নিজে বৈজ্ঞানিকদের সামনে গণেশের শুঁড়কে প্রাচীন কালে স্টেম সেল সার্জারির উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। কিন্তু সে নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক মুখ খোলেন নি।
    ৫) সুপ্রীম কোর্টের সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের প্রশ্নে কলেজিয়াম ইস্যুতে মোদীজি সংঘাতের রাস্তায়ই চলছেন -- কোর্ট বড্ড বাড়াবড়ি করছে এমন ভাবভঙ্গী।
    ৬) এনডিটিভি চ্যানেলকে ৯ নভেম্বর ২৪ ঘন্টা চ্যানেল বন্ধ রাখার শাস্তি দেওয়া হয়েছে কারণ ওরা নাকি পাঠানকোট জঙ্গী হামলার সময় এমন ভাবে খবর পরিবেশন করেছিল তাতে দুজন লুকিয়ে থাকা জঙ্গীর সুবিধে হয়ে গেছল। সত্যিই কি তাই?
    কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিং ১৬ মার্চ, ২০১৬ সংসদে বললেন--পোড়াবাড়ি থেকে ফরেনসিক টেস্টে আরও দুজন টেররিস্ট থাকার প্রমাণ মিলেচে। কিন্তু ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এ'ব্যাপারে আদৌ নিশ্চিত নন। এমনকি ৫ দিন পরে NIA যখন নোটিস দিয়ে ফোটো ছাপিয়ে ওদের পরিচয় জানতে চাইল তাতে মিলিটারির হাতে মারা যাওয়া আগের চারজনের ছবিই ছিল। পাকিস্তানের তদন্তকারীদের দলকে ভারত সরকারের তরফ থেকে NIA যে ডকুমেন্ট দেয় তাতে সেই চারজনের কথাই ছিল, ছ'জনের নয়।
    অবশ্যি রাজনাথ সিং এর আগেও জেনইউর কানহাইয়া কুমারকে পাকিস্তান থেকে টেররিস্ট হাফিজ সঈদ টুইটারে প্রশংসা করেছে বলে বিবৃতি দিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। যা নিয়ে হাফিজ খিল্লি করার সুযোগ পেয়ে গেছল।
    আসল কথা হচ্ছে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রেগুলেশন অ্যাক্ট এর রুল 6(1)(P) অনুযায়ী এনকাউন্টার চলাকালীন লাইভ কভারেজ দেওয়া বেআইনী কাজ, শুধু অধিকৃত আধিকারিকের বক্তব্য দেওয়া চলবে।
    কিন্তু NDTV র রিপোর্টারের যে দুটো শব্দ নিয়ে 'লাইভ কভারেজ' এর অভিযোগ আনা হচ্ছে সেজাতীয় কাজ তো নিউজ২৪, আজ তক ও আবাপ চ্যানেলও তখন করেছে। তবে বেছে বেছে একটাকেই শাস্তি দেওয়া কেন? কারণ এরা সেদিনও সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো তোলে।
    আসলে আজকাল আগের মত প্রত্যক্ষ ভাবে বিদেশি দখলদারি/ ন্যন্ত্রণ কঠিন। তেমনি ব্ল্যাংকেট ব্যান করার দরকার নেই। শুধু একটাকে ধরে শিক্ষে দাও, সবাই উইল ফল ইন লাইন!
    আজকের মন্ত্র হল--প্রশ্ন করা বারণ।
    আজকের গান-- কথা বোল না; কোন শব্দ কোর না।
  • রৌহিন | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ২০:০৫726400
  • আসলে একটা চরম দক্ষিণপন্থী সরকার যারা জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে নির্বাচনী বৈতরণী পার করাকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে, তাদের কাছ থেকে এই ধরণের কোর্স অফ একশন খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। হতাশা আসে, ক্রোধ আসে, কিন্তু বিষ্ময় আসে না। বিষ্মিত হই তখন, যখন দেখি সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ, যারা মিডিয়ার কল্যাণে যথেষ্ট ইনফর্মড, তারাও এই ক্রিয়াকলাপগুলিকে সোচ্চারে সমর্থন করতে থাকে - প্রতিবাদে কেউ কোন কথা বললেই হায়েনার মত দল বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে তার বা তাদের ওপর।
    প্রশ্ন না করার সিস্টেম যখন জনতার সমর্থন পেয়ে থাকে, তখন তাকে সমাজের গভীর অসুখ বলেই ভয় হয়। আজকের গান - "মগজে কারফিউ / নিষেধ বেরোনো / ভাবনা নিয়ে একা / রাস্তা পেরোনো / ভাবতে বেরোলেই / রাস্তা পেরোলেই / পেয়াদা ধরবে / বেঘোরে মরবে
  • ranjan roy | 192.64.117.122 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ২১:১৯726401
  • দ্বিতীয় ভাগ
    -------------
    দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ ও টেররিস্টদের এনকাউন্টারঃ

    আচ্ছা, সিমির ভয়ংকর সব টেররিস্ট যাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মামলা চলছে তারা ভ্পালের কেন্দ্রীয় জেল ভেঙে পালাচ্ছিল, পুলিস গুলি করে মেরে ফেলেছে। বেশ করেছে। এরা বেঁচে থাকলে আরও লোককে মারত, মরে আপদ বিদেয় হয়েছে। নইলে জেলে রেখে বিরিয়ানি খাওয়াতে হত, যেমন কাসভের বেলায় হয়েছিল। কাদের টাকায়? আমাদের টাকায়। সেই জায়গায় পুলিশ যা ভাল বুঝেছে করেচে--এই নিয়ে এত চেল্লামেল্লি কেন? এদের মধ্যে তিনজন তো আগেও খানডোয়ার জেল থেকে পালিয়েছিল।
    আর ওরা যে পালাতে গিয়ে এক্জন ওয়ার্ডারের গলা কেটে মেরে দিল সে নিয়ে কোন কথা নেই? সহানুভূতি খালি টেররিস্টদের জন্যে? পুলিশকে ওদের কাজ করতে দিন মশাই! ওরা কি আপনাকে জিগ্যেস করে গুলি চালাবে? যত্তো সব ফালতু পাবলিক!
    ঠিকই তো! পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দেওয়া উচিত। কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই। তো আপনারা গলা চড়াচ্ছেন কেন?
    --এটাই গানের ধ্রুবপদ। আসলে আমরা ধরেই নিয়েছি যে পুলিশের কাজ গুলি করা। তবে মিলিটারির কাজ? সেটাও তাই। একদল দেশের সীমান্তের মধ্যে গুলি চালাবে , আরেকদল সীমান্তের বাইরের দিকে মুখ করে।
    কিন্তু একজন পুলিশের অধিকর্তা যে উলটো গাইছেন!
    -- কে গাইছে? কোন কংগ্রেসের গুপ্ত লোক বা কোন হরিদাস পাল। ফালতু ফুটেজ খেতে চায়।
    --উঁহু; উনি হলেন জি পি জোশী, ব্যুরো অফ পোলিস রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর প্রাক্তন ডিরেক্টর।
    -- অ! তা কী বলছেন উনি?
    --- বলছেন যে জেল ভাঙা নিয়ে কং এর দিগ্বিজয় সিংয়ের বক্তব্য উদ্ভট, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আরও খারাপ। কেন? উনি নিরস্ত্র ক'টা লোককে ( টেররিস্ট হোক বা না হোক) গুলি করে মারার মধ্যে কোন "বীরত্বের পুরস্কার" দেওয়ার মানে দেখতে পান নি।
    --কে বলল নিরস্ত্র? ভোপালের আইজি বলেছেন দেশি কাট্টা, ছুরি এইসব পাওয়া গেছে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।
    (চলবে)
  • ranjan roy | 192.64.117.122 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ২২:৪২726402
  • ওঁর বক্তব্য-- এ ধরনের এনকাউন্টারে নিয়ম হল প্রেস কনফারেন্সে যা যা অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তা দেখানো। সেরকম কিছুই পুলিশ করে নি। পুলিশও নাকি আহত হয়েছে? তাদের নাম মেডিক্যাল রিপোর্ট কিছুই নেই। উল্টে ফরেন্সিক রিপোর্ট বলচে নিহতদের সবাইকে কোমরের ওপরে গুলি করা হয়েছে। আর ভাইর‌্যাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে যে ওরা আত্মসমর্পণ করতে কথা বলছিল অথচ কন্ট্রোল রুম বলছে ঘিরে ফেলে শেষ করে দাও। দেখা যাচ্ছে মাটিতে পড়ে থাকা লোকটাকেও গুলি করা হচ্ছে।
    --বেশ করেছে। পুলিশ বেআইনী কী করেছে?পুলিশের কি দাগী বদমাশদের খুনিদের মেরে ফেলার অধিকার নেই? আইন কী বলে?
    --- পুলিশের কাজ অপরাধ আটকানো আর অপরাধীদের বন্দী করা। ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড বা সিআরপিসি অনুযায়ী পুলিশ শুধু দুটো পরিস্থিতিতে গুলি করে মেরেফেলার মত বলপ্রয়োগ করতে পারেঃ
    এক, বেআইনী হিংস্র জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করতে যাদের কিছুতেই অন্যভাবে হটানো যাচ্ছিল না আর না হটালে সম্পত্তি ও প্রাণহানির আশংকা ছিল।
    দুই, আর যে অপরাধী ফাঁসির বা যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি পাওয়ার মত অপরাধ করেছে কিন্তু অ্যারেস্ট করতে গেলে প্রতিরোধ করছে।
    এখানে পুলিশ এমন কোন প্রমাণ দেয় নি যে পুলিশ গ্রেফতার করতে গেছল কিন্তু ওরা প্রতিরোধ করছিল।
    আর সুপ্রীম কোর্টের জাস্টিস লোধা এনকাউন্টার হলে তা ডকুমেন্টেড করার এবং তদন্ত করানোর যে গাইডলাইন দিয়েছেন তা ভোপাল পুলিশ/সরকার মানে নি। তার মধ্যে একটা হল তদন্ত না হওয়া পর্য্যন্ত কোন বীরত্বের পুরশ্কার ঘোষণা করা যাবে না। অথচ মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই গাঁয়ের জন্যে ৪০ লাখ আর প্রত্যেক পুলিশের জন্যে ২ লাখ করে প্রাইজ মানি ঘোষণা করে দিয়েছেন।
    --সে তো আজ স্থগিত রাখার কথা ঘোষণাও করেছেন; মানছি চাপে পরে। কিন্তু স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিমও তো বানিয়েছেন।
    -- হ্যাঁ; আগে জুডিসিয়াল এনকোয়ারির দাবি না মেনে ওইসব করেছেন। কিন্তু তাতে মুখ পুড়েছে।
    --মানে?
    -- হ্যাঁ; হাই সিকিওরিটি জেল থেকে কী করে একজন প্রহরীর গলা কেটে ওরা পালাল সেটা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেল যে- জেলের রেজিস্টারের এনট্রি অনুযায়ী ৪০ জন ওয়ার্ডার (মুখ্যমন্ত্রী সমেত) মন্ত্রীদের বাড়িতে ডিউটি করে, এর মধ্যে কারামন্ত্রী কুসুম মেহদেলেও আছেন।
    -- উনি তো অস্বীকার করেচেন! বলেছেন মিথ্যে কথা। রেকর্ড চেক করে শাস্তি দেবেন।
    -- আজকে স্বীকার করেছেন। তবে দুজনের কথা, রেকর্ড বলছে ৪ জন। তাই আজ রিটায়ার্ড জজকে দিয়ে এনকোয়ারির কথা বলা হয়েছে।
    -- কী এনকোয়ারি করবে? সরকারই ওদের ভাগিয়েছে কি না গোছের ছেঁদো কথা?
    --না; ওরা পালাল কী করে? আর চামচ ও প্লেট দিয়ে কী করে গলার নলি কাটল? কতক্ষন লাগে?
    এটাও দেখার চাদর দিয়ে তৈরি দড়ি ৩২ ফুট উঁচু পাঁচিলের ওপরে কিসে আটকাল যাতে এক এক করে আটজন সেই দড়ি বেয়ে টপকে গেল?
    -- নিশ্চয় বাইরে থেকে সাহায্য পেয়েছিল। ভোপালে অনেক মুসলমান, তাদের মধ্যে সিমির গোপন সেল আছে।
    --তাহলে ওরা রাত দুটো নাগাদ পাঁচিল টপকে সকাল সাড়ে দশটা অবধি পায়ে হেঁটে ১৫ কিমি দূর গেল কেন? একটা গাড়ি করে অনেক দূরে যেতে পারল না?
    --- বুঝলাম। তদন্তে সবই বেরোবে। কিন্তু ওরা তো দাগি আসামী। ওদের বিরিয়ানি খাওয়ানো? তাও আমাদের পয়সায়?
    -- শোন। যে ৮ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে ৩ জনের ক্ষেত্রে খান্ডোয়ার একটি আদালত রায় দিয়েছিল (২০১১ সালের মামলায়) যে সরকারপক্ষের সাক্ষ্যপ্রমাণ আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর আকিল খিলজিকে নির্দোষ ঘোষনাও করেছিল। ওর বিরুদ্ধে সিমি সাহিত্য রাখা ও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল।
    --তো?
    -- আরে এদিকে বালাঘাটে একজন আর এস এস কার্যকর্তাকে পুলিশ একই অভিযোগে গ্রেফতার করল দু'মাস আগে। অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কম্যুনিটির বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক পোস্ট করে ঘৃণা ছড়ানো। তো একই মধ্যপ্রদেশ সরকার উল্টে পুলিশ অফিসারদের, এস পি শুদ্ধু, সাসপেন্ড/ ট্রান্সফার করে ছাড়ল।
    এরপর আর কোন থানা সংঘ পরিবারের লোকজনকে ধরবে?
    -- তুমি কি বলতে চাও সরকারের ইশারায় বা নির্দেশে পুলিশ ফেক এনকাউন্টার করেছে? আর বিরিয়ানি খাওয়ানো জাস্টিফাই করছ?
    -- ধ্যেৎ, যত্ত বাজে কথা! গতবছরই কাসভের কেসের পিপি উজ্জ্বল নিকম বলেছেন যে আদৌ কাসভ বিরিয়ানি চায় নি , তাই দেওয়ার প্রশ্নই নেই। ওসব উনি বাজারে ছেড়ে ছিলেন জনমত তৈরি করতে। এটা নিয়ে বেশি হৈচৈ হয় নি। পাবলিক ডোমেনে আস্তে করে চেপে যাওয়া হয়েছে।
    এবার আমার কথা ছাড়। ওই জি পি জোশী, প্রাক্তন ডিরেক্টর, ব্যুরো অফ পোলিস রিসার্চ এন্ড ডেভেলেপমেন্ট কী বলছেন শোনঃ
    হ্যাঁ, বেশিরভাগ সময় ইশারায়, কিন্তু কখনও কখনও বেশ খোলাখুলি। যেমন ৩০ এপ্রিল, ১৯৯৮ এ তৎকালীন ইউপির বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ অফিসারদের এক সভায় নির্দেশ দিয়েছিলেন-- দাগি অপরাধীদের এনকাউন্টার করে মেরে ফেল। যারা ১০ জনকে মেরেছে, তাদের উড়িয়ে দাও। পাবলিকের সমর্থন পাবে। করে দেখ; আমি তোমাদের বাঁচাব।
    সত্যি কথা। ফেক এনকাউন্টারকে পাবলিক অনেক সময় সমর্থন করে, বিশেষ করে যখন টেররিস্ট বা ইন্সার্জেন্ট অল্পসংখ্যক গোষ্ঠীর হয় আর ওদের অপরাধের অভিমুখ হয় বৃহত্তর কমিউনিটি বা সুরক্ষা বাহিনীর দিকে থাকে। তাই এইসব এনকাউন্টারকে জাস্টিফাই করতে নিহতদের অপরাধের খতিয়ান তুলে ধরা হয়। কিন্তু এগুলো শুধু যে বেআইনী তাই নয়, এইসব কাজ পুলিশকে অপরাধী করে তোলে। নীটশে বলেছেন--দানবদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় সতর্ক হও, পাছে তুমি না ওদের মত একজন হয়ে যাও!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন